মাহী বি চৌধুরী’রই তো উত্থান পৈত্রিক সূত্রে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র অনিয়মের সমালোচনা বি চৌধুরী তনয় মাহী’র মুখে মানায় কতটুকু?
নিউইয়র্ক থেকে ড ওমর ফারুক।।
তারিখঃ ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮।।
মাহী বি চৌধুরী কড়া সমালোচনা করলেন বড় দু’দল নিয়ে। সমালোচনা তো করা দোষের কিছু নয়। সে তো ভাল। সংশোধন ও জনগণের অনুধাবনের জন্য ভাল। আমিও সব দলের সমালোচনা করি, প্রয়োজনেই। তিনি যে সব সমালোচনা করলেন, মনে হয় তাদের সংগঠনগুলো একেবারে পবিত্র মানুষগুলো নিয়ে গঠিত। সৎ লোকের প্রশিক্ষণও দেন। তারাও যেন জামায়াতের মত সৎ লোকের শাসন চান। বস্তুতপক্ষে তা মোটেই নয়। তারা সুযোগ পান না, সেজন্য করেন না। না পেরে বলাঃ “আঙ্গুর ফল টক।” যেটুকু সুযোগ পান, সে পুরোপুরি করেই নিঃশেষ করেন। তার উত্থানই ত অনিয়ম দিয়েই। সে এক বড় গল্প। কত লিখব? সময় কোথায়! অল্প অল্প করে লিখি, এ সব অনিয়মের কথা। তিনি যা বললেন, মনে হয়, তাদের দলগুলো ফেরেশতাদের দ্বারা গঠিত। মাহী বি চৌধুরী যে প্রথম বার বি চৌধুরীর আসনে এম পি হলেন। সেও ত পৈত্রিক সূত্রে। নিয়ম মাফিক সে আসনে লেবু কাজী বলে পরিচিত (প্রকৃত নাম এ মূহুর্তে মনে আসছে না) একজন ছিলেন, বি চৌধুরীর ডান হাত। অর্থাৎ সেকেন্ড ইন কমান্ড। মাহী ত রাজনীতিতে ছিলেনই না। তিনি তখন তরুণ। বাইরে পড়াশোনা করতে এসেও শেষাবধি হয় নি। স্ত্রী’কে নিয়ে মিডিয়া জগতে কি কি জানি অনুষ্ঠান করতেন। বি চৌধুরী প্রথমে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পরে রাষ্ট্রপতি মনোনীত হলে সে আসন খালি হয়। লেবু কাজী’র আসল নাম এ মূহুর্তে মনে করতে পারছি না। মুন্সীগঞ্জ-১ অর্থাৎ সিরাজদিখান-শ্রীনগর আসন থেকে বি চৌধুরী এমপি হন। পরবর্তীতে পৈত্রিক সম্পত্তি হিসেবে মাহীও। অথচ মাহী এখন যখন বোদাই জনগণকে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে বাহবা নিতে প্রয়াসী হতে দেখি, অলক্ষে থেকে বিধাতা হয়ত মুছকি হাসেন। অনিবার্য কারণে আমাকে সে আসন নিয়ে এত কিছু জানতে হয়েছে। সিরাজদিখান ও শ্রীনগরে কোন মাখলুকাত থাকলে বেশি বুঝবে, আমি যে সব বলছি। সম্ভবত রাগে ও দুঃখে লেবু কাজী শেষাবধি রাজনীতি থেকেই অবসর নিয়ে থাকবে। আমি ত দেশ থেকে দেশান্তরে ঘুরে বেড়ানো যাযাবর। দেশের সব আপডেট খবর ত সব সময় জানার সুযোগ থাকে না। তবুও অনেকই ইনবক্সে বা ফোনে অনেক সময় দেশের বিশেষ খবরের আপডেট দেয়। তারা মনে করে, আমাকে খবরটি দিলে হয়ত নিরপেক্ষ একটা বিশ্লেষণী লেখা লিখব, জনস্বার্থেই। বি চৌধুরী যখন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হলেন, আমি গিয়েছিলাম অন্য অনেকের মতই ফুল দিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে শুভেচ্ছা জানাতে। তিনি ভাবছিলেন, আমিও হয়ত অন্য অনেকের মত কোন সুপারিশ নিয়ে স্বাক্ষর করায়ে আনব। দেখলেন, শুধু ফুলই দিলাম। কোন কাগজে স্বাক্ষর চাইছিলাম না। বললেনঃ তোমার বুঝি কোন সুপারিশ দরকার নেই। গ্রামের কোন রাস্তাঘাট বা স্কুল কোন কিছুরই? আমি বললাম, আজ শুধু ফুলই। অবশ্য এরপর রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হবার পর আমি, আমার সহধর্মীনি এবং আমার সম্পাদিত ইংরেজি সাপ্তাহিক ঢাকা পোস্ট এর উপদেস্টা সম্পাদক মরহুম ডাঃ ক্যাপ্টেন (অব) মাসউদুর রহমান প্রিন্সসহ (ড মিজানুর রহমান শেলীর কনিষ্ঠ ভ্রাতা) আমরা ৫ জনের প্রতিনিধি দল নতুন রাষ্ট্রপতি হিসেবে শেুভেচ্ছা জানাতে ঢাকা পোস্ট এর পক্ষ থেকে তাঁকে আবারও শুভেচ্ছা জানাতে গণভবনে যাই। এরপর তো অনেক গড়া ভাঙ্গার ইতিহাস।
সে আসনের কথা বলি। স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগের কোরবান আলী নির্বাচিত হলেও পরে এই আসনটি হাতছাড়া হয়ে যায় আওয়ামী লীগের। ১৯৭৯, ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হন বিএনপির অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। তিনি রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর ২০০২ সালে উপনির্বাচনে তার ছেলে বিএনপির মাহী বি চৌধুরী নির্বাচিত হন। ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালে নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টির শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন। ২০০৮ ও ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের সুকুমার রঞ্জন ঘোষ নির্বাচিত হন।
এ আসনটি এক সময়ে বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত ছিল। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত শাসনামলে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে লাঞ্ছিত করায় সেই দুর্গের পতন ঘটে। বিভক্ত হয় বিএনপির ভোট ব্যাংক। এছাড়া পৈত্রিক সূত্রে নিজ পুত্রকে এমপি পদপ্রার্থী করায় লেবু কাজীর নেতৃত্বে বিশাল কর্মী বাহিনী রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। আগেই বললাম, পিতার প্রদত্ত সূত্রমতে ও বংশানুক্রমিক ধারাবাহিকতায় ২০০৪ সালের উপ নির্বাচনে বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বিকল্পধারার মাহি বি চৌধুরী দ্বিতীয় দফায় নির্বাচিত হন।
২০০৮ সালের নির্বাচনে আল মুসলিম গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান বিশিষ্ট শিল্পপতি শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বিএনপিতে যোগে দেন এবং বিএনপি প্রার্থী হওয়ার প্রত্যাশা করেন। কিন্তু সে রকম মনে করে বিএনপিতে যোগ দিলেও দলের মনোনয়ন পেয়েছিলেন শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন। এরপরও নেতাকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক রেখেছেন শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ। শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহকেও আমি ব্যক্তিগত ভাবে চিনি। তিনি সজ্জন ব্যক্তি। তিনি হাল ছাড়েন নি। নেতাকর্মীদের সংগঠিত করার পাশাপাশি তিনি নির্বাচনী প্রচার বরাবরই অব্যাহত রেখেছেন। আশায় বুক বেঁধে আছেন, হয়ত মনোনয়ন পাবেন। তাঁর ও এলকার আরও একজন দাতা আলী আজগর দু’জনের দানে ও প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠিত কলেজ রয়েছে তার নির্বাচনী এলাকা সিরাজদিখান উপজেলার শেখরনগরে। তিনি মনে করেন, নিশ্চয়ই দলের কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারকগণ তাঁকে কোন এক সময় মূল্যায়ন করবেন।
মুন্সীগঞ্জ-১ আসনে সাবেক রাষ্ট্রপতি ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বিকল্পধারা বাংলাদেশের অবস্থান নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে এক ধরনের সংশয় ও আগ্রহ থাকা অস্বাভাবিক নয়। জোটে এলে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এই দলটিকে ছাড় দিতে পারে, বলেও গুঞ্জন রয়েছে। আর নির্বাচনী জোট না হলে এ আসনে বিকল্পধারা বাংলাদেশও শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে যে পারবে না, তা বলা মুশ্কিল। কেননা এখন আর শাহ মোয়াজ্জম হোসেনের মত শক্তিশালী নেতা এ আসনে নেই।
এ আসনে ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিকল্পধারা বাংলাদেশের ব্যানারে নির্বাচনে লড়ে তৃতীয় হন অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। এরপর গত ৯ বছরে তিনি আর এলাকামুখী হন নি। তবে খোঁজ নিয়ে জানলাম, দলটির যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি চৌধুরী আগে যাওয়া আসা না করলেও নির্বাচন ঘনিয়ে আসাতে ইদানিং একটু যেতে শুরু করেছেন। এরপর তিনিও আর এলাকায় আসেননি বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। যতটুকু জেনেছি, ২০০৮ সালের পর থেকে এ নির্বাচনী এলাকায় বিকল্পধারা বাংলাদেশের তেমন একটা তৎপরতা নেই। দলটির স্থানীয় নেতাকর্মীরা ঢাকায় গিয়ে আগামী নির্বাচন নিয়ে আলোচনা ও পরিকল্পনা করছেন। আবার কেউ কেউ বিএনপিতে ফিরে গেছেন। এ আসনে ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী কিংবা মাহী বি চৌধুরী বিকল্প ধারা বাংলাদেশের প্রার্থী হতে পারেন।
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট শেখ মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম ২০০৮ সালের নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পেয়েছিলেন। তিনি আগামী নির্বাচনেও দলের মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। শেখ সিরাজুল ইসলাম জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের লিগ্যাল এডভাইজারও। তিনি জাতীয় পার্টির মত দলের রাজনীতি করলেও অত্যন্ত সৎ ব্যক্তি ও প্রাকটিসিং মুসলিম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে মাস্টার্স ও অবশেষে এলএলবি করে আইন পেশায় নিজেকে একনিষ্ঠভাবে সংশ্লিষ্ট করেন। এরশাদ সাহেব তাঁর ইংরেজি ড্রাফটিং এবং আইন বিষয়ে তাঁর গভীর জ্ঞানের প্রশংসা করেন। এই হল সে আসনের অবস্থা। এখন হিসেব মিলিয়ে নিন, মাহী যে সব বলে, সেগুলো কতটুকু যথার্থ! আমি সে আসনের বা সে এলাকা সম্পর্কে খুব ভাল ভাবে অবহিত একজন। কেননা সে আসনের এখনকার যত দলের প্রার্থীই আছেন এবং পূর্বের শাহ মোয়াজ্জম, সকলই আমার সাথে খুবই ঘনিষ্ঠ। বিশেষ করে শেখ মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম ত ঢাকা পোস্ট এ আমর সহকর্মী ও বন্ধু। মরহুম ডাঃ ক্যাপ্টেন (অব) মাসউদুর রহমান প্রিন্স ও তাঁর অগ্রজ ড. মিজানুর রহমান শেলীও এবং তাদের বাড়িও মুন্সীগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান উপজেলার ইছামতি গ্রামেই।
[ড ওমর ফারুক।। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী লেখক, পরিব্রাজক, সামাজিক গবেষক, প্রকাশক, মানবাধিকার কর্মী এবং মিডিয়া ব্যক্তিত্ব। ইংরেজি ও বাংলা ভাষায় লেখা গ্রন্থ সংখ্যা প্রায় ত্রিশটি। তিনি ঢাকার বাংলাবাজারস্থ ’নিহাল পাবলিকেশন’ এর স্বত্বাধিকারী, ইংরেজি সাপ্তাহিক ঢাকা পোস্ট সম্পাদক এবং নিউইয়র্ক থেকে পরিচালিত অনলাইন পোর্টাল ঃ ডেইলি ঢাকা পোস্ট ডট কম- এর চিফ এডিটর।]