স্বামী স্ত্রী ভালবাসা টিকিয়ে রাখতে যা করা দরকার!

December 9, 2017 8:52 pm0 commentsViews: 3072

 

 [এ ছবি কোন প্রতিকী ছবি নয়। ঢাকা শহরে বসবাসরত বাস্তব জীবনে সুখী এক দম্পতি। সৌজন্যঃ ঢাকা থেকে সানজিদা আহমদ।]

নিউইয়র্ক থেকে ড. ওমর ফারুকঃ ভালবাসার সম্পর্ক তৈরি হয় দুজনের মধ্যে। দুজনের মনের মিলেই ভালবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তবে রাগ-অভিমানে অনেক সময় সম্পর্কে বিভেদের সৃষ্টি হয়। অনেক সময় এ বিভেদই বিচ্ছেদের সুর হয়ে ওঠে। আর বিচ্ছেদ যেন না হয় সেদিকেই দু’জনেরই লক্ষ্য রাখা উচিত। দু’জন যদি সত্যিকারের ভালবেসে থাকেন, তো ভালবাসাকে পূর্ণতা দিতে নিজেদের মধ্যে মানিয়ে নেয়া কথাটা গেঁথে নিতে হবে। এমন পুরুষের অভাব নেই, যারা স্ত্রীর প্রতি কঠোরতা দেখিয়েই আনুগত্য অর্জন করতে চায়। এটা শুধু যে ধর্মহীনরা করে, তা নয়। অনেক সময়ই ইসলাম ধর্মের খোলসেও স্বামী তার সহধর্মিনীর ওপর অন্যায় আধিপত্য সৃষ্টি করতে চায়। বিপরীত পক্ষে, এমন নারীও এখন হরহামেশাই দেখা যায়, যারা সহজ সরল স্বামীকে অন্যায় ভাবে নিজের ইচ্ছা চাপিয়ে দিতে সিদ্ধহস্ত।

কিন্তু এমন পুরুষও সমাজে অহরহ রয়েছে, যারা স্ত্রীকে জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসেন এবং স্ত্রীর ভালবাসা পেতে নানা রকম চেষ্টা করেন। এতে তারা ব্যর্থ হলে তাদের জীবনে হাহাকার নেমে আসে। বিষিয়ে উঠে সময়।

আল্লাহ তাআলা বলেছেন, وَعَاشِرُوهُنَّ بِٱلۡمَعۡرُوفِۚ [النساء: ١٩ আর তোমরা তাদের (স্ত্রীদের) সাথে উত্তম ব্যবহার কর।’ [সূরা আন-নিসাঃ আয়াত ১৯]

আল্লাহ তাআলা আরো বলেছেনঃ وَلَهُنَّ مِثۡلُ ٱلَّذِي عَلَيۡهِنَّ بِٱلۡمَعۡرُوفِۚ وَلِلرِّجَالِ عَلَيۡهِنَّ دَرَجَةٞۗ [البقرة: ٢٢٨] আর স্ত্রীদের যা কিছু পাওনা রয়েছে তা উত্তম আচরণের মাধ্যমে পৌঁছে দাও। আর তাদের উপর পুরুষদের একটি উঁচু মর্যাদা রয়েছে।’ [সূরা আল-বাকারাহঃ আয়াত ২২৮]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, «لَا يَفْرَكْ مُؤْمِنٌ مُؤْمِنَةً، إِنْ كَرِهَ مِنْهَا خُلُقًا رَضِيَ مِنْهَا آخَرَ» কোন মুমিন পুরুষ যেন কেন মুমিন স্ত্রীকে তাচ্ছিল্য ও অবজ্ঞা না করে। তার আচার আচরণের কোন একটি অপছন্দনীয় হলেও অন্যটি সন্তোষজনক হতে পারে।’ [মুসলিমঃ ১৪৬৯]
হাদিসে আরও এসেছে, রাসুল সাঃ বলেছেনঃ ’ওই লোক সর্বোত্তম, যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম।’

উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনরাসূলু, ল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ «أَيُّمَا امْرَأَةٍ مَاتَتْ وَزَوْجُهَا عَنْهَا رَاضٍ دَخَلَتِ الجَنَّةَ» যদি কোন স্ত্রী এমতাবস্থায় মারা যায় যে, তার স্বামী তার উপর সন্তুষ্ট, তা হলে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ [তিরমিযিঃ ১১৬১]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ «لَوْ كُنْتُ آمِرًا أَحَدًا أَنْ يَسْجُدَ لِأَحَدٍ لَأَمَرْتُ المَرْأَةَ أَنْ تَسْجُدَ لِزَوْجِهَا» যদি আমি কোন মানুষ অপর কারও জন্য সিজদা করার অনুমতি দিতাম, তবে মহিলাকে তার স্বামীকে সিজদা করতে নির্দেশ দিতাম’। [তিরমিযঃ ১১৫৯]

এ কারণে অধিকাংশ ধার্মিকরাই স্ত্রীকে অত্যধিক ভালবাসেন। স্ত্রীর কাজে সহযোগিতা করেন। স্ত্রীরা তদ্রুপ ভাল  আচরণ্ই স্বামীর সাথে করেন। এতে আল্লাহ ও রাসুল সাঃ এর সন্তুষ্টিও নিহিত রয়েছে।
পুরুষের কিছু কিছু গুণ নারীরা মনে প্রাণে কামনা করেন। স্বামীর ভেতর এসব পেলে তার ভালবাসাও বেড়ে যায়। একজন পুরুষ তার স্ত্রীর কাছে ভাল স্বামী হতে পারেন নানান উপায়ে। আসুন জেনে নেই জীবনসংগী বা জীবনসঙ্গীনি অপর জনের মধ্যে কী কী জিনিস আশা করেন এবং ভালবাসা টিকিয়ে রাখার জন্য করণীয় কিছু কাজ।

১. অসম্মানজনক ভাষাঃ সম্পর্ক গড়ে ওঠে পারস্পারিক সম্মান ও শ্রদ্ধার ভিত্তিতে। তাই এমন কোন ভাষা ব্যবহার করা উচিত নয়, যাতে আপনার ভালবাসার মানুষটি আহত হন। কেউ যদি এ রকম ভাষা ব্যবহার করেও থাকে, সেটা কোনভাবেই প্রশ্রয় দেওয়া উচিত নয়। বরং বিষয়টি তাকে বুঝিয়ে বলে তার মনের মাঝে যে রক্তক্ষরণ হয়েছে, তা দূরীকরণ করা জরুরী।

২. অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণে রাখাঃ এমন অনেকই আছেন, যারা তাদের  প্রিয় মানুষটিকে অর্থাৎ তাদের জীবনসঙ্গী বা সঙ্গীনিকে একা কোথাও যেতে দেন না। অনেকে আবার সব কাজে ব্যাখ্যা বা কৈফিয়ত দাবি করেন। কথায় কথায় ‘রেড ফ্ল্যাগ’ দেখান হয়। এ রকম অতিমাত্রায় নিয়ন্ত্রণমূলক আচরণ অর্ধাঙ্গী বা অধাঙ্গীনিকে আহত করে। এটা সম্পর্ককে চরম ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং অবশেষে একটিা শেষ পরিণতির দিকেই নিয়ে যায়।

৩. বিশ্বাস ভঙ্গঃ সম্মান, শ্রদ্ধা এবং পারস্পরিক বিশ্বাসের মাধ্যমে ভালবাসার স্বর্গীয় বৃক্ষটি ফলে ফুলে সুশোভিত হয়ে বেড়ে ওঠে। আপনি যদি আপনার প্রেমিক বা প্রেমিকাকে বিশ্বাস করতে না পারেন, তাহলে বিষয়টি নিয়ে আরও গভীরভাবে ভেবে দেখতে পারেন। গভীর সম্পর্কে যাওয়ার আগে সেটার ইতি টানাও সেক্ষেত্রে ভাল হতে পারে। সম্পর্ক হবে পরিপূর্ণভাবে খোলামেলা, বিশ্বাসযোগ্য ও সহযোগিতামূলক। পরস্পরের মধ্যে বিশ্বাসের অভাব থাকলে সুসম্পর্ক নষ্ট হবে। বিশ্বাসের অভাব থাকলে বিষয়টিকে অকারণে টেনে নেওয়া বা প্রশ্রয় দেওয়া উচিত নয়।

৪. যত্নশীল না হওয়াঃ ভালবাসার অর্থ একে অন্যের প্রতি যত্নশীল হওয়া। বিষয়টি বেশ সাধারণ। পেশাজীবনে আমরা বেশিরভাগ সময় অফিসে থাকি। কিন্তু দূরে থাকলেও প্রেমিক বা প্রেমিকার একটু খোঁজ-খবর নিলেই যত্নশীলতার বিষয়টি প্রকাশ পায়। কিন্তু আপনি যদি দীর্ঘ সময় তার খোঁজ না রাখেন বা যত্নশীল না হন- তাহলে আপনার সম্পর্কে ভাটা পড়বে। এ বিষয়টি সম্পর্কের জন্য আখেরে ভাল ফল বয়ে আনবে না।

৫. গুরুত্ব দেওয়াঃ সম্পর্কের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে অন্যদের চেয়ে ভালবাসার মানুষটিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া। তবে এ ক্ষেত্রে কেউ যদি নিজেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন, তাহলে সম্পর্ক যে বাজে দিকে গড়াবে, তাতে কোন সন্দেহ নেই। এটা মনে রাখা অত্যন্ত জরুরী যে, ভালবাসা গড়ে ওঠে সমানে সমানে। একক কর্তৃত্ব নিয়ে ভালবাসা হয় না । সাময়িক সে রকম কিছু গড়ে ওঠলেও আখেরে মন্দ ফলই বয়ে আনে।

৬. নেতিবাচক বিষয়টাও অনেক সময় ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতেই গুরুত্ব দেওয়াঃ নেতিবাচক কোন বিষয়ও জীবনেরই অংশ হয়ে থাকতেই পারে। সেটি মন্দ ফল বয়ে আনতে পারে মনে হলে সেটি কখনও কখনও ভালবাসা টিকিয়ে  রাখার স্বার্থে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিবদ্ধ করা প্রয়োজন হয়ে পড়ে। সামগ্রিক জীবনে বা সম্পর্কের ক্ষেত্রেও কখনও না কখনও তা আসতেই পারে। কিন্তু তা যেন ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিকে ছাপিয়ে না ওঠে যায়, সেদিকে সবিশেষ দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে হবে।

৭. আবেগ-অনুভূতির অভাবঃ প্রেমিক কিংবা প্রেমিকার প্রতি আবেগ-অনুভূতির ঘাটতি থাকা উচিত নয়। আবেগের অভাব থাকলে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা কষ্টকর হয়ে যাবে। আপনি যদি ভালবাসার মানুষটির প্রতি সহানুভূতি বোধ না রাখেন, তাহলে মনে করে নিতেই পারেন আপনার ভালবাসার ভালবাসার পারদ অনেক নিচে নেমে এসেছে।  বিষয়টি সম্পর্কে ফাটল ধরাতে অনিবার্যভাবে ভূমিকা রাখবে ।

৮. সঙ্গীর কথা না শোনাঃ খোলা মনে ও সৎভাবে পরস্পরের অনুভূতি শেয়ার করা উচিত। কেউ যদি তার স্বামী বা স্ত্রীর কথা গুরুত্ব দিয়ে না শোনেন কিংবা শুনলেও হুঁ হ্যাঁ বলাতেই সীমাবদ্ধ থাকেন, তাহলে তাদের সম্পর্কে বিশ্বাসযোগ্যতার অভাব দেখা দেবে। বিষয়টি সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর অবস্থাই ডেকে আনবে।

৯. সঙ্গী যদি আপনার স্বপ্নের সহযোগী না হনঃ প্রত্যেকটি মানুষেরই কোন না কোন স্বপ্ন থাকে। সেই স্বপ্নের প্রতি সমর্থন জানান স্বামী বা স্ত্রীর কর্তব্য। স্বপ্নের সারথী হয়ে যাওয়ার বিকল্প নেই। ভালবাসার মানুষটি যদি আপনার স্বপ্নকে অবজ্ঞা করেন, তাহলে সে সম্পর্ক অবশেষে ভাঙতে বাধ্য।

১০. দায়িত্বহীনতাঃ জীবন-সংসার চালাতে হলে কাজ করতে হবে। কেউ যদি কাজ কিংবা ব্যবসায় বিমুখ হয়, তাহলে অবশ্যই বিষয়টি শুভ লক্ষণ নয়। তাকে স্পষ্টভাবে বলে দেওয়া উচিত- কর্মবিমুখ মানুষের মধ্যে ভালবাসা থাকলেও তা সফল হতে পারে না। কথায় আছেঃ ‘যখন অভাব এসে দরজায় কড়া নাড়ে, তখন ভালবাসা জানালা দিয়ে পালিয়ে বেড়ায়।’ স্ত্রীও যদি সংসারের দৈনন্দিন রুটিন কাজ ও দায়িত্ব বা পেশাগত দায়িত্ব পালনে অবহেলা করেন, সেটি সম্পর্ক বিনষ্ট হতে সাহায্য যে করবে না, তা হলফ করে বলা মুশকিল।

১১. আকর্ষণীয় শব্দ প্রয়োগঃ ভাল একটি দম্পতির বৈশিষ্ট হল, তারা পরষ্পর পরষ্পরের প্রতি সুন্দর ব্যবহার ও আচরণ করবে। এটা শুধু যে,   স্বামী স্ত্রীর প্রতি সুন্দর ব্যবহার করেন তা নয়, স্ত্রীও সমান ভাবে স্বামীকে শ্রদ্ধা ও মায়াময় আবেশে ভরে দেবে।। কথা বলার সময় মায়াময় ও আকর্ষণীয় শব্দ ব্যবহার করেন। স্ত্রীর প্রতি স্বামী যেমন নম্র ও দয়ার্দ্র থাকেন, তেমনি স্ত্রীও থাকেন স্বামীর প্রতি।

১২. জীবনসঙ্গী বা সঙ্গীনি’র অধিকার বিষয়ে সচেতনতাঃ একটি সুখী দম্পতির বড় বৈশিষ্ট্য হল, তাঁরা পরষ্পরের অধিকারের বিষয়গুলো সম্পর্কে সচেতন থাকেন। এ বিষয়ে আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুল যে সীমারেখা দিয়েছেন, তা যথাযথ ভাবে জ্ঞাত হতে কোরান ও হাদীসে স্বামী ও স্ত্রী’র অধিকার বিষয়ক আয়াত  ও সে সম্পর্কিত হাদীসগুলো অধ্যয়ন ছাড়াও এ সম্পর্কিত ইসলামিক স্কলারদের লেখা গ্রন্থ পাঠ করেন। অর্জিত জ্ঞান বাস্তব ক্ষেত্রে প্রয়োগে সচেষ্টও থাকেন। পরষ্পরের অধিকারের ব্যাপারে অবহেলা করেন না, তা পরিপূর্ণভাবে পূরণ করতে চেষ্টা করেন।

১৩. স্বামী বা স্ত্রী কখনও পরনারী বা পরপুরুষে আসক্ত হন নাঃ পরকীয়া প্রেম বিষয়ে ইসলমি শরিয়ত সব সময় অত্যন্ত কঠোর শাসন অরোপ করে। এটি সমাজে মারাত্মক বিপর্যয় সৃষ্টি করে। শয়তান পুরুষ বা নারীর মধ্যে মোহ সৃষ্টি করে এরুপ পাপাচারে লিপ্ত হতে উদ্বুদ্ধ করে। পরবর্তীতে পারিবারিক ভাঙ্গন, নির্ভরশীল সন্তানদের নিরাপত্তাহীনতা এবং এমন কি মারাত্মক সংঘাত এবং সর্বোপরি খুনাখুনি পর্যন্ত বিষয়টি গড়ায়। এজন্য একটি সুখী দম্পতি বাইরে নানান পেশাগত কাজে নিযুক্ত থাকলেও তারা পারষ্পরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে সব সময় বিশ্বস্তই থাকেন। শয়তান তাদের কোনভাবেই পরকীয়ার মত মহাপাপে উদ্বুদ্ধ করতে পারে না। তারা পরপুরুষ বা পরনারীর ক্ষেত্রে সব সময় নিজেদের দৃষ্টিকে সংয়যতই রাখেন।

১৪. নিজেদের ইসলামি তথা সৃজনশীল জ্ঞানার্জনে ব্যাপৃত রাখতে পরষ্পরকে সাহায্য করাঃ নিজে ইসলামি শিক্ষা  লাভে ব্যাপৃত থাকেন এবং পার্টনারকেও তা শিখতে উদ্বুদ্ধ ও সহযোগিতা করেন। নিজে আল্লাহর হুকুম আহকাম জানতে পড়েন এবং  শিখেন এবং নিজের স্ত্রী বা স্বামীকেও সে জ্ঞান লাভে উদ্বুদ্ধ ও উৎসাহ প্রদান করেন।   দু’জনে মিলে নামাজ আদায়, কুরআন তেলাওয়াতসহ ইসলামকে পালনের চেষ্টা করেন।  এ ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, এগুলো পরিবারের সন্তানরা খুব ভাল ভাবে অনুসরণ ও অনুকরণে তৎপর হবে। উপদেশ প্রদানের চেয়ে উদাহরণ অনেক ভাল ও অধিক কার্যকর, সে তো সকলেরই জানা।

১৫. দুঃসময়ে পাশে থাকাঃ জীবনসঙ্গীনি বা জীবনসঙ্গী কোন কারণে যদি কখনও খারাপ সময়ের মধ্যে পড়ে, বা কোন হতাশায় মুষড়ে পড়ে, তখন তাকে আন্তরিকতা ও হৃদ্যতাপূর্ণ ভাবে সর্বাত্মক সহযোগিতা দিয়ে তা কাটিয়ে উঠতে সহযোগিতা করা দরকার।  এমন একটা দুঃসময়ে তিনি যদি শক্ত অবলম্বন হয়ে সঙ্গী বা সঙ্গীনির পাশে থাকেন, তাহলে সে দম্পতি পরষ্পর পরষ্পরের সম্পর্ক আরও অধিক আস্থা ও বিশ্বাস সহকারে দৃঢ় ভাবে হৃদয়ের খুব গহীনে প্রোথিত হবে। পার্টনার কারও  কাছ থেকে আঘাতপ্রাপ্ত হলে অপরজন তা প্রতিহত করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করবেন, এমন কি প্রাণের বিনিময়েও। এমন সম্পর্ক কখনও ভঙ্গুর হয় না। এমন সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে কোন চড়াই উৎরাই পেরুতে হয় না।

১৬. সংযত থাকাঃ  যদি তার স্ত্রী বা স্বামী কখনো তাকে কষ্ট বা আঘাত দিয়ে ফেলে, এক্ষেত্রে অপর পক্ষ নিজেকে সংযত রাখবে।  তিনি নিজেকে শান্ত রাখবেন। অপর পক্ষও যদি দ্বিগুণ গতিতে ক্ষ্যাপে যান, তাহলে কোন বিপর্যয় দেখা দেওয়া অস্বাভাবিক নয়। এক্ষেত্রে অত্যন্ত ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার পরিচয় দিতে হবে। বুঝে নিতে হবে, অপরপক্ষ নিশ্চয়ই তাকে ইচ্ছাকৃতভাবে কষ্ট দিতে চান নি, অসতর্কতায় এমনটি হয়ে গেছে।

১৭. ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ভুল এড়ি েচলুনঃ জীবনসঙ্গিনীর বা সঙগীর ছোট ছোট ভুলগুলো  এড়িয়ে চলুন। স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক মধুর হবেই।  পরষ্পর পরষ্পরের ভাল কাজগুলোকে উৎসাহিত করেন। তার প্রজ্ঞা, মেধা ও পরিশ্রমের কাজগুলোর ব্যাপারে প্রশংসা করতে একটুও কুণ্ঠা বোধ করবেন না। ভাল কাজ হলে বলুনঃ মা শা আল্লাহ ।  আপনার কোন কাজ সঙ্গী বা সঙ্গীনি করে দিলে বলুনঃ জাজাকাল্লাহু খায়রান। কোন ভুল ত্রুটি হয়ে গেলে বিনয় ও আন্তরিকতার সাথে সংশোধনের চেষ্টা করুন। কোন ভাবেই তিরষ্কার করে নয়।

১৮. পরষ্পরের কাজে সহযোগী হউনঃ  ঘরের কাজগুলোতে স্ত্রীকে সাধ্যমত সাহায্য করুন। স্ত্রীও স্বামীর পেশাগত কাজে সাহায্য করুন। দু’জনই যদি পেশাগত কাজে বাইরে ব্যস্ত থাকেন, সেটি সন্তান প্রতিপালনের জন্য সহায়ক নয়। মনে রাখা দরকার, স্রষ্ট্রা সৃষ্টির বিধান হল, সন্তান প্রতিপালনের মূল দায়িত্ব কিন্তু নারীর। পুরুষের নয়। পুরুষ সন্তান ধারণ করেও না। পুরুষ ও নারীর মিলিত প্রয়াসে আল্লাহর হুকুমে সন্তান সৃষ্টি হয়। এ ক্ষেত্রে সন্তান প্রতিপালনের দায়িত্বে অবেহেলা করে শুধু নিছক অর্থ উপার্জনের জন্য নারী  পেশাগত কাজে যদি বাইরে বের হয়, তাহলে সন্তান দৈহিক ভাবে বৃদ্ধি পাবে হয়ত, কিন্তু নৈতিক ও ধর্মীয় মূল্যেবোধ সে সন্তানের মধ্যে অনুপস্থিতির সম্ভবনাই থাকবে বেশি। সেজন্য সন্তান প্রতিপালনকে স্বামী ও স্ত্রী অধিক গরুত্ব দেবে। তবে রান্না বান্নার জন্য এ কাজটি যে শুধু নারীর জন্যই বরাদ্দ, সেটি সেকেলে একটা ধারণা মনে করে স্বামীর ‍উচিত সময় সুযোগ থাকলে অবশ্যই স্ত্রীর এ কাজে সহযোগিতা করা। এতে সম্পর্ক মধুরই হবে। তবে এক্ষেত্রে স্ত্রী আবার এমনটি ভেবে নিলেও ভুল হবে যে, স্বামী যখন সব সময় আমাকে এ বিষয়ে সহযোগিতা দেয়, আমি এ কাজ সমাধা করতে পারলেও তার জন্য রেখে দেব।  কোন কাজই কারও জন্য অনাহুত ফেলে রাখবেন না।  সব সময় মনে রাখতে হবে, আল্লাহ সবকিছুই অবগত।

১৯. সুসন্তান হিসেবে গড়ে তোলাঃ একটি আদর্শ দম্পতি সব সময়ই সন্তানদের ইসলামিক জ্ঞানে এবং আচরণে  মানবীয় গুনাবলী সম্পন্ন হিসেবে গড়ে তুলতে প্রয়াসী হন।  সন্তানদের সুশিক্ষিত, আদর্শ ও খাঁটি মুসলমান হিসেবে গড়ে তুলতে স্বামী ও স্ত্রী উভয়ে পরামর্শ ভিত্তিক কাজ করেন।  মনে রাখতে হবে, বাবা-মায়ের আচরণ সন্তানদের ‍উপর সরাসরি প্রভাব বিস্তার করে। বাবা মা নিজেরা যদি কোরআন তেলাওত না করেন, দাদীস ও ইসলামি সাহিত্য অধ্যয়ন নিয়মিত ভাবে না করেন, অথচ সন্তানদের তা করার জন্য প্রতিনিয়ত পরামর্শ দেন, সেটি কার্যকর হওয়া অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কঠিন।  তাই বাবা-মায়েরা নিজেরাও সচেতন থাকা দরকার।  নিজেদের ব্যক্তিগত চরিত্র, স্বভাব এবং আচরণ যেন এমন না হয়, যা সন্তানকেও খারাপ মানুষ হিসেবে বেড়ে উঠতে সাহায্য করে। সন্তানদের সামনে বাবা মা কোনভাবেই কোন কটু বাক্য বিনিময় বা ঝগড়া করা সমিচীন নয়।

১০. দু’জন দু’জনার হয়ে ঘুরে আসুনঃ পরষ্পর পরষ্পরকে সময় দিন। পারত পক্ষে  বাইরে যেতে একা নয়, দুজনই যাবেন।  কখনো দু’জনে আলাদা হবেন না। বিশেষ করে স্ত্রী বাইরে যাবার প্রয়োজন হলে সবসময় তাকে সঙ্গ দিতে চেষ্টা করুন। মাঝে-মাঝেই দু’জনে মিলে ঘুরতেও যাবেন। এমন কি নিকটে বা দূরে গিয়ে বেড়িয়ে আসুন।  যেন স্ত্রী ও পুরুষ উভয়ই কিছুটা সময় পরষ্পর পরষ্পরকে নিবিড় ভাবে পেয়ে আনন্দিত ও আহলাদিত হয়।  এটি সম্পর্ককে প্রগাঢ় করবে নিঃসন্দেহে।
১০) শেষ কথাঃ কোন কারণে স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে  মনোমালিন্য হলেও দু’জন আলাদা বিছানা পাতার চিন্তা করবেন না। দিবসের গ্লানি রাতেই মুছে দিন। কোন মনোমালিন্যই পরের দিবসটি পর্যন্ত গড়াতে দেবেন না। ্আর স্বামী ও  স্ত্রীর মনোমালিন্য বা ঝগড়ার কথা ভুলেও তৃতীয় পক্ষের কাছে দেবেন না। বিশেষ করে পরপুরুষ বা পর নারীর কাছ কখনও বলতে যাবেন না। শয়তান সেখানে সুযোগ খুঁজে দুজনের এতদিনের মধুর সম্পর্কটা নষ্ট করে দিতে কাছে ঘনিয়ে আসবে। পারত পক্ষে বাবা মায়ের কাছেও নয়। তা কখনও বলবেন,ম যথকন দেখবেন, এটা সাধ্যের বাইরে হয়ে যাচ্ছে। তখন উপায় নেই গোলাম হোসেনের মত অবস্থা। তবে এটাও মনে রাখবেন, তখন কিন্তু আপনাদের সম্পর্কে পারদ একদমই নিচে নেমে এসেছে মনে করতে হবে।

[শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল উসাইমিন রহ. এর লেখা ফতোওয়া আরকানুল ইসলামসহ বেশ কিছু বিদগ্ধ ইসলমিক স্কলারের  গ্রন্থাবলী দীর্ঘদিন অধ্যয়ন শেষে লেখাটি প্রস্তুত। ]

[ড. ওমর ফারুক।। প্রথিত যশা লেখক, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, পর্যটক এবং সামাজিক গবেষক। ইংরেজি সাপ্তাহিক ঢাকা পোস্ট এডিটর, অনলাইন পোর্টাল dailydhakapost.com এর চিফ এডিটর, নিহাল পাবলিকেশনের স্বত্বাধিকারী। এ পর্যন্ত বাংলা ও ইৗরেজি ভাষায় তাঁর লেখা গ্রন্থ সংখ্যা প্রায় ত্রিশটি। ]

 

Leave a Reply

You must be logged in to post a comment.

Editor in Chief: Dr. Omar Faruque

Editor: Dr. Morjina Akhter

All contact: 400E Mosholu Parkway South Apt # A23,The Bronx, New York 10458, USA

Mob. 001.347.459.8516
E-mail: dhakapost91@gmail.com