রাসুলুল্লাহ(সাঃ) এর প্রতিশ্রুত গাযওয়াতুল হিন্দ কী অতি নিকটে!
নিউইয়র্ক থেকে ড. ওমর ফারুক।। আপডেটেডঃ মার্চ ২০১৮।। ’গাযওয়াতুল হিন্দ’ বলতে বুঝায় হিন্দুস্তানের যুদ্ধ। অন্য কথায়ঃ ইমাম মাহদি (আঃ) এবং ঈসা (আঃ) এর আগমনের কিছুকাল আগে অথবা সমসাময়িক সময় ভারতীয় উপমহাদেশে বা বর্তমান পাকিস্তান-ভারত-বাংলাদেশে মুসলিম ও কুফ্ফার তথা মুশরেকি শক্তির মধ্যকার সংগঠিত যুদ্ধকে বুঝায়।
“গাযওয়া” অর্থ যুদ্ধ, আর “হিন্দ” বলতে এ উপমহাদেশ তথা পাক-ভারত-বাংলাদেশ ছাড়াও শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটানকে বুঝায়। বর্তমানে এ অঞ্চলের উত্তেজনাকর পরিস্থিতি আমাদেরকে সেই গন্তব্যের দিকে নিয়ে যাচ্ছে বলেই স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হচ্ছে বলেই ওলামায়ে কেরামের বয়ান থেকে বুঝা যায়। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে বাংলাদেশের ওপর ভারতীয় নগ্ন আগ্রাসন ও হস্তক্ষেপ, ভারত, বাংলাদেশ এবং মায়ানমারে মুসলিম উম্মাহর উপর অমানবিক অত্যাচার, বাংলাদেশের সাথে ভারতের প্রতিরক্ষা চুক্তি (দেশ বিক্রির চুক্তি) সর্বোপরি শাহ নেয়ামতুল্লাহ (রাঃ) এর ভবিষ্যৎবাণী প্রমাণ করে যে, আগামী ২/১ বছরের মধ্যেই এ যুদ্ধ সংঘটিত হতে পারে। আল্লাহ অধিক অবগত।
একটা বিষয় মাথায় রাখা উচিত, আর তা হল, রাসুলুল্লাহ(সাঃ) এর প্রতিটি কথা সত্য এবং গত ১৪০০ বছরের ইতিহাস সেই সাক্ষীই বহন করে চলেছে। ইনশা আল্লাহ্ কিয়ামত পর্যন্ত সত্য হয়ে যাবেই। এটাই একজন মুসলিমের ঈমানের অন্যতম ভিত্তি যে, তিনি রাসুলুল্লাহ( সাঃ) এর সব কথা, আদেশ, উপদেশ ও ভবিষ্যদ্বানীকে বিনা বাক্য ও বিনা দ্বিধায় মেনে নেবে।
আল্লাহর হাবীব রাসুলুল্লাহ(সাঃ) এর কথা অনুযায়ীঃ খোরাসান (বর্তমান আফগানিস্তান) থেকে কালিমাখচিত কালো পতাকাধারীদের উত্থান এবং তাদের কাশ্মীর পর্যন্ত পৌঁছে যাওয়া, পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে ভারতের কাশ্মীর সীমান্তে ৭ লক্ষ সেনা মোতায়েন, পাক-ভারত-বাংলাদেশের হকপন্থী ইসলামী দলগুলোর আলোচনায় উঠে আসা, পানি নিয়ে ভারতের সাথে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের উত্তেজনাকর পরিস্থিতি, কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তানের সাথে ভারতের উত্তেজনাকর পরিস্থিতি, বাবরি মসজিদ ধ্বংস এবং মুসলিমদের নির্যাতন নিয়ে ভারতের ভেতর মুসলিমদের ক্ষোভের বিস্ফোরণ, সেভেন সিস্টারস তথা ভারতের ৭ টি অঙ্গরাজ্যের স্বাধীনতার দাবী নিঃসন্দেহে ভারত বিভক্তির ইঙ্গিত বহন করে।
সে সময় অবশ্যই পাক-ভারত-বাংলাদেশের মুসলিম নামধারী মুনাফিকরা আলাদা হয়ে যাবে। তারা হয় কাফির ও মুশরিকদের পক্ষে যোগ দেবে অথবা জীবন হানির ভয়ে পালিয়ে বেড়াবে। এ ভয়ঙ্কর যুদ্ধে মুসলিমরা জয়ী হবে এবং তারা বায়তুল মুকাদ্দাস (বর্তমান ফিলিস্তিন) এ গিয়ে ঈসা (আঃ) এর সাথে মিলিত হবে এবং খিলাফাত প্রতিষ্ঠা করবে।
হাদিস শরীফে বর্ণিতঃ “গাজওয়াতুল হিন্দ” সম্পর্কে আসা ৫ টি হাদিসের কথােই আমি এখানে উল্লেখ করছিঃ
আবু হুরায়রা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেনঃ
আল্লাহর রাসুল (সাঃ) আমাদের থেকে হিন্দুস্থানের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রতিশ্রুতি নিয়েছেন। কাজেই আমি যদি সেই যুদ্ধের নাগাল পেয়ে যাই, তাহলে আমি তাতে আমার জীবন ও সমস্ত সম্পদ ব্যয় করে ফেলব। যদি নিহত হই, তাহলে আমি শ্রেষ্ঠ শহীদদের অন্তর্ভুক্ত হব। আর যদি ফিরে আসি, তাহলে আমি জাহান্নাম থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত আবু হুরায়রা হয়ে যাব। [সুনানে নাসায়ী, খণ্ড ৬, পৃষ্ঠাঃ ৪২]
নবীজি (সাঃ) এর আজাদকৃত গোলাম হযরত সা্ওবান (রাঃ) বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বলেছেন,
আমার উম্মতের দুটি দল এমন আছে, আল্লাহ যাদেরকে জাহান্নাম থেকে নিরাপদ করে দিয়েছেন। একটি হল তারা, যারা হিন্দুস্তানের সাথে যুদ্ধ করবে, আরেক দল তারা যারা ঈসা ইবনে মারিয়ামের সঙ্গী হবে। সুনানে নাসায়ী, খণ্ড ৬, পৃষ্ঠা ৪২
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) হিন্দুস্তানের কথা উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেনঃ অবশ্যই আমাদের একটি দল হিন্দুস্তানের সাথে যুদ্ধ করবে, আল্লাহ্ সেই দলের যোদ্ধাদের সফলতা দান করবেন, আর তারা রাজাদের শিকল বা বেড়ি দিয়ে টেনে আনবে এবং আল্লাহ্ সেই যোদ্ধাদের ক্ষমা করে দেবেন (এ বরকতময় যুদ্ধের দরুণ) এবং সে মুসলিমেরা ফিরে আসবে, তারা ঈসা ইবনে মারিয়াম(আঃ) কে শাম দেশে(বর্তমান সিরিয়ায়) পাবে।
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেনঃ আমি যদি সেই গাযওয়া পেতাম, তাহলে আমার সকল নতুন ও পুরাতন সামগ্রী বিক্রি করে দিতাম এবং এতে অংশগ্রহণ করতাম । যখন আল্লাহ্ আমাদের সফলতা দান করতেন এবং আমরা ফিরতাম, তখন আমি একজন মুক্ত আবু হুরায়রা হতাম; যে কিনা সিরিয়ায় হযরত ঈসা (আঃ) কে পাবার গর্ব নিয়ে ফিরত । ও মুহাম্মাদ (সাঃ) ! সেটা আমার গভীর ইচ্ছা যে আমি ঈসা (আঃ) এর এত নিকটবর্তী হতে পারতাম, আমি তাকে বলতে পারতাম যে, আমি মুহাম্মাদ (সাঃ) এর একজন সাহাবী।
বর্ণনাকারী বলেন যে, হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) মুচকি হাসলেন এবং বললেনঃ ‘খুব কঠিন, খুব কঠিন। [আল ফিতান, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৪০৯]
হযরত কা’ব (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, হাদিসে মুহাম্মাদ (সাঃ) বলেনঃ জেরুসালেমের (বাই’ত-উল-মুক্বাদ্দাস)[বর্তমান ফিলিস্তিন] একজন রাজা তার একটি সৈন্যদল হিন্দুস্তানের দিকে পাঠাবেন, যোদ্ধারা হিন্দের ভূমি ধ্বংস করে দেবে, এর অর্থ-ভান্ডার ভোগ দখল করবে, তারপর রাজা এ সব ধনদৌলত দিয়ে জেরুসালেম সজ্জিত করবে, দলটি হিন্দের রাজাদের জেরুসালেমের রাজার দরবারে উপস্থিত করবে, তার সৈন্য সামন্ত তার নির্দেশে পূর্ব থেকে পাশ্চাত্য পর্যন্ত সকল এলাকা বিজয় করবে এবং হিন্দুস্তানে ততক্ষণ অবস্থান করবে, যতক্ষণ না দাজ্জালের ঘটনাটি ঘটে।
ইমাম বুখারী (রঃ) এর উস্তায নাঈম বিন হাম্মাদ (রঃ) এই হাদিসটি বর্ণনা করেন তার ‘আল ফিতান’ গ্রন্থে।
তিনি বলেনঃ কিছু লোক তাকে বলেছেন যে, রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ আমার উম্মাহর একদল লোক হিন্দুস্তানের সাথে যুদ্ধ করবে, আল্লাহ্ তাদের সফলতা দান করবেন, এমনকি তারা হিন্দুস্তানের রাজাদেরকে শিকলবদ্ধ অবস্থায় পাবে। আল্লাহ্ সেই যোদ্ধাদের ক্ষমা করে দেবেন। যখন তারা সিরিয়া ফিরে যাবে, তখন তারা ঈসা ইবনে মারিয়ামকে (আঃ) এর সাক্ষাত লাভ করবে। [আল ফিতান, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৪১০]
এখানে রাসুল (সাঃ) এর বর্ণিত তৎকালীন হিন্দুস্তানের সীমারেখা বর্তমান ভারত, নেপাল, শ্রীলংকা, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান নিয়ে।
বর্তমানে এ উপমহাদেশের মুর্তিপুজারী ভূখণ্ডের মুসলিম প্রধান ভূখণ্ডের উপর সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক আগ্রাসনের অব্যাহত প্রচেষ্টা দেখলে বুঝা যায় যে, এটি একদিন চূড়ান্ত সংঘাতময়রূপ ধারণ করবে এবং এখানকার দ্বীন ইসলামকে টিকিয়ে রাখতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ভবিষ্যৎ বাণী মোতাবেক উম্মতের একটি দলকে এই দিকে অগ্রসর হতে হবে। এবং এটি ঘটবে সেই সম সাময়িক সময়ে, যখন সমগ্র দুনিয়াতে ইসলামের ক্রান্তিলগ্নে ইসলামকে খিলাফতের আদলে সাজাতে আল্লাহ ইমাম মাহদিকে প্রেরণ করবেন, আর যার খেলাফতের সপ্তম বছরে দাজ্জালের আবির্ভাব হবে এবং দাজ্জালের সাথে মহাযুদ্ধের নেতৃত্ব দিতে ঈসা (আঃ) এর আগমন ঘটবে।
“CIA terrified of Ghazwa e Hind” শিরোনামে ভিডিওটি দেখলে বুঝতে পারবেন তারা কতটা সচেতন আর আমরা কতটা গাফেল হয়ে আছি!!!
হে সম্মানিত মুসলিম উম্মাহ!!! সময় অতি সন্নিকটে। ইহুদি, নাসারা এবং মুশরেকরা এক হয়েছে পৃথিবী থেকে ইসলামের নাম মুছে ফেলতে!!! তাই আর গাফেল না থেকে এখনই চূড়ান্ত প্রস্তুতি গ্রহণ করুন।
প্রকৃত সময় এবং অবস্থা একমাত্র আল্লাহ্ সুবহানু তায়ালাই জানেন। আমরা কেবলমাত্র হাদিসের আলোকে এবং বর্তমান প্রেক্ষাপট অনুযায়ী ঘটনা সম্পর্কে নিজেদেরকে সচেতন এবং প্রস্তুত করতে পারি। মহান আল্লাহ্ আমাদেরকে সহিহ বুঝ দান করুন, ক্ষমা করুন, মুনাফিকি থেকে হিফাজত করুন এবং তার প্রিয় বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করুন। আমিন। [বিভিন্ন ওলামায়ে কেরামের বয়ান ও নির্ভরযোগ্য সূত্র অবলম্বনে]
https://www.facebook.com/ScienceNaturePage/videos/1284979764967612/