হাসিনার সফর নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে অন্তহীন ভাবনা।
নিউইয়র্ক থেকে ড ওমর ফারুক। তারিখঃ ২৮ মে ২০১৮।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দু’দিনের ভারত সফর শেষ করে দেশে ফিরেছেন। এ সফরকে কেন্দ্র করে ভারতীয় রাজনীতিক ও বুদ্ধিজীবীদের একটা আগ্রহ ছিল। কারণ আর কয়েক মাস পরই বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে একটি সাধারণ নির্বাচন। তাই নির্বাচনের আগে দু’পক্ষের মধ্যে কী ধরনের কথাবার্তা হয়, সেটা নিয়ে ছিল ব্যাপক কৌতূহলও।
শেখ হাসিনা গিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে। সেখানে তিনি বাংলাদেশ ভবনের উদ্বোধন করেছেন। আসানসোলে কবি কাজী নজরুলের নামাঙ্কিত একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিয়েছেন ওনারারি ডিলিট। এ রকমই খবর বিবিসির
কিন্তু রাজনৈতিক মহলের দৃষ্টি নিবদ্ধ ছিল দুটো বৈঠকের দিকে। প্রথমটি ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং পরের বৈঠকটি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির সাথে। মি. মোদীর সাথে রোহিঙ্গা ইস্যুতে আর মমতা ব্যানার্জির সাথে তিস্তা নদীর পানি বণ্টন প্রসঙ্গে কী কথা হয়, সে সবই ছিল সকলের জানার আগ্রহ।
টাইমস অফ ইন্ডিয়ার শিরোনাম ছিলঃ “Sheikh Hasina, Mamata Banerjee hold talks but skirt Teesta water-sharing issue.” অর্থাৎ “শেখ হাসিনা, মমতা ব্যানার্জির আলোচনা। কিন্তু তিস্তার পানি ভাগাভাগির বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন।” টাইমস অফ ইন্ডিয়া লিখেছে, “হাসিনা চান ২০১৮ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগেই তিস্তা নদীর পানি ভাগাভাগি নিয়ে চুক্তিটি হয়ে যাক। মমতার দিক থেকেও কিছু বিবেচ্য বিষয় রয়েছে। উত্তর বঙ্গের যে সব জেলা কৃষির জন্য তিস্তার জলের উপর নির্ভরশীল, সেখানকার স্বার্থের কথাও মুখ্যমন্ত্রী ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে এড়িয়ে যেতে পারেন না।”
শেখ হাসিনা শান্তিনিকেতনে কিছু একটা বলতে গিয়েও সে সব বলেন নি। বক্তব্যের এক পর্যায়ে নিজেকে সংবরণ করে বলেছেন, কিছু কথা আছে, যেগুলো বলে তিনি সুন্দর অনুষ্ঠানকে নস্যাৎ করতে চান না। শেখ হাসিনা সেদিন কিছু না বলেও তিনি যে অনেক কিছুই বলে গেছেন, সেটা ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমেও প্রকাশ পেয়েছে।
আনন্দবাজার পত্রিকার শিরোনাম ছিল, ‘দিল্লির পাশে থেকেছে ঢাকা, মোদীর কাছে ‘প্রতিদান’ চান হাসিনা।’ https://www.anandabazar.com/national/sheikh-hasina-said-various-pending-issues-between-india-and-bangladesh-1.805857
পত্রিকাটি লিখছে, “মোদীর সঙ্গে বৈঠকে হাসিনা জানিয়েছেন- তাঁর সরকার উত্তর-পূর্বের জঙ্গিদের দেশ ছাড়া করেছে, ট্রানজিট দিয়েছে, আন্তর্জাতিক মঞ্চে বরাবর দিল্লীর পাশে থেকেছে। বাংলাদেশের নির্বাচনের বছর এ বার তাই ভারতের সহযোগিতা চাই।” হাসিনা আবেগ দিয়ে আরও যা বুঝাতে চেয়েছে, তা হল তার দেশের মানুষের চিন্তা ও চেতনাকে পাশ কাটিয়ে হলেও তিনি ও তার দল আওয়ামী লীগ সবসময়ই ভারতের পাশে থাকতে চান।
কোলকাতা থেকে ঢাকা পোস্ট এর নিজস্ব প্রতিনিধি উদয়ন আচার্য জানান, “তিনি আরও বার্তা দিতে চাইলেন, বাংলাদেশে তার দলের জনসমর্থন কম থাকায় স্বাভাবিক নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় তার দল বা তার পক্ষে ক্ষমতায় আসা কঠিন। সেজন্য তিনি কোন রাখঢাক না করেই এবারের নির্বাচনেও ভারতের সহযোগিতায় ক্ষমতায় আসতে চান। তিনি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির একটি প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনে সরকার গঠন করেন। সে নির্বাচন দেশের প্রধান বিরোধীদলগুলো অংশ নেয় নি। আন্তার্জাতিক পরিমণ্ডলে সে নির্বাচন বাংলাদেশ ভারত ছাড়া আর কোন রাষ্ট্রের কাছ থেকে স্বীকৃতি আদায় করতে পারে নি।”
আনন্দবাজার পত্রিকা বলছে, ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে শেখ হাসিনা কী বলবেন, উপদেষ্টাদের সঙ্গে আগেই সেটা আলোচনা করে ঠিক করে এসেছিলেন। শেখ হাসিনার দফতরের এক সূত্রের কথা উল্লেখ করে পত্রিকাটি লিখেছে, “হাসিনার বার্তা- মুক্তিযুদ্ধের শক্তিকে সরাতে, বাংলাদেশকে ফের পাকিস্তান বানানোর চক্রান্ত চলছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতা হারালে পশ্চিমে আর পূবে- দু’দিকেই পাকিস্তান নিয়ে ঘর করতে হবে ভারতকে। তাই ভারতের উচিত বাংলাদেশের বর্তমান সরকারই যাতে ক্ষমতায় ফেরে, সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা।” সোজা কথা, হাসিনা বাংলাদেশের পরবর্তী নির্বাচনে তারে দলকে জেতানোর জন্য ভারতের সরাসরি হস্তক্ষেপ চান।
ভারতের জনপ্রিয় টেলিভিশন চ্যানেল এনডিটিভি বলছে, “শেখ হাসিনা চুপ ছিলেন তিস্তা নিয়ে আর প্রধানমন্ত্রী মোদি নীরব রোহিঙ্গা ইস্যুতে।” টেলিভিশন চ্যানেলটি তাদের ওয়েবসাইটে লিখেছে, “দুজন প্রধানমন্ত্রী এবং একজন মুখ্যমন্ত্রী এক সাথে মঞ্চে ছিলেন চার ঘণ্টা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নীরবতার জয় হল।”
শেখ হাসিনার এ বক্তব্যের কথা উল্লেখ করে এনডিটিভি লিখেছে, “কোন শব্দ উচ্চারণ না করেই বার্তা দেওয়ার দারুণ একটি উদাহরণ হতে পারে এটি। তিস্তা শব্দটি উচ্চারণ না করেও বার্তাটি দিয়ে দিয়েছেন তিনি। আরেকটি শব্দ তিনি বারবার বলেছেনঃ রোহিঙ্গা। শেখ হাসিনা এই সঙ্কটে ভারতের ইতিবাচক ভূমিকা দেখতে চেয়েছেন।”
কিন্তু এনডিটিভি বলছেঃ “প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তিস্তা কিংবা রোহিঙ্গা কোনটিই মুখে নেন নি। তবে তিনি বলেছেন, শেখ হাসিনার লক্ষ্য বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করা। এজন্য ভারতের সর্বাত্মক সহযোগিতা রয়েছে।”
firstpost.com এ ভিজিট সম্পর্কে এ নিবন্ধ প্রকাশ করেছে এমন,
https://www.firstpost.com/india/sheikh-hasinas-india-visit-rohingya-teesta-water-connectivity-to-feature-in-informal-summit-with-narendra-modi-4477181.html