৪ কারণে উৎকণ্ঠায় শেখ হাসিনা।
দাবী মানার নামে প্রতারণা ও নির্মম নির্যাতনের মাধ্যমে নিরাপদ সড়কের দাবিতে গড়ে উঠা শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমন করেছে সরকার। বলা যায় দেশের সার্বিক পরিস্থিতি এখন অনেকটাই স্বাভাবিক। তবে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও সরকারের আতঙ্ক কাটে নি এখনও।
একটি গোয়েন্দা সংস্থা ও আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন এক অজানা আতঙ্কে ভুগছেন। দেশে কখন কী ঘটে যায়, এনিয়ে তিনি এখন সর্বদাই চিন্তিত থাকেন। সূত্রগুলো এর পেছনে একাধিক কারণের কথা উল্লেখ করেছে।
প্রথমতঃ সরকার মনে করছে, প্রথম দিকে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করলেও পরে এই আন্দোলনের নেতৃত্ব চলে যায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের হাতে। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব শিক্ষার্থী মাঠে নেমেছিল তারা সবাই শিবির ও ছাত্রদলের নেতাকর্মী বলেই ধারণা করছে সরকার। বিএনপি-জামায়াত সরাসরি মাঠে না এসে তাদের ছাত্র সংগঠনগুলোকে মাঠে নামিয়েছে। গোয়েন্দারা সরকারকে জানিয়েছে, চলমান আন্দোলন সাময়িক বন্ধ হলেও তারা আবার যে কোন ইস্যুতে মাঠে নামতে পারে। এ তথ্য পেয়েই মূলতঃ গত ৮ আগস্ট, বুধবার রাতে বসুন্ধরা, কালাচাঁদপুর ও নতুনবাজার এলাকায় ২ হাজার সদস্য নিয়ে পুলিশ ‘ব্লক রেড’ দিয়েছে।
দ্বিতীয়তঃ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের সম্পর্ক সব সময়ই বৈরি। ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত বার্নিকাটকে সরকার শুরু থেকেই সন্দেহের চোখে দেখছে। বাংলাদেশে সংঘঠিত অনেক ঘটনার পেছনেই বার্নিকাটের হাত আছে বলে মনে করে সরকারের নীতি নির্ধারকরা। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যেই সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারের বাসা থেকে বেরিয়ে আসার সময় বার্নিকাটের গাড়িতে হামলার ঘটনা সরকারকে চরম বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে। সরকার মনে করছে, বার্নিকাটের ওপর হামলা মানে যুক্তরাষ্ট্রের ওপরই হামলা। আর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থনও দিয়েছে। এ সব কারণে প্রধানমন্ত্রী মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রও এখন তাদের বিপক্ষে চলে যেতে পারে। এছাড়া বুধবার ভারতের জনপ্রিয় পত্রিকা টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, সরকার যদি বিরোধীদলের বাকস্বাধীনতা হরণ করে চলতেই থাকে তাহলে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মত এরকম জনপ্রিয় আন্দোলন আরও হতে পারে। আর এসব আন্দোলনে অন্য কোন দেশ বাহির থেকেও শক্তি প্রয়োগ করতে পারে।
তৃতীয়তঃ দেশের সব বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও সুশীল সমাজের লোকজন শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়েছেন। আর সুশীল সমাজের প্রতি শেখ হাসিনার নেতিবাচক ধারণা অনেক আগ থেকেই। সম্প্রতি ড. কামালের নেতৃত্বে সুশীল সমাজ ও বিশিষ্টজনেরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে চেষ্টা করছেন। তাদের টার্গেট একটি জাতীয় সরকার গঠন করা। আর প্রধানমন্ত্রী প্রকাশ্যে মন্ত্রিসভার বৈঠকে বলেছেন, ড. কামাল হোসেন, বি. চৌধুরী, প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান ও ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে কিছু একটা করতে পারে। এ সব কারণে সরকার মনে করছে, সুশীল সমাজের লোকেরা ছাত্রদেরকে আবারও মাঠে নামাতে পারে।
চতুর্থতঃ শিক্ষার্থীদের আন্দোনের শেষের দিকে সাধারণ ছাত্রদের ওপর ছাত্রলীগ-যুবলীগের হামলা-নির্যাতন ও আন্তর্জাতিক ফটো সাংবাদিক ড. শহীদুল আলমকে গ্রেফতারের পর অমানিক নির্যাতের ঘটনায় শুধু বাংলাদেশে নয়, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এবং সম্প্রদায়ও তৎপর হয়ে উঠেছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো এর আগে কখনও বাংলাদেশ নিয়ে এত রিপোর্ট করে নি। এবং প্রতিটি রিপোর্টই হচ্ছে সরকারের বিরুদ্ধে। এসব রিপোর্টের কারণে এখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও সরকারের ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ। সরকারের ধারণা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সরকারকে পরিত্যাগও করতে পারে।
জানা গেছে, এ সব কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে সরকারের মন্ত্রী-এমপি ও আওয়ামী লীগ নেতারা খুবই আতঙ্কিত। আগামী নির্বাচন পর্যন্ত তারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে কিনা এমন আতঙ্কও বিরাজ করছে সরকারের মধ্যে। সূত্রঃ অ্যানালাইসিস বিডি