গুম’ এর জন্য রাষ্ট্রীয় বাহিনীকেই আমাদের সন্দেহ হচ্ছেঃ বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিজানুর রহমান

December 27, 2017 6:44 pm0 commentsViews: 31

গত পাঁচ মাসে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে ১৩ জন রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হন। এদের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে ১০ জন ফিরেও এসেছেন। এতে স্বস্তি ফিরেছে ওইসব পরিবারের স্বজনদের মাঝে। এখনও ফিরেন নি কানাডার ম্যাকগিল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ইশরাক আহমেদ, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও এবিএন গ্রæপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাদাত আহমেদ ও ভিয়েতনামের সাবেক রাষ্ট্রদূত মারুফ জামান। এ নিয়ে নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের উৎকণ্ঠারও শেষ নেই। অপরদিকে, নিখোঁজ থাকার পর যারা ফিরেছেন তাদের কাছেও মিলছে না কোনও তথ্য। অপহরণকারীদের ব্যাপারে তেমনভাবে মুখও খুলছেন না তারা। ফলে কারা তাদের অপহরণ করেছিলেন, নিখোঁজের দিনগুলোতে তারা কোথায় ছিলেন, কেনই বা আটকের পর আবার ছেড়ে দেয়া হচ্ছে এমন সব প্রশ্নের কোনও উত্তর মিলছে না। সংগত কারণে রহস্যেঘেরা থাকছে অপহরণকারীদের তুলে নেওয়া ও ফিরিয়ে দেয়ার তথ্য।

ফিরে আসা ব্যক্তিদের কাছে তেমন কোন তথ্য না মেলার কারণ হিসেবে মানবাধিকার কর্মী এবং অপরাধ বিজ্ঞানীরা বলছেন, তারা আটককালীন ভীতিকর অবস্থায় ছিলেন। এ কারণে তারা আর মুখ খুলছেন না বা তাদের মুখ খুলতে নিষেধ করা হয়েছে। তবে এসব গুম বা অপহরণ প্রতিরোধে বিশেষজ্ঞরা সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য সবাইকে পরামর্শ দিয়েছেন।

বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, ‘কোনও ফৌজদারি অপরাধী তাদের তুলে নিয়ে গেলে দাবি-দাওয়ার বিষয় থাকত। এখানে কোনও ধরনের মুক্তিপণ বা অপরাধীদের চাহিদা পূরণ করা ছাড়াই তাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ এখানে কোনও লেনদেন হয় নি।’ তিনি বলেন, ‘একজন অপরাধী কাউকে তুলে নিয়ে গিয়ে কিছু প্রাপ্তি ছাড়াই দীর্ঘ সময় রেখে আবার ফেরত দিচ্ছে, সেটা হতে পারে না। আবার রাষ্ট্রীয় বাহিনী তাদের খুঁজে পাচ্ছে না, সেটা কীভাবে সম্ভব। এখন তো রাষ্ট্রীয় বাহিনীকেই আমাদের সন্দেহ হচ্ছে। রাষ্ট্রকেই এখন প্রমাণ করতে হবে, তারা এর সঙ্গে সম্পৃক্ত না। না হলে মানুষের মনের মধ্যে একটা সন্দেহ থেকেই যাবে। যেটা রাষ্ট্রের জন্য ভাল হবে না।’

ফিরে আসা ব্যক্তিরা তাদের কোথায় রাখা হয়েছিল, কীভাবে ওই স্থানে নিয়ে যাওয়া হল এবং কীভাবে আবার ফিরে আসা হল তা তারা বর্ণনা করেছেন। তবে তা খুব বেশি নির্দিষ্ট করে কিছু বলছেন না। এ কারণে ওইসব স্থান ঢাকার বাইরে নাকি ভেতরে তাও স্পষ্ট নয়। ফিরে আসাদের দেওয়া কিছু তথ্যে বেশ কিছু মিল খুঁজে পাওয়া যায়। অধিকাংশই জানিয়েছেন, তাদের তুলে নেয়ার পর কোনও একটি প্রকোষ্ঠে রাখা হয়েছিল। সেখানে দেয়া হয়েছিল প্রস্তুতকৃত খাদ্য। কারও চোখ বেঁধে আবার কারও হাত বেঁধে রাখা হত। এদের কারও কাছে চাঁদা চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই চাঁদা নেয়ার জন্য কোন তৎপরতা দেখান নি অপহরণকারীরা। এমনকি নিখোঁজ ব্যক্তির স্বজনরা অপহরণকারীদের কাছ থেকে কোনও ফোনও পাননি।

ফিরে আসা ব্যক্তিরা আরও জানিয়েছেন, অপহরণকারীরা তাদের ব্যক্তিগত বিষয়, পেশা ও বিভিন্ন প্রশ্ন করত। প্রত্যেককে একটি বদ্ধ করে তালা দিয়ে রাখা হত। প্রতিদিন খাবারও দেয়া হত তাদের। কিন্তু কারা সেই ব্যক্তি তা দেখতে পায়নি ফিরে আসাদের কেউই। ফিরে আসা এসব ব্যক্তিকে কেন অপহরণ করা হয়েছিল আর আটকে রেখে কী জানতে চাওয়া হয়েছিল, তাও অজানা। এ ছাড়াও এসব ব্যক্তিকে আটক রাখার সময়ে কোন ধরনের শারীরিক অত্যাচার ও মানসিক নির্যাতন করা হয় নি। তাহলে কেন তাদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল আর কেনই বা এতদিন আটকে রাখা হল? এসব নানা প্রশ্ন এখন সামনে চলে আসে।

মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন বলেন, ‘আমরা মানবাধিকার কর্মীরা বারবার বলছি, যারা নিয়ে যাচ্ছে আবার দুই তিন মাস পর ফিরিয়ে দিচ্ছে তারা যদি রাষ্ট্রীয় বাহিনী না হয় তাহলে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর চেয়ে শক্তিশালী। এরা সুরক্ষিতভাবে রাখছে, আবার ফেরত দিচ্ছে। যারা ফিরে এসেছে তাদের একজনকেও তো রাষ্ট্রীয় বাহিনীর তৎপরতার কারণে ফিরিয়ে দেয়নি। যারা নিয়েছে তারা স্বেচ্ছায় ফিরিয়ে দিয়েছে। ফলে যারা রাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে তাদের ব্যাপারে রাষ্ট্র কেন চুপ? আমাদের রাষ্ট্রকেই কিন্তু এখন এ ব্যাপারে জবাব দিতে হবে।’

গত পাঁচ মাসে নিখোঁজের মধ্যে যারা ফিরে এসেছেন তারা হলেন, ব্যাংক এশিয়ার এভিপি শামীম আহমেদ, বাংলাদেশ জনতা পার্টির (বিজেপি) সভাপতি মিঠুন চৌধুরী ও দলটির কেন্দ্রীয় নেতা অসিত ঘোষ অসিত, বেলারুশের অনারারি কনস্যুলার অনিরুদ্ধ কুমার রায়, দক্ষিণ বনশ্রীর নকিয়া-সিমেন্সের সাবেক প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান আসাদ, অ্যাভেনটিস-স্যানোফির ফার্মাসিস্ট জামাল রহমান, শাজাহানপুরের ফল ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন, গুলশানের প্রকাশক তানভীর ইয়াসিন করিম, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ড. মুবাশ্বীর সিজার ও সাংবাদিক উৎপল দাস। -ব্রেকিংনিউজ

Leave a Reply

You must be logged in to post a comment.

Editor in Chief: Dr. Omar Faruque

Editor: Dr. Morjina Akhter

All contact: 400E Mosholu Parkway South Apt # A23,The Bronx, New York 10458, USA

Mob. 001.347.459.8516
E-mail: dhakapost91@gmail.com