শেখ মুজিব হত্যা মামলার রায়ে আসামীদের ফাঁসিতে বিএনপি এবং জামায়াতের প্রতিক্রিয়া
১ম কিস্তি
যাই হউক, বাস্তবে কি বলা হয়েছিল এই দু’টি দলের তরফ থেকে সেটা নিচে তুলে ধরলাম।
খালেদা জিয়া’র নির্দেশে মওদুদের বিবৃতি
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলার রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন সাবেক আইনমন্ত্রী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। রায়ঘোষণার পর মতিঝিলের অফিসে এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এ রায়জাতিকে স্বস্তি দিয়েছে। এর মাধ্যমে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা পেল। সর্বোচ্চআদালতের রায় আমাদের সবার মেনে নিতে হবে।
ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদবলেন, এ রায়কে দলীয়ভাবে নয়, আইনের শাসনের দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখতে হবে। এ রায়েরমাধ্যমে শুধু আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা পায়নি, এটা জাতিকে স্বস্তি দিয়েছে। এ ধরনের হত্যাকাণ্ড আমরা দেখতে চাই না। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ডেরঘটনায়ও খুনিদের বিচার হয়েছে। প্রচলিত বিধিতে না হলেও হত্যাকারীদের বিচারহয়েছে। সাবেক আইনমন্ত্রী মওদুদ বলেন, ৫ জন আসামি আপিল করেছিলো। যারা আপিল করেনি, তাদের বেলায়ও এখন ফাঁসি কার্যকরের রায় প্রযোজ্য হবে। সংবিধানের বিধি উল্লেখ করে প্রবীণ এ আইনজীবী বলেন, ১০৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী৩০ দিনের মধ্যে রিভিউর জন্য আবেদন করতে পারবে। নতুন কোনো তথ্য-উপাত্ত থাকলে রিভিউ পিটিশন দায়ের করা যায়। ৯৯১ জেল কোড অনুযায়ী সুপ্রিমকোর্টের আদেশ জেলকর্তৃপক্ষের কাছে গেলে ২১ দিন পর ও ২৮ দিনের মধ্যে রায় কার্যকর করতে হবে।এজন্য রিভিউ পিটিশন ২১ দিনের মধ্যেই করাটা আসামিদের জন্য ভালো হবে। তিনি বলেন, রিভিউ পিটিশনে সাধারণত রায় বহাল থাকে। আর রায় বহাল থাকলে ৪৩অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আসামিরা ক্ষমার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করতে পারবে।ওই আবেদন আইন মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যাবে। ক্ষমার আবেদনরাষ্ট্রপতি প্রত্যাখ্যান করলে তখন জেল কর্তৃপক্ষ রায় কার্যকর করবে।
বিএনপির এই আইনজীবী নেতা কিন্তু বললেন না যে তারই কথিত আইনি অনুচ্ছেদগুলো সূর্যসন্তানদের ফাঁসির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়নি। আসামিদের রিভিউ পিটিশনও সরকারের পদানত আদালত গ্রহণ করেনি। তিনি কিন্তু একবারও উল্লেখ করলেন না যে, বিশ্বের সভ্য কোনও দেশ এবং মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় ব্রতী কোনও প্রতিষ্ঠানই ক্যাঙ্গারু কোর্টের সাজানো মামলা এবং প্রহসনমূলক বিচারের রায় মেনে নেয়নি।তারাএই রায়কে আখ্যায়িতকরেছিল, “Hasina ’s political trial, miscarriage of justice and Judicial Murder” হিসাবে।
আদালতের রায়ের প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল- জামায়াতের আমীরের নির্দেশেমোহাম্মদ মুজাহিদের বিবৃতি
স্টাফ রিপোর্টারঃ দৈনিক আমার দেশঃ ২৯/১/২০১০
মোহাম্মদ মুজাহিদ বলেছেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আইনের শাসনে বিশ্বাসী।দীর্ঘ শুনানির পর সর্বোচ্চ আদালত যে রায় দিয়েছেন তার প্রতি আমরাশ্রদ্ধাশীল। গতকাল বিভিন্ন সংবাদপত্র ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরাস্বাধীনতার স্থপতি মরহুম শেখ মুজিবুর রহমান হত্যার বিচারের রায় সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে জনাব মুজাহিদ এই প্রতিক্রিয়াব্যক্ত করেন।
২০০৮ সালের নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতায় আওয়ামীলীগকে ক্ষমতাসীন করিয়েছিলো জেনারেল মইনুদ্দিন এবং ফখরুদ্দিন সরকার দেশে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করে মাইনাস ওয়ান ফর্মুলা কার্যকর করার জন্য।
ক্ষমতায় আসীন হয়েই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শেখ রেহানার স্বামীর অনুজ জেনারেল (অবঃ) তারেককে তার সামরিক উপদেষ্টা হিসাবে নিয়োগ দান করেন। চক্রান্তমূলক বিডিআর এর নির্মম হত্যাযজ্ঞ, নির্বাচনী বিজয়, এবং বিডিআর হত্যাযজ্ঞে ‘উদ্দিন’ সরকারের সহযোগিতার পুরস্কার হিসাবে তাদের সব অবৈধ কার্যক্রমকে বৈধতা দান করে আওয়ামী লীগের মহাজোট সরকার এবং পরিশেষে সব কুশীলবদের আমেরিকায় পাড়ি জমাবার সুযোগ করে দেয়া হয়।
চক্রান্তমূলকনির্বাচনী বিজয়, বিডিআর-এর নির্মম হত্যাযজ্ঞ, জাতীয় বীরদের ফাঁসি, এই সবকিছুই ছিলো পূর্বপরিকল্পিত।
বিডিআরের নির্মম, ন্যক্কারজনক হত্যাযজ্ঞে অসহায় অবস্থায় মেরে ফেলা হয়েছিল ৫৭ জন সেনাবাহিনীর চৌকস অফিসারকে ভাড়াটিয়া বিদেশী কমান্ডো এনে।
লাঞ্ছিত হয়েছিলেন তাদের পরিবার পরিজনেরা। এ ছাড়াও অকল্পনীয় শারীরিক নির্যাতনের মাধ্যমে বন্দী অবস্থায় মেরে ফেলা হয়েছিলো কয়েক’শ সেনা সদস্যকে।
বিডিআর বিদ্রোহের দিন পিলখানার অভ্যন্তরে যখন হত্যাযজ্ঞ চলছিলো ভাড়া করা কমান্ডোদের দ্বারা তখন শেখ হাসিনার ইশারায় নিষ্ক্রিয় হয়ে বসেছিলো তদানীন্তন সেনাপ্রধান। যদিও বারবার সাহায্যের আবেদন জানানো হচ্ছিলো পিলখানার বিডিআর ছাউনি থেকে হত্যাযজ্ঞ শুরু হওয়ার আভাস পাওয়ার পরমুহূর্ত থেকেই।
এই নির্মম হত্যাযজ্ঞের পর সেনাকুঞ্জে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাতে শোকার্ত,আবেগাপ্লুত সেনাবাহিনীর দেশপ্রেমিক অফিসার এবং সৈনিকরা ক্ষোভ এবং উষ্মায় ফেটে পড়ায় প্রধানমন্ত্রী বিচারের আশ্বাস দিয়ে পদোন্নতি দিয়ে অবসরে পাঠানো তার অতি বিশ্বস্ত এ এস পি আকন্দকেই ডাকিয়ে এনে তদন্তের জন্য IO হিসাবে নিয়োগ দিয়েছিলেন। এই একই ব্যক্তিআকন্দের মাধ্যমেই ‘মুজিব হত্যা’ এবং ‘জেল হত্যা’ মামলার তদন্তও করানো হয়েছিলো।
সেই রিপোর্ট আজঅব্দি প্রকাশিত হয়নি। তবে তদন্ত সাপেক্ষে বিচারের আগেই সেনাবাহিনী থেকে বেছে বেছে আরও প্রায় দুইশ’ অফিসারকে চাকুরিচ্যুত করা হয় অন্যায় ভাবে। জেলবন্দী করা হয় প্রায় ৪০০০০ সেনা সদস্যকে।
পরে বিজিবি গঠনের পর একটা দায়সারা গোছের বিচারের প্রহসন করে অসংখ্য সেনা সদস্যকে ফাঁসি কিংবা কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। অগুণতি সেনা সদস্যকে কারাবন্দী অবস্থায় হার্ট অ্যাটাকের নাটক সাজিয়ে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়। এই ন্যক্কারজনক সাজানো নির্মম পরিকল্পনার মূল দু’টি উদ্দেশ্য ছিলো।
১। ঐতিহ্যবাহী একটি সশস্ত্রবাহিনীর বিলুপ্তি ঘটিয়ে তার স্থলে মুজিবের কুখ্যাত রক্ষীবাহিনীর আদলে হাসিনা সরকারের দলীয় ক্যাডারদের সমন্বয়ে বিশেষভাবে বিশ্বস্ত এবং অনুগত একটি বাহিনী গড়ে তুলে সরকারের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং ভারতীয় বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের সম্পূরক হিসাবে বর্ডার সংরক্ষণের দায়িত্ব পালন করানোই ছিলো ঐ নৃশংস হত্যাযজ্ঞের উদ্দেশ্য। এর পরিণামেই অহরহ মৃত ফেলানিদের সীমান্তের কাঁটাতারে ঝুলতে দেখতে পাচ্ছেন দেশবাসী। প্রায় প্রতিদিনই ভারতীয় BSF নির্দ্বিধায় গুলি করে মারছে বর্ডার সংলগ্ন গ্রামবাসীদের মনগড়া মিথ্যে অজুহাতে পাখির মতো।
২। অফিসার নিধনের মাধ্যমে দেশের মেরুদণ্ড সেনাবাহিনীকে মানসিক ও নৈতিকভাবে হীনবল এবং সাংগঠনিক ভাবে দুর্বল করে তোলাও ছিলো পরিকল্পনার অংশ।
বিডিআর-এর প্রতি আওয়ামীলীগ এবং ভারতের আক্রোশের কারণ রয়েছে। ১৯৭১ সালে পাক আর্মির ক্র্যাকডাউনের পর জেনারেল জিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচার করার আগেই চট্টগ্রামের বিডিআর-এর বাঙ্গালী সদস্যরা বিভিন্ন বিওপিতে অবস্থানরত অবাঙ্গালী অফিসার এবং সৈন্যদের নিরস্ত্র করে দখল করে নিয়েছিলো চট্টগ্রামের বিডিআর উইঙ্গের এডজুটেন্ট ক্যাপ্টেন রফিকুল ইসলামের নির্দেশে। এরপর থেকে মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতার পর এই ঐতিহ্যবাহী বাহিনীর অগুণতি দেশপ্রেমের সাক্ষর রয়েছে জাতীয় ক্রান্তিলগ্নে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা বিডিআর প্রধান মেজর জেনারেল ফজলুর রহমানের নেতৃত্বে পদুয়ার ভারতীয় বিএসএফ এর দাম্ভিক স্পর্ধার জবাবে দুঃসাহসিক পুশব্যাক অপারেশন তারই একটি জ্বলন্ত নিদর্শন।
বিডিআর এর হত্যাযজ্ঞের পর নিহত অফিসারদের পরিবার এবং এই নৃশংসতার প্রতিবাদ করায় চাকুরিচ্যুত সেনা সদস্যরা সবাই বিরোধী জোট নেত্রীর শরণাপন্ন হয়ে এই সুপরিকল্পিত চক্রান্তের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে জনগণকে সাথে নিয়ে ভারতের সেবাদাস সরকার বিরোধী জোরদার আন্দোলন গড়ে তোলার আবেদন জানিয়েছিলেন।
কিন্তু খালেদা জিয়ার জোট সে ধরনের কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ না করে নিষ্ক্রিয় থাকে। ফলে, সেনাবাহিনীতে জিয়া পত্নী খালেদার জনপ্রিয়তায় ধ্বস নামে।
এরই প্রতিফলন দেখা গিয়েছিলো যখন খালেদা জিয়াকে হেস্তনেস্ত করে অত্যন্ত আপত্তিকর অবস্থায় হাসিনা সরকার তাকে টেনে হিঁচড়ে এক কাপড়ে অপমান করে শহীদ মইনুল রোডের বাড়ী থেকে বের করে দেয়।
তখন সেনাবাহিনীতে কোনও বিরূপ প্রতিক্রিয়াই পরিলক্ষিত হয়নি। উল্টো আই এস পিআর থেকে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছিলো, আদালতের রায় অনুযায়ী তাকে বাড়ী থেকে উচ্ছেদ করে ক্যান্টনমেন্ট থেকে বেরিয়ে যেতে বাধ্য করা হয়েছে।
অদৃষ্টের নিষ্ঠুরপরিহাস!
সদা পরিবর্তনশীল মানবসভ্যতার চলমান ধারায় পৃথিবী বর্তমানে এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। পুরনো ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ছে। ক্ষয়িষ্ণু বিশ্ব শক্তিগুলো এবং তাদের আঞ্চলিক মোড়লদের মধ্যে দখলদারিত্ব এবং প্রভাব বলয় সম্প্রসারণের লক্ষ্যে নতুন নতুন ফন্দি ও কৌশল উদ্ভাবন এবং সেগুলো তুলনামূলক অনগ্রসর পশ্চাৎপদ দেশ এবং জাতিগোষ্ঠীর উপর ছলে বলে চাপিয়ে দেবার প্রবল সহিংস প্রতিযোগিতা চলেছে বিশ্বপরিসরে।
অন্যদিকে এর বিরোধিতায় পৃথিবীর সর্বপ্রান্তে সমমাত্রায় জনগণের প্রতিবাদী সংগ্রাম দানা বেঁধে উঠছে। কারণ, বিশ্ব শক্তিগুলো ও তাদের স্থানীয় সেবাদাসদের বিভিন্ন প্রকার সম্প্রসারণবাদী আগ্রাসনের মূল লক্ষ্য হচ্ছে মানব এবং প্রাকৃতিক সম্পদের উপর নিয়ন্ত্রণ কায়েম করার অমানবিক প্রতিযোগিতা। ক্ষয়িষ্ণু পুঁজিবাদী বিশ্বব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখার জন্য পরের ধনসম্পদ কুক্ষিগত করার চেতনা এবং লোভ লালসা পৃথিবীর প্রতিটি দেশের আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে সৃষ্টি করছে সংঘাতমূলক দ্বন্দ্বের।
জনগণের মধ্যে বেড়ে চলেছে সহিংসতা এবং দ্বিধাবিভক্তি। ফলে আজকের পৃথিবীর প্রতিটি দেশই হয়ে উঠেছে অস্থিতিশীল।
একদিকে ক্ষয়িষ্ণু বিশ্বব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখার হিংস্র আগ্রাসী প্রচেষ্টা আর এরই বিপরিতে প্রতিবাদী সংগ্রাম। এর ফলেই চারদিকে বইছে রক্তগঙ্গা।
অনুন্নত বিশ্বের প্রতিটি দেশে বিশ্ব শক্তিগুলোর লালিত পালিত শাসক এবং শোষকগোষ্ঠী এবং তাদেরই অনুগত তথাকথিত সুশীল সমাজের অন্যায়, অবিচার, বঞ্চনা, শোষণ এবং অপশাসনের যাঁতাকলের নিচে পিষ্ট নিপীড়িত বৃহত্তর জনগোষ্ঠী বাঁচার তাগিদে ও অনিশ্চিত ভবিষ্যতের চিন্তায় পুঞ্জিভূত ক্ষোভ আর উষ্মায় ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। জনগণের সেই প্রচেষ্টাকে দমনের জন্য প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রীয় কাঠামোধীন প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, প্রতিরক্ষা বাহিনী, বিচার বিভাগকে লেলিয়ে দেয়া হচ্ছে কায়েমীগোষ্ঠীস্বার্থে।
অনুন্নত দেশগুলোতে সামরিক কিংবা বেসামরিক সরকারের মধ্যে গুণগত কোনও তফাৎ নেই। গণতন্ত্র ও স্বৈরতন্ত্রের মধ্যেও কোনও পার্থক্য নেই।
কারণ, জাতীয় পরিসরে সব তন্ত্রকেই নিয়ন্ত্রণ করছে গণবিচ্ছিন্ন জাতীয় স্বার্থ বিরোধী মানসিকতার একই কায়েমী গোষ্ঠী।
গণ-জাগরণকে পরাস্ত করার জন্য বিভিন্ন খোলসে এই একই গোষ্ঠীর অনুচররা ঢুকে পড়ে জনতার সংগ্রামে, তারপর অতি চতুরতা এবং কূটকৌশলের মাধ্যমে নিজেদের অর্থবল এবং পেশীশক্তির সাহায্যে হাইজ্যাক করে নেবার চেষ্টা করে থাকে আমজনতার সংগ্রাম তাদেরই কায়েমী স্বার্থে।
এভাবেই যুগে যুগে মানব সভ্যতার ইতিহাসে পরাজিত হয়েছে হাজারো বিপ্লব এবং মুক্তি অর্জনের লক্ষ্যে গণঅভ্যুত্থান ভেড়ার ছালের আবরণে আচ্ছাদিত হায়েনা চরিত্রের নেতৃত্বের বিশ্বাসঘাতকতায়।
বর্তমানের বাংলাদেশেও জনগণের সার্বিক মুক্তির সংগ্রাম বিশ্বাসঘাতকতার অন্ধ গলিতে হারিয়ে গিয়েছে তিন বার।
প্রথমতঃ ১৯৭১ সালে আমাদের মুক্তিসংগ্রামকে মাঝপথেই হাইজ্যাক করে নেয় ভারত প্রবাসী আওয়ামী লীগ সরকারের মাধ্যমে দাসখত লিখিয়ে নিয়ে। প্রতিদানে আওয়ামী-বাকশালীদেরকে সেবাদাস হিসাবে সদ্য স্বাধীন দেশের জনগণের ঘাড়ের উপর জগদ্দল তল্পিবাহকদের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় বসিয়ে দেয়া হয়।
দ্বিতীয়তঃ ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট এবং ৭ই নভেম্বরের সফল বৈপ্লবিক সেনা অভ্যুত্থানের সাথে জেনারেল জিয়ার বিশ্বাসঘাতকতায় যুদ্ধকালীন সময় থেকে সেনা পরিষদের জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায়।
তৃতীয়তঃ স্বৈরশাসক জেনারেল এরশাদের বিরুদ্ধে গণ-আন্দোলনের সাথে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের বিশ্বাসঘাতকতায় কক্ষচ্যুত হয়ে যায় সেই আশা!
অতীতের এই ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে দেশের ঘুণেধরা ঔপনিবেশিক আর্থ-মাজিক এবং রাষ্ট্রীয় অবকাঠামোতে যুগোপযোগী আমূল বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করে ’৭১-এর চেতনা এবং স্বপ্নজনগণের সার্বিক মুক্তিসংগ্রামের বিজয় অর্জনের লক্ষ্যে।
আমাদের ঐতিহ্য, স্বাধীন সত্তা, ভাষা এবং ধর্মীয় মূল্যবোধের উপরই গড়ে উঠেছে আমাদের আলাদা নিজস্ব স্বকীয়তা।যেকোনো জাতীয় সত্তা গড়ে ওঠার জন্য ভাষাই একমাত্র উপাদান নয়। এটা আমাদের ভুললে চলবে না।
আজকের বাংলাদেশে ৬০ শতাংশের উপর মানুষ মানবেতর জীবনের বোঝার ভারে ন্যুব্জ হয়ে দারিদ্রসীমার নিচে জীবন্মৃত অবস্থায় কালযাপন করছে। জাতীয় সম্পদের ৮০ শতাংশ আজ ১-২ শতাংশ কায়েমী স্বার্থবাদী গোষ্ঠীর হাতের মুঠোয়। জাতীয় সম্পদের এ ধরনের অসম বণ্টনের ফলে আর্থ-সামাজিক এবং রাজনৈতিক ভাবে দেশের ৯৮ শতাংশ জনগণ মূলত জিম্মি হয়ে পড়েছে ঐ ১-২ শতাংশের হাতে।
এই পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে জাতির বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে মুক্ত করে তাদের প্রাণশক্তি, মেধা, সৃজনশীলতা ও কর্মক্ষমতাকে সঠিক নেতৃত্বের অধীনে সুপরিকল্পিত ভাবে কাজে লাগাতে না পারলে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে সুসংহত করা এবং একই সাথে অপরিমেয় সম্ভাবনার দেশটিকে আত্মমর্যাদাশীল, স্বনির্ভর, প্রগতিশীল ও সমৃদ্ধশালী করে গড়ে তোলা কিছুতেই সম্ভব নয়।
বাংলাদেশ মানে চকমকে কয়েকটা শহর নয়, আসল বাংলাদেশ হল ৬৮ হাজার গ্রাম ও সেখানে বসবাসকারী জনগোষ্ঠী। গ্রামাঞ্চল এবং সেখানকার জনগোষ্ঠীর মানবাধিকার, বাক-স্বাধীনতা, আইনি অধিকার, স্বায়ত্তশাসন, রাজনৈতিক অধিকার এবং আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে অধিকারের মাত্রা কতটুকু সেটার উপরেই নির্ভর করে বাংলাদেশের উন্নতি যাচাইয়ের মানদণ্ড।
নীতি-আদর্শ বিবর্জিত দুর্নীতিগ্রস্ত শহর ভিত্তিক দালাল ও মুৎসুদ্দিশ্রেণীর শিক্ষিত কুলাঙ্গাররা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবাধ লুটতরাজের মাধ্যমে বর্তমানে তথাকথিত সুশীল সমাজের ঠিকাদার এবং রাজনৈতিক নেতা-নেত্রী বনে বংশপরিক্রমায় দেশটাকে তাদের জমিদারি আর জনগণকে তাদের অনুগত প্রজা মনে করে রক্ত চুষে চলেছে। এই রক্তচোষাদের চিহ্নিত করে ছুঁড়ে ফেলে দিতে হবে আঁস্তাকুড়ে।
চিরতরের জন্য গুঁড়িয়ে দিতে হবে তাদের পেশীশক্তি এবং ছিনিয়ে নিতে হবে দুর্নীতি ও অসৎউপায়ে স্তূপীকৃত ধনবল।
ভুইফোঁড় এইসব মধ্যস্বত্বভোগী পরগাছাগুলোকে সমাজের প্রতিক্ষেত্র থেকে কোনও প্রকার পক্ষপাতিত্ব না করে সমূলে উপড়ে ফেলার সাথে সাথে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে এমন একটি রাষ্ট্রীয় অবকাঠামো, প্রশাসন, আইনি এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থা যেখানে থাকবে না কোনও ফাঁক-ফোকর যার মাধ্যমে সময়ে আবার ওই ধরনের চীনেজোঁক শ্রেণী জন্মাতে পারে।একই সাথে নিয়মিত শুদ্ধি অভিযানের মাধ্যমে অংকুরেই নস্যাৎকরে দিতে হবে এ ধরনের যেকোনো প্রবণতা বা সমীকরণের উদ্দগ।
এই ধরনের পরিবর্তন আনার প্রক্রিয়ায় পরামর্শ এবং সাহায্য-সহযোগিতা নেয়া যেতে পারে পরীক্ষিত ভ্রাতৃসুলভ রাষ্ট্রগুলোর অভিজ্ঞতা এবং শিক্ষা থেকে। কিন্তু কোনও ফর্মুলাই ধার করে এনে অবশ্যই হুবহু চাপিয়ে দেয়া চলবে না জনগণের উপর। এই ধরনের প্রয়াস কখনই কার্যকরী হয় না। প্রয়োগ করতে হবে নিজেদের বাস্তবতার নিরিখে লব্ধ অভিজ্ঞতার আলোকে প্রণীত কার্যক্রম।
এ ছাড়া কোনও ভাবেই আত্মমর্যাদাশীল, স্বনির্ভর, প্রগতিশীল, সমৃদ্ধশালী দেশ এবং জাতি হিসাবে বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো সম্ভব হবে না।
মানবিক আধিকার, বাকস্বাধীনতা, আইনের শাসন, ন্যায়সঙ্গত সুষম সমাজ ব্যবস্থা প্রতিটি নাগরিকের মেধা এবং সৃজনশীল কর্মদক্ষতার বহিঃপ্রকাশের পূর্ণসুযোগ, ঐতিহ্যবাহী নৈতিক, ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের উপর জাতীয় চরিত্র গঠন যদি নিশ্চিত করা সম্ভব না হয় তবে স্বকীয়তা এবং স্বাধীনতা টিকিয়ে রাখা দুষ্কর হয়ে ওঠে।
ইস্পাত কঠিন জাতীয় ঐক্য এবং দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা প্রগতি এবং উন্নয়নের দু’টি পূর্বশর্ত। শৃংখলাবোধের সাথে জনগণের প্রতি রাষ্ট্রের কর্তব্য এবং রাষ্ট্রের প্রতি জনগণের কর্তব্য সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা না থাকলে স্থায়ী জাতীয় ঐক্য এবং স্থিতিশীলতার কোনোটাই অর্জন সম্ভব নয়। যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত পেশাজীবীদের প্রত্যেককেই হতে হবে সততার সাথে আন্তরিক এবং নিষ্ঠাবান।
পেশার ভিত্তিতে কোনও নাগরিকের সামাজিক অবস্থান নির্ধারণ অসুস্থ এবং বিকৃত মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ।
একটি ন্যায়সঙ্গত সুষম সমাজে প্রতিটি মানুষের চারিত্রিক উৎকর্ষতা,স্বচ্ছতা, গুণাবলী, দেশপ্রেম, কর্মনিষ্ঠা, সত্যকহন, স্পষ্টবাদিতা, সহমর্মিতা, সংবেদনশীলতা, দায়িত্ববোধ,বিশ্বাসযোগ্যতা, প্রজ্ঞা, অভিজ্ঞতা, সমাজ সচেতনতা, নির্লোভ আত্মত্যাগের মূল্যায়নের উপরই নির্ভর করবে ব্যক্তি বিশেষের সামাজিক অবস্থান।
বর্তমানে অর্থসম্পদ এবং পেশীশক্তির বলে সমাজপতি হওয়ার যে অপসংস্কৃতির ঘৃণ্য প্রতিযোগিতা চলছে তার অবসান ঘটাতে হবে। কারণ, পচন শুরু হয় মাথা থেকেই। একটি সমাজের মাথা হচ্ছে সরকার। যতদিন না দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণকে আর্থ-সামাজিকভাবে অতিক্ষুদ্র কিন্তু অভাবনীয় ভাবে বিদেশী মদদপুষ্ট ক্ষমতাবান কায়েমী স্বার্থবাদী গোষ্ঠীর নিগড় থেকে স্বাধীন করা না যাবে ততদিন তারা স্ব-ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে যোগ্য ব্যক্তিদের রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্বে অধিষ্ঠিত করতে সক্ষম হবে না নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় কিংবা বৈপ্লবিক গণ-আন্দোলনের মাধ্যমেও। ফলে রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত কোনও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠানই গড়ে তোলা সম্ভব হবে না।
ঔপনিবেশিক শক্তিগুলোর প্রণীত রাষ্ট্রীয় কাঠামো, প্রশাসনিক এবং আইনী ব্যবস্থা, বিভিন্ন সশস্ত্র বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থাসমূহ এবং দেশের রাজনীতি যতদিন বিদেশী শক্তিগুলোর পদলেহি তল্পিবাহকরা কুক্ষিগত করে রাখবে ততদিন ভৌগোলিক স্বাধীনতা অর্জন সত্ত্বেও কোনক্ষেত্রেই যুগোপযোগী মৌলিক পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে না।
যুক্তিটা অনুধাবন করা কষ্টকর নয়। যারা বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর থেকেই অতীতের মানসিকতা বজায় রেখে বর্তমানের ঘুণেধরা রাষ্ট্রীয় অবকাঠামো এবং রাজনৈতিক অপসংস্কৃতির সাহায্যে চীনেজোঁকের মতো জাতীয় সম্পদ ও জনগণকে চুষে চলেছে, তারই ‘সোনার ডিম’ দেয়া হাঁসটাকে বর্জন করবে তেমনটি কখনোই হবার নয়। আরও সাদামাটা ভাবে বলতে গেলে বলতে হয়, ঔপনিবেশিক বিজাতীয়রা তাদের জবরদখল, শাসন, শোষণ, নিপীড়ন বলবত রাখার জন্যই এই ধরনের রাষ্ট্রীয় অবকাঠামো, আইনি ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা এবং বিভিন্ন সামরিক এবং বেসামরিক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত করেছিলো স্থানীয় তল্পিবাহকদের সহযোগিতায়। প্রচলন করেছিলো অপসংস্কৃতি এবং অপরাজনীতির,সেইসব দেশের জনগণের উন্নয়ন কিংবা সমৃদ্ধির জন্য নয়।
সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর অন্তর্দ্বন্দ্বের ফলেই দু’টি ধ্বংসাত্মক বিশ্বযুদ্ধ ঘটে যার ফলে অর্থনৈতিক এবং সামরিক ভাবে তারা বিধ্বস্ত ও দুর্বল হয়ে পড়ে। তাদের দুর্বলতার সুযোগে সারাবিশ্বের নিপীড়িত জনগণ গড়ে তোলে দুর্বার জাতীয় স্বাধীনতা ও মুক্তিসংগ্রাম, যার মোকাবেলা করতে অসমর্থ হয়ে তাদের অধীনস্থ ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রগুলোকে স্বাধীনতা দিতে বাধ্য হয় ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো। কিন্তু উপনিবেশগুলো ত্যাগ করার আগে অতিকৌশলে এবং চাতুর্যের সাথে তাদের সৃষ্ট এবং পালিত সেবাদাসদের স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতা বানিয়ে তাদেরকেই স্বাধীনতার পর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় বসিয়ে দেয়া হয়। প্রতিদানে ঐসব তল্পিবাহক শাসকগোষ্ঠী নিজেদের গোষ্ঠীস্বার্থ এবং ঔপনিবেশিক প্রভুদের স্বার্থ রক্ষার জন্যই জাতীয় স্বার্থ এবং গণবিরোধী ঔপনিবেশিক অবকাঠামোকেই অটুট রেখে সাদা চামড়ার সাহেবদের জায়গাতে নিজেরাই ‘ব্রাউন সাহেব’ সেজে বসে সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় সব ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার এবং দুর্নীতির মাধ্যমে সার্বিকভাবে বলিয়ান হয়ে ওঠে। ফলে দেশ ও জনগণের উন্নতির পরিবর্তে অবনতিরই ক্রমবিকাশ ঘটতে থাকে।
‘৭১-এর মুক্তি সংগ্রামকালে প্রবাসীসরকার সম্প্রসারণবাদী ভারতের ইচ্ছা অনুযায়ী দাসখত লিখে দিয়ে খয়রাতি স্বাধীনতা লাভ করার সিদ্ধান্ত নেয়। প্রতিদানে স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগকেই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় বসিয়ে দেয় ভারত জাতীয় মুক্তিযুদ্ধের সব কৃতিত্বের একচ্ছত্র অধিকারী হিসাবে। আঁতাতের মাধ্যমে শেখ মুজিবর রহমান পাকিস্তান থেকে ফিরে এসে নিজেই দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে ২৫ বছরের গোলামির চুক্তি সাক্ষর করে বাংলাদেশকে মূলত ভারতের একটি করদ রাষ্ট্রে পরিণত করেন। এরই সাথে ধূলিসাৎ হয়ে যায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় লালিত সংগ্রামী দেশবাসীর স্বপ্ন। এভাবেই স্বাধীনতার প্রথম লগ্ন থেকেই শুরু হয় বিদেশী প্রভুদের প্রতিভূ দেশ ভারত এবংকায়েমী গোষ্ঠীস্বার্থে নেতৃত্বের প্রতারণা, অপশাসন, শোষণ, দুর্নীতি ও দলীয়করণের ধারাবাহিক ইতিকথা। সময়ের সাথে পরনির্ভরতা, লেজুড়বৃত্তি, অপশাসন, লুটতরাজ, দুর্নীতি, ক্ষমতাদখলের সহিংস প্রতিযোগিতার ফলে জাতীয় জীবন হয়ে পড়ে বিপর্যস্ত। কেন এই পরিণাম সেটা জানতে হলে ফিরে তাকাতে হবে মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট এবং রণাঙ্গনের বাস্তব পরিস্থিতির দিকে। তারই সারসংক্ষেপ পাঠকদের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
ষাটের দশকের মাঝামাঝি স্বাধিকার আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ করে পাকিস্তানের সামরিক জান্তার উপর জাতীয় নির্বাচন করানোর চাপ সৃষ্টি করার লক্ষে শেখ মুজিব তার ৬দফা নির্বাচনী দাবি উত্থাপন করেন। কিন্তু তার সেই ৬দফাতে সামরিক জান্তা বিচ্ছিন্নবাদের গন্ধ খুঁজে পায়। এই অবস্থায় পাকিস্তান গোয়েন্দা সংস্থা উদ্ঘাটন করে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা। এর প্রধান পরিকল্পনাকারীদের মধ্যে ছিলেন পাকিস্তান সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনী এবং সরকারি আমলাদের কিছু তরুণ সদস্য। তাদের উদ্দেশ্য ছিল সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন করা। এই ষড়যন্ত্রের প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন নৌবাহিনীর কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেন।
তিনি শেখ মুজিবের রাজনৈতিক সমর্থন চেয়ে বিফল হয়ে ভারতের সাহায্য চেয়ে আশাপ্রদ সমর্থন লাভে ব্যর্থ হন। সেই পর্যায়ে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা ষড়যন্ত্রটি জনগণের সম্মুখে প্রকাশ করে একটি মামলা দায়ের করে ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা’ নামে। এতে শেখ মুজিবুর রহমান, কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেন, ফ্লাইট সার্জেন্ট জহুরুল হক,স্টুয়ার্ড মুজিব, সিএসপি অফিসার রুহুল কুদ্দুস, ক্যাপ্টেন নাজমুল হুদা, ক্যাপ্টেন খুরশিদ, ক্যাপ্টেন শওকত আলী প্রমুখকে আসামী হিসেবে কারাবন্দী করা হয়।
এতে পূর্ব পাকিস্তানে মুজিবের ৬ দফা ভিত্তিক স্বাধিকার আন্দোলনে ভাটা পড়ে।
সেই সন্ধিক্ষণে মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ১১ দফা দাবী নিয়ে দেশব্যাপী দুর্বার গণ-আন্দোলন গড়ে তুলে ‘আগরতলা মামলা’কে সাজানো মামলা অভিহিত করে মুজিবসহ সব আসামির মুক্তি দাবি করেন। তার নেতৃতে ঝিমিয়ে পড়া আন্দোলন পুনরায় প্রাণ ফিরে পায়। বিস্ফোরণোন্মুখ পরিস্থিতিতে সামরিক জান্তা শেখ মুজিবসহ অন্যদের প্যারোলে মুক্তি দিয়ে মুজিবকে পিণ্ডিতে গোলটেবিল বৈঠকে যোগদানের আহ্বান জানায়। অভিযুক্তদের মুক্তির পর মাওলানা ভাসানী শারীরিক অসুস্থতার কারণে মুজিবের হাতে নেতৃত্ব তুলে দিয়ে স্বাধিকারের সংগ্রামকে আপোষহীনভাবে স্বাধীনতা পর্যন্ত এগিয়ে নিতে পরামর্শ দেন। কিন্তু শেখ মুজিব গোলটেবিল বৈঠকে যোগদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বাধীন তীব্র গণআন্দোলনের ফলেই রাতারাতি মুজিব কারামুক্তির পর হয়ে ওঠেন পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতির কিংবদন্তির নায়ক।
১১দফা এবং ৬ দফা আন্দোলনকে গণজোয়ারে পরিণত করার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রেখেছিল তরুণরা এবং ছাত্র সমাজ। তারাই ছিল অগ্রণীর ভূমিকায়। এরপর জেনারেল ইয়াহিয়া খানের প্রণীত LFO এর আওতায় সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। কিন্তু জনাব ভুট্টোর কারসাজিতে মুজিবের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে দেশের রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান বলপ্রয়োগের মাধ্যমে করার আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নেয় সামরিক জান্তা। ফলে, ২৫-২৬ মার্চ কালরাতে বর্বরোচিত সামরিক শ্বেত সন্ত্রাসের পরিপ্রেক্ষিতে সশস্ত্র বাহিনীগুলোর বাঙ্গালী সদস্যরা বিদ্রোহ করে। তাদের কেন্দ্র করেই দেশব্যাপি স্বতঃস্ফূর্ত ভাবেই শুরু হয় সশস্ত্র প্রতিরোধ সংগ্রাম। সেই সংগ্রামই পরে পরিণত হয় স্বাধীনতার সংগ্রামে। এখানেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করে সচেতন তরুণ প্রজন্ম।
প্রচারিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী যুদ্ধকালীন সময়ে ১ কোটি শরণার্থী পূর্ব পাকিস্তান থেকে প্রাণের দায়ে ভারতে পাড়ি জমিয়ে শরণার্থী ক্যাম্প এবং যুব ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়। তাদের থেকেই গড়ে তোলা হয় মুক্তিবাহিনী জেনারেল ওসমানীর নেতৃত্বে। ভারতে হিজরতকারী সংখ্যালঘু হিন্দু পরিবারদের বেশির ভাগই ওপারে তাদের জ্ঞাতি-গোষ্ঠীর সহযোগিতায় নিরাপদেই থাকার সুযোগ পেয়েছিলো।আওয়ামী ঘরানার রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদেরও জামাই আদরে নিরাপদ আশ্রয় করে দিয়েছিলো ভারত সরকার জনাব নজরুল ইসলাম এবং জনাব তাজুদ্দিনের অধীনস্থ প্রবাসী সরকারের সাথে ভারত সরকারের ৭ দফা চুক্তি সাক্ষরিত হবার পর।
বগুড়ার স্টেট ব্যাঙ্কের শাখা এবং প্রায় সব জিলা এবং মহকুমার ট্রেজারি এবং ব্যাংকে গচ্ছিত সব টাকাই স্থানীয় প্রশাসন এবং আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী এবং দলীয় মাস্তানরা লুট করে নিয়ে আসে ভারতে। সেই অর্থের কিয়দংশই জমা পড়েছিলো প্রবাসী সরকারের খাজানায়। সিংহভাগই থেকে যায় লুণ্ঠনকারীদের পকেটে।
তাই তাদের নির্বাসন জীবন ছিল হাওয়া বদলের নিরাপদ বিলাসী জীবন। এদের সাথে মুক্তিযুদ্ধের কোনও সম্পর্ক না থাকলেও প্রবাসী সরকারের পীঠস্থান ৮নং থিয়েটার রোড এবং ১৯ নং সার্কাস এভেন্যুর সং সেজে তারা অপেক্ষায় ছিলেন কখন একটা স্বাধীন দেশ পাওয়া যাবে আর তারা ফিরে গিয়ে ক্ষমতায় জেঁকে বসে লুটের অর্থসম্পদ উপভোগ করবেন। তবে ব্যতিক্রমও ছিলো। এদের মধ্যে স্বল্পসংখ্যক ব্যক্তি নিরাপদ আয়েশি জীবনের প্রলোভন ত্যাগ করে মুক্তিযোদ্ধাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন।এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে আমার লেখা বই, ‘যা দেখেছি যা বুঝেছি যা করেছি’ বইটি পড়ে দেখতে পারেন কিংবা www.majordalimbu.com অথবা www.majordalimbubangla.com থেকে ডাউন লোড করে নিতে পারেন।
এ কথা অস্বীকার করার কোনও অবকাশ নেই, বেশিরভাগ রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধারা শ্রেণী এবং পেশার প্রাচীর ভেঙ্গে সাধারণ জনগণের কাতারে মিশে গিয়েছিলো দেশমাতৃকাকে হানাদার বাহিনীর কবল থেকে মুক্ত করে এক নতুন স্বাধীন বাংলাদেশ কায়েম করার স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে।
সেই স্বপ্নের মূলে ছিলো নিঃস্বার্থ দেশপ্রেম এবং যুগ যুগ ধরে অন্যায়, জুলুম এবং নিষ্পেষণে মথিত জনগণের সার্বিক মুক্তির চেতনা। সমাজের বিত্তবান শ্রেণি থেকে আগত শিক্ষিত তরুণ মুক্তিযোদ্ধারা সাধারণ জনগণের সাথে এক হয়ে বুঝেছিলো কি করে কায়েমী স্বার্থবাদী গোষ্ঠী তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে তাদের রক্ত চুষে বিত্তবান হয়ে সমাজ এবং রাষ্ট্রের কর্ণধার হয়ে উঠতে সক্ষম হয় তাদের বিদেশী প্রভুদের সাহায্য-সহযোগিতায়। তাদের কায়েমী স্বার্থ এবং শাসন ও শোষণ প্রক্রিয়া কি করে বজায় রাখা হয় ঔপনিবেশিক শক্তির নিগড় থেকে দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে সেটাও তারা বুঝতে পারে। বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর সংগ্রাম এবং পরাজয়ের করুণ গাথা তরুণ মুক্তিযোদ্ধা বিশেষ করে বর্ধিষ্ণু পরিবার থেকে আগত শিক্ষিত মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে রাষ্ট্র, সমাজ এবং রাজনৈতিক সচেতনতা শাণিত করে তোলে। তারা বুঝতে পারে স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে এই সংখ্যাগরিষ্ঠ নিপীড়িত এবং ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর ভাগ্যোন্নতি নিশ্চিত না করলে সুখী সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়ে তোলা কিছুতেই সম্ভব হবে না। এ ভাবেই স্বাধীনতার স্পৃহার সাথে গণমুক্তির বৈপ্লবিক সংগ্রামী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে উঠেছিলো বেশিরভাগ মুক্তিযোদ্ধা।
এই চেতনার পরিপ্রেক্ষিতেই রাজনৈতিক ভাবে সচেতন কিছু মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধের আড়ালে অতি সতর্কতার সাথে গড়ে তোলা সম্ভব হয়েছিল নীতি-আদর্শ এবং সুচিন্তিত কর্মসূচি ভিত্তিক একটি গোপন সংগঠন, যার নাম স্বাধীনতার পর দেশের সামরিক বাহিনী গঠন কালে দেয়া হয়েছিলো ‘সেনা পরিষদ।’ সেনা পরিষদের লক্ষ্য শুধুমাত্র ভৌগোলিক স্বাধীনতা অর্জনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। সেই সংগঠনের লক্ষ্য ছিল সুদূরপ্রসারী। স্বাধীনতার পর আপামর জনগোষ্ঠীর ন্যায্য অধিকার ও আর্থ-সামাজিক মুক্তি অর্জনের মাধ্যমে ইস্পাত কঠিন জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠিত করে এমন একটা সম্ভাবনার সুযোগ সৃষ্টি করা যাতে করে পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশকে একটি স্বনির্ভর, প্রগতিশীল এবং সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব হয়। একই সাথে বিশ্বপরিসরে দেশবাসীর পরিচিতি ঘটে আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসাবে একই সাথে ভারতের আগ্রাসী নীল নকশার মোকাবেলা করা। বলা হয়ে থাকে, মানুষের মন- মানসিকতায় কিংবা চিন্তা চেতনায় ত্বরিত পরিবর্তন ঘটে না। কিন্তু ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ আমাকে এই শিক্ষাই দিয়েছে, বিশেষ প্রেক্ষাপটে আচমকা ঘটে যাওয়া ঘটনা মানুষকে বয়সের তুলনায় অনেক বেশি জ্ঞানী এবং পরিপক্ব করে তুলতে পারে। চিন্তার ক্ষেত্রে এবং মন-মানসিকতায় ঘটাতে পারে অবিশ্বাস্য পরিবর্তন।
যেকোনো দেশে সমাজ বদলের বিপ্লব একটি সংঘাত সংকুল জটিল এবং কঠিন কাজ। ব্যক্তিগত আধিপত্য, মালিকানা, ভোগ-বিলাসের অদম্য স্পৃহা থেকে সৃষ্ট বৈষম্যমূলক সমাজ ব্যবস্থা মানুষকে যেভাবে বংশ পরিক্রমায় আত্ম এবং গোষ্ঠীস্বার্থ হাসিল এবং কুক্ষিগত করার বাসনাকে একটি সহজাত প্রবৃত্তিতে পরিণত করে মানুষকে আবিষ্ট করে ফেলেছে সেখানে নৈতিক মানবিক চেতনাকে শাণিত করে সাহসী মানুষ তৈরির মাধ্যমে সাংগঠনিক শক্তি সঞ্চয় করা ছাড়া এই ধরনের সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করা কিছুতেই সম্ভব হবে না।
সমাজ বদলের বিপ্লব একটি চিরন্তন প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ার ধারায় সৃষ্টি হয় অনেক দ্বন্দ্ব। নীতি-আদর্শের প্রতি অবিচল বিশ্বাস, প্রজ্ঞা, দূরদর্শিতা, নিরলস পরিশ্রম এবং আত্মত্যাগের সাথে বাস্তবধর্মী পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমেই এইসব দ্বন্দ্বের নিরসন করে ধাপে ধাপে বৈপ্লবিক প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে চূড়ান্ত বিজয় অর্জন এবং বিপ্লবের জয়কে সুসংহত করা সম্ভব।
‘৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ জনগণের বিশেষ করে তরুণ সচেতন শিক্ষীত মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে কায়েমী স্বার্থবাদীদের প্রণীত গণবিরোধী অপশাসন ও শোষণ থেকে স্বাধীনতা এবং জাতীয় মুক্তির জন্য এক অদম্য বাসনা ও শক্তির স্ফূরনের সম্ভাবনার সুযোগ এনে দিয়েছিলো। সেই শক্তিকে গঠনমূলক ভাবে দেশের পুনর্গঠনের স্বার্থে কাজে লাগাবার কোনোও উদ্দগই নিলোনা জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের মাধ্যমে প্রাপ্ত স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় চাপিয়ে দেয়া আওয়ামী লীগের সরকার। এরপরও দেশবাসী আশায় বুক বেঁধেছিলো। তারা প্রত্যাশা করেছিলো, শেখ মুজিব দেশে ফিরে এর প্রতিকার করবেন। কিন্তু তাদের সেই প্রত্যাশায় বালি পড়ে। পাকিস্তান থেকে বোঝাপড়ার মাধ্যমে শেখ মুজিব দেশে ফিরে রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী হয়ে ভুলে গেলেন, ‘ব্যক্তির চেয়ে দল বড় দলের চেয়ে বড় দেশ’।
সদ্য স্বাধীন একটি দেশকে গড়ে তোলার জন্য উপযুক্ত একটি জাতীয় নেতৃত্ব সৃষ্টি করতে ব্যর্থতার পরিচয় দিলেন শেখ মুজিব। তার প্রশাসন প্রক্রিয়ায় ব্যক্তি, গোষ্ঠী এবং দলীয় স্বার্থই প্রাধান্য পেলো।
এরপর সেনা পরিষদের নেতৃত্বে সংগঠিত ১৫ই আগস্ট এবং ৭ই নভেম্বর-এর সফল বৈপ্লবিক পটপরিবর্তনের পর সৃষ্টি হয়েছিলো আর একটি সুযোগ। কিন্তু ক্ষমতার কেন্দ্রে জেনারেল জিয়াকে বসানোর পর সেই সুযোগ তিনি ব্যর্থ করে দেন। ইতিহাসের কষ্টিপাথরে ক্ষমতালিপ্সু বিশ্বাসঘাতক শেখ মুজিব এবং জেনারেল জিয়া এই ব্যর্থতার দায় কিছুতেই এড়াতে পারবেন না।
তাদের প্ররোচনায় ক্ষমতালোভীদের সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের যূপকাষ্ঠে আত্মনির্ভশীল, সমৃদ্ধশালী, সুখী, আত্মমর্যাদাশীল এক বাংলাদেশ গড়ে তোলার অপার সম্ভাবনা মরীচিকায় পরিণত হয়। বর্তমান প্রজন্মের এক অংশের নীতি-আদর্শ বিহীন অমানবিক আচরণ, অপসংস্কৃতির চর্চা, চারিত্রিক স্খলন এবং নৈতিকতার অবক্ষয় সেই ব্যর্থতারই বহিঃপ্রকাশ। ক্যান্সারগ্রস্ত এই পচনশীলতার হাত থেকে পরিত্রাণের কোনও উপায় কি তবে আর খোলা নেই!
নিশ্চয় আছে। সাময়িকভাবে বিপ্লবকে দাবিয়ে দেয়া সম্ভব, কিন্তু বৈপ্লবিক চেতনা চিরভাস্বর। ঠিক সেভাবেই আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যার সাথে মিশে ছিলো স্বাধীনতার পর দেশের রাষ্ট্রীয় এবং আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক আমূল পরিবর্তন এনে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর মুক্তির অদম্য সুপ্ত বাসনা, তাকে নতুন করে শাণিত করে তার আলোকেই খুঁজে নিতে হবে সার্বিক মুক্তির সঠিক পথ। পড়ন্ত বেলায় মনে হয়েছিলো দেশের বর্তমান ও ভবিষ্যৎতরুণ প্রজন্ম যাদেরকে প্রভাত সূর্যের সাথে তুলনা করা চলে তারা দেশ ও জাতি সম্পর্কে ভাবলেশহীন হয়ে পড়েছে কিংবা পড়বে, কিন্তু অধুনা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ইস্যুতে তারা অপ্রত্যাশিতভাবেই দেশবাসীকে হতচকিত করে দিয়ে গা ঝাড়া দিয়ে উঠেছে। তাদের দাবি এবং প্রতিবাদের ধরন নিয়ে বিতর্কের অবকাশ থাকলে থাকতেও পারে। তা সত্ত্বেও তাদের এই প্রতিবাদী সংগ্রামের ইতিবাচক দিকটি হল, তারা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তাদের এই সক্রিয়তা অবশ্যই প্রশংসাযোগ্য। তরুণ সমাজের এই অঙ্গার থেকে হঠাৎকরে দাবানল সৃষ্টির ঘটনা ’৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ’৬০-’৭০-এর দশকে স্বাধিকার আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধ কালে দেশবাসী দেখেছে।
(চলবে)
সূত্রঃ দৈনিক আমার দেশ।। ২৯ জানুয়ারি ২০১০।।