সমঝোতা না হলে বাড়তে পারে রাজনৈতিক অস্থিরতা
নির্বাচনপূর্ব রাজনীতিতে অস্থিরতা বাড়তে পারে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে । বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদার মুক্তি। অনাস্থার মুখে পরতে পারেন সিইসি। কারণ বিএনপি ইতোমধ্যে সিইসির প্রতি অনাস্থা জানিয়েছেন। এ ছাড়া নির্বাচনকালীন সরকারের স্থায়ী সমাধান হয়নি । এ কারণেই রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়তে পারে।
ক্ষমতাসীনদের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি কোণঠাসা অবস্থান থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে। নির্বাচনপূর্ব সময়টাই তাদের জন্য ‘মোক্ষম’ বলে ভাবা হচ্ছে। বিএনপির বাইরেও একাধিক পক্ষ ধীরে ধীরে সক্রিয় হচ্ছে। কূটনৈতিক বলয়েও শুরু হয়েছে দৌড়ঝাঁপ।
অক্টোবরের তৃতীয় সপ্তাহে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলে এর আগে মাত্র দুই মাস সময় রয়েছে। এই দুই মাসই মূলত রাজনৈতিক দলগুলোর প্রস্তুতির সময়। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ নির্বাচন-প্রস্তুতির সুবিধাজনক অবস্থায়ই রয়েছে।
বিএনপি তফসিল ঘোষণার আগেই দলের প্রধান বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে মাঠে আছে। মাঠের এই কর্মসূচির ধরন সামনের দিনগুলোতে কেমন হবে, তা নিয়ে বিএনপি শলাপরামর্শ চালিয়ে যাচ্ছে। দলীয় সূত্রগুলো বলছে, সাংঘর্ষিক কর্মসূচির বদলে সমঝোতামূলক কর্মসূচিকেই প্রাথমিকভাবে অগ্রাধিকার দিচ্ছে বিএনপি। তবে সব দাবি অগ্রাহ্য করা হলে বর্তমান সরকারের মেয়াদের শেষ দিনগুলোতে কর্মসূচি কঠোরতায় মোড় নিতে পারে। সে ক্ষেত্রে উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে আরেকটি সংসদ নির্বাচনের উত্তরণ ঘটতে পারে।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কারাবন্দীর পর টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসতে সরকারের মধ্যে নানা বিকল্প ভাবনা কাজ করছে। এ ভাবনায় কখনো স্থান পাচ্ছে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন, কখনো খালেদা জিয়াবিহীন নির্বাচন, আবার কখনো বিএনপিকে ‘শক্তিশালী’ বিরোধী দল বানিয়ে ক্ষমতার পথ আরো প্রশস্ত করার মতো বিষয়গুলো। এর পাশাপাশি নির্বাচনের আগে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে পারে এমন তথ্যও রয়েছে সরকারের কাছে।
ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকেরা আগামী কয়েক মাসে নানা ঘটনা ঘটতে পারে এমন আশঙ্কার কথা ইতোমধ্যে ব্যক্ত করেছেন। সম্প্রতি ছাত্রবিক্ষোভ চলাকালীন এমন মন্তব্য করেছেন সরকারের শীর্ষপর্যায়ের কেউ কেউ। জানা গেছে, সেই শঙ্কাকে আমলে নিয়ে কাজ শুরু করেছেন তারা। কোরবানির ঈদ-পরবর্তী রাজনীতিতে এর দ্রুত প্রভাব পড়তে পারে। বিশেষ করে বিএনপিকে মাঠে নামার সুযোগ না দিয়ে গৃহবন্দী কর্মসূচিতে বেঁধে রাখার চলমান প্রচেষ্টা আরো গতি লাভ করতে পারে।
সরকারি দলের চিন্তা অনুযায়ী অক্টোবরে গঠন করা হবে ‘সর্বদলীয় নির্বাচনকালীন সরকার’। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী সাতটি রাজনৈতিক দল এবং স্বতন্ত্র জোটের এমপিদের সমন্বয়ে গঠিত হবে ছোট আকারের এই মন্ত্রিসভা। বর্তমান সংসদে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের কোনো প্রতিনিধি না থাকায় নির্বাচনকালীন সরকারেও তাদের প্রতিনিধি রাখা হবে না। সরকারের নিয়মিত কাজ পরিচালনার পাশাপাশি একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করবে এ নির্বাচনকালীন সরকার।
রাজনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের এই সময়টাই বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। বিএনপি একটি নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। সে ক্ষেত্রে তারা এই সময়ে কঠোর কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামতে পারে।
বিএনপির হাইকমান্ড মনে করছে, সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে তারা এবার মাঠে নামতে পারলে অতীতের মতো বিফল হতে হবে না। সমঝোতার মধ্য দিয়ে সরকার একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দিতে বাধ্য হবে। বিএনপি নেতাদের মতে, যদি নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয়, তাহলে বিএনপিকে আটকানো মুশকিল হবে।
নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক দল হিসেবে অতটা শক্তিশালী না হলেও, ব্যক্তি হিসেবে প্রভাবশালী এমন বেশ কয়েকজন রাজনীতিকও এখন সক্রিয় ভূমিকায় রয়েছেন। তারা একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে সম্ভাব্য ক্ষেত্রগুলোতে কড়া নাড়ছেন।
সুস্পষ্ট রাজনৈতিক বক্তব্য দিতেও শুরু করেছেন।বাংলাদেশের রাজনীতিতে সদা ক্রিয়াশীল কূটনৈতিক মহল আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চায়। বিশেষ করে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো একটি বিতর্কিত প্রেক্ষিত থাকায়, আসন্ন নির্বাচন নিয়ে তাদের মধ্যে বেশি উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কার্যকর সংলাপ ও সমঝোতা না হলে কঠিন সংকটে পড়তে পারে দেশ, এমনটাই বলছেন রাজনতিক বিশ্লেষকরা। সূত্রঃ আলাপন