‘সুবোধ’কে জেলে পাঠিয়ে নিশ্চিন্তে এখন সরকার

November 4, 2017 9:56 am0 commentsViews: 198

কুমারেশ হালদার।। ৩ নভেম্বর ২০১৭।।

‘সুবোধ’কে জেলে পাঠিয়ে নিশ্চিন্তে সরকার

টানা দশ মাস ধরে সরকারকে বিব্রত করে বারবার সংবাদ শিরোনামে এসেছিল অজ্ঞাত পরিচয় শিল্পীরা৷ ‘সুবোধ’ নামেই পরিচিত সেই শিল্পীদের তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে৷ মহানগর ঢাকার দেওয়াল জুড়ে বিভিন্ন ইঙ্গিতপূর্ণ ছবি ও লেখা ‘সুবোধ তুই পালিয়ে যা’ সৃষ্টির পিছনে এরা জড়িত বলেই জানিয়েছে সরকার৷ ধৃতদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হয়েছে৷ যদিও তিন শিল্পীর নাম প্রকাশ করা হয়নি৷ এর জেরে বিতর্ক ফের উস্কে উঠল৷ ঢাকার বুদ্ধিজীবী মহলের দাবি, সরকার এবার নিজেই গুজব ছড়াতে শুরু করল৷

সুবোধ জঙ্গি, সন্ত্রাসী এমনকি আন্ডারওয়ার্ল্ডের গডফাদারের থেকেও ভয়ঙ্কর। তার কারণ সে সরাসরি চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে রাষ্ট্রকে। রাষ্ট্রের চরম অপদার্থতাকে। সমাজব্যবস্থার বিরুদ্ধে সরাসরি আঙ্গুল তুলে বলছে ‘সুবোধ তুই পালিয়ে যা এখন সময় পক্ষে না’। গত দশ মাস ধরে সে রাষ্ট্রের ব্যর্থতাকে দেওয়াল চিত্রের মাধ্যমে খুব সহজভাবে বলে ফেলছে। এতেই প্রবল বিব্রত শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ সরকার৷ খাঁচায় বন্দি সূর্য নিয়ে উলঙ্গ বুকে পালানো ছোকরাটির জন্যে ঘুম উড়ছে গোটা দেশের।

‘সুবোধ’ সরাসরি চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে রাষ্ট্রকে। রাষ্ট্রের চরম অপদার্থতাকে। সমাজব্যবস্থার বিরুদ্ধে সরাসরি আঙ্গুল তুলে বলছে ‘সুবোধ তুই পালিয়ে যা এখন সময় পক্ষে না’। তার এই বক্তব্য রাষ্ট্রদ্রোহিতার সমান। তাকে ফাঁসি কাঠে ঝোলানো হোক। গত দশ মাস ধরে সে রাষ্ট্রের ব্যর্থতাকে দেওয়াল চিত্রের মাধ্যমে খুব সহজভাবে বলে ফেলছে।

কী বলেছে সুবোধ দেওয়াল চিত্র ? কে এই সুবোধ? বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার দেওয়ালে দেওয়ালে কে বা কারা এঁকে দিয়ে যাচ্ছে সুবোধের ছবি এবং তাকে নিয়ে লিখছে কবিতার লাইন। ‘সুবোধ এখন জেলে! পাপবোধ নিশ্চিন্তে করছে বাস মানুষের হৃদয়ে’। যদিও জেলে পোরা দূরে থাক গোয়েন্দা থেকে প্রশাসন এতদিন সুবোধের টিকিও ছুতে পারেনি বাংলাদেশের তাবড় তাবড় গোয়েন্দারাও। তবে বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে দাবি করা হচ্ছে গত বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে এনে ৫৭ ধারায় গ্রেফতার করা হয়েছে সুবোধের স্রষ্টা এবং তাঁর দুই সহযোগীকে।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকার আগারগাঁওয়ে রাস্তার ধারে এক দেওয়ালে প্রথম সুবোধ ছবি দেখা যায়। ছবিতে এক যুবক পরনে ছেঁড়া জিনসের প্যান্ট, খালি গায়ে লোহার রড ধরে দাঁড়িয়ে আছে। আর তার পাশে লেখা ‘সুবোধ এখন জেলে, পাপবোধ নিশ্চিন্তে বাস করছে মানুষের মনে’ FOL #HOBEKI?। এই ছবি দেখেই স্পষ্টভাবেই বোঝা যায় লোহার রোড ধরে যে দাঁড়িয়ে তার নাম ‘সুবোধ’।

এর পর রাজধানীর আরও বিভিন্ন জায়গায় ইঙ্গিতপূর্ণ ‘সুবোধ ‘ ছবি দেখা যেতে শুরু করে। কোন ছবিতে সুবোধ খাঁচায় বন্দি সূর্য নিয়ে পালাচ্ছে৷ আবার কোনটাতে মনমরা হয়ে বসে আছে। আর তার পাশে ‘সুবোধ তুই পালিয়ে যা তোর ভাগ্যে কিছু নেই’ লাইনের সঙ্গে ওপরে বা নিচে হ্যাস ট্যাগে HOBEKI? কে বা কারা ঢাকার রাস্তার দেওয়ালে এরকম ছবি আঁকছে তা নিয়ে কারও কোনও কিছুই জানা ছিলনা। এত সহজভাবে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিকে তুলে ধরাতে চাপ বাড়ছিল আওয়ামি লিগ পরিচালিত সরকারের। এই গ্রাফিতির বিশ্লেষণ করতে গিয়ে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা কিছুটা নড়েচড়ে বসেন। তাদের ধারণা, এসব গ্রাফিতি আর যাই কিছু হোক, এর যারা রূপকার তাদের নিশ্চয় কোনও না কোনও উদ্দেশ্য আছে।

কে কারা কি উদ্দেশে নিয়ে এই প্রচার চালাচ্ছে তা নিয়ে রহস্যেরও সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে ‘সুবোধ বালক’ রূপকারদের খোঁজে মাঠে নামে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা। লেখালেখি শুরু হয় বিভিন্ন পত্র পত্রিকায়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কিছু দিন থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ সড়কের পাশে দেওয়ালে দেওয়ালে যে ধরনের গ্রাফিতি চিত্র আঁকা হয়েছে। সেই ছবি ও লেখাগুলি পর্যালোচনা করলে মনে হবে অন্ধকার থেকে আলোর পথে বা আলোর সন্ধানে ‘সুবোধ’ চরিত্রের একজন ছুটছেন। বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী মহলের একাংশ মনে করছেন রাষ্ট্রের অনৈতিকতা ও বিশৃঙ্খলতার বিরুদ্ধে সুবোধে দেশের নতুন এক সূর্যোদয়ের নাম।

এই দেওয়াল ছবিকে ‘বিশ্লেষণ’ করতে গিয়ে অনেকে বলছেন অন্ধকারের বিপরীত শক্তিকেই বলা হচ্ছে সুবোধ। আর নির্বোধের বিপরীতে শুভবোধসম্পন্ন একটি চরিত্রকেই ‘সুবোধ’ বলে তুলে ধরা হচ্ছে। আজ যারা কোণঠাসা তারাই সুবোধ। মানুষের মনে সু-বোধের বদলে স্থান পাচ্ছে সংকীর্ণতা, ধর্মান্ধতা, সাম্প্রদায়িকতা, লোভ-লালসা, হিংসা, জিঘাংসা। তাই সুবোধদের বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠছে সমাজ-দেশ। তাই এখন সমাজ থেকে পালিয়ে বাঁচতে চাইছে সুবোধ।

এক সময় অভিযোগ ওঠে, সুবোধ তৈরির পিছনে জড়িত বিরোধী দল বিএনপি৷ কারণ বিভিন্ন রাজনৈতিক মামলায় দলটির বহু শীর্ষ নেতৃত্বকে গ্রেফতার কার হয়৷ তারও পরে কিছু সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বকে পুলিশ হেনস্থা করা হয় বলে অভিযোগ৷ এরই মাঝে আন্তর্জাতিক রিপোর্টে উঠে আসে, বাংলাদেশ জুড়ে শতাধিক মানুষকে অপহরণ করা হয়েছে৷ এদের অনেকেই এখনও নিখোঁজ৷ এসব ঘটনার মাঝেই সুবোধ ছবিতে সরকারকে বিদ্ধ করা শুরু হলে বিতর্ক আরও জমাট হয়৷

সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে উলঙ্গ বুকের ছোকরা ভারতে পোঁছাতে বেশী সময় নেয়নি। খাঁচায় বন্দি সূর্য নিয়ে ফেসবুকের টাইমলাইনে সুবোধের গ্রাফিতি নিয়ে চর্চা চলেছে পশ্চিমবঙ্গেও৷ সেই সুবোধ স্রষ্টা গ্রেফতারের সংবাদে আলোড়িত পশ্চিমবঙ্গের সোশ্যাল মিডিয়া৷

[শশী ঘোষ রচিত কোলকাতা২৪ তে প্রকাশিত নিবন্ধ অবলম্বনে]

Leave a Reply

You must be logged in to post a comment.

Editor in Chief: Dr. Omar Faruque

Editor: Dr. Morjina Akhter

All contact: 400E Mosholu Parkway South Apt # A23,The Bronx, New York 10458, USA

Mob. 001.347.459.8516
E-mail: dhakapost91@gmail.com