রেইনবো নিউজ কার্যালয় ছিল যুবলীগ নেতা ‘সুন্দরী সোহেলে’র অস্ত্রাগার
বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিএম ফরমান আলী জানিয়েছেন, অস্ত্রগুলো সব অবৈধ।
বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘ওই কার্যালয় থেকেই রাশেদের লাশ নামানো হয়েছে। এরপর গত বৃহস্পতিবার আমরা সেখানে অভিযান চালিয়েছি। কার্যালয় তল্লাশি করে দুটি বিদেশি পিস্তল, একটি বিদেশি রিভলবার, একটি শাটারগান ও ১২১টি গুলি জব্দ করা হয়েছে। এসব অস্ত্র অবৈধ। একটিরও বৈধ কাগজপত্র আমরা পাইনি।’
সোহেল ও তার সহযোগীদের গ্রেফতারে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অভিযান চালানো হয়েছে বলেও জানান ওসি ফরমান আলী।
গত রবিবার (১৫ জুলাই) ভোরে বনানীর মহাখালী জিপি-গ ৩৩১ নম্বর বাড়ির পেছনের গলি থেকে রাশেদের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই বাড়ির তৃতীয় তলায় রেইনবো নিউজের কার্যালয়।
নিহত কাজী রাশেদনিহত কাজী রাশেদ বনানী থানা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনি থানা যুবলীগের আহ্বায়ক ইউসুফ সর্দার সোহেল ওরফে সুন্দরী সোহেলের দেহরক্ষী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। এলাকায় বেশ পরিচিত রয়েছে রাশেদের। প্রায় ২০ বছরের সম্পর্ক সুন্দরী সোহেল ও রাশেদের।
এ ব্যাপারে বনানীর স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা কোনও কথা বলতে চান না। তবে রেইনবো নিউজের কার্যালয়ে সুন্দরী সোহেলের সঙ্গে অনেকেই আড্ডা দিতো। সব অপকর্মের নকশা সেখানেই বসে করা হতো।
রাশেদ হত্যা মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘পত্রিকার অফিসে আড়ালে সোহেল অপকর্ম করে বেড়াতো। রেইনবো নিউজ কার্যালয়টি মাদকেরও আখড়া। সেখানে যেভাবে অবৈধ অস্ত্র রাখা হয়েছে, তাতে মনে হচ্ছে সোহেলকে গ্রেফতার করলে আরও অস্ত্র পাওয়া যাবে।’
নিহত কাজী রাশেদের বাবা, ভাই ও স্ত্রী এ হত্যাকাণ্ডে সুন্দরী সোহেলের দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলেছেন। তাদের বক্তব্য, এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুবলীগ নেতা সুন্দরী সোহেল ও তার সহযোগীরা জড়িত।
নিহত রাশেদের বড় বোন বাবলী আক্তার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমার ভাই সারা দিন সোহেলের সঙ্গে চলতো। রাশেদ বাড়িতে থাকলে তাকে ফোন দিয়ে পাগল বানিয়ে ফেলতো সোহেল। বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যেতো। শনিবার দুপুরে ভাত খেয়ে আমার ভাই বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। এরপর রবিবার ভোরে রাস্তায় তার লাশ পড়ে থাকতে দেখি। সোহেলের অফিসের কাছেই তার লাশ পড়েছিল।’
রেইনবো নিউজের কার্যালয়তিনি বলেন, ‘ঘটনার পর সোহেল ও তার সহযোগীরা কেউ এলাকায় নেই। কেউ একটা ফোন দিয়েও খোঁজ নেয়নি। তাদের অফিসও তালা দেওয়া। রাশেদের বন্ধু ছিল তারা, অথচ তারা পালিয়েছে কেন? এতেই স্পষ্ট হয় তারা সবাই এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত।’
রাশেদকে হত্যার পর তার লাশ গলিপথ দিয়ে চার ব্যক্তি টেনে নিয়ে ফেলে রেখে যায়। এ সময় তাদের হাত কাপড় বা পলিথিন জাতীয় কিছু দিয়ে মোড়ানো ছিল বলে পুলিশ সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে নিশ্চিত হয়েছে। পুলিশের ধারণা, খুনিরা হাতের ছাপ না রাখতে হাতে পলিথিন মুড়িয়ে নিয়েছিল। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত কাউকে এখনও গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।
নিহত কাজী রাশেদের বাবার নাম আবুল হোসেন। তিনি একটি প্রতিষ্ঠানের গাড়িচালক। চার ভাই ও দুই বোনের মধ্যে রাশেদ ছিলেন দ্বিতীয়। তিনি মা-বাবার সঙ্গে তাদের মহাখালীর বাসায় থাকতেন। ঘটনার পর রাশেদের স্ত্রী কাজী মৌসুমী আক্তার বাদী হয়ে সোহেলসহ আরও কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন। মামলাটি বনানী থানা পুলিশ তদন্ত করছে। নিহত রাশেদের দুই বছরের একটি ছেলে আছে।
এক সপ্তাহেও কোনও আসামি গ্রেফতার না হওয়ায় বিচার পাওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন রাশেদের বড় বোন বাবলী আক্তার। তিনি বলেন, ‘আমরা তো দেখি দেশে এসব ঘটনায় বিচার হয় না। এর বিচারও হবে বলে মনে হচ্ছে না। তবে তারপরও আমরা বিচার চাই।’