শারীরিক সুস্থতা আল্লাহর অশেষ রহমত।। সুস্থতার জন্য নারীর করণীয়।।
তারিখঃ পয়লা জানুয়ারি ২০১৮।।
সম্প্রতি একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, গত তিন দশক থেকে সারা বিশ্বে নারীদের শারীরিক অবস্থার মারাত্মক অবনতি ঘটেছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে মৃত্যুহারও। এমন পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে হলে নারীদেরক বেশ কিছু বিষয় ভালভাবে অনুধাবন করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
ইমিয়া ইউনিভার্সিটির গবেষকদের এক গবেষণায় দেখা গেছে, বর্তমানে যেখানে কম বয়সি পুরুষদের শারীরিক অবস্থার উন্নতি ঘটেছে। অন্যদিকে নারীদের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটেছে উল্লেখযোগ্য ভাবে। ফলে ২৫ থেকে ৩৪ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে বেড়েছে মৃত্যুহার। ১৯৯০ সালে যেখানে নারীদের অসুস্থতার হার ছিল মাত্র ৮.৫ শতাংশ, সেখানে ২০১৪ সালে এটি বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় প্রায় ২০ শতাংশের মত। এদিকে একটা কেস স্টাডিতে দেখা গেছে, ছেলেরা নিজেদের স্বাস্থ্যের বিষয় যতটা সচেতন, নারীরা এ বিষয়ে এখনও বড় বেশি উদাসীন। ফলে স্বাভাবিকভাবেই নারীদের মধ্যে ওবেসিটি, ডায়াবেটিস, অ্যাংজাইটি এবং স্ট্রেসের মত মরণব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে নারীদের সুস্থভাবে বাঁচতে হলে বেশ কিছু বিষয় সতর্ক থাকতে হবে। আমি এ লেখা শুধু ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের জন্য লিখছি, তা নয়। অন্য ধর্মাবলম্বীরাও যদি ইসলামের সুশৃঙ্খল জীবন যাপনের কিছু নীতিমালা অনুসরণ করেন, উপকৃত হতেই পারেন।
১) ডায়াটের দিকে নজর দিনঃ নারীদের শরীর ছেলেদের তুলানায় অনেক বেশি জটিল। তাই নারীদেরকে তাদের শরীরের প্রতি বিশেষভাবে মনোযোগ দিতে হবে। নারীদের প্রথমে যে কাজটি করতে হবে, তা হল ডায়েটের প্রতি নজর দেওয়া। এক্ষেত্রে প্রতিদিনের ডায়েটে ফল, সবুজ শাকসবজি ছাড়াও ডিম, মাছ এবং মাংসের মত প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। ভিটামিন, মিনারেল এবং ফাইবার সমৃদ্ধ খাবারও খেতে হবে। অন্যদিকে ৪০-এর পর থেকে নারীদের শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দেখা দিতে শুরু করে। ফলে নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। তাই এ সময় প্রতিদিন নিয়ম করে দুধ বা দুগ্ধজাত খাবার খেতে হবে।
২) শরীরচর্চাঃ একাধিক কেস স্টাডিতে দেখা গেছে শরীরচর্চার অভাবে নারীদের মধ্যে হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়াও শরীরচর্চার অভাবে ওবেসিটি, ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি রোগও বৃদ্ধি পায়। তাই নিয়ম করে শরীরচর্চা করার অভ্যাস গড়ে তোলতে হবে।
৩) মদ্যপান এবং ধূমপানঃ বর্তমান সমাজে কিছু অতি আধুনিক নারী মদ্যপান ও ধূমপান করাকে ফ্যাশন হিসেবে মনে করে থাকে। কিন্তু এ মদ্যপান এবং ধূমপান নারীদের শরীরের পক্ষে খুবই ক্ষতিকর। তাই তাদের উচিত মদ্যপান ও ধূমপান থেকে নিজেদের বিরত রাখা।
৪) স্ট্রেসকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবেঃ মানসিক চাপকে একেবারে ঘাড়ে উঠান চলবে না। কারণ স্ট্রেস হল ডায়াবেটিসের মত এক ধরনের সাইলেন্ট কিলার। তাই তো একবার যদি এ রোগ শরীরে প্রবেশ করে যায়, তাহলে ধীরে ধীরে সব শেষ করে দেয়। তাই যখনই ক্লান্ত লাগবে, মনে হবে আর স্ট্রেস নিতে পারছেন না, তখনই সব কিছু ছেড়ে কিছুদিন কোথাও থেকে একটু ঘুরে আসবেন। প্রয়োজনে বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে সময় কাটাবেন। দেখবেন মানসিক চাপ আর আর বেশি ক্ষতি করতে পারবে না।
৫) ব্রেস্ট ক্যান্সার থেকে সাবধানঃ নারীদের জন্য বর্তমানে সবচেয়ে মারাত্মক হুমকির নাম হচ্ছে ব্রেস্ট ক্যান্সার । আর এটি জীবনযাত্রার কারণে হোক বা পরিবেশ গত কারণে হোক এর প্রতি নারীদের অবশ্যই সজাগ থাকতে হবে। তাই নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর এই বিষয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে ভুলা যাবে না। কারণ এই মারণ রোগকে যদি আটকাতে চান তা হলে আপনাকে সচেতন হতেই হবে।
৬) সর্বোপরি আপনি যদি ইসলাম ধর্মাবলম্বী হন, তাহলে অভ্যাসগত ভাবে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলুন। দেখবেন শারীরিক অবস্থার উন্নতি হবে। আপনি দৈনিক পাঁচবার সলাত আদায় করুন। এটি যেমনি ভাবে আল্লাহর নির্দেশ মানলেন, তেমনি এটা কিন্তু আপনার ছোটখাট শারীরিক কসরতও হবে। যেচিট ব্যায়ামের পর্যায়ে পড়ে। সেই সাত সকালে ঘুম থেকে জেগে ওঠে ফজরের সলাত আদায় করবেন। সেটি আপনার জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে নিঃসন্দেহে। রমজানে সিয়াম পালন করবেন, তাও তো আপনার ডায়েট কন্ট্রোলে সহযোগিতা করছে। অন্য ধর্মাবলম্বীরাও তাদের ধর্মীয় বিধান মানুন। শারীরিক উন্নতি হবে।
শারীরিক সুস্থতা ও মৃত্যু পর্যন্ত সব অঙ্গ সচল থাকার একটা আমলঃ
কেউ যদি শারীরিক সুস্থতা কামনা করে এবং মৃত্যু পর্যন্ত বিকলাঙ্গ হওয়া থেকে বাঁচতে চায় তাহলে প্রতিদিন এ আয়াতটি তিনবার পড়ে শরীরে দম করতে হবে।
ফজিলতঃ কেউ যদি শারীরিক সুস্থতা কামনা করে এবং মৃ্ত্যু পর্যন্ত বিকলাঙ্গ হওয়া থেকে বাঁচতে চায় তাহলে প্রতিদিন এ আয়াতটি তিনবার পড়ে শরীরে দম করতে হবে।
আরবি দোআঃ তিনবার পড়বে
فَأَقِمْ وَجْهَكَ لِلدِّينِ حَنِيفًا فِطْرَتَ اللَّهِ الَّتِي فَطَرَ النَّاسَ عَلَيْهَا لَا تَبْدِيلَ لِخَلْقِ اللَّهِ ذَلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ وَلَكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ.
বাংলা অর্থঃ অতএব হে নবী আপনি দীনের জন্য একনিষ্টভাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করুন। কারণ এটাই স্বভাবজাত ধর্ম যে ধর্ম গ্রহণ করার যোগ্যতা দিয়ে আল্লাহ তায়ালা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টিকৃত স্বভাবের ব্যতিক্রম হয় না। এটাই সুপ্রতিষ্ঠিত বিশুদ্ধ ধর্ম। কিন্তু অনেক মানুষই তা জানে না। [সুরা রুম-৩০]
তথ্যসূত্রঃ বোল্ডস্কাই ও অন্যান্য।