সলাত আদায় না করলে কি হবে?
সলাত বা নামাজ অর্থ নত হওয়া, অবনত করা, বিস্তৃত করা। শরীয়াতের পরিভাষায় রাসূল (সাঃ) নির্ধারিত পদ্ধতিতে, নির্দিষ্ট সময়ের জন্য দাঁড়িয়ে, বসে, উপুড় হয়ে-বিভিন্নভাবে কুরআন পড়া ও দোয়া করাকে সলাত বলা হয়।
নির্দিষ্ট সময়ঃ সুরা নিসায় আল্লাহপাক বলেনঃ ‘‘নিশ্চয়ই সলাত মুমিনদের উপর সময়ের ভিত্তিতে ফরয করা হয়েছে।’’ [৪:১০৩)
সলাত দিনে পাঁচবার ফরযঃ আল্লাহপাক আবার সুরা রোমে বলেন : ‘‘জমিন ও আসমানের সকল প্রশংসা একমাত্র তাঁরই। অতএব তোমরা আল্লাহর তাসবীহ কর (সালাত পড়) সন্ধ্যায় (মাগরিব ও এশা) ও প্রত্যুষে (ফরয) এবং বিকালে (আছর) ও দ্বিপ্রহরে (যোহর)।’’ [৩০:১৭ – ১৮]
তিনি সুরা হুদে আরো বলেনঃ ‘‘সলাত কায়েম কর দিনের দু’ প্রান্তে এবং রাতের কিছু অংশে। অবশ্যই পুণ্য কাজ পাপকে দূর করে দেয়। যারা শিক্ষা গ্রহণ করে তাদের জন্য একটি উত্তম উপদেশ।’’ (১১ঃ১১৪)
সুরা বাকারায় আল্লাহপাক বলেনঃ ‘‘কুরআন সেই মুত্তাকীদের মুক্তির পথে দেখাবে যারা জীবনে সালাত কায়েম করে।’’ (২: বাকারা : ২ ও ৩)
সুরা নামল এ আল্লাহ বলেনঃ ‘‘এটা হেদায়েত ও সুসংবাদ ঐ মুমিনদের জন্য যারা সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আখেরাতের উপর দুঢ় ইয়াকিন রাখে।(২৭ : ২, ৩)
সুরা নূর এ তিনি বলেন : তোমরা সালাত কায়েম কর যাকাত দাও এবং রাসূলের আনুগত্য কর। আশা করা যায় তোমাদের উপর রহম করা হবে।’’ (২৪: ৫৬)
হাদীসের আলোকে সলাতের নির্দেশনাঃ ‘‘হযরত আমর বিন শুয়ায়িব (রাঃ)-এর বর্ণনায় রাসূল (সাঃ) বলেন : তোমাদের সন্তানদের সলাতের নির্দেশ দাও যখন তারা সাত বছরে উপনীত হয়। আর দশ বছর হলে সলাতের জন্য প্রয়োজনে প্রহার কর এবং বিছানা পৃথক কর।’’ (আবু দাউদ ১ম খন্ড, সাঃ অঃ পৃ-২৭২)
মুসলিম ২য় খন্ড সলাত পৃ-৩৮ : হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর বর্ণনায় রাসূল (সাঃ) বলেন : ‘‘পাঁচ ওয়াক্ত সালাত, এক জুমা হতে অন্য জুমা, এক রমযান হতে অন্য রমযান-কাফফারা হয় সেসব গুনাহর জন্য-যা এসবের মধ্যবর্তী সময়ে ঘটে থাকে, যদি কবীরা গুনাহ হতে বেঁচে থাকা হয়।’’
সলাত না পড়ার পরিণতি সম্পর্কে সুরা কিয়ামাহ তে আল্লাহপাক বলেনঃ ‘‘কিয়ামতের দিন তার চেহারা উদাস ও অন্ধকারাচ্ছন্ন হবে, যে কুরআনকে মেনে নেয়নি এবং সালাত আদায় করেনি।’’ (৭২: ৩১)
আখেরাতে সালাতের হিসাবই প্রথমে হবে : হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর বর্ণনায় রাসূল (সাঃ) বলেন : ‘‘কিয়ামাতে বান্দার আমালের মধ্যে সলাতের হিসাবই সর্বপ্রথম নেয়া হবে। যদি তা সঠিক হয় তাহলে সে সফল হবে, নাযাত পাবে। আর তা যদি খারাপ হয়, তাহলে সে ব্যর্থ ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’’ (তিরমিযী)
ইসলাম ও কুফরের মধ্যে পার্থক্যকারী : হযরত জাবির (রাঃ)-এর বর্ণনায় রাসূল (সাঃ) বলেন : ‘‘আনুগত্য ও কুফরের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে সলাত।’’ (মুসলিম)।
কোরআন ও হাদীস গবেষণা করে বিভিন্ন ইসলামি চিন্তাবিদগণ বেনমাজি বা সলাত আদায় করে নি রীতিমত, তাদের উপর বিভিন্ন আযাবগুলো যে ভাবে বর্ণনায় এনেছেন, তা নিম্নরুপঃ সলাত বা নামাজ ত্যাগ করলে অথবা রীতিমত আদায় না করলে, তার উপর ১৫টি আজাব নাজিল হবে। তারমধ্যে (১) দুনিয়াতে ৬টি, (২) মৃত্যুর সময় ৩টি, (৩) কবরের মধ্যে ৩টি এবং (৪) হাশরের মাঠে ৩টি।
)
দুনিয়াতে ৬টি আজাব হল-
১। হায়াত কমে যাবে।, ২। সলাত ত্যাগকারীর জীবনে বরকত হবে না। ৩। চেহারার সৌন্দর্য্য বিনষ্ট হবে। ৪। তার কোন দোয়া কবুল হবে না। ৫। তার সব নেকী বরবাদ হয়ে যাবে। ৬। তার নিকট থেকে রহমতের ফেরেশতা চলে যাবে এবং এক সময় ইসলাম থেকেই খারিজ হয়ে যাবে (যদি তওবা না করে)।
.
মৃত্যুর সময় ৩টি আজাব হলোঃ
১। মৃত্যুর সময় অপমানিত, লাঞ্চিত ও অতিকষ্ট দিয়ে জান বের করা হবে।, ২। ক্ষুধার্ত অবস্থায় মরবে।
৩। বেনামাজীর মৃত্যুর সময় এত পিপাসা হবে যে, তার মন আকাঙ্খা করবে সাত সমুদ্রের পানিও যদি মুখে ঢেলে দেয়া হয়, তবুও বুঝি পিপাসা মিটবে না।
.
কবরের মধ্যে ৩টি আজাব হলঃ ১। তার কবর চার পাশ থেকে চেপে এসে তাকে পিষিয়ে ফেলতে থাকবে। এতে তার এক পাঁজরের হাড়েঁর সাথে অন্য পাশেরটা মিশে যাবে।
২। সলাত ত্যাগকারীর কবরে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলবে।
৩। তার কবরে বিরাট বিরাট সাপ এসে ভরে যাবে এবং এক ফেরেশতা এসে জোরে জোরে গুর্জ মারতে থাকবে।
.
হাশরের মাঠে তিনটি আজাব হলঃ ১। তাকে আল্লাহ পাক লানতের সাথে ডাকবেন এবং বিরাট এক সাপ এসে তাকে খোঁজ করতে থাকবে। ২। ত্রিশ হাজার বৎসরের পুলছেরাতের রাস্তা হিরার চেয়ে ধারাল, চুলের চেয়ে চিকন, আমাবশ্যার রাত্রের চেয়ে অন্ধকার হবে। সলাত ত্যাগকারী যখন সেই পুলের উপর পা রাখবে, সংগে সংগে পা কেটে টুকরা টুকরা হয়ে যাবে।
৩। সলাত ত্যাগকারীর জন্য “ওয়াইল” নামক দোজখ ঠিক করে রেখেছেন আল্লাহ তায়ালা। ফেরেশতা কেয়ামতের দিন দোজখে ফেলে প্রতিদিন ৭০ গজ জিঞ্জিরে বেঁধে বহু কঠিন আজাব দেবেন।