ভারত-চীন ‘প্রভাব বিস্তারের লড়াইয়ে’ সন্ধিক্ষণে বাংলাদেশ

April 2, 2018 10:21 pm0 commentsViews: 90

এশিয়ায় চীনের উত্থানের অর্থ এই অঞ্চল ও এর বাইরে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন অর্থ প্রকাশ করছে। চীনের প্রতিদ্বন্দ্বীদের কাছে এর উত্থানের মানে হলো ‘চীনা বৈশিষ্ট্য’-সংবলিত রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রাধান্য। আর পাকিস্তানের মতো চীনা সমর্থক দেশগুলোর কাছে এর উত্থানের অর্থ হলো যুক্তরাষ্ট্র ও এর পাশ্চাত্য সাহায্য ও বিনিয়োগের প্রাথমিক বিকল্প এবং তাদের নির্ভরতা হ্রাস ও তাদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও কৌশলগত সম্পর্ক বৈচিত্র্যকরণের সম্ভাব্য পথ।

অর্থাৎ প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলো চীনের উত্থানকে লক্ষণীয় মাত্রায় ভিন্নভাবে সাড়া দিচ্ছে। ভারতের তথাকথিত ‘প্রতিবেশী প্রথম’ নীতি আসলে চীনা উত্থানেরই প্রতিক্রিয়া। এই নীতির মূলকথা হচ্ছে চীনের বিকল্প হিসেবে ভারত তোষণের মার্কিন নীতির সাথে সম্পর্কযুক্ত করা।

‘প্রতিবেশী প্রথম’ নীতির কাঠামোর আওতায় ভারতের লক্ষ্য হলো তার প্রতিবেশী দেশগুলোতে, বিশেষ করে যেসব দেশে চীন ইতোমধ্যেই প্রবেশ করেছে, তার নিজের সাহায্য ও উন্নয়ন (ঋণ) বাড়ানো এবং এর মাধ্যমে এসব দেশকে তার নিজস্ব প্রভাব-বলয়ে নিয়ে আসা।

চীন ও পাকিস্তান যদিও ভারতের নিকট প্রতিবেশী, কিন্তু তবুও তারা এই নীতির আওতায় পড়েনি। তবে বাংলাদেশের মতো অপেক্ষাকৃত ছোট দেশগুলো তাদের দুই বৃহৎ প্রতিবেশ ভারত ও চীনের মধ্যকার এই ক্রমবর্ধমান ভূ-কৌশলগত ও ভূ-অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতার মধ্যে পড়ে গেছে।

সম্প্রতি ভারতীয় লোকসভার পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির ইস্যু করা সাম্প্রতিক একটি প্রতিবেদনে চীনা বিনিয়োগকে ভারতের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবেই অভিহিত করা হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে: ‘চীন আমাদের প্রতিবেশী দেশে অবকাঠামো প্রকল্পে প্রবলভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের আঙিনায় ক্রমবর্ধমান চীনা উপস্থিতি প্রতিরোধের কৌশলগত পরিকল্পনা গ্রহণ করে আমাদের সরকার তার উন্নয়ন অংশীদারিত্ব এগিয়ে নিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।’

এ প্রেক্ষাপটে ‘লাইন অব ক্রেডিটস’-এর আকারে ভারতীয় ঋণ ও বিনিয়োগ অনেকগুণে বেড়েছে।

বাংলাদেশ ও অনত্র ভারত সম্ভবত ‘চীনা নীতির প্রবাহ’-সম্পর্কিত তাদের বিশ্বাসকে পুঁজি করে এগুতে চাচ্ছে। ফলে বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগের বিষয়টিই ওঠে এসেছে ওই প্রতিবেদনে।

তাতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আমরা জানতে পেরেছি, দুই বছর প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সফরের সময় তিনি ২৩ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু এখন জানা গেছে, এসব ঋণের একটি বড় অংশই আসলে বাণিজ্যিক ঋণ এবং এর সুদের হার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক সুদের হারের সাথে তুলনীয়। তাছাড়া তাদেরকে আন্তর্জাতিক দরপত্রের বদলে চীনা সরঞ্জাম কেনার জন্য জোর করা হয়েছে। এখানে নতুন করে কিছু ভাবার অবকাশ সৃষ্টি হয়েছে।

এই কথিত নতুন করে চিন্তা-ভাবনাই ভারতকে তার সুবিধাজনক অবস্থানকে কাজে লাগানোর দিকে চালিত করেছে, ভারতীয় মূলধন এসব দেশে প্রবাহিত করার সুযোগ করে দিয়েছে।

‘বাংলাদেশকে সহায়তার’ আওতায় উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে ১৭৫ কোটি রুপি বরাদ্দ করেছে ভারত। চীনা বিনিয়োগের তুলনায় এই পরিমাণ বেশ কম মনে হলেও এবং বাংলাদেশের সাথে চুক্তির পরিমাণ মাত্র ১৩.৮৭ বিলিয়ন ডলার হলেও ভারত অব্যাহতভাবে বলে যাচ্ছে, চীনা প্রকল্পগুলো ক্ষতির আশঙ্কাযুক্ত। এর মাধ্যমে তারা ওইসব দেশে চীনবিরোধী উপাদানগুলোকে সক্রিয় করে তুলছে।

বাংলাদেশকে ২৫টি প্রকল্পে চীন ২৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ প্রদান করার পরিকল্পনা করছে। এসবের মধ্যে রয়েছে একটি ১,৩২০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এছাড়া সে একটি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করতে চায়। প্রতিরক্ষা সম্পর্ক জোরদার করার জন্য সামরিক বাহিনীর মধ্যেও সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করতে আগ্রহী।

ভারতীয় পার্লামেন্টারি কমিটির প্রতিবেদনে তাদের ঋণে বাংলাদেশে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের চিত্র তুলে ধরা হয়। এতে আখাউড়া-আগরতলা রেল লাইন প্রকল্প সম্পর্কে বলা হয়: ভারতীয় এলাকায় ৯৩ ভাগ ও বাংলাদেশ এলাকার ৫০ ভাগ জমি নিয়ন্ত্রণ নেওয়া হয়েছে। এ কাজ এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতায় প্রকল্পটি দ্রুত এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

এই প্রতিবেদনে সাহায্য ও বিনিয়োগের মাধ্যমে ভারতীয় প্রভাব বাড়ানোর কথায় স্পষ্ট হয়ে গেছে, বাংলাদেশের মতো ছোট ছোট এশিয়ার দেশ এখন কীভাবে এই ভূ-রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের মধ্যে পড়ে গেছে। বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর এই আঞ্চলিক কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বিতার কবলে পড়তে আগ্রহী হওয়ার কথা নয়।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্র স্পষ্টভাবেই চাচ্ছে, চীনের বিকল্প হিসেবে ভারত আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করুক। এই ধারণাটি প্রণয়ন করেছেন বিদায়ী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন। তিনি ২০১৭ সালের অক্টোবরে মার্কিন প্রভাব হ্রাস পাওয়ায় যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে, তা পূরণ করতে চীনতে বাধা দিতে ‘এশিয়ার বৃহত্তর নিরাপত্তা গ্রহণ করার জন্য’ ভারতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন।

ফলে অন্যান্য আঞ্চলিক দেশের মতো বাংলাদেশ যখন নিজস্ব ক্রমবর্ধমান অবকাঠামো প্রয়োজনীয়তা পূরণ করার জন্য বহুজাতিক বিনিয়োগকে স্বাগত জানাচ্ছে আগ্রহী, তখন তাদের সামনে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে কিভাবে তারা অন্যকে ‘নাখোশ’ না করার ব্যবস্থা করবে। ভারতের জন্য বাংলাদেশ কেবল ক্রমবর্ধমান চীনা অর্থনৈতিক উপস্থিতি প্রতিরোধের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং চীনের মিত্র পাকিস্তানকে নিঃসঙ্গ করার তার নীতি সফল করার জন্যও দরকার।

আফগানিস্তানের মতো বাংলাদেশও মনে হচ্ছে ভারতীয় উচ্চাভিলাষের সাথে সম্পর্কিত হয়ে পড়েছে। ফলে সূক্ষ্ম ভারসাম্যরেখার ওপর দিয়ে হাঁটার সতর্ক নীতি গ্রহণ করা প্রয়োজন বাংলাদেশের

Leave a Reply

You must be logged in to post a comment.

Editor in Chief: Dr. Omar Faruque

Editor: Dr. Morjina Akhter

All contact: 400E Mosholu Parkway South Apt # A23,The Bronx, New York 10458, USA

Mob. 001.347.459.8516
E-mail: dhakapost91@gmail.com