যমুনা নদীর তলদেশে বাংলাদেশের বিস্ময়কর আবিষ্কার।।
১৮ জানুয়ারি ২০১৮।। যমুনা নদীর তলদেশে- কর্ণফুলী নদীর তলদেশে ৩ হাজার ৫ মিটার দৈর্ঘ্যের টানেল নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে গত এপ্রিল মাসে। দ্বিতীয় ধাপে এবার যমুনা নদীর তলদেশ দিয়ে নির্মিত হতে যাচ্ছে দীর্ঘ ১৩ কিলোমিটার টানেল। এ টানেলের মাধ্যমেই আবার চালু হবে রেল ফেরি সার্ভিসও। ‘মাল্টি মডেল টানেল আন্ডার দ্য রিভার যমুনা’ প্রকল্পের আওতায় প্রস্তাবিত টানেলটিতে প্রথম বারের মত একসঙ্গে ট্রেন ও যানবাহন চলাচলের ব্যবস্থা থাকছে। ফলে রংপুর বিভাগের সঙ্গে ঢাকা বিভাগের উত্তরাঞ্চল ও বৃহত্তর ময়মনসিংহসহ দেশের অন্য অংশের যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও উন্নত হবে বলে জানিয়েছে বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগ। সেতু বিভাগ সূত্র জানায়, গাইবান্ধা জেলার বালাশীঘাট ও জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জঘাট নৌ-রুট বরাবর টানেলটি নির্মিত হবে। এ লক্ষ্যে বালাশী-দেওয়ানগঞ্জঘাটকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
১৩ কিলোমিটার প্রশস্ত যমুনা নদী দিয়ে গড়ে প্রতি সেকেন্ডে প্রায় সাড়ে উনিশ হাজার ঘনমিটার পানি প্রবাহিত হয়। একই সময়ে প্রায় ছয়শ’ টন পলিও বহন করে থাকে যমুনা, যা বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। পলি জমার বিষয়টি বিবেচনায় সেতুর পরিবর্তে টানেল নির্মাণ সুবিধাজনক। সূত্র জানায়, প্রাথমিকভাবে যমুনা নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণে প্রস্তাবিত ব্যয় ১০০ কোটি ডলার নির্ধারিত হয়েছে। বাংলাদেশ-জাপান সরকারের যৌথ ইশতেহারে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) ঋণ পাওয়ারও আশা করছে সেতু বিভাগ। সেতু বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) ওবায়দুল হক বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপরে অতিরিক্ত চাপ কমিয়ে টানেলের মাধ্যমে রেল ও সড়কপথের যাত্রীরা দ্রুততম সময়ে পারাপার হতে পারবেন।
দেশবাসীর স্বপ্নের এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে প্রাথমিক কাজ হিসেবে ফিজিবিলিটি স্টাডি করা হবে। এরপরেই মূল প্রকল্প গ্রহণ করবো। সেতু বিভাগের সকল প্রকল্পই বড় বড়, এটিও তাই’। ‘এটি অনেক টাকার ব্যাপার। আশা করছি, বড় বড় দেশ অর্থায়ন করবে। এমনভাবে টানেল নির্মিত হবে, যেন সড়ক ও রেলপথ তৈরি হয়। কারণ, যমুনার উভয় পাশেই এক সময় সড়ক ও রেলঘাট ছিল’। সেতু বিভাগ সূত্র জানায়, সম্ভাব্যতা সমীক্ষার একনেকসহ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা রয়েছে। চলতি সময় থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে ১৩২ কোটি ৪৩ লাখ টাকা ব্যয়ে তা করা হবে। এরমধ্যে ৭৪ কোটি টাকা অনুদান দেবে জাপান। প্রাথমিকভাবে যমুনা নদীর তলদেশে বেশ কিছু সমীক্ষা চালানোসহ প্রস্তাবিত টানেলের অবস্থান, অ্যালাইনমেন্ট ও চূড়ান্ত দৈর্ঘ্য নির্ধারণ করা হবে। টানেল নির্মাণ পদ্ধতি, জিওটেকনিক্যাল ইনভেস্টিগেশন, ট্রাফিক সার্ভে পরিচালনা, পরিবেশ ও পুনর্বাসন সংক্রান্ত সমীক্ষাও করা হবে। তলদেশ খনন পদ্ধতি, রক্ষণাবেক্ষণ, ঝুঁকি মূল্যায়ন ও হ্রাস করাও হবে দ্রুততম সময়ে। এরপরেই শুরু হবে আরও একটি মেগা প্রকল্পের মহা কর্মযজ্ঞ। টানেল প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ব্রিটিশ রেলওয়ে উত্তরবঙ্গের রাজশাহী, রংপুর, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া, নীলফামারী ও ঠাকুরগাঁওসহ ১৩ জেলা এবং বৃহত্তর ময়মনসিংহের জামালপুর, শেরপুর ও ময়মনসিংহ সদরসহ পাঁচ জেলার সঙ্গে ঢাকার সরাসরি সড়ক-রেল যোগাযোগ স্থাপিত হবে।
টানেলের মাধ্যমে যাত্রীবাহী যানবাহন ও রেল সার্ভিস চালু করা যাবে। দুই ঘাট দিয়ে প্রতিদিন কয়েক লাখ মানুষ (রেলযাত্রী) এবং লাখ লাখ মেট্রিক টন মালামাল পারাপার করা যাবে।