রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীন কেন মিয়ানমারের পক্ষ নিয়েছে ?

November 19, 2017 11:19 pm0 commentsViews: 8

১৮ নভেম্বর ২০১৭ঃ

রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আলোচনার জন্য চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই শনিবার বাংলাদেশ সফর করছেন । চীনের সাথে বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকলেও রোহিঙ্গা সংকটে চীন আন্তর্জাতিক ফোরামে মিয়ানমারের পক্ষেই অবস্থান নিয়েছে।

চীনের এই ভুমিকার পেছনে কী বিবেচনা কাজ করছে? তাদের ভূ-রাজনৈতিক নাকি কূটনৈতিক হিসেব? চীনের এ অবস্থানকে ব্যাখ্যা করেছেন সাবেক রাষ্ট্রদূত ও কূটনৈতিক বিশ্লেষক হুমায়ুন কবির।

বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে হুমায়ুন কবির বলছেন, চীনের এ অবস্থান কেন তা বুঝতে হলে তাদের নিজস্ব প্রেক্ষাপটকে বুঝতে হবে।

চীনের এ ভুমিকার পেছনে রাষ্ট্র সম্পর্কে তাদের দৃষ্টিভঙ্গী এবং ভূ-রাজনৈতিক বা কৌশলগত হিসেব এ দুটিই কাজ করছে।

“চীনের কাছে যে কোন রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও সংহতি একটা প্রধান বিষয়। রোহিঙ্গা প্রশ্নটিকে মিয়ানমার প্রথমেই তাদের রাষ্ট্রীয় অখন্ডতা ও নিরাপত্তার সাথে সম্পর্কিত বলে সংজ্ঞায়িত করেছে, রোহিঙ্গাদেরকে সন্ত্রাসী বলে আখ্যায়িত করার জন্য চেষ্টা করেছে।”

“এটা চীনের যে নিজস্ব রাষ্ট্রকাঠামোর দর্শন – তার সাথে সংগতিপূর্ণ। শুধু তাই নয় চীনের নিজেরও মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ একটা অঞ্চল আছে পশ্চিমাঞ্চলে। ওখানেও তারা এ ধরণের সমস্যার আশংকা করে।”

মি.কবির বলছিলেন, তাই মিয়ানমারের কাছ থেকে রোহিঙ্গা সমস্যার কথা যখন চীন শোনে, তখন তারা ভাবে যে ‘এরকম একটা সমস্যা আমাদেরও আছে – ওদেরও হতে পারে।’

তাই রাষ্ট্রকে সবার ওপর স্থান দেয়া এবং সে জন্য অন্য কিছু ক্ষতি হলে তা মেনে নেয়া – এই প্রবণতা চীন, রাশিয়া বা ভারত – সবার মধ্যেই আছে, বলছিলেন হুমায়ুন কবির।

চীনের কৌশলগত হিসেবটা কি? এ প্রশ্নের জবাবে মি. কবির বলেন চীনের আমদানি পণ্যের মধ্যে আছে জ্বালানি বা তেল-গ্যাস। এই পণ্যগুলো যায় মালাক্কা প্রণালী দিয়ে।

চীন মিয়ানমার বাংলাদেশছবির কপিরাইটউইকিম্যাপিয়া
Image captionচীন মালাক্কা প্রণালী ছাড়াও বঙ্গোপসাগরের আরেকটি পথ খোলা রাখতে চায়, সে জন্যই মিয়ানমারের বন্ধুত্ব গুরুত্বপূর্ণ

“চীন এব্যাপারে খুবই সচেতন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে যদি তাদের কোন সংঘাতের আশংকা তৈরি হয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র এই প্রণালীটি অবরুদ্ধ করে দিতে পারে। এটা তাদের কৌশলগত ভাবনার মধ্যে আছে।”

“এ জন্যই তারা সরাসরি বঙ্গোপসাগরে যাবার একটা পথ ব্যবহার করতে চায়। ইতিমধ্যেই মিয়ানমারের আকিয়াব বন্দর থেকে চীনের ইউনান বা কুনমিং পর্যন্ত পাইপলাইন দিয়ে তেল-গ্যাস সরবরাহ শুরু করেছে। একটা রেললাইনও করবার কথা ছিল। তা ছাড়া তারা অর্থনৈতিক জোন করবে।”

“মালাক্কা প্রণালীকে বাইপাস করে তাদের সাপ্লাই লাইনকে খোলা রাখা – এ জন্য যে সব দেশ তাদের সহযোগিতা করছে তাদের পাশে দাঁড়ানোর একটা বিরাট কৌশলগত চিন্তা চীনের অবস্থান কি হবে তা নির্ধারণের ক্ষেত্রে ভুমিকা পালন করছে।”

কিন্তু মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে ৬ লক্ষ রোহিঙ্গা মুসলিমের আশ্রয় নেয়াটা ইতিমধ্যেই একটা বিরাট মানবিক সংকটে পরিণত হয়েছে। তার পরও চীন কেন মিয়ানমারকে সমর্থন দিয়ে চলেছে?

জবাবে মি. কবির বলেন, লক্ষ্য করলে দেখা যাবে চীনের অবস্থান আসলে এক্ষেত্রে নিরংকুশ নয়। চীন যেমন বন্ধু হিসেবে মিয়ানমারের পাশে থাকছে, তেমনি রোহিঙ্গাদের অত্যাচারের যেসব বিবরণ বেরিয়েছে তা চীনকে খানিকটা হলেও বিব্রত করেছে।

“এর প্রমাণ পাওয়া যায়, যখন নিরাপত্তা পরিষদে প্রেসিডেন্সিয়াল স্টেটমেন্ট এসেছে – তখন কিন্তু চীন বা রাশিয়া সেটার বিরোধিতা করে নি।”

চীন মিয়ানমার বাংলাদেশছবির কপিরাইটMUNIR UZ ZAMAN
Image captionছয় লক্ষেরও বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে

“এ প্রস্তাবে মিয়ানমারের সরকার এবং সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে স্পষ্টভাবে ঘটনাগুলোকে তুলে ধরা হয়েছে। চীন সেখানে নিরব ভুমিকা পালন করেছে।”

“তাই চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকা সফরকে আমি খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে করি। কারণ এর আগেও যখন মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের সমস্যা হয়েছিল তখন চীনকে দূতিয়ালির ভুমিকায় আমরা পেয়েছিলাম, সমস্যা সমাধানের জন্য সামনে যেতে পেরেছিলাম।”

“এখন চীন বা রাশিয়া আমাদের পক্ষে না থাকলেও তারা যে অন্য পক্ষে আছে তাও তারা বলে নি। তারা জাতিসংঘে ভোট দেয় নি, বিরত থেকেছে। তাই আমাদের কূটনীতির এখানে একটা এক্সপ্লোরেশনের জায়গা আছে।”

“চীন যদি বাংলাদেশের পক্ষে নাও থাকে, অন্তত বিপক্ষে যেন না থাকে এবং একটা নিরপেক্ষ অবস্থানে যদি তাকে রাখা যায় – সেটাও বাংলাদেশের কূটনীতির জন্য একটা ইতিবাচক ব্যাপার হবে” – বলেন সাবেক কূটনীতিবিদ হুমায়ুন কবির।

সূত্রঃ বিবিসি

Leave a Reply

You must be logged in to post a comment.

Editor in Chief: Dr. Omar Faruque

Editor: Dr. Morjina Akhter

All contact: 400E Mosholu Parkway South Apt # A23,The Bronx, New York 10458, USA

Mob. 001.347.459.8516
E-mail: dhakapost91@gmail.com