২০১৭ সালে বিশ্বে ৬৫ জন গণমাধ্যম কর্মী নিহতঃ রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স
নিউইয়র্ক থেকে ড. ওমর ফারুক।।
২০১৭ সালে বিশ্বজুড়ে ৬৫ জন গণমাধ্যমকর্মী নিহত হয়েছেন৷ এঁদের মধ্যে ৫০ জনই পেশাদার সাংবাদিক৷ তবে গত ১৪ বছরের মধ্যে এ সংখ্যাটা কম বলে জানিয়েছে প্যারিসভিত্তিক সংগঠন ’রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স’ (আরএসএফ)৷
মঙ্গলবার বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আরএসএফ৷ নিহতের সংখ্যা কম হওয়ার পেছনে কারণ হিসেবে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ বছর ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো এড়িয়ে চলেছেন সাংবাদিকরা, অর্থাৎ তারা এমন সব স্থানে রিপোর্টিং এ যান নি, যেখানে প্রাণ হারানোর ভয় রয়েছে৷
আরএসএফ বলছে, এ বছর সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশ ছিল সিরিয়া, যেখানে ১২ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছে৷ মেস্কিকোতে হত্যা করা হয়েছে ১১ জনকে৷ এর মধ্যে মেক্সিকোর প্রখ্যাত সাংবাদিক হাভিয়ের ভাল্দেজ, যিনি সেখানকার মাদক চোরাচোলান নিয়ে প্রতিবেদন করতে গিয়ে আততায়ীদের গুলিতে প্রাণ হারান৷ তিনি সংবাদ সংস্থা এএফপি-র হয়ে কাজ করছিলেন৷
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, পেশাদার সাংবাদিকদের জন্য এ বছর ‘বিশ্বের সবচেয়ে বড় কারাগার’ হয়ে উঠেছে তুরস্ক৷ এ বছর ৪২ জন সাংবাদিক এবং একজন গণমাধ্যমকর্মীকে আটক করেছে তারা৷ সরকারের সমালোচনা করায় এদের বেশিরভাগকে কারাভোগ করতে হচ্ছে৷ অন্যদিকে, চীনে ব্লগে লেখালেখি করার জন্য ৫২ জন সাংবাদিক ও ব্লগারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷
এদিকে, আট মাস কারাবন্দি থাকার পর সোমবার তুরস্কের কারাগার থেকে মুক্ত হয়েছেন জার্মান সাংবাদিক মেজালে টোলু৷ জঙ্গি সংগঠনের সদস্য হওয়ার অভিযোগ এনে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল গত বছরের জুলাইতে৷ জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল টোলুকে সাধুবাদ জানিয়েছেন৷
যে দেশের গণমাধ্যমের কোন স্বাধীনতা নেই
ইরিত্রিয়াঃ রিপোটার্স উইদাউট বর্ডার্সের প্রকাশিত ২০১৬ প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্স অনুযায়ী, যে দেশটিতে গণমাধ্যমের কোনোই স্বাধীনতা নেই, সেটি হচ্ছে ইরিত্রিয়া৷ গত ২০ বছরের বেশি সময় ধরে স্বৈরশাসকের কবলে থাকে দেশটির কমপক্ষে ১৫ সাংবাদিক এই মুহূর্তে জেলে আছেন৷ প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্সে ১৮০টি দেশের মধ্যে সবার নীচে আছে ইরিত্রিয়া৷
উত্তর কোরিয়াঃ ইরিত্রিয়ার পরই নীচের দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে উত্তর কোরিয়া৷ কিম জুন-উনের নেতৃত্বাধীন দেশটি গত ১৫ বছর ধরেই প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্সের একেবারে নীচের দিকে অবস্থান করছে৷ দেশটিতে বিদেশি সাংবাদিকদের ভিসা তেমন দেয়া হয় না, যদিও বা কেউ ভিসা পান, তাঁকে রাখা হয় কড়া নজরদারিতে৷
তুর্কমেস্তিানঃ এই দেশটিকে বলা হয় পৃথিবীর অন্যতম তথ্য কৃষ্ণ গহ্বর৷ স্বাধীনভাবে কোনো সাংবাদিক কাজ করতে চাইলে তাঁর জন্য মোটামুটি কারাভোগ এবং নির্যাতন নিশ্চিত দেশটিতে৷ ইনডেক্সে তাদের অবস্থান নীচের দিক থেকে তৃতীয়৷
ফিনল্যান্ডঃ এবার যাওয়া যাক, তালিকার উপরের দিকের অবস্থা৷ গত পাঁচবছর ধরেই প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্সের শীর্ষে অবস্থান করছে ফিনল্যান্ড৷ দেশটির গণমাধ্যম সবচেয়ে বেশি স্বাধীনতা উপভোগ করে৷ তবে সেদেশের অধিকাংশ পত্রিকা দু’টি মিডিয়া গ্রুপের মালিকানায় রয়েছে৷
নেদারল্যান্ডসঃ প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্সে গত একবছরে দু’ধাপ এগিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে চলে এসেছে নেদারল্যান্ডস৷ দেশটির গণমাধ্যমের স্বাধীনতা আইনিভাবে নিশ্চিত করা হয়েছে৷
বাংলাদেশঃ বাংলাদেশে গতবছর চারজন ব্লগার এবং প্রকাশক খুন হওয়ার পরও প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্সে কিঞ্চিৎ উন্নতি ঘটেছে৷ আগের বছরের তুলনায় দুই ধাপ এগিয়ে দেশটির অবস্থান এখন ১৪৪তম, তবে গ্লোবাল স্কোর কমেছে মাইনাস ২ দশমিক ৯৯ শতাংশ৷
সাংবাদিকদের অধিকার বিষয়ক সংগঠন কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্ট (সিপিজে)-র বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, সাংবাদিকরা ২০১৬ সালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন৷ উক্ত বছর সর্বোচ্চ সংখ্যক সাংবাদিককে কারাবন্দি করা হয়৷ সিপিজে-র বাৎসরিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৬ সালে কমপক্ষে ২৫৯ সাংবাদিককে কারাবন্দি করা হয়৷ আগের বছর এই সংখ্যাটি ছিল ১৯৯৷
সাংবাদিকদের অধিকার বিষয়ক বেসরকারি এবং অলাভজনক সংগঠন ’কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্ট ’ (সিপিজে) যাত্রা শুরু করে ১৯৮১ সালে৷ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাকস্বাধীনতার পরিস্থিতি এবং সাংবাদিকদের উপর হামলার তথ্যাদি বার্ষিক প্রতিবেদনে তুলে ধরে সংগঠনটি৷
বাংলাদেশের দু’জন সাংবাদিক এখনও কারাবন্দি রয়েছে বলে জানিয়েছে সিপিজে৷ সাপ্তাহিক ব্লিটস পত্রিকার সম্পাদক সালাহউদ্দিন শোয়েব চৌধুরী ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে জেলে রয়েছেন৷ অন্যদিকে, একুশে টেলিভিশনের মালিক আব্দুস সালাম জেলে আছেন ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাস থেকে৷
২০১৫ সালে সারা বিশ্বে মোট ১১০ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স বা আরএসএফ৷ তাদের মধ্যে অনেকে যুদ্ধপীড়িত এলাকায় মারা গেলেও অধিকাংশ প্রাণ হারিয়েছেন তথাকথিত ‘শান্তির’ এলাকায়৷
এরও আগের বছর অর্থাৎ ২০১৪ সালে ৬৭ জন সাংবাদিক কর্মরত অবস্থায় প্রাণ হারিয়েছেন৷ এক্ষেত্রে সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশ ছিল ইরাক ও সিরিয়া, যেখানে যথাক্রমে ১১ জন ও ১০ জন সাংবাদিক মারা গেছেন৷ তারপরই আসছে ফ্রান্স, প্যারিসের শার্লি এব্দো হত্যাকাণ্ডের কারণে৷
এপিবি/ডিজি (এপি, এএফপি, রয়টার্স)