মা দিবসটি আসলে কী ও কবে?
মা দিবস নিয়ে কিছু কথা।
নিউইয়র্ক থেকে ড ওমর ফারুক।। স্থানীয় সময়ঃ ১২ মে প্রায় রাত একটা।
প্রতিবছর মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার, অর্থাৎ স্থানীয় সময় এখন ১২ মে দিবস শেষে রাত ঘন্টার কাঁটা বারটা পেরিয়ে একটার কাছাকাছি, আন্তর্জাতিক মা দিবস। ১৯০৭ সাল থেকে মার্কিন স্কুল শিক্ষিকা Anna Jarvis তাঁর প্রাণ-প্রিয়তমা মা Ann Maria Reeves Jarvis এর মৃত্যু বার্ষিকীর দিনটি মা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। ১৯১৪ সালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন এই দিনটিকে জাতীয় মা দিবস হিসেবে মর্যাদা দেন এবং ১৯৬২ সাল থেকে এই দিনটি আন্তর্জাতিক মা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পায়। আইয়ামে জাহেলিয়া বা অন্ধকার যুগেও কোন মা তাঁর সন্তানকে হত্যা করাত দূরের কথা, এ নির্মম, নির্দয়, নিষ্ঠুর কাজে সহযোগিতাও করেননি। ইউরোপ বিজয়ী বীর সম্রাট নেপোলিয়ান বোনাপার্ট তাঁর মা লেটিসিয়াকে দেখেছেন বুদ্ধি, আত্মমর্যাদা বোধ, ধৈর্য্য ও সাহসিকতার সঙ্গে ১৩ সন্তানকে লালন-পালন করতে।
ইসলাম ধর্ম মা’ এর মর্যাদাটা অনেক বড় মহিয়ান ও গৌরবান্বিত করে দিয়েছেন।
মা” কে নিয়ে রাসূল (সাঃ) এর কয়েকটি হাদীসঃ
একদা এক ব্যক্তি আল্লাহর রাসুল (সাঃ)কে জিজ্ঞাস করেছিল, “ আমার উপর কার অধিকার সবচেয়েও বেশি। তখন রাসূল (সাঃ) বললেন, তোমার মা এর উপর, তারপর কার উপর? উত্তরে তিনি বলেন, তোমার মা এর উপর। লোকটি আবারও জিজ্ঞেস করলেন, তারপর কার উপর? উত্তরে রাসূল (সাঃ) বলেন, তোমার মা এর উপর। চতুর্থ বার লোকটি জিজ্ঞেস করলে রাসূল (সাঃ) বললেন, অতঃপর তোমার বাবা”।
(সহীহ বুখারি ও মুসলিম)।।
• রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ বেহেশ্ত হচ্ছে মায়েদের পায়ের নিচে। ( কানযুল উম্মালঃ ৪৫৪৩৯,মুনতাখাবে মিযানুল হিকমাহঃ ৬১৪ ) ।।
• রাসূল কারিম (সা:) বলেছেনঃ নারীর প্রতি সবচেয়ে বেশি অধিকার হচ্ছে তার স্বামীর,আর পুরুষের উপর সবচেয়ে বেশি অধিকার হচ্ছে তার মায়ের। ( কানযুল উম্মালঃ ৪৪৭৭১, মুনতাখাবে মিযানুল হিকমাহঃ ২৫৪ ) ।।
• রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, তিন রকম দোয়া নি:সন্দেহে কবুল হয়। মজলুমের দোয়া, মুসাফিরের দোয়া আর সন্তানের জন্য পিতামাতার দোয়া। -তিরমিযী
আল্লাহ কোরআনে বলেন, ”মাতা তাকে বড় কষ্টে গর্ভধারণ করেছে এবং অতি কষ্টে তাকে প্রসব করেছে, আর তাকে গর্ভে ধারণ করা ও দুধ ছাড়ানো ত্রিশ মাস।” (সূরা লোকমানঃ ১৪)
আর খ্যাতিমান ব্যক্তিদের মা নিয়ে কিছু উক্তিঃ
”আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দরী মহিলা হলেন আমার মা। মায়ের কাছে আমি চিরঋণী। আমার জীবনের সব অর্জন তারই কাছ থেকে পাওয়া- নৈতিকতা, বুদ্ধিমত্তা আর শারীরিক শিক্ষার ফল।” – জর্জ ওয়াশিংটন
মা হল পৃথিবীর একমাত্র ব্যাংক, যেখানে আমরা আমাদের সব দুঃখ, কষ্ট জমা রাখি এবং বিনিময়ে নিই বিনা সুদে অকৃত্রিম ভালবাসাঃ হুমায়ূন আহমেদ
”কোন একটা বিষয় মায়েদের দু’বার ভাবতে হয়। একবার তার সন্তানের জন্য, আর আরেকবার নিজের জন্য।” – সোফিয়া লরেন
”আমাদের পরিবারে মায়ের ভালবাসা সব সময় সবচেয়ে টেকসই শক্তি। আর তার একাগ্রতা, মমতা আর বুদ্ধিমত্তা আমাদের মধ্যে দেখে আনন্দিত হই।”- মিশেল ওবামা
”আমার মা মনে করেন আমিই সেরা। আর মা মনে করেন বলেই আমি সেরা হয়ে গড়ে উঠেছি।” -দিয়াগো ম্যারাডোনা
নেপোলিয়ান বোনাপোর্ট মায়ের গুরুত্ব বুঝাতে বলেছেন, “আমাকে একজন শিক্ষিত মা দাও। আমি তোমাদের শিক্ষিত জাতি উপহার দেব।
সব শেষে বায়েজিদ বোস্তামীর মাতৃসেবার সেই ঐতিহাসিক গল্পটি দিয়ে শেষ করি।
একদিন বায়েজিদ বোস্তামীর মা গভীর রাতে হঠাৎ ঘুম থেকে জেগে পানি খেতে চাইলেন। বালক বায়েজিদ পানি আনতে গিয়ে দেখলেন, কলসিতে পানি নেই। অগত্যা তিনি রাত দুপুরে বহু দূরের ঝর্ণা হতে পানি নিয়ে এসে দেখলেন, মা আবারও ঘুমিয়ে পড়েছেন। কিন্তু তিনি মায়ের ঘুম না ভাঙ্গিয়ে সারারাত পানির গ্লাস হাতে মায়ের ঘুম ভাঙ্গার প্রতীক্ষায় মায়ের শিয়রের কাছে দাঁড়িয়ে রইলেন ? এক সময় রাত কেটে সকাল হল। মা জেগে দেখলেন, বায়েজিদ তখনও গ্লাসে পানি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে । মায়ের প্রতি এই ভক্তি দেখে মা আবেগ তাড়িত হয়ে কেঁদে ফেলেন ।
কবি কালিদাস রায় বায়েজিদের এমন মাতৃভক্তিকে তার রচিত ’মাতৃভক্তি’ কবিতায় তুলে ধরেন এভাবেইঃ
”কহিল জননী, নয়নের মণি, সাধারণ শিশু নও,
খোদার দোয়ার বরকতে তুমি জগতপূজ্য হও।
পুত্র গরবে গর্বিত বুকে, খোদা, স্মরি তব নাম,
তোমারে আমার জীবনের এই সম্বল সঁপিলাম।’
বিফল হয়নি মায়ের আশিস, হৃদয়ের প্রার্থনা
জগৎ-বন্দ্য জ্ঞানগুরুদের বায়েজিদ একজনা।”
এ ঘটনার পর কান্না ভেজা চোখে মা সেদিন বায়েজিদের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করলেন। আর মায়ের দোয়ার বরকতে হযরত বায়েজিদ বড় হয়ে বিশ্ব বিখ্যাত আউলিয়াদের একজন হয়ে গেলেন।