যুদ্ধের হুমকি কিন্তু সুর নরম। সাথে রয়েছে ট্রাম্পের চিরাচরিত বেটকি মার্কা হাসি।
ড. ওমর ফারুক সম্পাদিত। নিউইয়র্ক থেকে। ৮ নভেম্বর, ২০১৭,
ট্রাম্প দিলেন যুদ্ধের হুমকি কিন্তু খুব সুর নরমে ও মোলায়েম। সাথে রয়েছে চিরাচরিত বেটকি মার্কা হাসি। কিমকে আলোচনায়ও ডাকলেন ট্রাম্প।
- অবশেষে চুক্তির ডাক। হুমকি, পাল্টা হুমকির চাপা উদ্বেগের মধ্যেই আজ উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উনকে কূটনৈতিক আলোচনায় অংশ নিতে অতি মোলায়েম সুরে আবেদন জানালেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। উত্তর কোরিয়ার সীমান্ত থেকে ৩৫ মাইল দূরে দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সোলে দাঁড়িয়ে ট্রাম্প বললেন, ‘‘গোটা মানবজাতির স্বার্থেই এ বার পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষা বন্ধ করা উচিত কিমের। ঈশ্বর করুন, আমাদের না যেন সত্যিই সেনা নামাতে হয়!’’
তা হলে কি পিয়ংইয়ংয়ের সঙ্গে আপাতত যুদ্ধ পরিস্থিতি এড়াতে চাইছে ওয়াশিংটন? আন্তর্জাতিক কূটনীতিক মহলের একাংশ কিন্তু এখনই এতখানি আশাবাদী হতে পারছে না। উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে তিনি যে আলোচনায় বসতে পারেন, ট্রাম্প নিজেও কাল পর্যন্ত তেমন কোনও ইঙ্গিত দেন নি। বরং জাপান থেকে কিমকে কার্যত যুদ্ধের হুমকিই দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। পেন্টাগনও জানিয়ে দিয়েছিল, পিয়ংইয়ংয়ের পরমাণু ভাণ্ডার ধ্বংস করতে যুদ্ধই একমাত্র পথ।
‘রকেট ম্যান’ কিমের বিরুদ্ধে আজ ট্রাম্পের সুর নরম করা নিয়ে তাই জোর জল্পনা ছড়িয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, ‘শত্রুশিবিরের’ দোরগোড়ায় পৌঁছে গিয়েছেন বলেই কি ট্রাম্প এতখানি সংযত? দিনটা কিন্তু একেবারেই ‘ট্রাম্পোচিত’ ভাবে শুরু করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। জাপান সফর সেরে আজ সকালে স্ত্রী মেলানিয়াকে নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার মাটিতে পা রাখেন ট্রাম্প। সামরিক মর্যাদা দিয়ে তাঁদের স্বাগত জানায় সোল। আর তার ঠিক পর-পরই হেলিকপ্টারে করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট উড়ে যান ক্যাম্প হামফ্রেজ বিমানঘাঁটিতে। যেখানে দক্ষিণ কোরীয় সেনার সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই মহড়া চালিয়ে আসছে মার্কিন সেনা। সঙ্গী জাপানও।
এ মুহূর্তে সব ঘাঁটি মিলিয়ে ৩০ হাজারেরও বেশি মার্কিন সেনা রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। তাই অনেকেরই দাবি, মুখে আলোচনার কথা বললেও বেপরোয়া কিমকে শিক্ষা দিতে ট্রাম্প আদতে সামরিক সংঘাতের দিকেই এগোচ্ছেন। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জে-র সঙ্গে যৌথ সাংবাদিক বৈঠকে তার একটা ইঙ্গিতও দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। বলেন, ‘‘আলোচনায় সব মিটে গেলে তো ভালই। আমার বিশ্বাস, পরিস্থিতির উন্নতির দিকে আমরা ভাল ভাবেই এগোচ্ছি। এখন দেখা যাক এর পরে কী হয়!’’ কিমকে ঠেকাতে এ দিন চিন এবং রাশিয়াকে আরও চাপ বাড়ানোর আর্জি জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
পিয়ংইয়ংয়ের তরফ থেকে ক্রমাগত হুমকি মোকাবেলায় ট্রাম্প নিজেদের দিক থেকেও আঁটঘাট বেঁধে রাখতে চাইছেন। এশিয়া সফর শুরুর আগেই এ জন্য প্রতিরক্ষা খাতে আরও ৪০০ কোটি ডলার বাজেট বরাদ্দের প্রস্তাব তিনি দিয়ে এসেছেন মার্কিন কংগ্রেসে। আর এ সফরে তিনি যে আমেরিকার অস্ত্র ব্যবসাও চাঙ্গা করতে চাইছেন, তা-ও এ দিন স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। কিমের ক্ষেপণাস্ত্র আকাশেই ধ্বংস করে দেওয়ার উপায় বলতে গিয়ে ট্রাম্প জাপানি প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবেকে আমেরিকা থেকে ক্ষেপণাস্ত্র সরঞ্জাম কেনার পরামর্শ দিয়েছিলেন। পেন্টাগনের দাবি, দক্ষিণ কোরিয়ায় গিয়েও কয়েক কোটি ডলারের অস্ত্র চুক্তি করে ফেলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
ঘরে-বাইরে এ সাজো-সাজো রবের মধ্যে তাই যুদ্ধের সম্ভাবনা এখনই উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু উত্তর কোরিয়াকে বাগে আনার ব্যাপারে ট্রাম্প এ দিন যে ভাবে চীনের প্রশংসা করেছেন, তাতে অনেকেই অবাক হলেন। ট্রাম্পের কথায়, ‘‘কিমকে সামলাতে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনফিং বরাবরই আমাদের খুব সাহায্য করে এসেছেন।’’ চলতি এশিয়া সফরে মার্কিন প্রেসিডেন্টের পরের গন্তব্য বেজিং। সে কারণেই ট্রাম্প এতখানি কোমল সুরে কথা বলছেন বলে মনে করছেন অনেকে। [বিভিন্ন গণমাধ্যমের বিরোর্ট অবলম্বনে]