সাদা পোশাকে অস্ত্র উঁচিয়ে পুলিশের অভিযান!
সাদা পোশাকে অস্ত্র- বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন চলছিল জাতীয় প্রেসক্লাবের মূল ফটকের বাইরে। প্রেসক্লাব অঙ্গনে তখন ক্ষুদ্র অস্ত্র উঁচিয়ে একদল মানুষের দৌড়াদৌড়ি। অস্ত্রধারীদের কয়েকজন এক ব্যক্তিকে অনেকটা চ্যাংদোলা করে কোথাও নিয়ে যাচ্ছেন, পাশেই অস্ত্র উঁচিয়ে আছেন আরও কয়েকজন। মঙ্গলবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে জাতীয় প্রেসক্লাব অঙ্গনে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে এমন দৌড়ঝাঁপের দৃশ্য দেখে আতঙ্ক ছড়ায় সবার মধ্যে। শেষ পর্যন্ত ‘আমরা পুলিশ’ ‘আমরা পুলিশ’- অস্ত্রধারীদের এমন চিৎকারে স্বাভাবিক হয় পরিস্থিতি। পরে জানা যায়, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবুকে গ্রেফতারের সময় সাধারণ পোশাকে থাকা গোয়েন্দা পুলিশ সদস্যরা এমন কাণ্ড ঘটান। পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের সদস্যরা আসামি গ্রেফতার বা অভিযানে গেলে সাধারণত সাদা পোশাকে থাকেন। তবে জনভীতি দূর করতে তাদের গায়ে জ্যাকেট পরার নির্দেশনা রয়েছে। মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের মত বিশেষ একটি অঙ্গনে অস্ত্র উঁচিয়ে পুলিশের এমন দৌড়াদৌড়ির সময় কারও গায়েই ‘পুলিশ’ বা ‘ডিবি’ লেখা জ্যাকেট দেখা যায় নি। প্রেসক্লাব সীমানায় ঢুকে পুলিশের এমন অ্যাকশনে সৃষ্টি হয় সমালোচনারও। পুলিশ জানায়, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবুকে গ্রেফতার করেছে ডিবি পুলিশ। এর পরই আশপাশের এলাকা থেকে রমনা ও শাহবাগ থানা পুলিশ গ্রেফতার করেছে আরও ছয়জনকে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, দুপুর পৌনে ১২টার দিকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি শেষ না হতেই প্রেস ক্লাবের পূর্ব গেট দিয়ে বের হচ্ছিলেন শফিউল বারী বাবু। ওই সময় সাদা পোশাকে থাকা পুলিশ সদস্যরা ঘিরে ফেলেন তাকে। দৌড়ে তিনি প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণে ঢুকে পড়েন। পুলিশ পিছু নেয় তার। তখন মূল ফটকের ভেতরে থাকা স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মীরা সাংবাদিকদের মোটরসাইকেলের কয়েকটি হেলমেট ছুড়ে মারে সাদা পোশাকের পুলিশকে।
ওই সময়ই অস্ত্র উঁচিয়ে ধাওয়া করে পুলিশ। মুহূর্তের মধ্যেই ফাঁকা হয়ে যায় প্রেসক্লাব এলাকা। পরে বাবুকে টেনে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায় ডিবি পুলিশ। জাতীয় প্রেসক্লাবের একজন কর্মচারি বলছিলেন, সাধারণ পোশাকে থাকা কয়েকজনকে অস্ত্র উঁচিয়ে দৌড়ানোর সময় তারা শুরুর দিকে ভেবেছিলেন সংঘর্ষ শুরু হয়েছে বিএনপির দুই গ্রুপে। এতে প্রেসক্লাবের লোকজন যাতে ভেতর ঢুকতে না পারে সে জন্য মূলফটক আটকে দেন তারা। এক গ্রুপ অস্ত্র নিয়ে কাউকে তাড়া করছে, অন্য গ্রুপ হেলমেট ছুড়ে মারছে- এতে প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে তখন অস্ত্র হাতে থাকা লোকজন নিজেদের পুলিশ পরিচয় দেন। প্রেসক্লাবের ভেতরে সাদা পোশাকের পুলিশের এমন অভিযানের বিষয়ে জানতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার আবদুল বাতেনের সঙ্গে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে তিনি সাড়া দেননি। বিষয়টি নিয়ে ডিবির অন্য কর্মকর্তারাও কথা বলতে রাজি হন নি। এদিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের ডিসি (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান জানান, শফিউল বারী বাবুকে গ্রেফতার করে মিন্টো রোডে গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলা রয়েছে। শাহবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জাফর আলী বিশ্বাস জানান, শফিউল বারী বাবু শাহবাগ ও রমনা থানায় মামলার আসামি। এ ছাড়া আটক অপর ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। যাচাই করে তাদের বুধবার আদালতে হাজির করা হবে। তবে পুলিশের ওই কর্মকর্তা সেগুনবাগিচা এলাকা থেকে আটক অপর ছয়জনের নাম জানাতে পারেন নি