ভয়ঙ্কর ‘বজ্রপাত’ অস্ত্রের নেশায় বিশ্ব
ইলেক্ট্রনের রশ্মি ছুড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা থেকে শুরু করে উন্নত কম্পিউটার ব্যবস্থা, আধুনিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সবকিছু ধ্বংস করে দিতে সক্ষম এই অস্ত্র। প্রধানত প্রতিপক্ষের যুদ্ধজাহাজ, সাবমেরিন, যুদ্ধবিমান, বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা, রাডারসহ সব ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস বা যন্ত্র অকেজো করে দেয়ার লক্ষ্যে তৈরি করা হচ্ছে এগুলো।
এখন পর্যন্ত সামরিক পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং এশিয়ার উদীয়মান শক্তি চীন ও ভারত এই অস্ত্র তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। অস্ত্র তৈরি করছে মার্কিন মিত্র যুক্তরাজ্য। তবে তারা একদম প্রথম দিকে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী উত্তর কোরিয়া ও ইরানের হাতেও এই অস্ত্র রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক পালস (ইএমপি) হচ্ছে ইলেক্ট্রন ও চুম্বকীয় শক্তির বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আলোকরশ্মির আঘাত। হলিউডের সাইন্স ফিকশন সিনেমাগুলোতে বেশ আগে থেকেই এ ধরনের অস্ত্রের ব্যবহার দেখানো হচ্ছে।
ইএমপি রশ্মি ছুড়তে মিসাইল বা ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা ব্যবহার করা হয়। এক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় ইলেক্ট্রন শক্তির প্রবল চাপ তৈরি করতে অতি শক্তিশালী মাইক্রোওয়েভ ওভেন। এই শক্তি বৈদ্যুতিক ক্ষেত্রে, চুম্বকীয় ক্ষেত্রে, বিদ্যুৎ-চুম্বকীয় বিকিরণ ও বৈদ্যুতিক পরিচলন রূপে অতিক্রম করতে পারে। এটা অনেকটা লেজার রশ্মি বা বজ পাতের মতো। ইএমপি রশ্মি সরাসরি সরল পথে ও আঁকাবাঁকা পথে দু’ভাবেই চলতে পারে।
একই সময়ে লাখ লাখ বজ্রপাত হলে যে আলোকরশ্মি সৃষ্টি হয়, ইএমপির একটি আঘাত তার থেকে বেশি রশ্মি সৃষ্টি করতে পারে। বজ পাত যেমন অবকাঠামো থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা, ইলেকট্রনিক যন্ত্র, রাডার-বিমান প্রভৃতি নষ্ট করে দিতে পারে, একইভাবে ইএমপি রশ্মিও এসব বস্তু ধ্বংস করতে সক্ষম।
প্রায় ছয় বছর আগে ইএমপি অস্ত্র তৈরি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। সে সময় ফক্স নিউজসহ মার্কিন গণমাধ্যমগুলো জানায়, মার্কিন বিমানবাহিনী ও বিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠাতা বোয়িং যৌথভাবে ইএমপি তৈরি করেছে। ‘চ্যাম্প’ বা কাউন্টার-ইলেকট্রনিক্স হাই পাওয়ার্ড মাইক্রোওয়েভ অ্যাডভান্সড মিসাইল প্রজেক্টের অধীনে এটা তৈরি করা হয়।
২০১২ সালে প্রথমবারের মতো সফল পরীক্ষা চালায় এই প্রকল্প। আশ্চর্যের বিষয় হল ২০০৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক আগেই এ অস্ত্র তৈরি করেছে ভারত। দেশটির ডিফেন্স রিসার্চ ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ডিআরডিও) ও ভাবা অ্যাটোমিক রিসার্চ সেন্টার (বিএআরসি)কেএএলআই-৫০০০ নামে অস্ত্র তৈরি করেছে। তবে দেশটির সরকার এ খবর জনসমক্ষে প্রকাশ করতে আগ্রহী নয়।
চলতি বছরের ১৪ জুলাই এক প্রতিবেদনে ইকোনমিক টাইমস জানায়, জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে এ অস্ত্রের কথা অস্বীকার করেছে ভারত সরকার।
এছাড়া ইতিমধ্যে এই অস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালিয়েছে রাশিয়া। রাশিয়ার সংবাদ মাধ্যম স্পুটনিক জানিয়েছে, মার্কিন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করতে সক্ষম মস্কোর নতুন এ অস্ত্র। এ অস্ত্র তৈরিতে বেশ আগেই গবেষণা শুরু করেছে চীন।
ভারতের অস্ত্র গবেষণা প্রতিষ্ঠান দিল্লি ডিফেন্স রিভিউ-এর রিপোর্টে বলা হয়েছে, বেইজিংয়ের চুং-শান ইন্সটিটিউট অব সাইন্স অ্যান্ড পেকনোলোজি (সিএসআইএসটি) ইএমপি তৈরির লক্ষ্যে বেশ কয়েক বছর ধরে চেষ্টা করছে বলে মনে করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র এ অস্ত্র তৈরির প্রথম ধাপে রয়েছে বলে জানা গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘বড় শত্রু’ ইরান ও উত্তর কোরিয়ার হাতেও এ অস্ত্র রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। পিয়ংইয়ং মস্কোর কাছ থেকে এ প্রযুক্তি পেয়েছে বলে দাবি করেছে ওয়াশিংটন। পিয়ংইয়ংয়ের এ নতুন অস্ত্রকে নতুন হুমকি হিসেবে বিবেচনায় এর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করছে।
মার্কিন অস্ত্র বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইএমপির এক আঘাতে আমেরিকার ৯০ শতাংশ জনসংখ্যা মুছে ফেলতে পারে উত্তর কোরিয়া। পিটার ভিনসেন্ট প্রাই নামে সিআইএর এক অস্ত্র কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ওই অস্ত্রের এক উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সি সব ইলেকট্রনিক বস্তু অকেজো করে ফেলতে সক্ষম। এমনকি মাঝ আকাশে বিমানও বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
ইএমপি’র বজ্ররশ্মি
বায়ুমণ্ডলকে বিরাট ঝাঁকুনি দিতে দিতে ভূপাতিত হবে। চারপাশ উত্তপ্ত করে ভূমি থেকে ৬০ মাইল উঁচু থেকে ১.৫ মিলিয়ন বর্গমাইল এলাকা ধ্বংস করে দিতে পারে নিমিষে।
বৈদ্যুতিক তারে ইএমপি
বৈদ্যুতিক তারের মাধ্যমেও ইএমপি হামলা সম্ভব। এ পদ্ধতিতে যে কোনো দেশের জাতীয় নিরাপত্তা তথ্যও হ্যাক বা ধ্বংস করা যায়। যুক্তরাষ্ট্রের তথ্য ধ্বংস করা হলে তা পুনরুদ্ধারে প্রায় ১০ বছর লাগবে। খরচ হবে তিন ট্রিলিয়ন ডলার