।।ফিতনা সম্পর্কিত হাদীসসমূহ।।
পরিচ্ছদ ২ঃ
হুযাইফাহ বিন য়্যামান (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ লোকেরা আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে কষ্ট ও মঙ্গল বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করত, আর আমি ভুক্তভোগী হওয়ার আশঙ্কায় অনিষ্ট ও অমঙ্গল বিষয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করতাম। একদা আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমরা মূর্খতা ও অমঙ্গলে ছিলাম। অতঃপর আল্লাহ আমাদেরকে এই মঙ্গল দান করলেন। কিন্তু এই মঙ্গলের পর আর অমঙ্গল আছে কি?’ তিনি বললেন, “হ্যাঁ আছে।” আমি বললাম, ‘অতঃপর ঐ অমঙ্গলের পর আর মঙ্গল আছে কি?’ তিনি বললেন, “হ্যাঁ, আর তা হবে ধোঁয়াটে।”(অর্থাৎ বিশুদ্ধ ও খাঁটি মঙ্গল থাকবে না। বরং তার সাথে অমঙ্গল, বিঘ্ন, মতানৈক্য এবং চিত্ত-বিকৃতির ধোঁয়াটে পরিবেশ থাকবে।) আমি বললাম, ‘তার মধ্যে ধোঁয়াটে কি?’ তিনি বললেন, “এক সম্প্রদায় হবে, যারা আমার সুন্নাহ (তরিকা) ছাড়া অন্যের সুন্নাহ (তরিকা) অনুসরণ করবে এবং আমার হেদায়াত (পথ নির্দেশ) ছাড়াই (মানুষকে) পথ প্রদর্শণ করবে। যাদের কিছু কাজকে চিনতে পারবে (ও ভাল জানবে) এবং কিছু কাজকে অদ্ভূত (ও মন্দ) জানবে।” আমি বললাম, ‘ঐ মঙ্গলের পর আর অমঙ্গল আছে কি?’ তিনি বললেন, “হ্যাঁ, (সে যুগে) জাহান্নামের দরজাসমূহে দণ্ডায়মান আহবানকারী (আহবান করবে)। যে ব্যক্তি তাদের আহবানে সাড়া দেবে, তাকে তারা ওর মধ্যে নিক্ষিপ্ত করবে।” আমি বললাম, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাদেরকে তাদের পরিচয় বলে দিন।’ তিনি বললেন, “তারা আমাদেরই চর্মের (স্বজাতি) হবে এবং আমাদেরই ভাষায় কথা বলবে।” আমি বললাম, ‘আমাকে কি আদেশ করেন -যদি আমি সে সময় পাই?’ তিনি বললেন, “মুসলিমদের জামাআত ও ইমাম (নেতা)র পক্ষাবলম্বন করবে।” আমি বললাম, ‘কিন্তু যদি ওদের জামাআত ও ইমাম না থাকে?’ তিনি বললেন, “ঐ সমস্ত দল থেকে দূরে থাকবে; যদিও তোমাকে কোন গাছের শিকড় কামড়ে থাকতে হয়, যতক্ষণ পর্যন্ত না তোমার ঐ অবস্থাতেই মৃত্যু এসে উপস্থিত হয়েছে।” (বুখারী ৩৬০৬, ৭০৮৪, মুসলিম ৪৮৯০, মিশকাত ৫৩৮২ নং)
[হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস]
মুআয বিন জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি পাঁচটির একটি পালন করবে, সে আল্লাহর যামানতে হবে; কোন রোগীর সাথে সাক্ষাৎ করে তার অবস্থা জানবে, অথবা জিহাদে প্রস্থান করবে, কিংবা তার ইমাম বা নেতার নিকট তার শ্রদ্ধা ও সম্মান জ্ঞাপনের উদ্দেশ্যে আগমন করবে, অথবা (প্রকাশ্য কুফরী শুরু না হলে ইমামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বা বিদ্রোহ ঘোষণা না করে) স্বগৃহে উপবেশন করবে, যাতে তার বাকশক্তি ও অন্যান্য শক্তি হতে জনগণ এবং জনগণের বিভিন্ন অত্যাচার হতে সে নিরাপদে থাকবে।” (আহমাদ ২২০৯৩, ত্বাবারানী ১৬৪৮৫, সঃ জামে’ ৩২৫৩ নং) [হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস]
আবূ মূসা আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “ফিতনার সময় মানুষের নিরাপত্তার উপায় তার স্বগৃহে অবস্থান।” (দাইলামী, সঃ জামে’৩৬৪৯ নং) [হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস]
আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ ‘আমি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নিকট থেকে দু’টি (জ্ঞান) পাত্র সংরক্ষণ করেছি। যার একটি তো আমি প্রচার করে দিয়েছি। কিন্তু ওর দ্বিতীয়টি যদি প্রচার করতাম, তাহলে আমার এই কণ্ঠনালী কাটা যেত। (বুখারী ১২০ নং) [হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস]
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁকে বলেছিলেন, “তোমার কওম যদি কুফরীর নিকটবর্তী যুগের (নও-মুসলিম) না হত, তাহলে অবশ্যই আমি কা’ বা ঘরকে ভেঙ্গে ইবরাহীম -এর ভিত্তি অনুসারে পুন র্নির্মাণ করতাম এবং তার জন্য দু’ টি দরজা বানাতাম। একটি দরজা দিয়ে প্রবেশ করত ও অন্যটি দিয়ে বের হত।” (বুখারী ১২৬, মুসলিম ৩৩০৮, আহমাদ, নাসাঈ) [হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস]
ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ ইবনে উমার (রাঃ) শুনেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পূর্ব দিকে মুখ ক’রে বলেছেন, “সাবধান! ওখানে আছে ফিতনা, ওখানে আছে ফিতনা, যেখান হতে শয়তানের শিং উদয় হবে।” (বুখারী ৭০৯২, মুসলিম ৭৪৭৬ নং) [হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস]
ইবনে মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ ‘তোমাদের তখন কী অবস্থা হবে, যখন তোমাদেরকে ফিতনা-ফাসাদ গ্রাস করে ফেলবে? যাতে শিশু প্রতিপালিত (বড়) হবে এবং বড় বৃদ্ধ হবে, (তা সকলের অভ্যাসে পরিণত হবে) আর তাকে সুন্নাহ (দ্বীনের তরীকা) মনে করা হবে। পরন্তু তার যদি কোনদিন পরিবর্তন সাধন করা হয় তাহলে লোকেরা বলবে, ‘এ কাজ গর্হিত !’
তাঁকে প্রশ্ন করা হল, ‘(হে ইবনে মাসঊদ!) এমনটি কখন ঘটবে?’ তিনি বললেন, ‘যখন তোমাদের মধ্যে আমানতদার লোক কম হবে ও আমীর (বা নেতার সংখ্যা) বেশি হবে, ফকীহ (বা প্রকৃত আলেমের সংখ্যা) কম হবে ও ক্বারী (কুরআন পাঠকারীর) সংখা বেশি হবে, দ্বীন ছাড়া ভিন্ন উদ্দেশ্যে জ্ঞান অন্বেষণ করা হবে এবং আখেরাতের আমল দ্বারা পার্থিব সামগ্রী অনুসন্ধান করা হবে।’ (আব্দুর রাযযা্ক ২০৭৪২, ইবনে আবী শাইবা ৩৭১৫৬, সহীহ তারগীব ১১১)
যুগের মানুষ খারাপ হলে অথবা ধর্মীয় ব্যাপারে ফিতনার আশঙ্কা হলে অথবা হারাম ও সন্দিহান জিনিসে পতিত হওয়ার ভয় হলে অথবা অনুরূপ কোন কারণে নির্জনতা অবলম্বন করা উত্তম।
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ فَفِرُّوا إِلَى اللهِ إنِّي لَكُمْ مِنْهُ نَذِيرٌ مُبِينٌ
অর্থাৎ, সুতরাং তোমরা আল্লাহর দিকে পলায়ন কর; নিশ্চয় আমি তাঁর পক্ষ হতে তোমাদের জন্য স্পষ্ট সতর্ককারী। (সূরা যারিয়াহ ৫০ আয়াত) [হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস]
সা’দ ইবনে আবী অক্কাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ আমি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে বলতে শুনেছি, “নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা ঐ বান্দাকে ভালোবাসেন, যে পরহেযগার (সংযমশীল), অমুখাপেক্ষী ও আত্মগোপনকারী।” (মুসলিম ৭৬২১ নং) [হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস]