২৮ বছর আগের ১৯৮৯ সালের মঙ্গলশোভাযাত্রা এখন হাজার বছরের সংস্কৃতি !
যুক্তরাষ্ট্র থেকে ড. ওমর ফারুক।
তারিখঃ ১৫ এপ্রিল, সময়ঃ ১৫ঃ০০, স্থানঃ আটলান্টিক বুক্স এন্ড স্টেশনারি, ম্যানহাটান, নিউইয়র্ক।
বলা হয় হাজার বছরের ঐতিহ্য নাকি এই (অ)মঙ্গল শোভাযাত্রা। এখন বলুন ত হাজার হয় ক’বছরে? অথচ এটি শুরু হয় ২৭ বছর আগে, ১৯৮৯ সালে। এরশাদ সাহেব সর্বপ্রথম পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে সরকারি ছুটি ঘোষণা করে এবং কবি সাহেবই এ দিবসটিতে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা শুরু করেন। হাজার বছর আগে থেকে নাকি পহেলা বৈশাখে পান্তা ইলিশ খাওয়ার সূত্রপাত হয়। ডাহা প্রতারণা। সে ও তো জানতে চাইব – কত বছরে হাজার হয়? পান্তা ইলিশ খাবার এ সূত্রপাত হল মাত্র ৩২ বছর আগে, ১৯৮৪ সালে। এটি সার্বজনীন উৎসব বলা হয়। কিন্তু এখানে কি সব হয়, এক ঝলক দেখে নেই তো। এদিন হিন্দুদের সকল ধরনের পূজাই মূলতঃ সম্পাদিত হবার সুযোগ আছে। এদিন হিন্দুদের ঘটপূজা, গণেশ পূজা, সিদ্ধেশ্বরী পূজা, হিন্দুদের ঘোড়ামেলা, হিন্দুদের চৈত্রসংক্রান্তি পূজা-অর্চনা, হিন্দুদের চড়ক বা নীল পূজা বা শিবের উপাসনা ও সংশ্লিষ্ট মেলা, গম্ভীরা পূজা, কুমীরের পূজা, অগ্নিনৃত্য, ত্রিপুরাদের বৈশুখ মারমাদের সাংগ্রাই ও পানি উৎসব, চাকমাদের বিজু উৎসব (ত্রিপুরা, মারমা ও চাকমাদের পূজা উৎসবগুলোর সম্মিলিত নাম বৈসাবি), হিন্দু ও বৌদ্ধদের উল্কিপূজা, মজুসি তথা অগ্নি পূজকদের নওরোজ, হিন্দুদের বউমেলা,মঙ্গলযাত্রা এবং সূর্যপূজা।
আপনি হিন্দুদের সকল পূজা অনুষ্ঠানদি সম্পন্নের জন্য সাচ্ছন্দে বর্তমান স্টাইলের পহেলা বৈশাখ পালন করতে পারেন বৈ কী! এরপরও আপনি মুসলমান থাকবেন কিনা সেটি নিজেকে জিজ্ঞেস করবেন। কোরান -হাদীস, ইসলামি সাহিত্যের সন্ধান করবেন। একটু পড়ে টড়ে দেখবেন অথবা জানবেন। তবে সরকারে যেসব মুফতী’রা আছে, তাদের ফতোয়াগুলো এমন –
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পহেলা বৈশাখ এভাবে পালনের সাথে নাকি ধর্মের সম্পর্ক নেই।
মুফতী হাসানুল হক ইনুর ফতোয়া হল – ‘“পহেলা বৈশাখ পালন করলে মুসলমানিত্ব যায় না।”
আসাদুজ্জামান নূর বলেন, মঙ্গল শোভাযাত্রা হচ্ছে সাংস্কৃতিক আন্দোলন, এখানে ধর্মীয় বিষয় নেই ।
“মঙ্গল শোভাযাত্রা হচ্ছে সাংস্কৃতিক আন্দোলন, এখানে ধর্মীয় বিষয় নেই” – আসাদুজ্জামান নূর ( ছবি ও উদ্বৃতি-ঃজনকণ্ঠ)
কথা হল, পয়লা বৈশাখ পালন তো করতে হবে, কিন্তু হিন্দুদের সার্বজনীন পূূজা’র মাধ্যমে করতে হবে কেন? আর ইসলাম তো একটা পূর্ণাংগ জীবনব্যবস্থা। পূর্ণাংগ জীবনব্যবস্থায় সাংস্কৃতি বাদ পড়ে যায় কেমন করে হে?
দূর্গা দেবীর প্রশংসাবাক্য, পুরোহিতের প্রার্থনাসংগীত এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রার মূল প্রতিপাদ্য !
এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রার মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল-
‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্যসুন্দর’।
এটা রবী ঠাকুরের একটা গানের প্রথম লাইন।
পুরা গানটা এ রকম-
“আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্যসুন্দর ॥
মহিমা তব উদ্ভাসিত মহাগগনমাঝে,
বিশ্বজগত মণিভূষণ বেষ্টিত চরণে ॥
গ্রহতারক চন্দ্রতপন ব্যাকুল দ্রুত বেগে
করিছে পান, করিছে স্নান, অক্ষয় কিরণে ॥
ধরণী’পরে ঝরে নির্ঝর, মোহন মধু শোভা
ফুলপল্লব-গীতবন্ধ-সুন্দর-বরনে ॥
বহে জীবন রজনীদিন চিরনূতনধারা,
করুণা তব অবিশ্রাম জনমে মরণে ॥
স্নেহ প্রেম দয়া ভক্তি কোমল করে প্রাণ,
কত সান্ত্বন করো বর্ষণ সন্তাপহরণে ॥
জগতে তব কী মহোৎসব, বন্দন করে বিশ্ব
শ্রীসম্পদ ভূমাস্পদ নির্ভয়শরণে ॥
এই গানটা দূর্গা দেবীর প্রশংসাবাক্য, পুরোহিতের প্রার্থনাসংগীত।
বলা হচ্ছে হচ্ছে অসাম্প্রদায়িকতা, কিন্তু শেখানো হচ্ছে হিন্দু সাম্প্রদায়িকতা।
সবশেষে আরও একটি কথা জানাই। বলা হচ্ছে এটি নাকি কোন এক বাঙালা সনটি প্রচলন করেছে। সেটিও আরও একটি ভাওতা। কোন মহান বাঙালি বাংলা সন চালু করেন নি।
বাদশাহ আকবর করেছেন। আর তিনি মঙ্গলীয় বংশোদ্ভত এবং ফার্সী ভাষী ছিলেন।