সিইসির বক্তব্যে সরকারে অস্বস্তি।
দেশে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের জন্য ২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী শপথ নেয়ার ১৭ মাস পর প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা বললেন, জাতীয় নির্বাচনে কোথাও কোন অনিয়ম হবে না এমন নিশ্চয়তা দেওয়ার সুযোগ নেই। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা যে বক্তব্য দিয়েছেন তার সংবিধান লঙ্খন করেছে সঙ্গে একমত নন পাঁচ সদস্যের কমিশনের চারজন নির্বাচন কমিশনার। সিইসির বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে তারা বলেছেন, সিইসির বক্তব্য পুরোপুরি ব্যক্তিগত। কেননা আমরা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের জন্য শপথ নিয়েছি। উনি যে বক্তব্য দিয়েছেন তা কমিশনের বক্তব্য নয়।
বর্তমান সরকারের অধীনে যে একটিও অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব নয়, সিইসির বক্তব্যে তা ফুটে উঠেছে, শপথ ভঙ্গ করেছে। এতে করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আরও জোরালো হল মনে করছে বিএনপি।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, সিইসি রাষ্ট্রীয় একটি প্রতিষ্ঠানের মূল দায়িত্বে আছেন। বক্তব্য দেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁকে আরও সংযত হওয়া দরকার। সাধারণ সম্পাদক বলেন, ভবিষ্যতে এ ধরনের বক্তব্য দেবেন না।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ইনকিলাবকে বলেন, বর্তমান সরকারে অধিনে নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সিইসিকে সংযত হয়ে কথা বলতে বলেছেন। এতেই বোঝা যায় অবস্থা কী! । সিইসি শপথ ভঙ্গ করেছে। তার পদত্যাগ করা উচিত।
জাতীয় নির্বাচনের কয়েক মাস আগে সিইসির এমন বক্তব্য নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নানা অনিয়মের মুখে নির্বাচন কমিশন (ইসি) নীরব ছিল। এ অবস্থায় সিইসির এ ধরনের বক্তব্য সাধারণ মানুষের মধ্যে আরও আস্থাহীনতা তৈরি করবে। তবে অনেকে মনে করছেন, সিইসির বক্তব্যে ইসির অসহায়ত্ব ও বাস্তবতা প্রকাশ পেয়েছে।
গত মঙ্গলবার নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে প্রতিবন্ধী ভোটারদের নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা বিষয়ক কর্মশালা শেষে সিইসি সাংবাদিকদের বলেন, জাতীয় নির্বাচনে কোথাও কোন অনিয়ম হবে না এমন নিশ্চয়তা দেয়ার সুযোগ নেই।
সিইসির বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় নির্বাচন কমিশনার শাহাদাত হোসেন চৌধুরী ইনকিলাবকে বলেন, আমরা একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের জন্য শপথ নিয়েছি। সিইসির এ ধরনের বক্তব্য কমিশনের বক্তব্য নয়।
নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেন, সিইসি বলেছেন, আমি জানি না সিইসি কেন, কোন প্রেক্ষাপটে কথাটা বলেছেন। এটা তাঁর ব্যক্তিগত অভিমত হতে পারে। আমি এ কথার সঙ্গে মোটেই একমত নই।
নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, নির্বাচন কমিশনার হিসেবে আমরা রাগ-অনুরাগ-বিরাগমুক্ত থেকে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করার শপথ নিয়েছেন। একটা যথাযথ নির্বাচন করতে তাঁরা সবকিছুই করবেন। সিইসির এ বক্তব্যের সঙ্গে কমিশনের কোনো সম্পর্ক নেই।
জানাগেছে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ও এরপর বিভিন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে কেন্দ্র দখলসহ নানা অনিয়মের কারণে নির্বাচনব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছিল। নুরুল হুদার নেতৃত্বে বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর সম্প্রতি যে পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচন হয়, সেগুলোতে নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইসির চেয়ে বড় ভূমিকায় ছিল পুলিশ। এ অবস্থায় জাতীয় নির্বাচনের আগে সিইসির বক্তব্য সরকারেও অস্বস্তি তৈরি করেছে।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সভাপতি ও সাবেক তত্ত্ববাধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করা ইসির সাংবিধানিক দায়িত্ব। সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলোতে গাছাড়া ভাব দেখা গেছে। নির্বাচনে অনিয়ম হবে না, এ নিশ্চয়তা দেওয়া যাবে না, তাহলে নৈতিকভাবে তাঁর পদে থাকা ঠিক হবে না। কিন্তু এখন পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু করার কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি।
বিশিষ্ট আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারে নি, শুধু সরকারের আস্থা অর্জন করেছে। বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন হলে ক্ষমতাসীনেরা ২৫০ থেকে ২৮০টি আসন পাবে, এটা গ্যারান্টি দিয় বলা যায়।
এদিকে বাম গণতান্ত্রিক জোট নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কারের জন্য ৫৪ দফা সুপারিশ করেছে। দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের কোনো সুযোগ নেই। তারা সরকারের পদত্যাগ ও নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের দাবি করেছে। তারা ভোটাধিকার নিশ্চিত করা এবং বিদ্যমান নির্বাচনী ব্যবস্থার আমূল সংস্কার এর প্রস্তাবনা সম্পর্কে মতবিনিময় সভায় জোট এই প্রস্তাব তুলে ধরে।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পাটি (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, সংসদ রেখে অবাধ নির্বাচন হবে না। আওয়ামী লীগ সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে এবং নির্বাচন কমিশনকে ঢেলে সাজাতে হবে।