শিক্ষাঙ্গণে ফের বেপরোয়া ছাত্রলীগ
আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সিলেট এমসি কলেজে সোমবার ছাত্রলীগের দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে -যাযাদি
আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রলীগ আবার বেপরোয়া হয়েছে। সোমবারও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) এবং সিলেটের এমসি কলেজে ছাত্রলীগের দু’গ্রম্নপের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে জবিতে সাংবাদিকসহ ৪০ আহত এবং এমসি কলেজে ৪ ফটোসাংবাদিক আহত হয়েছেন। সংঘর্ষ চলাকালে ককটেলের বিস্ফোরণে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে।
আমাদের জবি প্রতিনিধি জানান, গতকাল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের দু’গ্রম্নপের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে সমকালের ক্যাম্পাস প্রতিনিধি লতিফুল ইসলাম, দৈনিক সংবাদের রাকিব ইসলাম, খবরপত্রের সোহাগ রাসিফসহ কমপক্ষে ৪০ জন আহত হয়েছেন। বেলা ১১টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত থেমে থেমে এ সংঘর্ষ চলে। সংঘর্ষ চলাকালে সাত-আটটি ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। পরে পুলিশ টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শাখা ছাত্রলীগের স্থগিত কমিটির সভাপতি তরিকুল ইসলাম-সাধারণ সম্পাদক শেখ জয়নুল আবেদিন রাসেলের অনুসারীরা একত্র হয়ে সকাল থেকে ক্যাম্পাসে অবস্থান নেয়। এরপর বেলা ১১টার দিকে পদপ্রত্যাশী বিদ্রোহী নেতা-কর্মীরা ক্যাম্পাসে মহড়া দিয়ে প্রবেশ করতে চাইলে তাদের ধাওয়া দিয়ে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেন সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা। এ সময় উভয় পক্ষের ১৫ জন আহত হয়।
এরপর অন্য পদপ্রত্যাশী বিদ্রোহী নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাস গেট থেকে সরে গেলে স্থগিত কমিটি সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকে অনুসারীরা শহীদ মিনারের সামনে অবস্থান নেন। এক পর্যায়ে মোবাইলে ছবি ধারণ করাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন বিল্ডিংয়ের নিচে থাকা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা হয়। এ সময় কমপক্ষে পাঁচ সাধারণ শিক্ষার্থী আহত হন। এদের সবাইকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
এরপর বিকেল ৩টার দিকে ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে প্রধান ফটকের সামনে ক্যাম্পাসের বাইরের পদপ্রত্যাশী বিদ্রোহী নেতাকর্মীদের ধাওয়া দেয় সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা। এ সময় দু’পক্ষের কর্মীরা ইট পাটকেল ছোড়াছুড়ি শুরু করে। এতে ৭ থেকে ৮টি ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। মারামারির ঘটনার সংবাদ সংগ্রহকালে স্থগিত কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের কর্মী সিএসই বিভাগের ১৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ফাহিম, মনোবিজ্ঞান বিভাগের ১২তম ব্যাচের আবিদ আল হাসান, সমাজকর্ম বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী কিবরিয়াসহ আট-দশ জন
\হসমকালের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক লতিফুল ইসলাম, দৈনিক সংবাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি রাকিবের ওপর সাধারণ সম্পাদকের কর্মী ইতিহাস বিভাগের ৮ম ব্যাচের কর্মী আলী হাসান, খবর পত্রের সোহাগ রাসিফ, বিডি ২৪ রিপোর্ট এর প্রতিনিধি সানাউলস্নাহ ফাহাদের ওপর হামলা করে। রাকিককে উদ্ধার করে পুলিশ সুমনা হাসপাতাল এবং লতিফুল ইসলামকে ন্যাশনাল মেডিকেল হাসপাতালে নেয়া হয়। এসময় পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে করে। পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের কর্মীরা ক্যাম্পাসে অবস্থান নেয়। এ সময় তা?দের হা?তে কক?টেল, চাই?নিজ কুড়াল, চাপাতি, রামদা, ব?টি, হ?কি স্টিকসহ দেশিও ধারালা অস্ত্র দেখা যায়।
এদিকে ছাত্রলীগের দুগ্রপের সংঘর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করে। এসময় বিভিন্ন বিভাগের ক্লাস এবং ক্যাম্পাসের আশপাশের দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। রায়সাহেব বাজার থেকে সদরঘাটের রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়।
দু’পক্ষের সংঘর্ষে জবি ছাত্রলীগের সহসভাপতি হাসান আহমেদ খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাওছার, সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামানসহ কমপর্ক্ষে ৪০ জন আহত হন। আহতদের বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টার, সুমনা হাসপাতাল, ন্যাশন্যাল মেডিকেল কলেজ এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি করানো হয়েছে।
এসময় তা?দের হা?তে কক?টেল, চাই?নিজ কুড়াল, চাপা?তি, রামদা, ব?টি, হ?কি স্টিক সহ দেশিও ধারলা অস্ত্র দেখা যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জবি ছাত্রলীগের স্থগিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক শেখ জয়নুল আবেদীন রাসেল বলেন, ‘ক্যাম্পাসে কি হচ্ছে তা আমরা জানি না। এটা জানার কথা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের। কারা কি করছে সেটার দায় আমাদের ওপর এখন বর্তায় না। সভাপতি তরিকুল ইসলামকে ফোন দেয়া হলে তিনি ফোন কেটে দেন।’
এ বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি রেজুয়ানুল হক শোভন বলেন, ‘সাংবাদিকদের ওপর আঘাত অত্যন্ত দুঃখজনক। তাদের (জবি ছাত্রলীগ) একবার স্থগিত করে সংশোধনের সুযোগ দিয়েছি। এ ব্যাপারে তদন্ত করে কঠিন থেকে কঠিনতর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এ বিষয়ে জবির সহকারী প্রক্টর মোস্তফা কামাল ছাত্রলীগের দুই গ্রম্নপের সংঘর্ষকে অস্বীকার কবলে বলেন, ‘আমরা সকাল থেকে এ পর্যন্ত পুলিশকে সাথে নিয়ে ক্যাম্পাসে অবস্থান করেছি। ভিডিও ফুটেজ দেখে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
কোতোয়ালি জোনের এসি বদরুল রিয়াদ বলেন, ‘ছাত্রলীগের দুগ্রম্নপ মুখোমুখি সংঘর্ষে জড়াতে চাইলে আমরা মাঝখানে অবস্থান নিয়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দুই দিকে পাঠিয়ে দেই। এ ঘটনায় তিন পস্নাটুন অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ও চার রাউন্ড টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নেয়া হয়। আমরা পুলিশের পক্ষ থেকে একটি মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
এমসি কলেজে ছাত্রলীগের
দু’গ্রম্নপের সংঘর্ষ
সিলেট প্রতিনিধি জানান, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সিলেট এমসি কলেজে ছাত্রলীগের দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা-ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সোমবার সকালে মোহনা সাংস্কৃতিক সংগঠনের বসন্ত বরণ অনুষ্ঠানে সংঘটিত সংঘর্ষের ঘটনার সময় কর্তব্যরত ফটো সাংবাদিকের ওপর হামলা চালানো হয়। এতে ৪ ফটোসাংবাদিক আহত হন। হামলার শিকার ফটো সাংবাদিকরা হলেন- ইউসুফ আলী (দৈনিক সমকাল), অসমিত অভি (দৈনিক ভোরের কাগজ), মিঠু দাশ জয় (সিলেট শুভ প্রতিদিন) ও কাওসার আহমদ (সিলটিভি)।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. জেদান আল মুসা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ছাত্রলীগের দু’গ্রম্নপের মধ্যে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা-ধাওয়ার খবর পাওয়া মাত্র শাহপরান থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
জানা যায়, সোমবার সকাল ১০টায় মোহনা সাংস্কৃতিক সংগঠনের আয়োজনে শুরু হয় বসন্ত উৎসব। এ উৎসব চলাকালীন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অনুষ্ঠানস্থলে বসা নিয়ে ছাত্রলীগের দু’পক্ষের সংঘর্ষ বাঁধে। এসময় সেখানে থাকা সাংবাদিকরা এগিয়ে গেলে তাদের ওপরও হামলা চালায় ছাত্রলীগ কর্মীরা।
ছাত্রলীগের হামলায় আহত আলোকচিত্রী অসমিত অভি বলেন, এমসি কলেজে মোহনার বসন্ত উৎসব স্থলে বসাকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই গ্রম্নপের সংঘর্ষ বাঁধে। এ সময় দৈনিক শুভ প্রতিদিনের ফটো সাংবাদিক মিঠু দাস জয় সংঘর্ষের ছবি তুলতে গেলে তার ওপর চড়াও হয় কলেজ শাখা ছাত্রলীগের কর্মীরা। পরে অন্যান্য সাংবাদিকরা এগিয়ে গেলে তাদের ওপরও হামলা করে ছাত্রলীগ কর্মীরা।
আহত ইউসুফ আলী জানান, ‘ছাত্রলীগ কর্মীরা উপস্থিত সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালায়। হামলার সময় আমার হাতে থাকা ক্যামেরা ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে তারা। কিন্তু সকলের উপস্থিতে তা আর ছিনিয়ে নেয়া সম্ভব হয়নি।’
শাহপরান (র.) থানার ওসি আখতার হোসেন বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থলে আছি। সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে সেখানকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। ব্যাপারটি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি।’