প্রসঙ্গ বাংলাদেশে নারী দিবস উদযাপনঃ পুরুষ হিসেবে আমার ভাবনা।
নিউইয়র্ক থেকে ড. ওমর ফারুক।।
স্থানীয় সময়ঃ ৮ মার্চ রাত দশটা।।
যে সমাজে সকাল বিকাল নাস্তা করার মত নারী’র ওপর ধর্ষণসহ বিভিন্ন রকম সহিংসতা বিদ্যমান, সে জনগোষ্ঠীতে নারী দিবস উদযাপন কী তাৎপর্য বহন করে, আমি চিন্তা করে কোন কিছু আবিষ্কার করতে পারি না। বাংলাদেশে বর্তমান বিদ্যমান সমাজব্যবস্থা তো এমনই, পুরুষেরা দল বেঁধে উন্মত্ত হয়ে নারীর শরীর নিয়ে উন্মাতাল হয় জনসম্মুখেই। কেমন জানি উদযাপনের নাম করে নারীর শরীর নিয়ে ঔধ্যত্বের সাথে ব্যঙ্গ ও বিদ্রুপ করে। এমন সমাজে নারী দিবসের মহাত্ম কি জানি না। নারীর আদর্শ মাতৃত্বের যে গর্ব, যে সমাজে সেটি রাষ্ট্রীয় অনাচারে ও সহিংসতায় মাতৃত্ব যখন ধুলায় লুণ্ঠিত হয়, সে সমাজে নারী দিবস নিয়ে কোন ভাবনাটাই কেমন একটা কৌতুক মাত্র মনে হয়। ৮-ই মার্চ নারী দিবসকে সামনে রেখেই ঢাকা শহরে খোদ ক্ষমতাশীন গোষ্ঠী কর্তৃক যাতায়াতের পথে সাধারণ নারীদের সিরিজ যৌন নির্যাতন চালানো হয়। শুধু তাই নয়, ভিক্টিমদের সমর্থন না দিয়ে উল্টো দলের হাইকমান্ড থেকে নির্যাতনকারীদেরই উল্টো সমর্থনও যোগানো হয়।
এটি তো এমন সমাজ, যেখানে পুরুষেরা ১০ বছরের একটা শিশুকে ধর্ষণ করার পর কুপিয়ে হত্যা করে, সেখানে নারী দিবস একটা বালখিল্যতা মাত্র। পুরুষ হিসেবে তাই আমি লজ্জিত। বস্তুতপক্ষে, হাজার ধর্ষিতার রক্তের ওপর দিয়ে নারী দিবস পালন করা হয় না। নারী দিবস, এটিও মূলতঃ নারীদেহ প্রদর্শন ও বেলেল্লাপনার উপকরণ তৈরিতে উৎসাহ যোগাতে সাম্রাজ্যবাদীদের নয়া অপকৌশল। নারীকে অবলা-দুর্বলা হিসেবে বিবেচনা না করে তাকে মানুষ হিসেবে মর্যাদা দিতে শিখি। নারী দিবস তৈরি করে সমাজকে তারা এ ম্যাসেজ দিচ্ছে যে, পুরুষের চেয়ে নারী ছোট, এ দিবসের মাধ্যমে তাকে বিশেষ প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে! এ নারী দিবস, নারীকে পণ্য করে তোলার অারেকটি সূক্ষ্ম কৌশল ছাড়া কিছুই নয়। আল্লাহ নারীদের সাথে উত্তম আচরণের নির্দেশ দিয়ে বলেনঃ وَعَاشِرُوهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ فَإِن كَرِهْتُمُوهُنَّ فَعَسَى أَن تَكْرَهُواْ شَيْئًا وَيَجْعَلَ اللّهُ فِيهِ خَيْرًا كَثِيرًا নারীদের সাথে সদ্ভাবে জীবন-যাপন কর। অতঃপর যদি তাদেরকে অপছন্দ কর, তবে হয়ত তোমরা এমন এক জিনিসকে অপছন্দ করছ, যাতে আল্লহ, অনেক কল্যাণ রেখেছেন। সুরা নিসা, আয়াত ১৯। অামার কাছে নারী, পুরুষের চেয়েও সম্মানিত, কারণ তিনি হচ্ছেন মা ,বোন, স্ত্রী। আর ইসলামে কোন দিবস পালন করাতো নিষিদ্ধ। সুতরাং এসব লোক দেখানো দিবস পালন বন্ধ করুন।
শেষ কথাটি হলঃ যে সব নারীরা আদর্শ পরিবার গঠনে প্রয়াসী। বেলেল্লাপনায় গা ভাসিয়ে দেয় না। তারা হিজাব পরে, ইসলামি অনুশাসন মেনে চলে। কোরআন ও হাদীসের ওপর নিজেদের জিন্দেগি যেমন গঠন করতে প্রয়াসী, তেমনি তার স্বামী ও সন্তানদের ধর্মীয় নীতিমালা ও অনুশাসন মেনে চলতে প্রতিনিয়ত উদ্বুদ্ধ করে ও আদর্শ পরিবার ও পরিবারের সদস্যদের আদর্শ চরিত্র গঠনে প্রাণান্তকর কাজ করে, তাদেরকে রাষ্ট্রীয় অত্যাচার , জুলুম, নিয্াতন ও গ্রেফতারের সম্মূখীন হতে হয়। কোরানের ক্লাশ করার অপরাধে নিরপরাধ ভদ্র ও শালীন পরিবারের নারীদের সরকারির হিংসাত্মক আচরণের শিকার হতে হয়, সেখানে নারী দিবস একটি প্রতারণা ও অপকৌশল ছাড়া কিছু নয়।
[এ লেখাটা লিখতে ফেসবুক বন্ধু মোঃহারুন অর রশিদ তথ্য প্রদান ও উদ্ব ুদ্ধ করেছে, তাকে ধন্যবাদ।]