সেই তরুণী এখনও ডিআইজি মিজানের বাসায়!

January 11, 2018 6:03 pm0 commentsViews: 12

সেই তরুণী এখনও ডিআইজি মিজানের বাসায়!

সেই তরুণী এখনও ডিআইজি- নারী কেলেঙ্কারির ঘটনায় আলোচিত পুলিশের ডিআইজি মিজানুর রহমানের গাড়িচালক ও তার অন্যতম সহযোগী গিয়াস উদ্দিনের ভাড়া করা বাসাতেই থাকতে হচ্ছে অভিযোগকারী মরিয়ম আক্তার ইকোকে।

গত ১ জানুয়ারি তিনি বছিলার ২ নম্বর সড়কের ১ নম্বর ভবন ‘বিসমিল্লাহ নিবাসে’র দোতলার ওই ফ্ল্যাটে থাকতে শুরু করেন। তার সঙ্গে ‘বাবা’ পরিচয়ে থাকছেন কনস্টেবল গিয়াস উদ্দিনও।

মিজানুরের পক্ষ থেকে তিনি ১৩ হাজার টাকায় বাসাটি ভাড়া নেন। গতকাল বুধবার সরেজমিনে সেখানে গিয়ে জানা যায় এসব তথ্য। এর আগে নারী কেলেঙ্কারির খবর প্রকাশের পর থেকে ইকোর অবস্থান জানা যাচ্ছিল না।

সংশ্নিষ্ট সূত্র জানায়, ইকো যেন নতুন করে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে না পারেন, সে জন্য সব সময় তার সঙ্গে নিজের লোক গিয়াসকে রেখে দিয়েছেন মিজানুর। পুলিশ সদস্য গিয়াস মিজানুরের সব কাজের সহযোগী। তিনি ইকোর সঙ্গে মিজানুরের বিয়ের উকিল বাবা। এর আগে তার সহায়তায় নির্যাতনের অভিযোগ তুলেছিলেন ইকো।

মরিয়ম আক্তার ইকোকে তুলে নিয়ে নির্যাতন ও পরে জোর করে বিয়ের অভিযোগ ওঠে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে।

এরপর মঙ্গলবার তাকে ওই পদ থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়। ইকো ছাড়াও একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের এক সংবাদ পাঠিকাকে অস্ত্রের মুখে গাড়িতে ওঠান তিনি।

সংশ্নিষ্টরা জানান, বিয়ের পর গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে লালমাটিয়ার সি-ব্লকের ১/১ নম্বর ভবন মোস্তফা প্যালেসের চতুর্থ তলার সি-৪ নম্বর ফ্ল্যাট ভাড়া করে দেওয়া হয় ইকোকে।

বাড়িওয়ালার সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী ফ্ল্যাটের প্রতি মাসের ভাড়া ছিল ৫০ হাজার টাকা। সেখানে প্রতিদিন না হলেও নিয়মিতই যেতেন মিজানুর। সাধারণত তিনি মধ্যরাতের দিকে যেতেন, আবার ভোরবেলায় চলে আসতেন।

ওই বাসার নিরাপত্তাকর্মী মুকুল সমকালকে জানান, শেষের দিকে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দফায় দফায় কলহ হয়। সে খবর নিরাপত্তাকর্মীদের কানেও এসে পৌঁছে। ডিসেম্বরে খুব কম এসেছেন মিজানুর।

তারা ঠিকঠাক ভাড়াও দিচ্ছিলেন না। পরে ডিসেম্বরের শেষে বাসা ছেড়ে দেন ইকো। এ সময় অনেক রিকশাভ্যানে করে মালপত্র বছিলার কোনো এক বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়।

নিরাপত্তাকর্মীর কথার সূত্র ধরে অবশেষে বছিলার মেট্রো হাউজিং এলাকার ওই বাসার সন্ধান মেলে। বাসার তত্ত্বাবধায়ক আবদুর রব সমকালকে জানান, গিয়াস নামের একজন দোতলার একটি ফ্ল্যাটে ১ জানুয়ারি উঠেছেন।

নিজের পরিচয় হিসেবে জানিয়েছেন, তিনি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারের কার্যালয়ের কর্মকর্তা। তার সঙ্গে তার মেয়ে ইকোসহ আরও দু’জন থাকেন। ইকো প্রায় প্রতিদিনই সকালে বাসা থেকে বের হন এবং সন্ধ্যা বা রাতে ফেরেন। গতকালও সকালে তিনি বাসা থেকে বেরিয়ে যান।

নিচতলায় তত্ত্বাবধায়কের সঙ্গে এ প্রতিবেদকের কথোপকথনের সময়ই বাসায় ঢোকেন গিয়াস। এরপর দোতলায় তার ফ্ল্যাটের দরজায় করাঘাত করা হলে তিনি দরজা খোলেন।

তবে সাংবাদিক পরিচয় শুনে তিনি দাবি করেন, ইকো নামের কেউ সেখানে থাকেন না, তার নামও গিয়াস নয়। কিছুক্ষণ পর ওই বাসায় ইকোর থাকার বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে আবারও তাকে ডাকা হয়। ‘আপনিই তো গিয়াস, মিথ্যা বলছেন কেন?’

এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি ক্ষেপে গিয়ে বলেন, ‘আমি গিয়াস তো কী হইছে?’ ইকোর সঙ্গে সাক্ষাতের আগ্রহ প্রকাশ করলে তিনি বলেন, ইকো বাসায় নেই। কখন আসবেন, তিনি জানেন না। এরপর তিনি দরজা বন্ধ করে দেন। এই কথোপকথনের ভিডিও রেকর্ড সমকালের কাছে রয়েছে।

কনস্টেবল গিয়াস উদ্দিন ফ্ল্যাট ভাড়া নেন বলে বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক জানালেও মালিক আবদুল হাকিম বলেন ভিন্ন কথা। তার দাবি, তত্ত্বাবধায়ক ‘সহজ-সরল’ মানুষ, তাই ওইসব বলেছেন।

আসলে গিয়াস হয়তো বাসা ভাড়া নেওয়ার জন্য সেখানে গিয়েছিলেন। তবে ভাড়া নেন ইকোর মা কুইন তালুকদার। তিনি ইকোকে অবিবাহিত বলেও জানিয়েছিলেন। গতকাল তাদের বাসা ছাড়ার নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে, মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারির অনেক অভিযোগ রয়েছে। তিনি উঠতি মডেল, টেলিভিশন উপস্থাপিকা বা শোবিজের সুন্দরী তরুণীদের ফাঁদে ফেলে সর্বনাশ করতেন বলে জানা যায়।

অনেকের সঙ্গে সখ্য গড়ে বিদেশেও বেড়াতে নিয়ে যেতেন। এ ছাড়া সিলেটে ডিআইজি হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে অনেক নারী পুলিশ সদস্যকে হেনস্তা করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

এসআই নিয়োগ পরীক্ষার সময় হলের ভেতরে এক নারী প্রার্থীর ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বর চেয়ে বসেন মিজানুর। পরে ওই নারী তার স্বামীকে বিষয়টি জানান। তবে মিজানুর পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে তারা কোনো অভিযোগ জানাননি।

সাংবাদিকসহ তিনজনকে হত্যার পর আত্মহত্যার হুমকি :মিজানুরের সঙ্গে এক তরুণীর ফোনালাপের অডিও রেকর্ড পাওয়া গেছে। তাতে সাংবাদিকসহ তিনজনকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেছেন মিজানুর। একপর্যায়ে তাদের গুলি করে হত্যার পর আত্মহত্যা করারও হুমকি দেন তিনি।

এদিকে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যুগান্তরের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক নেসারুল হক খোকন ও যমুনা টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি আব্দুল্লাহ তুহিনকে হত্যার হুমকি দিয়েছেন ডিআইজি মিজানুর। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন ক্র্যাব সভাপতি আবু সালেহ আকন ও সাধারণ সম্পাদক সরোয়ার আলম।

সূত্র: সমকাল।

Leave a Reply

You must be logged in to post a comment.

Editor in Chief: Dr. Omar Faruque

Editor: Dr. Morjina Akhter

All contact: 400E Mosholu Parkway South Apt # A23,The Bronx, New York 10458, USA

Mob. 001.347.459.8516
E-mail: dhakapost91@gmail.com