সন্তানরা তাঁদের সুখ দেয়নি! তারা এখন…

October 11, 2018 8:06 pm0 commentsViews: 14

৫ সন্তানের জনক ছিলেন বাংলার নবাব সিরাজউদ্দৌলা খ্যাত অভিনেতা আনোয়ার হোসেন। জীবনের সকল আয় ব্যয় করেছেন সন্তানদের পেছনে। বড় ছেলে সুইডেন, বাকী ৩ ছেলে ও ১ কন্যা আমেরিকায়। একা বাসায় ধুকে ধুকে মারা গেলেন। ১টি সন্তানও এলেন না বাবাকে দেখতে। জীবনের শেষ বেলাতেও অভিনয় করতে হয়েছে পেটের তাগিদে।

২ সন্তানের জনক সাহসী কবি আল মাহমুদ। বনানীর বাড়ি বিক্রি করে সন্তানদের বিদেশে পাঠান। আর ফিরে আসে নি আদরের দুলালেরা। কবি আজ নিজ গ্রামের বাড়িতে বিছানায় পড়ে রয়েছেন। দেখার কেউ নেই। এক সময় চলে যাবেন না ফেরার দেশে। শোনা যায় হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ক্ষমতায় থাকতে একটি বাড়ি দিয়েছিলেন উপহার। কিন্তু এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন,‘বনানীতে একটা জমি দিয়েছিলেন। কবি নিজে সেখানে বাড়ি করেছিল। বাড়িটা করেছিলেন লোন করে। এদিকে ছেলে মেয়েরা পড়াশোনার জন্য সব বিদেশে গেল। তাদের পড়ালেখার খরচ জোগাড় করতে টাকা লাগে। ফোন দিয়েই বলে আব্বা টাকা পাঠাও, আব্বা টাকা পাঠাও। এক কোটি ষাট লাখ টাকায় বাড়িটা বিক্রি করে দিয়েছিলেন। কবি মানুষ, সোর্স অব ইনকাম কি? এত টাকা কোথায় পাবেন, বাড়িটা বিক্রি করে দিয়েছিলেন।’

সারাদিন বাসায় বই, পত্রপত্রিকা আর টেলিভিশন দেখেই দিন কাটে প্রবীর মিত্রের। আগে সময় পেলে বিকেলে ছুটে যেতেন কাকরাইল ফিল্ম পাড়ায়। চা খেতেন, আড্ডা মারতেন। এখন সেটাও পারেন না। যে চলচ্চিত্রের জন্য জীবনের এক তৃতীয়াংশ সময় ব্যয় করেছেন, সেখানকার মানুষজন দু-একজন ছাড়া খোঁজখবরও নেন না তাঁর। স্ত্রী বেঁচে নেই ১৫ বছর। শারীরিক অসুস্থতা ও একাকীত্ব সঙ্গে নিয়ে রাজধানীর সেগুনবাগিচার বাসায় চার দেয়ালের মাঝে দিন কাটছে ৭৭ বছর বয়সী এই অভিনেতার। তার এক মেয়ে তিন ছেলে। ছোট ছেলে ২০১২ সালে ৭ই মে মারা গেছেন। জানা যায়, সন্তানেরা ঠিকমতো খোঁজ নেন না তার।

২০১২ সালের ১৩ মার্চ এ টি এম শামসুজ্জামানের পুরানো ঢাকার সূত্রাপুরের দেবেন্দ্র নাথ ঘোষ লেনের বাসায় খুন হন ছেলে এটিএম কামালুজ্জামান কবির। তাকে হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার হন এই অভিনেতারই ছোট ছেলে এটিএম খলিকুজ্জামান কুশল। হত্যাকাণ্ডের পর এটিএম শামসুজ্জামান নিজেই ছেলে কুশলের বিরুদ্ধে মামলা করেন। কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ছোট ছেলে কুশলকে আসামি হিসাবে সনাক্ত করে খুনের বর্ণনাও দেন তিনি। ছেলে কুশলের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। তিনি এখনও ওই বাড়িতে একা থাকেন। অভিনয়ও কমিয়ে দিয়েছেন। নানা সময়ে মৃত্যুর গুঞ্জন শোনা যায়। হয়তো একদিন এভাবেই সত্যি সত্যি একবুক কষ্ট নিয়ে তিনি চলে যাবেন।

ভালো আছেন ববিতা। মন্দ বলবে কে? একমাত্র ছেলে অনিক কানাডাতে পড়াশুনা শেষ করে সেখানেই স্থায়ী। দেশে খুব কম আসা হয়। ববিতার বিয়ে হয়েছিল ব্যবসায়ী ইফতেখারের সঙ্গে। সেই বিয়ে টিকেছিল মাত্র দুই বছর। ববিতা একা থাকেন। মাঝেমধ্যে ছেলের কাছে গিয়ে থাকেন। রাইসুল ইসলাম আসাদের বছরের প্রায় অর্ধেক সময়ই আমেরিকায় থাকতে হয়। কারণ সেখানে তার স্ত্রী তাহিরা দিল আফরোজ ও একমাত্র মেয়ে ডা: রুবায়না জামান থাকেন। তাই স্ত্রী ও মেয়ের সঙ্গে সময় কাটাতে প্রায় সময়ই রাইসুল ইসলাম আসাদকে আমেরিকায় যেতে হয়। কিন্তু মন তো টেকে না। ফিরে আসতে হয় বাংলাদেশে, অভিনয়ের মঞ্চে।

সৈয়দ হাসান ইমাম ও লায়লা হাসান দম্পতির তিন সন্তানের দুই মেয়ে ও এক ছেলে। বড় মেয়ে ভিকারুননেসায় শিক্ষকতা করে আর মেজ মেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছুদিন শিক্ষকতা করার পর কানাডা চলে গিয়েছে। ছোট ছেলে থাকেন আমেরিকাতে সেখানে সে পড়াশোনা করার পাশাপাশি শিক্ষকতা করে। ৮৩ বছর বয়স্ক সৈয়দ হাসান ইমামও মাঝেমধ্যে বলেন, সন্তানদের খুব মিস করি। একসঙ্গে আর থাকা হবে না! মেয়ে থাকে জামাইর সঙ্গে। আমরা তো সেই দুই বুড়োবুড়ি থাকি মগবাজারের বাসায়।

সন্তান মেধাবী হলে বাবা মা তাঁদের পেছনে পয়সা খরচ করতে কৃপনতা করে না। বাড়ি, গাড়ি, সোনা, গহনা সবই বিক্রি করে দেয় তবুও মা-বাবার আনন্দের সীমা থাকে না। অথচ এ সন্তানগুলোই বড় হয়ে ভাল পজিশনে পৌঁছে মা-বাবাকে কষ্ট দেয়- ভীষণ কষ্ট দেয়।

বিপরীতে এমন অনেক তারকা আছেন যারা বাবা-মা থেকে দূরে থাকেন। খোঁজ রাখে না বাবা-মায়ের। সময় যেন তাদেরও জ্ঞান দেয়।

Leave a Reply

You must be logged in to post a comment.

Editor in Chief: Dr. Omar Faruque

Editor: Dr. Morjina Akhter

All contact: 400E Mosholu Parkway South Apt # A23,The Bronx, New York 10458, USA

Mob. 001.347.459.8516
E-mail: dhakapost91@gmail.com