কন্যা সন্তান জন্ম নেয়া খোশ কিসমতী ও সৌভাগ্যের নিদর্শনঃ ইসলাম

December 31, 2017 9:27 am0 commentsViews: 373

যুক্তরাষ্ট্র থেকে ড. ওমর ফারুক।।

স্থানীয় সময়ঃ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭ সকাল নয়টা।।

[কন্যা সন্তানের জন্ম দিলেই মিলবে লাখ টাকাঃ কর্ণাটকের বিবিএমপিহাসপাতাল।। সন্তান আল্লাহ প্রদত্ত সর্বশ্রেষ্ঠ উপহারঃ ইসলাম।।]

[স্ত্রী স্বামীর জন্য অধিক বরকতময়, যার দেন-মোহরের পরিমাণ কম হয় এবং যার প্রথম সন্তান হয় মেয়েঃ
মাদার অব মোমেনিন আয়িশা (রাঃ) বর্ণিত হাদীস]

অনেক রাষ্ট্রেই কন্যা সন্তানকে অবজ্ঞা করে চলা হয়। বিশেষ করে ভারতে এ সমস্যা বড়ই প্রকট। চৌদ্দশত বছর আগের আরবের মোশরেকদের সাথে মূলতঃ ভারতের মোশরেকদের এ বিষয়েও বিরাট মিল। ভারতে এখনও এমন অনেক প্রদেশ রয়েছে, যেখানে কন্যা সন্তান জন্ম হলেই মেরে ফেলা হয়। তার মানে একবারে আরবের জাহেলিয়াতের যুগের অবস্থা।   অবশ্য কন্যা সন্তান রক্ষায় অনেক উদ্যোগ নেওয়ার দাবী জানচ্ছে বিভিন্ন সামাজিক ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো। জনগণের মানসিকতার বদল না হলে সেটি আইন করে পরিস্থিতি ও পরিবেশ তৈরি করা বড়ই কঠিন কাজ।  এখনও ভারতবাসী কন্যা সন্তান জন্ম দিয়ে সে কন্যা সন্তানকে বড় করে অন্য ঘরে অন্য ছেলের হাতে তুলে দেয়াকে বড় হীন কাজ মনে করে।ফলে গত কয়েক বছরে ছেলের তুলনায় মেয়ের অনুপাত অনেকটাই কমেছে এ দেশে ৷ কন্যা সন্তান বা ভ্রুণ হত্যা বন্ধ করার জন্য আনা হয়েছে আইন এবং একের পর এক সচেতনতা প্রকল্প ৷ প্রধানমন্ত্রীও কন্যা সন্তানে বাবা মাকে উৎসাহ দিতে ‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও’ প্রকল্প চালু করেছে। কর্ণাটক রাজ্যের  বিবিএমপি হাসপাতাল প্রধানমন্ত্রীর সেই প্রকল্পের অনুসরণেই কন্যা সন্তানজন্মদানে উৎসাহ প্রদান করতে ঘোষণা দিয়েছে- কেন্যা জন্ম দাও। এক লক্ষ টাকা নিয়ে যাও।’ বস্তুতপক্ষে, কন্যাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য  এক লক্ষ টাকা দেবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ৷

কর্ণাটক রাজ্য একটি ভাল উদ্যোগ  নিয়েছে। নতুন বছরে রাজ্য কর্তৃপক্ষ কন্যা সন্তানের জন্মকে উদযাপন করবে। ৩১ ডিসেম্বর মধ্যরাত থেকে ১ জানুয়ারির প্রথম প্রহরে প্রথম যে কন্যা সন্তানটি জন্ম নেবে তার উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত সমস্ত ব্যয় বহন করা হবে। এ জন্য ওই কন্যা ও কর্নাটকের ব্রুহাট ব্যাঙ্গালুরু মহানাগারা পালিকের কমিশনারের যৌথ ব্যাংক অ্যাকাউন্টে মোট পাঁচ লাখ রুপি রাখা হবে। সেখান থেকে যে মুনাফা আসবে তা দিয়েই ওই শিশুটির সব খরচ বহন করা হবে। [সূত্রঃ এনডিটিভি]

রাজ্যের হাসপাতাল সূত্রে বলা হয়, ২০১৮ সালের পয়লা জানুয়ারি ওই হাসপাতালে যতজন কন্যা সন্তান জন্ম নেবে, তাদের প্রত্যেকে দেওয়া হবে ওই অর্থ৷ তবে শর্ত এটাই, ওই টাকা শুধুমাত্র ওই শিশুর পড়াশুনা ও প্রতিপালনের কাজেই ব্যবহার করা যাবে ৷ মেয়ে প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত ওই টাকাটি কন্যাসন্তান ও বিবিএমপি-এর কমিশনারের যৌথ অ্যাকাউন্টে রাখা থাকবে ৷ ওই টাকা থেকে প্রাপ্ত সুদ খরচ করা হবে মেয়েটির শিক্ষায় ৷

দেশ জুড়ে নারী অবমাননা, কন্যা ভ্রূণ হত্যা, পারিবারিক হিংসার মত ঘটনার বাড়বাড়ন্তে বিপন্ন নারী অস্তিত্ব ৷ দেশের কন্যা সন্তানদের ভবিষ্যতের সুরক্ষার জন্য এই কর্মসূচি নিয়েছে কর্ণাটকের ওই হাসপাতাল ৷ কোন কন্যা সন্তান যাতে শিক্ষার মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয় সেই সচেতনতা প্রচারেই এমন আয়োজন ৷ এর আগে মুম্বইয়ের সরকারি হাসপাতালও সুকন্যা যোজনা স্কিমে কন্যাসন্তানদের এক লাখ টাকা দেওয়ার প্রকল্প চালু করেছিল৷

এবার আসি ইসলাম কী বলে? কন্যা সন্তান আল্লাহ প্রদত্ত এক শ্রেষ্ট নেয়ামত।

সন্তান আল্লাহ প্রদত্ত সর্বশ্রেষ্ঠ উপহার।  আমাদের প্রচলিত শিক্ষিত সমাজে এখনও অনেক পরিবারে কন্যা সন্তান জন্ম হওয়াকে ভাল চোখে দেখে না। অনেকে আবার মুখ ফুটে কিছু বলতে না পারলেও কন্যা সন্তান পেয়ে মন থেকে খুশি হতে পারেন না বা মেনে নিতে পারেন না। কিন্তু এটা বড়ই দুর্ভাগ্যজন চিন্তা।
কন্যা সন্তান হওয়ার বিষয়ে  অসংখ্য ফজিলতের মধ্যে কয়েকটি বিষয় এখানে আলোকপাত করিঃ
যিনি সৃষ্টি করেছেন, সেই মহান স্রষ্টা কী বলেন, দেখি তোঃ
﴿وَإِذَا بُشِّرَ أَحَدُهُم بِٱلۡأُنثَىٰ ظَلَّ وَجۡهُهُۥ مُسۡوَدّٗا وَهُوَ كَظِيمٞ ٥٨ يَتَوَٰرَىٰ مِنَ ٱلۡقَوۡمِ مِن سُوٓءِ مَا بُشِّرَ بِهِۦٓۚ أَيُمۡسِكُهُۥ عَلَىٰ هُونٍ أَمۡ يَدُسُّهُۥ فِي ٱلتُّرَابِۗ أَلَا سَآءَ مَا يَحۡكُمُونَ ٥٩﴾ [النحل:58-59]

‘আর যখন তাদের কাউকে কন্যা সন্তানের সুসংবাদ দেয়া হয়; তখন তার চেহারা কালো হয়ে যায়। আর সে থাকে দুঃখ ভারাক্রান্ত। তাকে যে সংবাদ দেয়া হয়েছে, সে দুঃখে সে কওমের থেকে আত্মগোপন করে। আপমান সত্ত্বেও কি একে রেখে দেবে, না মাটিতে পুঁতে ফেলবে? জেনে রেখ, তারা যা ফয়সালা করে, তা কতই না মন্দ!’ {সূরা আন-নাহলঃ ৫৮-৫৯}
عَن أَنَسٍ رضي الله عنه، عَنِ النَّبيّ ﷺ، قَالَ: «مَنْ عَالَ جَارِيَتَيْن حَتَّى تَبْلُغَا جَاءَ يَوْمَ القِيَامَةِ أنَا وَهُوَ كَهَاتَيْنِ»وضَمَّ أصَابِعَهُ . رواه مسلم

আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি দু’টি কন্যার লালন-পালন তাদের সাবালিকা হওয়া অবধি (প্রতিপালন) করবে, কিয়ামতের দিন আমি এবং সে এ দু’টি আঙ্গুলের মত পাশাপাশি আসব।’’(অতঃপর তিনি তাঁর আঙ্গুলগুলি মিলিত করে (দেখালেন)। [মুসলিমঃ ২৬৩১, তিরমিযিঃ ১৯১৪, আহমদঃ ১২০৮৯]
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলনে, রাসূল (সা.) ইরশাদ করনেঃ যার গৃহে কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করল,অতঃপর সে ঐ কন্যাকে কষ্টও দেয়নি, তার উপর অসন্তুষ্টও হয় নি এবং পুত্র সন্তানকে তার উপর প্রধান্য দেয় নি,তাহলে ঐ কন্যার কারণে আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাতে প্রবশে করাবেন।(মুসনাদে আহমদঃ ১; ২২৩)
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেনঃ
﴿فَإِن كَرِهۡتُمُوهُنَّ فَعَسَىٰٓ أَن تَكۡرَهُواْ شَيۡ‍ٔٗا وَيَجۡعَلَ ٱللَّهُ فِيهِ خَيۡرٗا كَثِيرٗا ١٩ ﴾ [النس:]

‘আর যদি তোমরা তাদেরকে অপছন্দ কর, তবে এমনও হতে পারে যে, তোমরা কোন কিছুকে অপছন্দ করছ, আর আল্লাহ তাতে অনেক কল্যাণ রাখবেন।’ {সূরা আন-নিসা, আয়াতঃ ১৯}

রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন,”কন্যা সন্তান হল উত্তম সন্তান। কেননা,তারা হচ্ছে
অধিক গুণের অধিকারিনী, বিনম্র ও মিষ্টভাষী । এছাড়া তারা পিতামাতার সেবা শুশ্রষার জন্য সদাসর্বদা প্রস্তুত থাকে এবং তারা মায়া মমতাকারীনী, স্নেহময়ী, বিনয়ী ও বরকতময়ী।” (ফিরদাউস ৪;২৫৫)
আর প্রথম সন্তান মেয়ে হওয়ার ফযিলত সম্পর্কে হাদীস হলঃ হযরত আব্দুল্লাহ উমর (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেনঃ ঐ মহিলা বরকতময়ী ও সৌভাগ্যশালী, যার প্রথম সন্তান মেয়ে হয়। কেননা, (সন্তানদানের নিয়ামত বর্ণনা করার ক্ষেত্রে )আল্লাহ তায়ালা মেয়েকে আগে উল্লেখ করে বলেন, তিনি যাকে ইচ্ছা কন্যা সন্তান দান করেন আর যাকে ইচ্ছা পুত্র সন্তান দান করেন।”(কানযুল উম্মাহ ১৬:৬১১

হাদীসে আরও আছেঃ  সন্তান তাঁর নামে পরিচিত হবে যার শয্যায় সে ভূমিষ্ঠ হয়েছে ,,,

কন্যা সন্তান মহান আল্লাহ তা’য়ালার পক্ষ থেকে মাতা-পিতার জন্য একটি বিশেষ শ্রেষ্ঠ নেয়ামত। কন্যা সন্তানকে অশূভ মনে করা কাফির ও মোশরেকদের মত  বদস্বভাব। কন্যা সন্তানকে অপছন্দ করা খাঁটি মুমিনের পরিচায়ক নয়। কন্যা সন্তান অশুভ নয়, অকল্যাণকরও নয়। বরং কন্যা সন্তান জন্মদানকে অশুভ মনে করা বদ কিসমতি। কন্যা সন্তান জন্ম নেয়া খোশ কিসমতী ও সৌভাগ্যের নিদর্শন।

মাদার অব মোমেনিন হযরত আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেন-ঃ ঐ স্ত্রী স্বামীর জন্য অধিক বরকতময়, যার দেন-মোহরের পরিমাণ কম হয় এবং যার প্রথম সন্তান হয় মেয়ে।”

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,” যে ব্যক্তির তিনটি কন্যা সন্তান হবে, এবং সে তাদেরকে এলেম-কালাম, আদব-কায়দা শিক্ষা দিবে, এবং যত্নের সাথে প্রতিপালন করবে ও তাদের উপর অনুগ্রহ করবে, সে ব্যক্তির উপর অবশ্যই জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে।

Leave a Reply

You must be logged in to post a comment.

Editor in Chief: Dr. Omar Faruque

Editor: Dr. Morjina Akhter

All contact: 400E Mosholu Parkway South Apt # A23,The Bronx, New York 10458, USA

Mob. 001.347.459.8516
E-mail: dhakapost91@gmail.com