ভিনগ্রহীদের আহ্বান জানাতেই নাজকা রেখার সৃষ্টি
দক্ষিণ আমেরিকার পেরুর নাজকা মরুভূমিতে হাজার বছর আগে আঁকা হয়েছিল কিছু অদ্ভুত রেখাচিত্র। ভূমি থেকে এসব রাস্তা সদৃশ রেখাকে বিক্ষিপ্ত মনে হলেও আকাশ থেকে দেখলে অবাক হয়ে যেতে হয়। পেরুর রাজধানী লিমা থেকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত প্রায় ৮০ কিলোমিটার লম্বা ও ৫০০ বর্গকিলোমিটার বিস্তৃত শুষ্ক নাজকা মালভূমি অঞ্চলে কেন এমন রেখাচিত্র আঁকা হয়েছিল তা বিজ্ঞানীদের কাছে আজও এক রহস্য।
একটি বিজ্ঞান সাময়িকীর বরাত দিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম এক্সপ্রেস ইউকে এক প্রতিবেদনে জানায়, নাজকা রেখা পরীক্ষা করে বিজ্ঞানীদের মনে হয়েছে এসবের পেছনে আহ্বানমূলক মনোভাব কাজ করেছিল। এলিয়েনদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে তারা একের পর এক বিশাল আকারের রেখাচিত্র অঙ্কন করে।
এখানেই শেষ নয়, রেখাচিত্রগুলো এমনভাবে নির্মাণ করা হয় যাতে বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও তা নষ্ট না হয়। জাপানের ইয়ামাগাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞেরা আরও জানিয়েছে, এসব রেখাগুলো অর্থহীন মনে হলেও তা ভ্রান্ত ধারণা। নাজকা জাতির মানুষেরা সম্ভবত যোগাযোগের সঠিক সংকেত ঠিকই জানতো।
নাজকা মরুভূমিতে প্রায় ৮০ কিলোমিটার লম্বা ও ৫০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে এইসব জ্যামিতিক চিত্র ও নানা পশুপাখির ছবি আঁকা হয়েছে। তাদের অনুমান মোটামুটি খ্রিস্টপূর্ব ৫০০ থেকে ৫০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে এসব রেখাচিত্র আঁকা হয়। ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দে ইউনেস্কো একে বিশ্বের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে তালিকাভুক্ত করে।
সবচেয়ে চমক করা তথ্য হচ্ছে খ্রিস্টপূর্ব ৫০০ থেকে ৫০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে নাজকা সংস্কৃতির মানুষ এসব রেখাচিত্র আঁকলেও বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে জেনেছেন, সেখানে থাকা কিছু রেখাচিত্র তার চাইতেও প্রাচীন। বিশেষজ্ঞদের অনুমান, খ্রিস্টপূর্ব ৯০০ অব্দের দিকে পারাকাস সংস্কৃতির মানুষও এসব রেখাচিত্র অঙ্কন করেছিল। অর্ধসহস্রাধিক বছর পর নাজকার মানুষেরাও তারই অনুসরণ করে।
নাজকা মালভূমি জুড়ে অঙ্কিত আছে বিশাল আকারের ত্রিভূজ, চতুর্ভুজ, আয়তক্ষেত্র, সামন্তরিক জ্যামিতিক নকশা। আরও আছে মাকড়সা, পাখি, নয় আঙ্গুলবিশিষ্ট বানর, মাছ, সরীসৃপজাতীয় প্রাণী, পাখি, পোকামাকড় ইত্যাদি। জ্যামিতিক নকশাগুলো এতোই সুক্ষভাবে আঁকা যে সেগুলো একচুলও এদিক ওদিক না হয়ে চলে গেছে মাইলের পর মাইল। অর্থাৎ প্রতিটা রেখায়, নকশায় রহস্যময় পদ্ধতিতে অতি সূক্ষ্ম হিসাব রক্ষা করা হয়েছে।
সাম্প্রতিক গবেষণায় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সেই অঞ্চলে দীর্ঘ বিরতি দিয়ে ভিনগ্রহীরা এসে থাকতে পারে। যা বংশপরস্পরায় জেনে থাকা সেই সভ্যতার মানুষেরা ভিনগ্রহীদের সঙ্গে পুনরায় যোগাযোগের উদ্দেশ্যে ওই কঠিন কাজটি করেছিল। তাদের উদ্দেশ্য ছিল, যেন পরবর্তীতে ভিনগ্রহীরা পৃথিবীতে আসলে সঠিক স্থানে পৌঁছাতে পারে।
কেবিএ