রাসুল সা. অবমাননার পরিণাম ও শাস্তিঃ আমাদের করণীয়।।
আল্লাহ তাআলা মানবজাতির হিদায়াতের জন্য যুগে যুগে রাসুল পাঠিয়েছেন। সেই ধারাবাহিকতায় আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) বিশ্ব মানবগোষ্ঠীর জন্য সর্বশেষ রাসুল। তিনি সকল জনগোষ্ঠীর জন্য প্রেরিত নবী। আরবী, অনারবী, সাদা-কালো সবার জন্য তিনি নবী ও রাসুল। তিনি সকল নবী ও রাসূলেরও নেতা।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অবশ্যই আল্লাহ মুমিনদের উপর অনুগ্রহ করেছেন, যখন তিনি তাদের মধ্য থেকে তাদের প্রতি একজন রাসুল পাঠিয়েছেন, যে তাদের কাছে তার আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করে এবং তাদেরকে পরিশুদ্ধ করে আর তাদেরকে কিতাব ও হিকমাত শিক্ষা দেয়। যদিও তারা ইতোপূর্বে স্পষ্ট ভ্রান্তিতে ছিল।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১৬৪)
বর্তমানে বিভিন্ন ভাবে রাসুল (সা.) এর অবমাননা করা হচ্ছে। অথচ আমরা জানি না, এ অবমানার পরিণাম কত ভয়াবহ। এ বিষয়ে আমাদের সঠিক জ্ঞান থাকা খুবই জরুরী। আলোচ্য প্রবন্ধে রাসুল সা. এর অবমাননার পরিণাম ও শাস্তি সম্পর্কে সামান্য আলোকপাত করার চেষ্টা করবো।
রাসুলর সম্মান ও মর্যাদাঃ মুহাম্মদ (সা.) এর সম্মান ও মর্যাদা আল্লাহ তাআলা নির্ধারণ করেছেন। তাই ইচ্ছা করে তার মর্যাদা কেউ বাড়াতে বা কমাতে পারবে না। তারা নবীকে নিয়ে যতই কটূক্তি এবং অবমাননা করেছে, আল্লাহ ততই তার মর্যাদা বৃদ্ধি করেছেন।
আল্লাহ্ বলেন, ‘আর আমরা আপনার খ্যাতিকে উচ্চ মর্যাদা দান করেছি।’ (সুরা আল-ইনশিরাহ, আয়াতঃ ৪)
প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আযানে বিশ্বব্যাপী মসজিদে মসজিদে তার নাম উচ্চারিত হচ্ছে। মুয়াজ্জিন ঘোষণা দিচ্ছে, ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ্’ অর্থাৎ ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে মুহাম্মদ আল্লাহর রাসুল।’
নিম্নে রাসুল (সা.) এর সম্মান ও মর্যাদা সম্পর্কে আলোকপাত করা হলঃ
১. উত্তম চরিত্র ও মাধুর্যপূর্ণ আচরণের অধিকারী আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.)ছিলেন উত্তম চরিত্র ও মাধুর্যপূর্ণ আচরণের অধিকারী। এ বিষয়ে স্বয়ং আল্লাহ তাআলাই প্রশংসা করে বলেন, ‘আর অবশ্যই তুমি মহান চরিত্রের উপর প্রতিষ্ঠিত।’ (সুরা আল-কালাম, আয়াতঃ ৪)
অনুরূপভাবে হরযত আবু হুরায়রা রা. বর্ণিত হাদীসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয় আমি মহৎ চারিত্রিক গুণাবলীর পূর্ণতা দান করার উদ্দেশ্যে প্রেরিত হয়েছি।’ (বায়হাকী)
২. তিনি বিশ্ববাসীর জন্য রহমাত স্বরূপ আল্লাহ তাআলা মুহাম্মদ (সা.) কে শুধু মানবমণ্ডলী নয়; সকল সৃষ্টিকুলের জন্যই রহমাত হিসেবে প্রেরণ করেছেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর আমি তোমাকে বিশ্ববাসীর জন্য কেবল রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছি।’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াতঃ ১০৭)
৩. তিনি শেষ নবী তার বৈশিষ্ট্যের অন্যতম একটি দিক হচ্ছে, তিনি হচ্ছেন নবী পরস্পরা পরিসমাপ্তকারী-শেষ নবী। তারপর আর কোন নবী আসবেন না। কুরআন মাজীদে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন, ‘মুহাম্মদ তোমাদের কোন পুরুষের পিতা নন, বরং তিনি আল্লাহর রাসুল এবং শেষ নবী। আর আল্লাহ সবকিছু সম্পর্কে সর্বজ্ঞ।’ (সুরা আল-আহযাব, আয়াতঃ ৪০)
৪. সকল নবী-রাসুলদের উপর তাকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করা হয়েছে। যুগে যুগে যেসব নবী ও রাসুল আগমন করেছেন তাদের উপর মুহাম্মদ (সা.)কে শ্রেষ্ঠত্ব দেওয়া হয়েছে। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিতঃ হাদীসে নবী (সা.) বলেছেন, ‘ছয়টি দিক থেকে সকল নবীদের উপর আমাকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করা হয়েছে। আমাকে জাওয়ামিউল কালিম তথা ব্যাপক অর্থবোধক সংক্ষিপ্ত বাক্য বলার যোগ্যতা দেওয়া হয়েছে, আমাকে ভীতি (শত্রুর অন্তরে আমার ব্যাপারে ভয়ের সঞ্চার করা) দ্বারা সাহায্য করা হয়েছে, গনীমতের মাল (যুদ্ধলব্ধ সম্পদ) আমার জন্যে বৈধ করা হয়েছে, আমার জন্যে সকল ভূমিকে পবিত্র ও সিজদার উপযুক্ত করা হয়েছে, আমি সকল মানুষের তরে প্রেরিত হয়েছি এবং আমার মাধ্যমে নবুওয়ত পরস্পরা শেষ করা হয়েছে।’ (সহীহ মুসলিম, হাদিস নম্বরঃ ১১৯৫)
৫. তাঁকে নিজের জীবনের চেয়েও বেশি ভালবাসা ঈমানের দাবি। যে ব্যক্তির মধ্যে রাসূলের ভালবাসা থাকবে না, তিনি কোনদিন মুমিন হতে পারবেন না। এমনকি নিজের জীবন থেকেও তার প্রতি বেশি ভালবাসা থাকতে হবে। কুরআনে বলা হয়েছে, ‘নবী, মুমিনদের কাছে তাদের নিজদের চেয়ে ঘনিষ্ঠতর।’ (সুরা আল-আহযাব, আয়াতঃ ৬)
হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার কাছে তার সন্তান, পিতা ও সমগ্র মানুষ হতে প্রিয়তম হব।’ অর্থাৎ সবার চেয়ে তাকে বেশি ভালবাসতে হবে। (সহীহ বুখারী)
৬. তার শাফাআ’ত (সুপারিশ) কবুল হবে কিয়ামাতের কঠিন মুসিবতের দিনে আল্লাহ তাআলার অনুমতিক্রমে তিনি গুনাহগার উম্মাতের জন্য শাফাআ’ত করবেন। হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) বর্ণিত হাদীসে রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘কিয়ামতের দিন আমি সকল আদম সন্তানের নেতা। এতে কোনো গর্ব-অহঙ্কার নেই। সেদিন আমার হাতে প্রশংসার ঝাণ্ডা থাকবে তাতে কোনো গর্ব-অহঙ্কার নেই। আদম থেকে নিয়ে যত নবী-রাসুল আছেন সকলেই আমার ঝাণ্ডার নীচে থাকবেন। আমি হচ্ছি প্রথম সুপারিশকারী এবং আমার সুপারিশই সর্বপ্রথম কবুল করা হবে। এতে কোনো গর্ব-অহঙ্কার নেই।’ (ইবন মাজাহ)
৭. তিনিই সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশকারী ব্যক্তি তিনিই সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশকারী ব্যক্তি হবেন। এ বিষয়ে হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেন, ‘জান্নাতের দরজায় আমিই সর্বপ্রথম করাঘাত করব, তখন খাযেন (প্রহরী) জিজ্ঞেস করবে, কে আপনি? আমি বলব, মুহাম্মদ। সে বলবে, আপনার জন্যেই খোলার ব্যাপারে নির্দেশিত হয়েছি, আপনার পূর্বে কারো জন্যে খুলব না।’ (মুসলিম)
৮. তার আদর্শই সর্বোত্তম যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি, জান্নাতের আশা এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি প্রত্যাশা করেন তিনি তাদের সকলের জন্যে উত্তম আদর্শ। কুরআন মাজীদে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে তাদের জন্যে রাসুলর মাঝেই রয়েছে উত্তম আদর্শ।’ (সুরা আল-আহযাব, আয়াতঃ ২১)
৯. সকল ক্ষেত্রে তার অনুসরণ ঈমানদার হওয়ার শর্ত তিনি যেসব বিষয়ে আদেশ করেছেন তা পালন করা এবং যা নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাকতে হবে। কেননা তা ঈমানদার হওয়ার শর্ত। কুরআনে মাজীদে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর রাসুল তোমাদের জন্য যা দিয়েছেন তা তোমরা গ্রহণ কর, আর যা থেকে সে তোমাদের নিষেধ করে তা থেকে বিরত হও।’ (সুরা হাশর, আয়াতঃ ৭)
হযরত আবদুল্লাহ ইবন আমর (রা.) থেকে বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ পরিপূর্ণ মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না তোমাদের প্রবৃত্তি আমার অনুসরণ করে।’
১০. তার নাম শুনলে দুরুদ ও সালাম দিতে হয় আল্লাহ তাআলা তার মর্যাদাকে সমুন্নত করার জন্য দুরুদ ও সালাম পাঠের নির্দেশ প্রদান করেছেন। সুরা আল-আহযাবের ৫৬ নং আয়াতে বলা হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ, তোমরাও নবীর উপর দরূদ পাঠ কর এবং তাকে যথাযথভাবে সালাম জানাও।’
অনুরূপভাবে যহরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দুরুদ পাঠ করবে আল্লাহ তাকে দশবার দুরুদ পাঠ করেন, দশটি গুনাহ মুছে দেবেন এবং দশটি মর্যাদায় ভূষিত করবেন।’ (সুনান নাসাঈ)
১১. তার উপর কুরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে আল্লাহ তাআলা যুগে যুগে মানবতার হিদায়াতের জন্য যেসব কিতাব অবতীর্ণ করেছেন, তার মধ্যে আল-কুরআন হলো সর্বশেষ আসমানী কিতাব, যা মুহাম্মদ (সা.) এর উপর অবতীর্ণ হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর যারা ঈমান এনেছে, সৎকর্ম করেছে এবং মুহাম্মাদের প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে তাতে ঈমান এনেছে, আর তা তাদের রবের পক্ষ হতে (প্রেরিত) সত্য, তিনি তাদের থেকে তাদের মন্দ কাজগুলো দূর করে দেবেন এবং তিনি তাদের অবস্থা সংশোধন করে দেবেন।’ (সুরা মুহাম্মদ, আয়াতঃ ২)
রাসুল (সা.) এর অবমাননাঃ
বিশ্ব মানবণ্ডলীর হিদায়াতের জন্য আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.) কে প্রেরণ করা হয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য এই যে, তিনি বিভিন্ন সময় নানা রকমের বাধা বিপত্তি ও অবমাননার শিকার হয়েছেন। এ বিষয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর এমনিভাবেই আমরা প্রত্যেক নবীর জন্যে বহু শয়তানকে শত্রুরূপে সৃষ্টি করেছি, তাদের কতক শয়তান মানুষের মধ্যে এবং কতক শয়তান জ্বীনদের মধ্য থেকে হয়ে থাকে, এরা একে অপরকে কতগুলো মনোমুগ্ধকর, ধোঁকাপূর্ণ ও প্রতারণাময় কথা দ্বারা প্ররোচিত করে থাকে, আর আপনার রবের ইচ্ছা হলে তারা এমন কাজ করতে পারত না, সুতরাং আপনি তাদেরকে এবং তাদের মিথ্যা রচনাগুলোকে বর্জন করে চলুন।’ (সুরা আল-আনআম, আয়াতঃ ১১২)
তার উপর নবুওয়তী জীবনের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত বিভিন্ন রকমের কটূক্তি, অবমাননা এমনকি তার পরিবারের উপর অপবাদ দেওয়া হয়েছে। তার নাম বিকৃতি করা, তার চরিত্র নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করা, বিভিন্ন ইবাদাত নিয়ে ব্যঙ্গ করাসহ নানাভাবে পত্রিকা, ব্লগ, ফেসবুক ও বিভিন্ন মিডিয়ায় তাকে অবমাননা করা হচ্ছে। রাসুল (সা.) এর অবমাননা কত বড় জঘন্য অপরাধ তা নিম্নোক্ত বিষয় থেকে আরও সুস্পষ্ট হয়।
১. মানবাধিকার লঙ্ঘন রাসুল (সা.) এর উপর অপবাদ ও তাওর ব্যাপারে কুৎসা রটনা মানবাধিকার লঙ্ঘন। এ ধরনের জঘন্য কাজ কোন বিবেকবান মানুষ করতে পারে না। যারা এ ধরণের কাজে লিপ্ত থাকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে তাদেরেকে দণ্ডিত হতে হবে।
২. রাসূলের অবমাননা অনৈতিক কাজ মুহাম্মদ (সা.) তার কর্মময় জীবনে সদা ব্যস্ত ছিলেন কীভাবে মানুষের কল্যাণ লাভ করা যায়। তার গোটা জীবন ছিল মানব কল্যাণে নিবেদিত। অপরের কষ্ট সহ্য করতেন না তিনি। কুরআনুল কারীমে এসেছে, ‘তোমাদের নিকট একজন রাসুল এসেছে, যে তোমাদের মধ্যেরই একজন। তোমাদের ক্ষতি হওয়া তার পক্ষে দুঃসহ কষ্টদায়ক, তোমাদের সার্বিক কল্যাণেরই সে কামনাকারী। ঈমানদার লোকদের জন্য সে সহানুভূতি সম্পন্ন ও করুণাসিক্ত।’ (সুরা আত-তাওবাহ্, আয়াতঃ ১২৮]
৩. রাসূলের অবমাননা শাস্তিযোগ্য অপরাধ নবী (সা.)কে অবজ্ঞা করা, তুচ্ছ জ্ঞান করা, তার শানে বেয়াদবি করা অর্থাৎ তার প্রতি অবমাননাকর কোন উক্তি করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
এ প্রসঙ্গে প্রসিদ্ধ আলেম কাজী ইয়ায (রহ.) বলেন, ‘উম্মতের ওলামায়ে কেরাম এ ব্যাপারে একমত যে, রাসুল (সা.) কে গালি দেওয়া বা তাকে অসম্মান করার শাস্তি হচ্ছে হত্যা করা। এ ব্যাপারে সকলের ইজমা হয়েছে যে, যে ব্যক্তি রাসুল (সা.) কে গালি দিবে বা তার অসম্মান করবে, সে কাফের হয়ে যাবে এবং তার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।’ (আস-সারিমুল মাসলূলঃ ১/৯)
৪. রাসূলের প্রতি অবমাননা একটি ফিতনাহ রাসুল (সা.) এর শানে অবমাননা একটি ফিতনাহ-ফাসাদ তুল্য অপরাধ। কারণ এর লক্ষ্য হল মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা ও সমাজে অশান্তি তৈরি করা। ভিন্নধর্মাবলম্বীদের প্রতি হিংসার আগুন জ্বালিয়ে দেওয়াসহ ধর্মপ্রিয় মানুষকে আঘাত করা।
৫. রাসূলের অবমাননা একটি যুলুম চরিত্র হচ্ছে মানব জীবনের এক অমূল্য সম্পদ। রাসুল (সা.) ছিলেন সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী। যে রাসূলের চারিত্রিক সার্টিফিকেট স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামীন দিয়েছেন তার ব্যাপারে অবমাননাকর উক্তি করা চরম যুলুম ভিন্ন অন্য কিছুই নয়। সুতরাং তার চরিত্রের বিরুদ্ধে কথা বলা কত বড় যুলুম তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
৬. রাসূলের অবমাননা রাষ্ট্রদ্রোহীতার শামিল গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৪১ নং ধারায় প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার ধর্ম পালন ও সংরক্ষণের অধিকার দেওয়া হয়েছে। অন্য কোনো ধর্ম বা কোনো ধর্মের নেতার বিষয়ে কটূক্তি করা সংবিধান তথা রাষ্ট্রবিরোধী কাজ। সুতরাং যারাই এ কাজটি করবে তারা রাষ্ট্রদ্রোহীতার অপরাধে অপরাধী।
সবচেয়ে অবাক হওয়ার বিষয় ৯০ শতাংশ মুসলিমের দেশে প্রাণের নবী সাঃ কে গালি দেওয়া হয়, তাঁর নামে ব্যঙ্গাত্মক কার্টুন ছাপা হয়, তাঁর নামে কুৎসা রটানো হয়। ব্লগ ও ফেইসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক সাইটগুলোতে ‘মুক্তমনের চর্চা’ নাম দিয়ে ইচ্ছামত রাসুল সাঃ এর নামে অশ্লীল মিথ্যা প্রপাগান্ডা ছড়ানো হয়।
অথচ হাসিনার নামে কারও নাম হলেও পুলিশ গ্রেফতার করে। এমনকি নামের সাথে সাদৃশ্য থাকার কারণে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের শিক্ষককেও রেহাই দেওয়া হয় না এ সরকার অবমাননা থেকে। অথচ রাসুল সাঃ এর নামে গালি দিলে সেখানে কারও কোন মাথা ব্যথা নেই।
সরকার কি রাসুল সাঃ এর চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেল? যদি তাই হয় তবে আমরা কেউ মুসলিম হতে পারি নি।
রাসুল (সা.) এর অবমাননার পরিণাম ও শাস্তিঃ
রাসুল (সা.) এর অবমাননা এবং তাকে বিদ্রূপ করার অধিকার কারো নেই। যে রাসুলকে অবমাননা এবং তাকে বিদ্রূপ করবে তার পরিণাম হবে অত্যন্ত ভয়াবহ। আর এ অপরাধের জন্য তাকে শাস্তিও পেতে হবে। নিম্নে রাসূলের অবমাননার পরিণাম সম্পর্কে আলোকপাত করা হলঃ
১. কাফের ও মুরতাদ বা ধর্মত্যাগী হয়ে যাবেঃ যে রাসূলের অবমাননা করবে, সে মুরতাদ বা ধর্মত্যাগী এবং কাফির হিসেবে বিবেচিত হবে। এ বিষয়ে কুরআন মাজীদে বলা হয়েছে, ‘মুনাফিকরা ভয় করে যে, তাদের বিষয়ে এমন একটি সুরা অবতীর্ণ হবে, যা তাদের অন্তরের বিষয়গুলো জানিয়ে দেবে। বল, তোমরা উপহাস করতে থাক। নিশ্চয় আল্লাহ বের করবেন, তোমরা যা ভয় করছ। আর যদি তুমি তাদেরকে প্রশ্ন কর, অবশ্যই তারা বলবে, আমরা আলাপচারিতা ও খেল-তামাশা করছিলাম। বল, আল্লাহ, তার আয়াতসমূহ ও তার রাসূলের সঙ্গে তোমরা বিদ্রূপ করছিলে? তোমরা ওযর পেশ কর না। তোমরা তোমাদের ঈমানের পর অবশ্যই কুফরি করেছ। যদি আমি তোমাদের থেকে একটি দলকে ক্ষমা করে দেই, তবে অপর দলকে আযাব দেব। কারণ, তারা হচ্ছে অপরাধী।’ (সুরা আত-তাওবাহ, আয়াতঃ ৬৫-৬৬)
২. দুনিয়াতে আল্লাহর লানতপ্রাপ্ত ও আখিরাতে কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হবেঃ যে রাসূলের অবমাননা করবে, সে দুনিয়াতে আল্লাহর লানতপ্রাপ্ত ও আখিরাতে কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হবে। এ বিষয়ে কুরআন মাজীদে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয় যারা আল্লাহ্ ও তার রাসুলকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ্ তাদের প্রতি দুনিয়া ও আখিরাতে অভিসম্পাত করেন এবং তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন অবমাননাকর শাস্তি।’ (সুরা আল-আহযাব, আয়াতঃ ৫৭)
আর রাসুলকে অবমাননা এবং তাকে বিদ্রূপ করার মাধ্যমে তাকে সবচেয়ে বেশি কষ্ট দেওয়া হয়। এ বিষয়ে হাদীসে এসেছে, হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘এক ব্যক্তি নাসারা (খ্রিস্টান) ছিল সে ইসলাম গ্রহণ করল এবং সুরা আল-বাকারা ও আল ইমরান শিখল। সে নবী (সা.) এর নিকট কেরানীর কাজ করত। সে পুনরায় নাসারা হয়ে গেল এবং বলতে লাগল মোহাম্মদ আমি যা লিখি তাই বলে, এর বাহিরে সে আর কিছুই জানে না। এরপর সে মারা গেল, তখন তার সঙ্গীরা তাকে দাফন করল, সকালে উঠে দেখল তার লাশ বাইরে পড়ে আছে, তখন নাসারারা বলতে লাগল, মোহাম্মদের সঙ্গীরা এই কাজ করেছে; কেননা সে তাদের ধর্ম ত্যাগ করেছিল। তখন তারা আরো গভীর করে কবর খনন করে তাকে আবার দাফন করল, আবার সকালে উঠে দেখল তার লাশ বাইরে পড়ে আছে। তখন তারা বলল, এটা মোহাম্মদ এবং তার সঙ্গীদের কাজ, কেননা সে তাদের ধর্ম ত্যাগ করে এসেছিল। তখন তারা আবার আরো গভীর করে কবর খনন করল এবং তাকে দাফন করল, আবার সকালে উঠে দেখল তার লাশ আবার বাইরে পড়ে আছে, তখন তারা বুঝল, এটা কোন মানুষের কাজ নয়, তখন তারা তার লাশ বাইরেই পড়ে থাকতে দিল।’ (বুখারী ও মুসলিম)
৩. মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হবেঃ যদি কোন ব্যক্তি বিচারের মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে, সে রাসূলের অবমাননা করেছে, তবে তাকে মুরতাদ হিসেবে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড দিতে হবে। এ বিষয়ে উম্মাতের সকল আলেম একমত হয়েছেন। কারণ, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার দ্বীন (ইসলামকে) পরিবর্তন করল, তাকে তোমরা হত্যা কর।’ (বুখারী, তিরমিযী, ১৪৫৮, আবু দাউদ ও নাসাঈ)
রাসুল (সা.)কে নিয়ে কটাক্ষ ও বিদ্রূপ করার কারণে একজন সাহাবী তার নিজ দাসীকেও হত্যা করেছে এবং রাসুল (সা.) জেনে খুশি হয়েছেন। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে এভাবে, হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘একজন অন্ধ ব্যক্তির একটি উম্মে ওয়ালাদ (যে দাসীর গর্ভে মালিকের সন্তান জন্মগ্রহণ করেছে) দাসী ছিল। ঐ দাসী রাসুল (সা.)কে অযথা কটূক্তি করত। অন্ধ ব্যক্তি তাকে বিরত থাকার নির্দেশ দিতেন ও নিবৃত করার চেষ্টা করতেন। কিন্তু দাসী কিছুতেই বিরত হত না। এক রাতে দাসী রাসুল (সা.)কে নিয়ে কটূক্তি ও গালি-গালাজ করতে লাগল। তখন লোকটি একটি কোদাল দিয়ে তার পেটে আঘাত করল এবং তাকে হত্যা করল। এ অবস্থায় তার একটি সন্তান তার দু’পায়ের মাঝখানে পড়ে গেল এবং রক্তে ভিজে গেল। সকাল বেলা রাসুল (সা.) এর কাছে বিষয়টি জানান হলে রাসুল (সা.) লোকদের জড় করলেন এবং ঘোষণা দিলেন, আল্লাহর কসম! যে ব্যক্তি আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ করেছে, সে যেন অবশ্যই দাঁড়ায়। তার প্রতি আমারও একটি হক রয়েছে। তখন অন্ধ লোকটি কাঁপতে কাঁপতে মানুষের কাতার ভেদ করে রাসুল (সা.) এর কাছে গিয়ে বসে পড়ল। অতঃপর লোকটি বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! ঐ ঘটনার ব্যক্তিটি আমি। আমার দাসীটি আপনাকে গালি-গালাজ করত এবং অযথা তর্কে লিপ্ত হত। আমি তাকে বারণ করলেও সে বারণ হত না। তার থেকে আমার মুক্তোর মত দু’টি ছেলে রয়েছে। তার সঙ্গে আমার দীর্ঘদিনের সুসম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু গতরাতে সে যখন আপনাকে গালমন্দ করতে লাগল। আমি তখন তাকে একটি কোদাল নিয়ে তার পেটে আঘাত করি এবং তাকে হত্যা করি। রাসুল (সা.) উপস্থিত লোকদের বললেন, তোমরা সাক্ষী থাক! তার রক্ত মূল্যহীন ঘোষণা করা হল (তাকে হত্যা করার জন্য হত্যাকারী অন্যায়কারী হিসেবে বিবেচিত হবে না)।’ (আবু দাউদ ৪৩৬৩, ত্বাবারানী ১১৯৮৪, বুলুগুল মারাম ১২০৪, দারাকুতনী ৮৯)
৪. শাস্তি না দিলে গোটা জাতি আল্লাহর গযবে পতিত হবেঃ রাসুলের অবমাননা করার পর যদি সামর্থ্য থাকার পরও শাস্তি না দেওয়া হয়, তবে গোটা জাতি আল্লাহর গযবে পতিত হবে। আল-কুরআনের সুরা আন-নূরের ৬৩ নং আয়াতে এসেছে, ‘অতএব যারা তার নির্দেশের বিরুদ্ধাচরণ করে, তারা যেন তাদের ওপর বিপর্যয় নেমে আসা অথবা যন্ত্রণাদায়ক আযাব পৌঁছার ভয় করে।’
৫. তার সমস্ত আমল বরবাদ হয়ে যাবেঃ তার সমস্ত আমল বরবাদ হয়ে যাবে। যারা রাসুলের অবমাননার কাজে জড়িত থাকবে, তাদের সমস্ত আমল বরবাদ হয়ে যাবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর যে তোমাদের মধ্য থেকে তার দ্বীন থেকে ফিরে যাবে, অতঃপর কাফির অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে, বস্তুত এদের আমলসমূহ দুনিয়া ও আখিরাতে বিনষ্ট হয়ে যাবে এবং তারাই আগুনের অধিবাসী।’ (সুরা আল-বাকারাহ, আয়াতঃ ২১৭)
আমাদের করণীয়ঃ রাসুল (সা.) কে নিয়ে কটাক্ষ ও বিদ্রূপ করার মত জঘন্য অপরাধ সংগঠিত হওয়ার পর নিশ্চুপ থাকার কোন সুযোগ নেই। এ ক্ষেত্রে একজন ঈমানদার বান্দাহ হিসেবে প্রত্যেকরই যোগ্যতা অনুযায়ী ভূমিকা রাখতে হবে। যেসব করণীয় রয়েছে সেগুলো হলঃ:
১. প্রতিবাদ করাঃ আমাদের প্রধান করণীয় হল, যারা রাসুলের অবমাননা করে, তাদের বিরুদ্ধে সামর্থ্য অনুযায়ী প্রতিবাদ করা। একজন মুসলিম কখনও এমন হতে পারে না যে, সে মহানবীর অবমাননা হওয়ার কথা জানার পরও নিশ্চুপ বসে থাকবে। কেননা এটি একটি মহা অন্যায় কাজ। আর ঈমানের লক্ষণ হল, অন্যায়ের প্রতিবাদ করা।
মহান আল্লাহ আল কুরআনে ইরশাদ করছেন, ‘আর মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীরা একে অপরের বন্ধু, তারা ভাল কাজের আদেশ দেয়, আর অন্যায় কাজ থেকে নিষেধ করে।’ (সুরা আত-তাওবাহ, আয়াতঃ ৭১)
হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘আমি রাসুল (সা.)কে বলতে শুনেছি, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি কোন অন্যায় কাজ হতে দেখে, তবে সে যেন তা নিজের হাত দ্বারা পরিবর্তন করে দেয়। আর যদি সে সক্ষম না হয়, তাহলে সে যেন মুখ দ্বারা প্রতিহত করে। আর যদি সে এতেও সক্ষম না হয়, তাহলে সে যেন অন্তর দিয়ে তা প্রতিহত করার চেষ্টা করে। আর এটা সবচেয়ে দুর্বল ঈমানের পরিচয়।’ (মুসলিমঃ ১৮২)
২. শাস্তির ব্যবস্থা করা ঃ মহানবীর অবমাননাকারীদের বিচারের মাধ্যমে শাস্তির ব্যবস্থা করা ঈমানের দাবী। এক শ্রেণির নামধারী মুসলিম, তারা বলে, এ বিচার আল্লাহ করবেন, অতএব আমাদের কিছুই করার দরকার নেই। ঈমানদার হিসেবে এ ধরনের কথা বলা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা রাসুল (সা) নিজেই তাকে অবমাননা করার শাস্তি কার্যকর করেছেন এবং সাহাবায়ে কিরামও তা বাস্তবায়ন করেছেন। তাই যে মহানবীর অবমাননা করে, তাকে দুনিয়াতেই শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
ইবনে খাতাল রাসূলের প্রতি কটুক্তি করেছিল, সেজন্য রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে হত্যা করার নির্দেশ দিলেন। এ বিষয়ে হাদীসে এসেছে, হযরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) মক্কা বিজয়ের দিন মক্কায় প্রবেশ করে মাত্র মাথায় যে হেলমেট পরা ছিল তা খুললেন, এমতাবস্থায় এক ব্যক্তি এসে বলল, ইবনে খাতাল (বাঁচার জন্য) কাবার গিলাফ ধরে ঝুলে আছে। রাসুল (সা.) বললেন, (ঐ অবস্থায়ই) তাকে হত্যা কর।’ (বুখারী ১৮৪৬, মুসলিম ৩৩৭৪)
৩. জাতিকে সতর্ক করাঃ মহানবীর অবমাননা করার ভয়াবহ পরিণাম সম্পর্কে জাতিকে সতর্ক করা সময়ের দাবী। কেননা জেনে-না জেনে, বুঝে-না বুঝে নানান ভাবে মহানবীর অবমাননা করা হচ্ছে। এর কারণে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসবে। সেজন্য আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত, জাতিকে সতর্ক করা। আল্লাহ তাআলা সতর্ক করে বলেন, ‘আর তোমার পূর্বেও অনেক রাসুলকে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা হয়েছিল, পরিণামে তারা যা নিয়ে ঠাট্টা করত তাই বিদ্রূপকারীদেরকে ঘিরে ফেলেছিল।’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াতঃ ৪১)
‘বরং আমি মিথ্যার উপর সত্য নিক্ষেপ করি, ফলে তা মিথ্যাকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেয় এবং নিমিষেই তা বিলুপ্ত হয়। আর তোমাদের জন্য রয়েছে দুর্ভোগ তোমরা যা বলছ তার জন্য।’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত : ১৮)
৪. ঐক্যবদ্ধ হওয়াঃ রাসুলের অবমাননা বন্ধে ঈমানদার ব্যক্তিদের মধ্যে কোন বিরোধ থাকতে পারবে না। তাই সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। নিজেদের মধ্যে কর্মপন্থা নিয়ে মতভেদ থাকতে পারে। কিন্তু রাসূলের অবমাননার মত ভয়াবহ পরিস্থিতিতে ঐক্যবদ্ধভাবে কর্মসূচি পালনে কোন ধরনের সংশয় রাখা কোন ভাবেই গ্রহণযোগ্য হবে না। কারণ এ বিষয়ে কুরআন মাজীদে ঘোষণা এসেছে এভাবে, ‘আর তোমরা তাদের মত হয়ো না, যারা বিভক্ত হয়েছে এবং মতবিরোধ করেছে তাদের নিকট স্পষ্ট নিদর্শনসমূহ আসার পর। আর তাদের জন্যই রয়েছে কঠোর আযাব।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১০৫)
৫. আল্লাহর নিকট বেশি বেশি ক্ষমা চাওয়াঃ রাসুলের অবমাননা করার কারণে যে কোন সময় গোটা জাতির উপর আল্লাহর গযব নেমে আসতে পারে। সেজন্য আল্লাহর নিকট বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। আল্লাহ তাআ’লা বলেন, ‘আর তোমরা ভয় কর ফিতনাকে, যা তোমাদের মধ্য থেকে বিশেষভাবে শুধু যালিমদের উপরই আপতিত হবে না। আর জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহ আযাব প্রদানে কঠোর।’ (সুরা আনফাল, আয়াতঃ ২৫)
৬. তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করাঃ যারা অবমাননা করে, তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। এ বিষয়ে কুরআন মাজীদে বলা হয়েছে, ‘আর তিনি তো কিতাবে তোমাদের প্রতি নাযিল করেছেন যে, যখন তোমরা শুনবে আল্লাহর আয়াতসমূহ অস্বীকার করা হচ্ছে এবং সেগুলো নিয়ে উপহাস করা হচ্ছে, তাহলে তোমরা তাদের সঙ্গে বসবে না, যতক্ষণ না তারা অন্য কথায় নিবিষ্ট হয়, তা না হলে তোমরাও তাদের মত হয়ে যাবে। নিশ্চয় আল্লাহ মুনাফিক ও কাফিরদের সকলকে জাহান্নামে একত্রকারী।’ (সুরা আন-নিসা, আয়াতঃ ১৪০)
৭. রাসুলের সম্মান ও মর্যাদা নিশ্চিত করাঃ রাসুলের বিরুদ্ধে কোনো অপপ্রচার এবং তার মর্যাদারহানী করে এমন কোনো কাজ পরিচালিত হলে উম্মাতের দায়িত্ব হলো তার সমস্ত শক্তি দিয়ে তা প্রতিহত করা। আল্লাহ তাআলা তার সম্মানকে উচ্চকিত করেছেন। অতএব, তাকে যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা প্রত্যেক উম্মাতের দায়িত্ব ও কর্তব্য। কুরআনে মজীদে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন, ‘নিশ্চয় আমি তোমাকে প্রেরণ করেছি সাক্ষ্যদাতা, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী হিসেবে। (হে মুমিনগণ!) যাতে তোমরা আল্লাহ ও তার রাসুলের প্রতি ঈমান আন, তাকে সাহায্য কর ও সম্মান কর। আর আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা বর্ণনা কর সকাল-সন্ধ্যায়।’ (সুরা আল-ফাতহ, আয়াতঃ ৮-৯)
সাহাবায়ে কিরাম রাসুল (সা)কে যথাযথ মর্যাদা দিয়ে প্রমাণ করে গেছেন। যখন কুরআনের সুরা হুজুরাতের ২ নং আয়াত আবতীর্ণ হল, ‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা নবীর আওয়াজের উপর তোমাদের আওয়াজ উঁচু কর না এবং তোমরা নিজেরা পরস্পর যেমন উচ্চস্বরে কথা বল, তাঁর সঙ্গে সে রকম উচ্চস্বরে কথা বল না। এ আশঙ্কায় যে, তোমাদের সকল আমল নিষ্ফল হয়ে যাবে; অথচ তোমরা উপলব্ধিও করতে পারবে না।’
হযরত আবু বকর (রা.) বললেন, ‘আল্লাহর কসম, আমি নিতান্তই আপনার সঙ্গে ক্ষীণ আওয়াজ ব্যতীত কথা বলব না।’
৮. রাসুলের কটূক্তিকারীদের ঘৃণা করাঃ যারা রাসুলকে কটূক্তি করে, তাদেরকে রাসূলের শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করে ঘৃণা করা ঈমানের দাবী। অনেকে রাসূলের উম্মাত দাবী করে, কিন্তু রাসূলের শত্রুদের সঙ্গে উঠা-বসা ও তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে, এটা কোন ভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। কুরআনের ঘোষণা হল, ‘তুমি আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাসী এমন কোন সম্প্রদায় পাবে না, যারা আল্লাহ ও তার রাসূলের বিরুদ্ধাচারীদের ভালবাসে। হোক না এ বিরুদ্ধাচারীরা তাদের পিতা, পুত্র, ভ্রাতা অথবা তাদের জ্ঞাতি-গোত্র।’ (সুরা আল-মুজাদালাহ, আয়াতঃ ২২)
৯. রাসুল (সা)র আদর্শ জাতির সামনে যথাযথ ভাবে তুলে ধরাঃ রাসুল (সা.) আমাদের প্রিয় নবী। তার উম্মাত হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হল, তাঁর আদর্শ জাতির সামনে সঠিক ভাবে তুলে ধরা। এ বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এই হাদীসেঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবন আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল )সা.) বলেছেন, ‘একটি বাণী হলেও আমার পক্ষ থেকে পৌঁছিয়ে দাও।’ (সহীহ বুখারীঃ ৩৪৬১)
১০. নিজের অবস্থান স্পষ্ট করাঃ নিজের অবস্থান স্পষ্ট করা প্রয়োজন। আজকে অনেক মুসলিম নিজের অবস্থান কোন দিকে, তা স্পষ্ট করে না। যেহেতু কিছু লোক রাসুলের অবমাননাকারীর পক্ষাবলম্বন করেছে, সেহেতু নিজের অবস্থান কোন পক্ষে, তা ঘোষণা দিতে হবে। কেননা রাসুলের অবমাননা হলে কোন ঈমানদার ব্যক্তির অবস্থান অস্পষ্ট হতে পারে না। যে এমনটি করবে, সে মুনাফিক। কুরআন মাজীদে এসেছে, ‘তারা এরমধ্যে দোদুল্যমান, না এদের দিকে, আর না ওদের দিকে। আর আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তুমি কখনো তার জন্য কোন পথ পাবে না।’ (সুরা আন-নিসা, আয়াতঃ ১৪৩)
সর্বোপরি জনতার করণীয়ঃ
বর্তমানে যে কুফুরি গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা জগদ্দল পাথরের মত জাতির ঘাড়ের ওপর ছেপে রয়েছে। তা মুলত হাজারো আলেমের রক্তে লিখা এক ইতিহাস। এই কুফুরি সমাজ ব্যবস্থা নিশ্চিহ্ন করে খিলাফাহ ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। যেখানে কুরআন ও সুন্নাহ দ্বারা রাষ্ট্র ব্যবস্থা পরিচালিত করা হবে। ইসলামের হারাম ও হালাল রাষ্ট্রীয়ভাবে কার্যকর থাকবে। ফলে কাফির মুরতাদদের কোন সাহসই হবে রাসুল সাঃ কে গালি দেওয়ার। আসুন আমরা একটি সুন্দর ইসলামি সমাজ ব্যবস্থা তৈরি করি।
প্রায় শতকরা ৯০ ভাগ মুসলিমের দেশে আমাদের প্রিয় নবী (সা.) কে নিয়ে কটূক্তি ও অবমাননাকর বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও ব্লগে প্রিয় নবীকে নিয়ে এমনসব কথা লেখা হচ্ছে, যা কোন সামান্যতম ঈমানের অধিকারী মুমিনকেও নাড়া না দিয়ে পারে না। এমতাবস্থায় আমাদের একেবারে বসে থাকার সুযোগ নেই। প্রিয় নবীর উম্মাত হিসেবে প্রত্যেককে তার নিজ নিজ জায়গা থেকে সাধ্য অনুযায়ী ভূমিকা পালন করতে হবে।
ঈমানের দাবী হল- লিখনী, বক্তব্য, আলোচনা, খুতবাহ, জনসংযোগ, মিডিয়াসহ সর্বস্তরে শরীয়াহসম্মত বিভিন্ন উপায়ে প্রতিবাদ করার মাধ্যমে এ ধরনের মহা অন্যায় কাজের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া। আর মুরতাদদের বোঝানো ও সুযোগ দেওয়া। তাতেও কাজ না হলে ইসলামি শারিয়াহ মোতাবেক ঐসকল নাস্তিক মুরতাদদের হত্যা করুন। এর জন্য নির্দিষ্ট কোন সংগঠন কিংবা দলের প্রয়োজন নেই। ইচ্ছা করলে নিজেরাই আল্লাহ্র সৈনিক হিসেবে তাদের চিহ্নিত করে হত্যা করতে পারেন। এরজন্য দরকার আল্লাহর রাসুলের জন্য ভালবাসা। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে ঈমানী দায়িত্ব পালন করার তাওফীক দিন। আমীন!
সৌজন্যঃ আনসার আল শারিয়াহ