ইমরান ও নন্দিতার ক’দিনের সংসার।।
নিউইয়র্ক থেকে ড. ওমর ফারুক।
তারিখঃ ১৭ এপ্রিল ২০১৮।। রাত ১০টা।
ইমরান ও নন্দিতার বিয়েটা ছিল নানান কারণে খুবই আলোচিত। ইমরানের রাষ্ট্রীয় একটি আদালত কেন্দ্রিক বিষয় নিয়ে ইমরান এইচ সরকারের চরম বিতর্কিত শাহবাগকেন্দ্রিক কার্যক্রম দেশে বিদেশে তীব্র আলোচনা ও সমালোচনার জন্ম দিয়েছিল। যে বিষয়টির রেশ এখন আস্তে আস্তে কাটছে। অনেক ইস্যুর ভীড়ে আর জনগণের নানান সমস্যা ও শাসকদের বিরাগ মনোভাবের কারণে এসব নিয়ে মানুষ বেশি সময় মাথা ঘামাতে এখন আর স্বাচ্ছন্দ বোধও করে না। কিন্তু যে কথাটি গুরুত্বপূর্ণ, তা হল, তার নামের শেষে সরকার শব্দটি যোগ থাকার কারণে অনেকে তার ক্ষমতা ও অঙ্গুলি হেলনের কারবার সারবার দেখে একটি সমান্তরাল সরকার মনে করেও ভুল করে ফেলতেন তখন। রাজধানীর শাহবাগ থেকে তার প্রশাসনিক যন্ত্রপাতির স্টাইল ও নানান রকম ভোগের জিনিসপত্রের সমাবেশ দেখে অনেক ভুল করে তাকেই সরকার ভেবে ফেলা তখন অস্বাভাবিক ছিল না। এমন কি সে সময় ভারতের সরকার প্রধান বাংলাদেশ সফরে এলে তাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানান রকম কটাক্ষ হয়। বলা হয়, তিনি কোন সরকারের সাথে দেখা করবেন, ইমরান এইচ সরকার না হাসিনা সরকার?
একটি মঞ্চ তৈরি করে সমাবেশসহ আন্দোলন করে একটি প্রতিষ্ঠিত সরকারের বিচার বিভাগের রায় বদলিয়ে দিতে ভূমিকা রাখতে হয়, এটা ইতিহাসে হয়ত মানুষ স্মরণ করবে অনাদিকাল। বিশেষত তথাকথিত গণতান্ত্রিক চাপাবাজি ও বাজার ব্যবস্থার এ যুগে সেও কী সম্ভব। একটি শাসনব্যবস্থা কতটুকু দুর্বল ও জনসমর্থনহীন হলে এভাবে কোন একটি দল তৈরি করে জুডিয়াশিয়ারিকে অন্য খাতে প্রবাহিত করার লালসা চরিতার্থ করতে পারে, সেটি ইমরান এইচ সরকারের এই শাহবাগকেন্দ্রিক মঞ্চকে নিয়ে ভাবলেই স্পষ্ট হবে। আমি জানি না, এ লেখাটি ইমরান পড়তে সক্ষম হবে কিনা, তিনি আমার ফেসবুক বন্ধুও। কেন জানি শেষাবধি কোন মানুষের বিরুদ্ধে আমার অভিযোগ আস্তে আস্তে দুর্বল হয়ে আসে। ইমরান সজ্ঞানে শাহবাগ কেন্দ্রিক এ মঞ্চ করেছে কিনা, জানত কিনা যাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের অনেক অভিযোগ, সে অভিযোগগুলো প্রমাণে রাষ্ট্র যথেষ্ঠ সাক্ষী সাবুদ উপস্থিত করতে পারছিল না বলেই যে করেই হোক পাশের একটি দেশের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে হবে এবং এসব সৎ লোকগুলোকে ফাঁসী দিতেই হবে, সে কারণে রাষ্ট্র তাকে ব্যবহার করেছে।
অবশেষে এখন ইমরান নিজেই রাষ্ট্রের বিরাগভাজনঃ
অবশেষে এখন ইমরান নিজেই রাষ্ট্রের বিরাগভাজন। শাহবাগের এই মঞ্চ এর ভূমিকা সমাপ্তির পর সেই বিরাগ শুরু এবং শেষ হল এসে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে দিয়ে। এখন ইমরান আর সরকারের কাছের মানুষ নয়, পছন্দের মানুষও নয়। দূরের মানুষ। কলা খাওয়ার পর খোসা কেউ জমা করে রাখে না। ছুঁড়েই ফেলে দেয়। ইমরানের ক্ষেত্রে তাই হয়েছে বলে আমি মনে করতেই পারি। যাদেরকে ফাঁসী দেওয়া হল, তারা যুদ্ধাপরাধী কিনা, তাতো আমরা সে সময় বয়স্ক মানুষ ছিলাম, না। জানি না। আমরা মনে করেছিলাম, রাষ্ট্র যথাযথ আইনী সুযোগ আসামীদের দেবে এবং যথার্থই আসামীরা অপরাধী সাব্যস্ত করতে পারলে রাষ্ট্রের নৈতিক জয় হত। কিন্তু তা করা হয় নি দেখে আমরা সাধারণ জনতা সন্দেহের দোলাচলে রয়েই গেলাম। আমি নিজে ’৭১ সালে নৌকার সমর্থক ছিলাম। শেখ মুজিবের অনেক প্রতিশ্রুতি আমাকে প্রলুব্দ করেছিল। যদিও পরবর্তীতে ঘোর কেটে যায়া। বার আনা দরের দিস্তা কাগজ যখন দেখলাম ছয় আনায় কেনা দূরে থাক, ঠিক স্বাধীনতা পরবর্তী সময়েই দুই তিন টাকায় কিনতে হয়েছে। যাই হোক কতগুলো নাগরিককে জুডিশিয়ারি কিলিং এর জন্য ইমরান এইচ সরকারের ভূমিকা অনস্বীকার্য । আমি কিন্তু তাদের দলীয় কোন কর্মী নই। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ডাকসুতে জাসদ ছাত্রলীগ থেকেই আমাকে সাহিত্য সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্ধিতা করতে হয়েছিল। পৃথিবীর কোন দেশেই এমন যদি হয় যে, আসামী পক্ষের কৌশলীকে স্বাধীন ভাবে কাজ করতে তো দেওয়া হচ্ছেই না, বরং হুমকি ধমকি এবং এমন কি আসমাী পক্ষের আইনজীবীর অফিস তল্লাসী, গ্রেফতার করার হুমকি ইত্যাদি হয়। তাহলে সেটি তো আর গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কাঠামো নয়। সেটিকে যে কোন রাষ্ট্র বিজ্ঞানের ছাত্রই বলবে ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রব্যবস্থা ও সরকার। সেখানেই শেষ নয়। বেসরকারি একটি প্রেসার গ্রুপ গড়ে তুলতে রাষ্ট্র ইন্ধন যুগিয়ে বিচারব্যবস্থাকে জোর করে নিজেদের মত করে সাজিয়ে নিতে হয়েছে। ঠিক এইক ভাবে জামায়াতের সাথে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করে ক্ষমতায় আসার পর সে দলটিকে সমূলে উপড়ে ফেলতে বারংবার হুঁশিয়ার দিচ্ছে। একবার ব্যবহার শেষ হয়েছে তো, তার সাথে আর দ্বিতীয় বার ভাল আচরণ করা দরকার সেটিই মনে করে না এ সরকার।
আমি জানি না, অতীতের জন্য ইমরান এইচ সরকারের কেমন উপলব্দি এসেছে। তবে আত্মোপলব্দি ও ভুল অবস্থান স্বীকার করে আল্লাহর দরবারে মাফ চাইলে এবং সংশোধিত জীবনযাপন করলে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন।
ইমরান এইচ সরকারের জীবনের আরেক অধ্যায়ঃ
ব্যক্তিজীবনে ইমরান এইচ সরকার মন্ত্রী কন্যা নন্দিতাকে বিয়ে করায় আমি ভেবেছি, যােই হোক বিয়েই তো করেছে। কিন্তু বিয়েটা গোপনে ভেঙ্গে যাবে, সে আমাকেও কষ্ট দিয়েছে তো বটেই। কোন ভাঙ্গভাঙ্গি আমার ভাল লাগে না। সংসার তো নয়ই। এটা বড় বেদনার।
মন্ত্রীকন্যার সাথে সরবেই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলেন ইমরান। বছর না ঘুরতেই নীরবেই ঘর ভেঙ্গেছে গণ জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকারের ।
দুই পক্ষের সমঝোতায় ‘গভীর সতর্কতার’ সাথে প্রায় তিন মাস আগেই ডিভোর্স সম্পন্ন হয় ইমরান ও মন্ত্রীকন্যা নন্দিতার। এর আগে ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর নন্দিতার সঙ্গে বিয়ে হয় ইমরানের। নন্দিতার জন্য এটি দ্বিতীয় বিয়ে হলেও্র ইমরান এইচ সরকারের জন্য প্রথম বিয়ে।
গত ক’দিন ধরে বিবাহ বিচ্ছেদের খবর সামাজিক মাধ্যমসহ সবখানেই ব্যাপক আলোচিত হলেও ঘটনার অন্তরাল নিয়ে এখন অবধি স্পষ্ট করে মুখ খোলেন নি কেউই।
সম্প্রতি ইমরানের বিবাহ বিচ্ছেদের খবর চাউর হবার আগ পর্যন্ত কেউই জানতেন না এ খবর। এমনকি ডিভোর্সের আগে ও পরেও দুই পক্ষের কেউই কোন আলোচনা করেন নি কারও সাথে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মন্ত্রীর পারিবারিক একটি সূত্র জানিয়েছেন, ‘নন্দিতা খুবই চাপা স্বভাবের মেয়ে। ইমরানকে বিয়ের সিদ্ধান্ত একাই নিয়েছিলেন। শুরুতে বাবার দ্বিমত থাকলেও পরে মেয়ের জেদের কাছে হার মানেন তিনি।
বিয়ের পরে ছোটখাট নানা বিষয়ে দুজনের মত বিরোধ ছিল, তবে সেটা কখনই তাদের দুজনের বাইরে তৃতীয় কারো কাছে স্পষ্ট করেন নি তারা ।’
তিনি নিজের মত প্রকাশ করে এ সময় আরও জানান, ‘অসংলগ্ন জীবন-যাপন’, সাংসারিক জীবনে উদাসীনতাসহ ‘যৌক্তিক’ বেশ কিছু অভিযোগের কারণেই হয়তবা ইমরানকে ডিভোর্স দিতে বাধ্য হয়েছেন নন্দিতা।’
তবে বিস্ময় প্রকাশ করে সুত্রটি জানায়, মন্ত্রীর পরিবারের সাথে ঘনিষ্ঠ হলেও এতদিন ব্যাপারটা কোনভাবেই আঁচ করতে পারেন নি তিনি।
এদিকে, শুধুমাত্র ভার্চুয়াল জগত অর্থাৎ ফেসবুকে স্ট্যাটাসে নানা মন্তব্যে দৃশ্যমান থাকলেও বাস্তবে ‘লোকচক্ষুর অন্তরালে’ চলে গিয়েছেন ইমরান এইচ সরকার ।
ঘটনার ব্যখ্যা না দিতে ‘মুখে কুলুপ এঁটেছেন তিনি । বারবার সংবাদমাধ্যম থেকে প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়ে ফোন করা হলেও কিছুই জানাচ্ছেন না। আবার কখনও বা ফোন ধরেই চুপ থাকছেন কোন কথা না বলেই। পরিচিত কেউই, এমনকি ধারে কাছের সহচরেরাও দিতে পারছেন না ইমরানের খবর।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইমরান এইচ সরকারের অনুসারি একজন জানিয়েছেন, ‘বরাবরই নানা প্রতিকূলতায় স্বতঃস্ফূর্ত থাকলেও গত বেশ কিছুদিন ধরেই বিষাদগ্রস্ত ছিলেন ইমরান ভাই। আগের চেয়ে তুলনামুলক আড্ডায় দেখা মিলত না তার। অবশ্য ইদানিং ফেসবুকে ইমরান এইচ সরকারের দু’একটি পোস্ট দৃশ্যমান হতে দেখা যায়।
ড. ওমর ফারুকঃ যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, সামিাজিক গবেষক, লেখক এবং ইংরেজি সাপ্তাহিক ঢাকা পোস্ট সম্পাদক।