সামান্য এখতেলাফের কারণে বিষোদগার করা খুব সহজ।।
নিউইয়র্ক থেকে ড ওমর ফারুক। স্থানীয় সময়ঃ ১৮ জুন ২০১৮ রাত ১১টা।
অন্ধ অনুসারী ও শরিয়তের জ্ঞানাহরণে মনোনিবেশহীন জনগোষ্ঠীর সামনে সামান্য এখতেলাফের কারণে বিষোদগার করা খুব সহজ ও বিনোদনপ্রিয় কিছু মানুষের জন্য আমোদ ফূর্তি এবং নিজেকে বিশাল কিছু হিসেবে ভেবে নেওয়া ও অন্ধ অনুকরণকারীদের কাছে নিজেকে পণ্ডিত হিসেবে উপবেশন করা খুব সহজ। কিন্তু অপরিসীম ধৈর্য সহকারে মুফাসসিল, আসিফ, মাসুদ মার্কা মুরতাদদের মত মানসিক বৈকল্যগ্রস্তদের অযৌক্তিক বাক্যালাাপের জবাব দেওয়া বড়ই কঠিন। বিশেষতঃ তারা মহানবী (সাঃ)কে নিয়ে যেসব ম্যিথাচার করে, ঠাণ্ডা মাথায় তাদের জবাব দিয়ে তাদের চিন্তা–চেতনাকে অন্তসার শূন্য হিসেবে প্রমাণ করার মত তৌফিক আল্লাহ তায়ালা সকলকে দেন নি।
তারপর জাকির নায়েকের মত ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষ, এ মহান ব্যক্তির চিন্তা- চেতনা, তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি ও ইসলামকে বাস্তব জীবনে প্রতিষ্ঠার প্রয়াসে তাঁর ঐকান্তিক প্রয়াস সম্পর্কে না জেনে না বুঝে শুধুমাত্র নিজের প্রবৃত্তির খায়েশ পূরণে তাঁর মত দায়ী ইলাল্লাহর সমালোচনা যত সহজ ও বিনোদনের মত বিষয়, নিজেকে বর্তমান বিজ্ঞানের এ অভূতপূর্ব উন্নতি ও সমৃদ্ধির যুগে বাতিলের সামনে ইসলামকে আনচ্যালেঞ্জড হিসেবে উপস্থাপন অত সহজ নয়। মা শা আল্লাহ জাকির নায়েক যে সব বিশাল জনগোষ্ঠীর জটিল ও উপস্থিত প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে অতি স্বাভাবিক ভাবে রেফারেন্সসহ উত্তর দেন, সেটি আল্লাহ প্রদত্ত সাহায্য ও জ্ঞান ছাড়া কোন ভাবেই সম্ভব নয়। শুধু তাই নয়, অনেক সময়, যিনি প্রশ্নকারী, তিনিই ভুল রেফারেন্স দিয়ে জাকির নায়েককে প্রশ্ন করেন, মহান আল্লাহর কুদরতে ডাঃ সাহেব তার ভুল সংশোধনপূর্বক ব্যক্তির প্রশ্নের উত্তর যথাযথ ভাবে ও নির্ভুল ভাবে দিয়ে থাকেন। সাম্পতিক দিনগুলোতে আমি এ সব বিষয় নিয়ে স্টাডি ও বিভিন্ন স্কলারদের বক্তব্য, লেকচার এবং লেখাগুলো গুরুত্ব সহকারে বুঝতে চেষ্টা করি এবং প্রয়োজনে কোরআন ও হাদীসের সাহায্য নিয়ে মিলাতে প্রয়াসী হই। ফলে এ বিষয়গুলো আগে না যতটুকু অনুধাবন করতাম, এখন একটু বেশি উপলব্দি করতে পারি, আলহামদুলিল্লাহ।
দুঃখজনক বিষয় হল, জাকির নায়েক নানা বর্ণ, গোত্র ও ধর্মের যে বিশাল দর্শকদের সামনে আল্লাহ প্রদত্ত বুদ্ধিমত্তা, জ্ঞান, ধৈর্য ও প্রজ্ঞাসহ যুক্তি উপস্থাপন করে যে কোন সহজ ও জটিল প্রশ্নের সমাধান দিয়ে থাকেন, সেটি এক অনন্য ও অসাধারণ বিষয়। স্মরণাতীতকালে জাকির নায়েকের তুলনা মেলা ভার। এ বিষয়গুলো তিনিই উপলব্দি করতে সমর্থ, যাকে আল্লাহ সেই জ্ঞান ও অনুধাবনের শক্তি দিয়েছেন। অন্যরা শুধু বিভ্রান্ত হবে ও বিভ্রান্তি ছড়াবে এবং নিশ্চিতই আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুল কর্তৃক অভিশপ্তদের মধ্যেই গণ্য হবে। আল্লাহ বেশি অবগত ও উত্তম মীমাংসাকারী।
আমার একটি অভিজ্ঞতা এবং এ অভিজ্ঞতা অন্যদেরও, যারা মাদ্রাসা এডুকেশন না হলেও নিরন্তর ইসলামি শরিয়ত নিয়ে বিশেষ করে কোরআন ও হাদীস নিয়ে ব্যাপক পড়াশোনা করে, তা হলঃ যারা বিভিন্ন দায়ী ও ওলামাদের নিয়ে এখতেলাফ করতে গিয়ে খুব বেশি বাড়াবাড়ি করে ও মারমুখি আচরণ দেখায়, তাদেরকে যদি বলা হয়, কোরআন ও হাদীস পড় এবং সেখান থেকে রেফারেন্স দাও। তারা তা পড়তে নারাজ। তারা তাদের বাপদাদা, পির ফকির, মিসকিন কিংবা তুলাতলী দরবার শরিফের রেফারেন্স দিয়ে বিষোদগার করতে দেখা যায়। আর তাদের বাপদাদা যে সব বই লিখে রেখে গেছে, সেগুলোকে ঐশীবাণী হিসেবে পেশ করতে প্রয়াসী হয়। কোরআন ও হাদীস নয়। আর এ সব তুলাতলি পিরের কাজই হল, প্রথমে মানুষকে ইসলামের মৈৗলিক জ্ঞানাহরণে কোরআন ও হাদীসের ওপর নির্ভরশীলতার পরিবর্তে তার রচিত গ্রন্থের ওপর নির্ভরশীল করে তোলা। তাতে করে তার বই বিক্রি হবে, আয় হবে। তদুপরি তার মুরিদেরা যদি সলাত আদায়সহ ইসলামের প্রাথমিক অপরিহার্য অনুশীলনে বিমুখ হয়ে পড়ে, পির সাহেবের জন্য আরও ভাল। তিনি বেশি হাদিয়া পাবেন এর্ং এ হাদিয়ার বিনিময়ে তাদেরকে তিনি বিনা হিসেবে জান্নাতে নিয়ে যাবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে দেন।
আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগে কারও উপর বেশি নির্ভরশীলতা তো দরকার নেই। কোরআন ও হাদীসের জ্ঞান তো সকলের জন্য উন্মুক্ত। যে কেউ নিজে স্টাডি করে জ্ঞান লাভ করতেই পারে। তার যদি একটা লেপটপ থাকে, সেখানে বিশাল লাইব্রেরি পেয়ে যাবে। কোন বিষয়ে সমস্যায় পড়লে হকপন্থী স্কলারের পরামর্শ নিতেই পারে, কিন্তু তার লক্ষ্য থাকা দরকার যে, তার অনুসরণ করতে হবে কোরআন ও হাদীস। বিশেষত ইসলামই পৃথিবীতে একমাত্র জীবন বিধান তথা ধর্ম, যে ধর্মে জ্ঞানাহরণে রয়েছে অবারিত সুযোগ। এখানে কোন পির ফকির, পাদ্রী এ রকম কোন ব্যবধান নেই যে, তিনি বিশেষ জ্ঞান লাবে সমর্থ হতে পারবেন। অন্যরা নয়। মহান আল্লাহ জ্ঞানার্জনের কথা বলেছেন, সে জ্ঞান শুধু যে মাদ্রাসায় গিয়ে ফেকাহ শাস্ত্র পাঠ করে আসলেই আহরণ করা সম্ভব, তা কিন্তু নয়। সময় ও পরিস্থিতির কারণে কেউ সেকুলার শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েও পরবর্তীতে হোম স্টাডি করে এবং আাল্লাহর সাহায্য লাভে জ্ঞানাহরণে সমর্থ হতেই পারে। মহাকবি ইকবালসহ এমন অনেকই আছেন, যারা পরবর্তীতে ইসলামি দর্শণ ও সাহিত্যের ওপর লেখালেখি ছাড়াও ইসলামের অনেক মৌলিক বিষয়ে ঢাউস ঢাউস গ্রন্থ রচনা করেছেন। নিজের জীবনে আমল করেছেন। আল্লাহ আমাদের এ ফেতনার যুগে ইমান ও সহি আমলের সাথে জিন্দেগি যাপনের তৌফিক দিন। আমিন।