সুরেন্দ্র কুমার সিনহাই তো সিরিয়াল জুডিশিয়াল কিলিংয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন !

September 20, 2018 9:44 pm0 commentsViews: 23

ওয়ালিউল্লাহ নোমান

গলা ধাক্কা দিয়ে দেশ থেকে বের করে দেয়া সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার প্রকাশিত বইটি গতকাল থেকে পড়ছি। বইটিতে তাঁর জীবনের বিভিন্ন অধ্যায় রচনা করেছেন। সেনা গোয়েন্দা সংস্থা তাঁকে গলা ধাক্কা দিয়ে দেশ থেকে বের করে দিয়েছেন সেটাও বলেছেন অকপটে।

তাঁকে ধন্যবাদ দিতে হয়, তিনি ৯ নম্বর চ্যাপ্টারটির জন্য। এই চ্যাপ্টারে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের নেপথ্যে থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন সবিস্তার। এতে মনের অজান্তে হলেও স্বীকার করে নিয়েছেন জুডিশিয়াল কিলিংয়ের মহানায়কদের একজন তিনি। সিরিয়াল জুডিশিয়াল কিলিংয়ের অদৃশ্য নেতৃত্বে ছিলেন এবং সরকারের সাথে এনিয়ে তাঁর সখ্যতা ছিল সেটাও বলেছেন।

তিনি উল্লেখ করেছেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের নেপথ্যে মুল ভুমিকা রেখেছেন। সাবেক বিচারপতি আবদুর রশিদ এবং তিনি ট্রাইব্যুনাল গঠন, প্রসিকিউটর নিয়োগ থেকে শুরু করে বিভিন্ন সুপারিশ তৈরি করে দিয়েছেন সরকারকে। প্রসিকিউটর রানাদাশ গুপ্তকে তিনি ট্রাইব্যুনালের বিচারক হিসাবে মনোয়নের সুপারিশ করেছিলেন। রানাদাশ গুপ্তের জায়গায় সাবেক জেলাজজ একেএম জহিরকে ট্রাইব্যুনালের বিচারক নিয়োগ সঠিক ছিল না, সেটা পরবর্তীতে প্রমাণিত করতে পেরেছেন। সেই তৃপ্তির ঢেকুরও দিয়েছেন বইয়ের এই অধ্যায়ে। কারন এ কে এম জহির তাদের পছন্দের তালিকা থেকে এ পদে আসেনি। তবে জিহর সাহেবকে আইনমন্ত্রী কিভাবে ডেকে নিয়ে ট্রাব্যুনালের বিচারকের পদ থেকে বিতাড়িত করেছিলেন সেটা চাপিয়ে গেছেন! আঁচ করা যায় জহির সাহেবকে বিতাড়িত করার নেপথ্যেও তাঁর যথেষ্ট ভুমিকা ছিল।

স্কাইপ স্ক্যান্ডালে নিজামুল হক নাসিমের কন্ঠে উঠে আসা তাঁর প্রসঙ্গটিও আলোকপাত করা হয়েছে। বিভিন্ন চালাকি এবং মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে কিভাবে বিষয়টিকে অতিক্রম করেছেন সেটাও বলা হয়েছে এ অধ্যায়ে। তাঁর বিষয়ে আপিলে আসামীদের পক্ষ থেকে আপত্তি উত্থাপন করা হয়েছিল। তাতে তিনি বিব্রত হননি এটাও বলেছেন।

তিনি নিজেই এই অধ্যায়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী দখলদার প্রধানমন্ত্রীর সাথে তাঁর সখ্যতার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল গঠনের প্রস্তাব নিয়ে সাবেক পরিকল্পনা মন্ত্রী এ কে খন্দকার এবং সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমদ শেখ হাসিনার কাছে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছিলেন। শফিক আহমদ শেষ পযন্ত তাঁর ষ্মরণাপন্ন হন শেখ হাসিনাকে বিষয়টি বোঝানোর জন্য। শফিক আহমদের অনুরোধে শেখ হাসিনার সাথে দেখা করে বিষয়টি বুঝিয়ে আদায় করে নিতে সফল হয়েছিলেন। দুইজন মন্ত্রী যেখানে ব্যর্থ সেখানে শেখ হাসিনার কাছে সুরেন্দ্র কুমার সফল! শেখ হাসিনার কতটা ঘনিষ্ঠ তিনি ছিলেন এখান থেকে কিছুটা আঁচ করা যায়।

দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল গঠন এবং বিচারক হিসাবে ইনায়েতুর রহিম ও ওবায়দুল হাসানকে সেখানে নিয়োগের বিষয়টিও তাঁর পছন্দেই হয়েছিল। দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল গঠনের জন্য প্রসিকিউটর নিয়োগের বিষয়টিও তাঁর সুপারিশে হয়েছিল।

সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল গঠনের জন্য শেখ হাসিনার কাছে প্রস্তাবের পর শেখ হাসিনা তাঁকে ১৫/২০ মিনিট ধরে জবাব দিয়েছেন। এতে তিনি নাকচ করে দিয়েছেন এবং বলেছিলেন এই বিচার এবং ট্রাইব্যুনাল শুধুমাত্র নির্বাচনী ওয়াদা পুরনের জন্য গঠন করা হয়েছে। এর বেশি কিছু করতে তিনি প্রস্তুত নন। এপ্রসঙ্গে শেখ হাসিনার যুক্তির কিঞ্চিত তিনি উল্লেখ করেছেন।

এর মধ্যে শেখ হাসিনার একটি যুক্তি ছিল বহু বছর আগের এই ঘটনা। এর অনেক স্বাক্ষী বেঁচে নেই। সুতরাং এনিয়ে বেশি দূর আগানো যাবে না। কিভাবে স্বাক্ষী তৈরি করতে হয়, এবং করা যায় সেটা তাঁকে বুঝিয়েছেন সুরেন্দ্র কুমার। এজন্য তিনি পিতা শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলার বিচারের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তাঁকে বুঝিয়েছিলেন। এও বলেছিলেন, শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলায় নিম্ন আদালতের বিচারে অনেক ত্রুটি ছিল। আপিলে চুড়ান্ত শুনানীতে তিনি সেগুলো অতিক্রম করে দিয়েছেন। শেখ মুুজিবুর রহমান হত্যা মালার চেয়েও এই বিচার সহজ। কারণ হিসাবে তিনি দেখিয়েছেন, কে লিখল, কারা লিখল কোন বিষয় নয়। পুরাতন পত্র পত্রিকা ও বই পুস্তক তৈরি করে সাক্ষী হিসাবে হাজির করা যাবে।

শেখ হাসিনা শেষ পর্যন্ত তাঁর কথায় অনুপ্রাণিত হন এবং দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল গঠন ও বিচারকে এগিয়ে নিতে সম্মত হন।

গতকাল আমি ট্রাইব্যুনালে দন্ডপ্রাপ্ত দুইজনের বিচার কিভাবে আপিলে চুড়ান্ত হয়েছিল সেই প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছিলাম। আপিলে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী এবং আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসি চুড়ান্ত করার ক্ষেত্রে সুরেন্দ্র কুমারের প্রকাশ্য ভুমিকার সেটার কিঞ্চিত উদাহরণ গতকাল টেনেছিলাম। তাই আজ আর এখানে উল্লেখ করে বিরক্তি ঘটাতে চাই না।

আমার প্রশ্ন হচ্ছেঃ

বিচারকের আসনে বসে কি নির্বাহী বিভাগের প্রধানের সাথে এভাবে গভীর সম্পর্ক রাখতে পারেন???

কোন এখতিয়ারে তিনি ট্রাইব্যুনাল গঠনের নেপথ্যে মূল ভুমিকা পালন করেছেন? এটা সম্পুর্ণ নির্বাহী বিভাগের কাজ। একজন বিচারক কিভাবে গোপনে নির্বাহী বিভাগের কাজ করেন?

যিনি ্একটি উদ্দেশ্য নিয়ে বিচার আয়োজনে নেপথ্য ভুমিকা পালন করেছেন, তিনি আবার বিচারকের আসনে বসে চুড়ান্ত রায় দিচ্ছেন। এটার নাম কি ন্যায় বিচার?

তাঁর নিজের এই স্বীকারোক্তির মাধ্যমে কি প্রমাণ হয় না যে, তিনি নিজে জুডিশিয়াল কিলিংয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন?

কেউ যদি আমার এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দেন, তাইলে খুশি হব।

 

Leave a Reply

You must be logged in to post a comment.

Editor in Chief: Dr. Omar Faruque

Editor: Dr. Morjina Akhter

All contact: 400E Mosholu Parkway South Apt # A23,The Bronx, New York 10458, USA

Mob. 001.347.459.8516
E-mail: dhakapost91@gmail.com