পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রীর আকুতিঃ অখণ্ড বাঙলা গঠন।।
নিউইয়র্ক থেকে ড. ওমর ফারুকঃ
আমি বাঙালি! এটা আমার অহঙ্কার। কাঁটাতারের বেড়া আমাদের বন্ধনকে আটকাতে পারবে না। আগামী ২০ বছরের মধ্যে দু’ই বাঙলা এক হয়ে যাবে, এমন করেই বললেন, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের খাদ্য ও সরবরাহ মন্ত্রী জ্যোতি প্রিয় মল্লিক। নোমান্স ল্যান্ডে নির্মিত অস্থায়ী শহীদ বেদিতে গত ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯ টায় প্রথম ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আসা ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সরকারের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক এভাবে আবেগপ্রবণ বক্তব্য দিলেন।নোমান্স ল্যান্ডে নির্মিত অস্থায়ী শহীদ বেদিতে গত ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯ টায় প্রথম ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সরকারের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বেনাপোল পৌর সভার মেয়র আশরাফুল আলম লিটন। পশ্চিম বংগের বনগাও অঞ্চলের সাংসদ শ্রী মমতা ঠাকুর, উত্তর ২৪ পরগনা জেলার সভাধিপতি শ্রীমতি রহিমা মন্ডল,বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস, বনগাও পৌর সভার মেয়র শংকর আঢ্য ,উওর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের সভাপতি রহিমা মণ্ডল ও ভাইস চেয়ারম্যান গোপাল ব্যানার্জি, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য পিযুস কান্তি ভট্রাচার্য্য, বেনাপোল পৌর মেয়র আশরাফুল আলম লিটন, যশোর জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার. শিল্পী জয়ন্ত চট্রপাধ্যায়, কিরণ চন্দ্র রায় ও ফাতেমাতুজ্জোহরা উভয় দেশের বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক সংগঠনগুলো স্বতস্ফ ূর্তভাবে অংশ নেয় এ অনুষ্ঠানে।
বেনাপোল পেট্রাপোল চেকপোস্টে যাতে কেউ প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য বিজিবি ও বিএসএফ অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করে দুই সীমান্তে। সীমান্ত টপকে যাতে কেউ অবৈধভাবে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য বিজিবি ও বিএসএফ কাঁটাতারের বেষ্টনী ও বাশের বেড়া দিয়ে কঠোর নিরাপওা ব্যাবস্থা গড়ে তোলা হয়।
এবার আমি কিছু কথা বলি। অখণ্ড বাংলা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে পশ্চিমবঙ্গকে ভারত থেকে স্বাধীনতা লাভ করে বাংলাদেশের কাছে আসতে হবে। ঐতিহাসিক নানা ঘটনা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এটা হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই।
১৯৪৭ সালে যখন অখণ্ড বাংলা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে সোহরাওয়ার্দি এবং আবুল হাসিম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন বেঙ্গল কংগ্রেস এবং হিন্দু মহাসভা পশ্চিম বঙ্গকে বাংলা থেকে আলাদা করে ভারতে যোগ দেয়ার আন্দোলন চালিয়ে গেছেন। শরৎ বসু এবং কিরণ শংকর রায় অখণ্ড বাংলার চেষ্টা করলেও গান্ধী-নেহেরু-প্যাটেলের বিরোধিতায় শেষ পর্যন্ত পিছু হটেন। বাংলা ভাগের জন্য ৭৬ টি জনসভা হয় বলে জানা যায়, এর মধ্যে কংগ্রেস একাই কমপক্ষে ৫৯ টি জনসভার আয়োজন করে। বারটি জনসভা অনুষ্ঠিত হয় হিন্দু মহাসভার উদ্যেগে, আর মাত্র পাঁচটি জনসভা হয় যৌথ উদ্যেগে (জয়া চ্যাটার্জি, বাঙলা ভাগ হল, ২০০৩)।
বাংলাদেশ-উত্তর পহেলা ২১ শে ফেব্রুয়ারি (১৯৭২ ) উদযাপনে পশ্চিমবঙ্গ থেকে বঙ্গবন্ধুর সাথে দেখা করতে অন্নদা শংকর রায়ের নেতৃত্বে বুদ্ধিজীবীদের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় আসে। তাদের সঙ্গে কথা প্রসঙ্গে শেখ মুজিবুর রহমান বলেনঃ
‘আমরা সতের কোটি বাঙালি এক জোট হলে কিনা করতে পারি, ভারত জয় করতে পারি’। শেখ মুজিবের জনৈক সহযোগী আরও খোলাখুলিভাবে বলেন, আপনারা ভারতের অধীন রয়েছেন কেন? আমাদের সাথে মিশে গেলে স্বাধীন হবেন।’ জবাবে কলকাতার বুদ্ধিজীবী দলের নেতা এক সময়ের ঢাকার বিক্রমপুরের সন্তান অন্নদা শংকর রায় বললেন, ‘আমরা আপনাদের মত শুধুমাত্র বাঙালি নই, আমরা সেই সাথে ভারতীয়’ (অন্নদা শংকর রায়, ‘একুশে ফেব্রুয়ারী, ওদের আমাদেরও’ আনন্দবাজার পত্রিকা, ২১ ফেব্রুয়ারী ১৯৯৪)।
গাফফার চৌধুরী ভারতীয়দের মনস্তত্ব নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে বলেনঃ
”…দুই জার্মানির মত কি দুই বাংলা, এমন কি ত্রিপুরা রাজা একদিন এক হয়ে যাবে? আমি তার সমূহ সম্ভাবনা দেখি না। যদি কেবল ভাষা জন্যই দুই অঞ্চল এক হত, তাহলে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে ত্রিপুরা রাজ্যের আলাদা অবস্থান কবেই শেষ হয়ে যেত! আমি একবার লন্ডনে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, তিনি কি মনে করেন, কোনদিন দুই জার্মানির মত দুই বাংলা এক হতে পারে? তিনি দৃঢ়ভাবেই মাথা নেড়ে বলেছিলেন, ‘আগামী পাঁচশ’ বছরেও নয়। (আবদুল গাফফার চৌধুরী, বাঙালির ভাষা-সাম্রাজ্য, বাঙালির অসমাপ্ত যুদ্ধ, জ্যোৎস্না পাবলিশার্স, ১৯৯৯, পৃঃ২৪)
এ ধরনের আরও অনেক উদাহরণ দিয়ে লেখার কলেবর বাড়াতে চাই না। বটম লাইন হচ্ছেঃ পশ্চিম বঙ্গের লোকেরা হিন্দু আইডেন্টিটি বাদ দিয়ে বাংলাদেশের কাছে ফিরে আসতে রাজী নয়। তাছাড়া অখণ্ড বাংলা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হওয়ার অর্থ দুই বাংলা মিলে হিন্দুদের সংখ্যালঘু হয়ে যাওয়া, আর দুনিয়ার কেউ মাইনরিটি হতে চায় না। [সূত্রঃ বিভিন্ন স্বাধীন চিন্তা’র লেখকদের লেখা প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রিকা অবলম্বনে।