শক্তিশালী ভূমিকম্প অনুভূত!
08 Nov, 2017
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অংশে প্রচণ্ড ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। বেলা ১১টার দিকে এই ভূমিকম্পে নগরবাসীর মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়। তবে তাৎক্ষণিকভাবে মাত্রা এবং ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে জানা যায়নি।
এদিকে উত্তরাঞ্চলে মঙ্গলবার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। রিখটার স্কেলে এর তীব্রতা ছিল ৬.৩। তবে সুনামির কোনো সতর্কতা জারি করা হয়নি।
মার্কিন ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা জানায়, উপকূলীয় আরিকা নগরীর ৭০ কিলোমিটার পূর্বে ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। এর উৎপত্তিস্থল ছিল ভূ-পৃষ্ঠের ৮২ কিলোমিটার গভীরে।
মেক্সিকোয় ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৭৩
মেক্সিকোর মধ্যাঞ্চলে শক্তিশালী ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২৭৩ হয়েছে। দেশটির ইমার্জেন্সি সার্ভিসের প্রধান ও প্রেসিডেন্টের কার্যালয় থেকে ভূমিকম্পে নিহতের নতুন এই সংখ্যা প্রকাশ করা হয়েছে। স্থানীয় সময় গত মঙ্গলবার দুপুরে ৭ দশমিক ১ মাত্রার এই ভূমিকম্পে মেক্সিকো সিটিসহ এর আশপাশের কয়েকটি রাজ্যজুড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। মেক্সিকো সিটিতে অন্তত ৪৪টি বাড়ি ভেঙে পড়েছে, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে লক্ষাধিক মানুষ। বিভিন্ন স্থানে গ্যাস লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে; কয়েকটি ভবনে অগ্নিকাণ্ডও হয়েছে।
ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় তৃতীয় দিনের মতো উদ্ধারকাজ চলছে এবং ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো মানুষ আটকা পড়ে আছে বলে ধারণা উদ্ধারকর্মীদের। শুধু মেক্সিকো সিটিতেই অন্তত ১০টি ধসে পড়া ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে জীবিত মানুষ আটকা পড়ে আছে বলে বিশ্বাস তাদের। ‘সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে’ ভূমিকম্প দুর্গতদের উদ্ধারকাজ চলছে বলেন জানান প্রেসিডেন্ট এনরিক পেনা নিয়েতো। বেলা ১টার পরপর ভূমিকম্পে সব কিছু কাঁপতে শুরু করলে মানুষ আতঙ্কে রাস্তার বেরিয়ে আসে। এ সময় বিদ্যালয়গুলো খোলা ছিল, ফলে ধসে পড়া স্কুল ভবনে অনেক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
কোয়াপা এলাকায় ধসে পড়া স্কুলে উদ্ধার অভিযান চালিয়ে নিহত ২২ শিশুসহ মোট ২৪ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ধ্বংসস্তূপে আটকে থাকা আরো প্রায় ৩০ শিশুর মধ্য থেকে জীবিত উদ্ধার করা গেছে ১১টি শিশুকে। একই ধরনের আরো উদ্ধার অভিযানে দেশজুড়ে বিভিন্ন ভবন থেকে উদ্ধার করা হয়েছে জীবিত ৫০ জনকে। ভূমিকম্পে আরো ২০৯টি স্কুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ১৫টিতে মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। মেক্সিকো সিটিতেই নিহত হয়েছে ১০২ জন। আর আশপাশের রাজ্যগুলোতে নিহত হয়েছে ১৩৫ জন। ভয়াবহ এ দুর্যোগের শিকার হওয়া লোকদের জন্য দেশে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছেন প্রেসিডেন্ট। যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ দফতরের তথ্যানুযায়ী, এ ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল মেক্সিকো সিটি থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে পুয়েবলা রাজ্যের আতেনসিঙ্গো এলাকায়। কেন্দ্র ছিল ভূপৃষ্ঠের ৫১ কিলোমিটার গভীরে। এ মাসের শুরুতে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে ভূমিকম্পে অন্তত ৯০ জনের মৃত্যু হয়।
আঙুলের ইশারায় হুলস্থুল
রয়টার্স জানায়, চারদিকে ধ্বংসস্তূপ। সেখান থেকে ২১ শিশু আর চার বয়স্ক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এমন ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে কাউকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা কঠিনই বটে। এরই মধ্যে এক উদ্ধারকর্মী দেখতে পেলেন ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে ছোট্ট একটি হাত উঁকি দিচ্ছে। তিনি চিৎকার করে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি জীবিত আছ? থাকলে সাড়া দাও। জবাবে স্রেফ দু’টি আঙুল নড়ে উঠল। ব্যস, রীতিমতো সাড়া পড়ে গেল মেক্সিকোর রাজধানী মেক্সিকো সিটির কোয়াপা এলাকার কলেজ এনরিক রেবসাম্যান নামে একটি স্কুলে উদ্ধার তৎপরতায় থাকা কর্মীদের মধ্যে।
মঙ্গলবার দুপুরে ৭ দশমিক ১ মাত্রার ভূমিকম্প মেক্সিকোকে আঘাত হানে। গত দুই দিন ঝড়-বৃষ্টির মধ্য দিয়েই সরকারি-বেসরকারি ত্রাণকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকেরা উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানের ধ্বংসস্তূপ থেকে ৫০ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। বুধবার কলেজ এনরিক রেবসাম্যান নামের প্রাথমিক স্কুলটি থেকে ২১ শিশু ও চার বয়স্ক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া আরো ১১ শিশুকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। এদের সবার বয়স ছয় থেকে ১৫ বছরের মধ্যে। বুধবার স্কুলটির ধ্বংসস্তূপের ভেতরে একটি শিশুর হাত নড়াচড়া করতে দেখতে পান এক উদ্ধারকর্মী। এ সময় তিনি চিৎকার করে জিজ্ঞেস করেন, সে জীবিত আছে কি না। জবাবে ওই শিশুটি তার আঙুল নাড়াতে শুরু করে। এরপরই উদ্ধারকারীরা শিশুটিকে উদ্ধারে দ্রুত তাদের তৎপরতা শুরু করে।
সূত্রঃ বিভিন্ন গণমাধ্যম