সৌদি যুবরাজের অপতৎপরতায় খুশি ট্রাম্প। যুবরাজকে উষ্ণ অভিনন্দন ট্রাম্পের।
নিউইয়র্ক থেকে ড ওমর ফারুক ।।
৮ নভেম্বর, ২০১৭।।
[মঙ্গলবার রাতে এক ব্রিটিশ দৈনিকে আবার সৌদি সরকারকে উদ্ধৃত করে দাবি করা হয়, আব্দুল সুস্থ শরীরে বেঁচে রয়েছেন। দৈনিকটিতে লেখা হয়েছে, সৌদি সরকার আব্দুলের মৃত্যুর খবর গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছে। সেই খবরটি বাংলাদেশি অনেক অন্ধ সৌদি আরব ভক্ত সামাজিক যোগােযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করে প্রচারের ব্যবস্থা করতে দেখা গেছে। সেক্ষেত্রে আমার ফেসবুক ওয়ালেও ট্যাগ করেছে। ]
দুর্নীতি দমনের নামে সৌদি প্রশাসনের এলিট শ্রেণির উপর দমন নিপীড়ন ও ক্রস ফায়ারে হত্যা, এবং নিরীহ অভিজাত নাগরিকেদের ধরপাকড়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প উদ্বেগ প্রকোশের বদলে বেজায় খুশি হয়েছেন তিনি টুইটারে গতকাল, ৭ নভেম্বর, রাতে জানিয়েছেন, যুবরাজের নেতৃত্বাধীন দুর্নীতি দমনের এরকম গোটা প্রক্রিয়াটিতে তাঁর সম্পূর্ণ আস্থা রয়েছে। তাঁর টুইট, ‘‘রাজা সালমন এবং যুবরাজ মহম্মদ বিন সালমনের প্রতি আমার অসম্ভব বিশ্বাস। ওঁরা জানেন, ওঁরা ঠিক কী করছেন। ওঁরা আজ যাঁদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করছেন, তাঁরা এতদিন নিজের দেশ থেকে প্রচুর সুযোগ সুবিধা নিয়েছেন।’’
এদিকে সৌদি প্রশাসন ইঙ্গিত দিয়েছে, এ ধরপাকড় এখনই থামবে না। যেখানে যেখানে প্রয়োজন, যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে তারা। রাজ সিংহাসনে বসার আগে যুবরাজ সালমান ধীরে ধীরে এ ভাবেই কর্তৃত্ব বাড়ানোর কাজ করে চলছেন বলে কূটনৈতিক মহলের দাবি। তবে সেই প্রক্রিয়ার মধ্যেই ক্রমশ ঘটনাবহুল হয়ে পড়ছে সৌদি রাজনীতি। গতকালের খবর হলঃ ইয়েমেন সীমান্তের কাছে কয়েক জন অফিসারের সঙ্গে সৌদি রাজকুমার মনসুর বিন মকরেনকে নিয়ে মাঝ আকাশে ভেঙে পড়েছে একটি হেলিকপ্টার। রবিবারের সেই ঘটনায় রাজকুমার প্রাণ হারিয়েছেন বলে জানানো হয়। অনেকই আশংকা প্রকাশ করছেন যে, আসলে পরিকল্পিতভাবে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে।
এ ঘটনার রেষ না কাটতেই, ২৪ ঘণ্টা পার হতে না হতেই, একটি সূত্র দাবি করেছে, রাজা ফাহদের ছোট ছেলে ৪৪ বছর বয়সি রাজকুমার আব্দুল আজিজ মারা গিয়েছেন। গত রবিবার অন্য রাজকুমারদের সঙ্গে গ্রেফতার করা হয়েছিল তাঁকেও। আরবি সংবাদ সংস্থা ‘আলতাহাদ নিউজ’কে উদ্বৃত করে একটি সূত্র জানিয়েছে, গ্রেফতারের পর গুলির লড়াইয়ের মত ঘটনা ঘঠিল। এতে জানানো হয়, আব্দুল আজিজ হাসপাতালে ভর্তি। এরপর আল মসদার নিউজ নামে এক সংস্থা আজিজের মৃত্যুর খবর দিলেও পরে তারা সেটি সরিয়ে দেয় ওয়েবসাইট থেকে। মঙ্গলবার রাতে এক ব্রিটিশ দৈনিকে আবার সৌদি সরকারকে উদ্ধৃত করে দাবি করা হয়, আব্দুল সুস্থ শরীরে বেঁচে রয়েছেন। দৈনিকটিতে লেখা হয়েছে, সৌদি সরকার আব্দুলের মৃত্যুর খবর গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছে। সেই খবরটি বাংলাদেশি অনেক অন্ধ সৌদি আরব ভক্ত সামাজিক যোগােযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করে প্রচারের ব্যবস্থা করতে দেখা গেছে। সেক্ষেত্রে কে যেন আমার ফেসবুক ওয়ালেও ট্যাগ করেছে । অথচ শুধু আবদুল সুস্থ শরীরে বেঁচে থাকলেই বা কি হবে, সমগ্র সৌদি আরবে এখন ’মানবাধিকার’ মৃত হতে চলেছে। দেশটিতে সালমান একচ্চত্র একনায়কতন্ত্র কায়েম করতে মরিয়া হয়ে সেখানে চরম দমন ও নিপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে।
গত শনিবার ধৃত রাজকুমার এবং মন্ত্রীদের কিছু ছবি প্রকাশ্যে এসেছে। যাতে দেখা গিয়েছে, রিয়াদের পাঁচতারা হোটেল রিৎজ-কার্লটনের একটি হলঘরের মেঝেতে পাতা সারি সারি বিছানায় পর পর ঘুমিয়ে আছেন রাজকুমাররা! কয়েকশ কোটির মালিক ধনকুবের রাজকুমার আল ওয়ালিদ বিন তালালও রয়েছেন সেখানেই। সৌদি প্রশাসন ঘনিষ্ঠ এক সূত্রের দাবি, রাজপরিবারের জন্য কোনও জেলখানা নেই এ দেশে। আল ওয়ালিদ এক সময় ট্রাম্পের সঙ্গেও ব্যবসা করেছেন। কিন্তু এখন ট্রাম্প তাঁর কড়া সমালোচক। শনিবার রাজকুমার-মন্ত্রীদের গ্রেফতারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে যুবরাজ মহম্মদ বিন সালমনের সঙ্গে ফোনে ট্রাম্পের কথা হয়েছে বলে দাবি মার্কিন সূত্রে। ট্রাম্প তখনও মহম্মদের প্রশংসা করেন।
সৌদি আরবে রাজকুমার সালমান কর্তৃক নিজ দেশের অভিজাত নাগরিকদের ওপর দমন, গ্রেফতার ও হত্যার মত ঘটনাকে আমেরিকার মত পরাশক্তি প্রতিবাদ না করে উল্টো সমর্থন দেওয়ার মধ্য দিয়ে আবারও প্রমাণিত হল যে, এ সব পরাশক্তিগুলো আসলে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা চায় না, বরং নিজ স্বার্থে যে কোন ইভিল ফোর্সকে বা যে কোন স্বৈরশাসকদের তারা সমর্থন দিয়ে যায়। মানবাধিকারের প্রবক্তা সাজাটা তাদের একটা বাহানা মাত্র।