এই না হলে মাহমুদুর রহমান !

দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ও সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক মজলুম সাংবাদিক মাহমুদুর রহমান পবিত্র ওমরা ও চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরেছেন। গতকাল বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭টার পর তিনি গুলশানের বাসায় পৌছান। এর আগে বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানান সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের নেতৃবৃন্দ, দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সিনিয়র সাংবাদিক বৃন্দ ও তাঁর শুভাকাঙ্খি বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ।
পারিবারিক সূত্র জানায়, সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের অনুমোদন নিয়ে চিকিৎসার জন্য গত ২ ডিসেম্বর স্ত্রী ফিরোজা মাহমুদকে সঙ্গে নিয়ে সিঙ্গাপুর যান জনাব মাহমুদুর রহমান। সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে দুইজনেরই চিকিৎসা হয়। ফিরোজা মাহমুদের ছোট একটি অস্ত্রোপচারও হয়েছে। মাহমুদুর রহমানের চিকিৎসা শেষে ডাক্তাররা ফলোআপ চেকআপের জন্য আগামী ফেব্রুয়ারী মাসের প্রথম সপ্তাহে দিন ধার্য্য করে দিয়েছেন।
সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা শেষে ১২ ডিসেম্বর তারা সৌদী আরব গমন করেন ওমরা পালনের উদ্দেশ্যে। ১২ ডিসেম্বর থেকে ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে মক্কা, মদীনা এবং জেদ্দায় অবস্থান করেন তারা। গতকাল বিকালে সৌদী এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে করে ঢাকায় ফিরে আসেন। এদিকে সিঙ্গাপুরে রওয়ানা দেওয়ার আগেরদিন গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে আয়োজিত একটি আলোচনা সভায় তিনি বক্তব্য রেখেছিলেন। বক্তব্যে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোনের মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকীর উক্তি “আমি বাংলাদেশী নই” নিয়ে সমালোচনা করেন তিনি। এজন্য বিদেশে অবস্থানকালেই তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্টদ্রোহের অভিযোগে বিভিন্ন জেলায় ১৬টি মামলা দায়ের করা হয়। প্রতিটি মামলার বাদী হলেন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা। অনেকেই মনে করেছিলেন আগের নির্যাতন ও নতুন মামলার কারনে তিনি দেশে ফিরবেন না। সকল ধারণা ও জল্পনা কল্পনা উড়িয়ে দিয়ে নির্ধারিত সময়েই তিনি দেশ ফিরলেন। উল্লেখ্য, সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ তাঁকে এক মাসের জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছিল।
এই না হলে মাহমুদুর রহমান!
চিকিত্সার জন্য সিঙ্গাপুর । সেখান থেকে ওমরাহ পালনে সস্ত্রীক সৌদী আরবে। এরই মধ্যে মামলার পর মামলা। বিদেশে যাওয়ার আগে জাতীয় প্রেস ক্লাবের এক অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্যের জেরে ঢাকাসহ সারা দেশে কয়েক ডজন মামলা দায়ের করেছেন শাসক দলের নেতারা। পরোয়ানা জারি হয়েছে, সমন হয়েছে। হাজার হাজার কোটি টাকার মানহানি ও রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় শুভাকাঙ্ক্ষীররা বিচলিত-শংকিত। অনেকে বলছিলেন তিনি দেশে ফিরবেন বলে মনে হয় না। কেউ কেউ পরামর্শও দিয়েছেন না আসতে। হুলিয়া মাথায় দেশে ফিরলে গ্রেফতার এড়াতে অনেকে কৌশলী হন। রাজনীতিক-ব্যবসায়ীরা ইমিগ্রেশন ম্যানেজ করে আসার বহু গল্প জানা । আর মাহমুদুর রহমান? ইমিগ্রেশন কাউন্টারে গিয়ে বললেন- আমি ফিরে এসেছি। কোথায় পাঠাবেন- ডিবি অফিসে? থানা হাজতে, নাকি জেলখানায়? জেল জীবনের প্রস্তুতি হিসেবে আলাদা সুটকেস গুছিয়ে ফেরার কথাও জানালেন। পকেট খালি করে বিমানেই সব বুঝিয়ে দিয়েছেন সহধর্মিনীকে। ইমিগ্রেশন অফিসারের ভিমরি খাওয়ার অবস্থা। বললেন- স্যার, আমরা ছোট চাকরি করি, হুকুম পালন করি। ঊধর্তনের দৃষ্টি আকর্ষণের কথাও বললেন। পাসপোর্ট নিয়ে ছুটে গেলেন বড় কর্তার কাছে। অল্পক্ষণের মধ্যে ফিরে এসে পাসপোর্টে সীল দিয়ে বিদায় করলেন। আমরা যারা উদ্বেগ নিয়ে অভ্যর্থনা জানাতে গিয়েছিলাম তারা দেখলাম, ভাবলেশহীন, নিরুদ্বেগ, হাস্যোজ্বল মাহমুদুর রহমান বেরিয়ে আসছেন। অনেকক্ষণ গল্প করলেন মক্কা-মদীনায় প্রবাসীদের অপরিমেয় ভালোবাসার। কোন তাড়া নেই।
ষূত্রঃ মোঃ আব্দুল্লাহর ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে।। ৩০ ডিসেম্বর ২০১৭।।