যেমন কথা তেমন কাজ! ট্রাম্পের হুমকির পরই পাকিস্তানকে অনুদান বন্ধ।।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বছরের প্রথম টুইটের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সামরিক খাতে পাকিস্তানকে যে ২৫ কোটি ৫০ লক্ষ ডলার সাহায্য দেওয়ার কথা ছিল, আপাতত তা বন্ধ করার কথা ঘোষণা করল হোয়াইট হাউস। সন্ত্রাস দমনের নামে পাকিস্তানের ‘প্রতারণা’ নিয়ে গতকাল কড়া হুঁশিয়ারি দিলেন ট্রাম্প। তারপরই মার্কিন প্রশাসন আজ জানিয়ে দিল, এরপর থেকে দেশের মাটিতে সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণে ইসলামাবাদ কতটা সক্রিয়, তা দেখে তবেই এ ধরনের সাহায্যের কথা পরবর্তীতে ভাবা হবে।
এ খবর প্রকাশ্যে আসার পরপরই রেডিও পাকিস্তান জানিয়েছে, পাক প্রধানমন্ত্রী শাহিদ খকন আব্বাসি আজ জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত একটি বৈঠক করেছেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন পাক সেনাপ্রধানও। বৈঠকের পরে তাঁরা বলেছেন, ‘‘মার্কিন নেতৃত্বের ওই মন্তব্য দুর্বোধ্য। কারণ প্রকাশ্যে ওঁরা তথ্যের অপলাপ ঘটিয়েছেন। দু’জাতির মধ্যে যে বিশ্বাসের সম্পর্ক রয়েছে, তাতেও যথেষ্ঠ আঘাত করেছেন। অস্বীকার করেছেন পাকিস্তানের কয়েক দশকের আত্মত্যাগকেও।’’
এখানেই শেষ নয়। ট্রাম্পের মন্তব্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে গতকাল রাতেই ইসলামাবাদে মার্কিন দূত ডেভিড হ্যালেকে তলব করেছে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পররাষ্ট্র সচিব তেহমিনা জানজুয়া মার্কিন প্রেসিডেন্টের মন্তব্যের ব্যাখ্যা চেয়েছেন হ্যালের কাছে। যদিও পরে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে গণমাধ্যমকে কিছু জানায় নি।
গত ২ জানুয়ারি, মঙ্গলবার, ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘‘জঙ্গি দমনের নামে ১৫ বছর ধরে পাকিস্তান আমাদের থেকে ৩৩০০ কোটি ডলার নিয়ে গিয়েছে। অথচ বিনিময়ে ঝুড়ি-ঝুড়ি মিথ্যে বলা ছাড়া কিছুই করে নি।’’ তারপরই মার্কিন প্রশাসনের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শীর্ষস্থানীয় কর্তা গণমাধ্যমকে জানিয়েছে, ‘‘বিদেশের সামরিক খাতে ২০১৬ আর্থিক বছরে পাকিস্তানের জন্য যে ২৫ কোটি ৫০ লক্ষ ডলার ধার্য করা হয়েছিল, তা এখনই খরচ করার পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছে আমেরিকা।’’ ওই কর্তার দাবি, ‘‘প্রেসিডেন্ট স্পষ্ট করে দিয়েছেন, নিজের দেশের মাটিতে সন্ত্রাস ও জঙ্গি দমনে পাকিস্তান দ়ৃঢ় পদক্ষেপ করবে, এটাই আমেরিকার আশা।’’
গত সপ্তাহে চীন, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রীদের প্রথম ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হয়েছে বেজিংয়ে। আফগানিস্তান পর্যন্ত সিপিইসি নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনার কথা সেখানে ঘোষণা করেছে চীন। যদিও আফগানিস্তানের সঙ্গে ভারতের মিত্রতা রয়েছে এবং তালিবানকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য আফগানিস্তান বরাবর পাকিস্তানের দিকেই আঙুল তুলে এসেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেছেন, দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্র পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে দ্বন্দ্ব দূর করে তাদের মধ্যস্থতা করাই চীনের এখন লক্ষ্য। যাকে চীনের ত্রিপাক্ষিক কৌশল বলছেন তাঁরা।
এর সঙ্গেই বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আরব সাগর এবং ভারত মহাসাগরে চীনকে অবাধ সুযোগ দিয়ে পাকিস্তান বিপুল চীনা বিনিয়োগ টানতে গিয়েও আমেরিকার রোষে পড়েছে।তবে এর পাশাপাশি কূটনীতিকদের একাংশ মনে রাখছেন আর একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক। তা হল, আর কয়েক মাসের মধ্যেই পাকিস্তানে নির্বাচন। তাই এই সুযোগে আমেরিকা-বিরোধী হাওয়া জোরালো করতে ঝাঁপাবে সব দলই। তার মধ্যে অন্যতম ইমরান খানের পাকিস্তান তেহরিক ই ইনসাফ। ফলে ট্রাম্পের হুঁশিয়ারির টুইট তাদের প্রচারে আর এক প্রস্ত সুযোগ করে দিল বলেই কূটনীতিকদের ওই অংশের অভিমত।
সূত্রঃ বিদেশি গণমাধ্যম।