শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সরকারের কঠোর আচরণ সমালোচিত হচ্ছে বৈশ্বিক গণমাধ্যমে
নিরাপদ সড়কের দাবিতে বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের খবর উঠে এসেছে বিবিসি, সিএনএন, আল জাজিরা চ্যানেল এবং নিউইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্ট, দ্য গার্ডিয়ানসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে। দুই দিন ধরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের লাঠিপেটা ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপের খবরও এসব সংবাদমাধ্যমে গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশিত হয়েছে। বলা হচ্ছে, নিরাপদ সড়কের দাবিতে পুরো ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন অংশ অচল করে দিয়েছে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিতে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও দুর্বল শাসনব্যবস্থার কারণেই শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বাংলার পাশাপাশি বিবিসির মূল চ্যানেলে বৈশ্বিক দর্শকদের জন্য কিশোর আন্দোলনের ওপর দীর্ঘ ভিডিও তথ্যচিত্র প্রচার করে হয়। একই ধরনের দীর্ঘ ভিডিও প্রচার করে আল জাজিরা। আল জাজিরা এ বিষয়ে দুটি ভিডিও খবর প্রচার করে। ৫ আগস্টের খবরে আন্দোলনে পুলিশের কাঁদানে গ্যাসের শেল হামলা, সন্ত্রাসীদের নির্যাতনের কথা এবং মোবাইলে ইন্টারনেট সীমিত করার কথা বলা হয়।
আল জাজিরা আরও বলেছে, রোববারের সংঘর্ষে আন্দোলনকারীদের পাশাপাশি একাধিক সাংবাদিককে বেধড়ক মারধর করা হয়। কিছু সাংবাদিকের ক্যামেরা কেড়ে নেওয়া হয়। অভিযোগ আছে, শাসকদল আওয়ামী লীগের কর্মীরা এ কাজ করছেন। রোববার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ঘরে ফিরে যাওয়ার আহ্বানের কথা উল্লেখ করা হয় সংবাদে।
বিবিসির খবরে আরও বলা হয়, আন্দোলনকারীদের ওপর কারা হামলা চালিয়েছে তা এখনো নিশ্চিত নয়। তবে অভিযোগের তির শাসকদল আওয়ামী লীগের দিকে। বার্তা সংস্থা এপির বরাত দিয়ে সংঘর্ষের খবর প্রকাশ করে দ্য নিউইয়র্ক টাইমস।
দ্য ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, ন্যায়বিচারের দাবিতে রাস্তায় নেমেছে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা। কয়েক দিন ধরে স্কুল ইউনিফর্ম পরা হাজার হাজার শিক্ষার্থী রাজধানী অচল করে দিয়েছে ও রাস্তা অবরোধ করেছে। আন্দোলনকারীরা বাংলাদেশের সড়ক ব্যবস্থার উন্নতির দাবি তুলেছে।
ওয়াশিংটন পোস্ট আরও বলেছে, বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে গতকাল শনিবার থেকে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ছে ও লাঠিপেটা করছে। এতে আহত কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর। বিক্ষোভের আগুন দমাতে গত বৃহস্পতিবার দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছিল সরকার।
এসব সংঘর্ষের খবরের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোতে ছবি ও ভিডিওচিত্রও প্রকাশিত হয়েছে। মার্কিন সাময়িকী টাইম-এর খবরে বলা হয়েছে, ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে অবরোধ করেছে স্কুলের শিক্ষার্থীরা। এতে করে পুরো রাজধানী অচল হয়ে গেছে। এ সময় বিভিন্ন যানবাহন ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে। বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের ঘরে ফেরার আহ্বান জানিয়েছে সরকার। পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে অনেকে আহত হয়েছে। চালকদের লাইসেন্স চেক করার কারণে পুরো ঢাকায় দীর্ঘ সময় ধরে যানবাহন দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।
টাইম বলছে, শিক্ষার্থীরা ৯টি দাবি পূরণের শর্ত দিয়েছে। এই আন্দোলনের প্রতিক্রিয়ায় বাস কোম্পানিগুলো রাস্তা থেকে যানবাহন তুলে নিয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবি মেনে নিয়েছেন। এগুলো বাস্তবায়ন করা হবে।
ব্রিটিশ দৈনিক পত্রিকা দ্য গার্ডিয়ান-এর খবরে বলা হয়েছে, সড়ক দুর্ঘটনায় সহপাঠীদের মৃত্যুর প্রতিবাদে কিশোর-কিশোরীরা বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা স্থবির করে দিয়েছে। একই দেশের পত্রিকা টেলিগ্রাফ-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, কিশোর-কিশোরীদের বিক্ষোভ সহিংসতায় রূপ নিয়েছে, আহত শতাধিক।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ইনডিপেনডেন্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়েছে। লাঠিপেটার জবাবে আন্দোলনকারীরা পুলিশের দিকে পাথর ছুড়েছে।
সংবাদমাধ্যম কোয়ার্টজ-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সীমাহীন দুর্নীতির কারণেই বাংলাদেশে সড়ক নিরাপত্তায় সংকট সৃষ্টি হয়েছে। সড়ক নিরাপত্তার দায়িত্ব এখন নিজেদের হাতে তুলে নিয়েছে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা।
এই সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, আন্দোলনের সংবাদ সংগ্রহ করতে যাওয়া সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালাচ্ছে শাসক দলের ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। অন্যদিকে আন্দোলনকারীদের ওপর রাবার বুলেট ছুড়ছে পুলিশ।
বাংলাদেশের বেদনাদায়ক ও বিক্ষুব্ধ পরিস্থিতি নজর কেড়েছে দুনিয়াখ্যাত ভ্লগার ও ইউটিউব তারকাদের। ভ্লগ হচ্ছে ভিডিও ব্লগ। ইসরায়েলি আরব তরুণ নাস তাঁর এক মিনিটের ভিডিও ‘নাস ডেইলি’র জন্য বিখ্যাত। এই তরুণ প্রতিদিন দুনিয়ার বিভিন্ন বিভিন্ন দেশের অসাধারণ ও ইতিবাচক বিষয় নিয়ে ভ্লগ প্রকাশ করেন। রোববার তিনি প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের সড়কে মৃত্যু এবং তার প্রতিবাদের আন্দোলনের বিষয়ে। এতে আন্দোলনের চিত্র এবং দাবির কথা তুলে ধরে তিনি বিশ্ববাসীকে এর প্রতি মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানান। নাস বলেছেন অনলাইনের মাধ্যমে গড়ে ওঠা এই কিশোর আন্দোলন অভূতপূর্ব।
ড্রিউ ব্রিনস্কি নামে আরেকজন আন্তর্জাতিক ফেসবুক সেলিব্রিটি ‘বাংলাদেশে কী ঘটছে’ (হোয়াটস হ্যাপেনিং ইন বাংলাদেশ) শিরোনামে ভিডিওচিত্র প্রকাশ করেন। ফেসবুক ওয়াচ নামের এই ভিডিওতে আন্দোলনের কারণ ব্যাখ্যা করে সরকারের কঠোর আচরণের সমালোচনা করা হয়েছে। ভিডিও দুটি ইতিমধ্যে কয়েক লক্ষবার দেখা হয়েছে।
শীর্ষনিউজ/