ভারতে নাগরিকত্ব বিল পাশ। বেঁচে গেল বাংলাদেশ।।
ভারতে নাগরিকত্ব বিল পাশ
বেঁচে গেল বাংলাদেশ।।
ভারতে নাগরিকত্ব বিল পাশের সাথে বাংলাদেশের বেঁচে যাওয়ার সম্পর্ক কি? আলোচনা করব। এই আলোচনা করতে হলে অতীতে ফিরে যেতে হবে। স্বাধীনতা যুদ্ধ হলো। ভারত আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে সহায়াতা করলো। বাংলাদেশ স্বাধীন হলো। পাকিস্তান ভাঙ্গলো।
সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে ভারতীয় সেনাবাহিনী অবাধ লুটপাট চালালো। হিসেব মতে ঐসময় ভারতীয় সেনাবাহিনী বাংলাদেশ থেকে প্রায় ২৭০০০ হাজার কোটি টাকার সম্পদ লুট করছিলো। এর উদ্যেশ্য ছিল সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশকে হীনবল করে ভারত নির্ভর করা।
ভারতীয় সেনাবাহিনী বাংলাদেশে যেঁকে বসতে পারলোনা। বাংলাদেশের সেনানিবাসগুলি ভারতের সেনানিবাসে রূপান্তর করতে পারলোনা। কারণ বাংলাদেশর ছিল সমর অভিজ্ঞ ইস্পাতকঠিন ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট এবং প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত মুক্তিযুদ্ধারা। সেক্টর কমান্ডার মেজর জলিল ভারতীয় সেনাবাহিনীর লুটপাটের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালেন। গুলি বিনিময় হলো ভারতীয় লুটেরা বাহিনীর সাথে।
বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে দেশে ফিরলেন। দিল্লি হয়ে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরবার পথে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে অনুরোধ করলেন স্বাধীন বাংলাদেশ থেকে ভারতীয় সেনাবাহিনী ফিরিয়ে নিতে। অবস্থা বেগতিক দেখে ভারত ১৭ মার্চ ১৯৭২ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ থেকে ভারতীয় সেনাবাহিনী ফিরিয়ে নিলো।
আমরা ভাবলাম বন্ধু দেশ ভারত আমাদের উন্নয়নে আমাদের পাশে থাকবে। আমরা কৃতজ্ঞায় গদগদ হলাম। এমন বিশেষণ নাই যা আমরা ভারতের প্রতি কৃতজ্ঞতায় অবনত হয়ে প্রয়োগ করলাম না। আমরা কবি গুরু রবীন্দ্রনাথের আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি গানটিকে আমাদের জাতীয় সঙ্গীতের মর্যাদা দিলাম। এর পরে সব ইতিহাস।
সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দিল ভারত। শুরু হলো বিএসএফ এর সীমান্তে বাংলাদেশী হত্যা। বাংলাদেশ পরিণত হলো ভারতীয় পণ্যের বাজারে। তার পরেও তিতাস নদীর বুকে সড়ক নির্মাণ করে ভারতকে আমরা করিডোর দিলাম। ভারত বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সৃষ্টি করলো ভারতীয় দালাল।
বাংলাদেশকে হীনবল করতে ভারত ভারতীয় বাংলাদেশী দালালদের দিয়ে বিভাজনের কুটচাল চালতে শুরু করলো বাংলাদেশের জনগণের বিপক্ষে। আমরা দলে দলে , জনে জনে বিভাজিত হলাম চেতনা আর রাজনীতির নামে। উদ্যেশ্য বাংলাদেশকে ছলেবলে করায়ত্ত্ব করে অবাধে শোষণ করা।
এরি মধ্যে সংঘটিত হলো পদুয়া আর রৌমারীর সীমান্ত যুদ্ধ। ভারত বুঝতে পারলো বাংলাদেশকে খোঁচানো ঠিক হবেনা। এই যুদ্ধের ফলশ্রুতিতে তিনবিঘা করিডোরের নিয়ন্ত্রণ তুলে নিল ভারত। ছিটমহল বিনিময় করে সীমান্ত সমস্যার সমাধান করলো ভারত।
ভারতের পরিকল্পনায় আমরা পরিবর্তন লক্ষ্য করলাম। উন্নয়নের প্রায় সব সূচকে এগিয়ে থাকা বাংলাদেশকে তোষণের পরিকল্পনা করলো ভারত। আজকে বাংলাদেশে ১২ লাখের মতো ভারতীয় বৈধ কিংবা অবৈধভাবে ব্যাবসা বাণিজ্য ও চাকরি করে বছরে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার ভারতে নিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে সামনে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রথম স্থানে থেকে বিশ্বে জানান দিচ্ছে তাদের সরব এবং সবল উপস্থিতি। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ নৌবাহিনী চীন থেকে ২টি সাবমেরিন সংগ্ৰহ করেছে যা ভারতের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। শক্তিসামর্থে বাংলাদেশ নৌবাহিনী এখন পাকিস্তান নৌবাহিনীর সমপর্যায়ে পৌচেছে।
অখন্ড ভারতের স্বপ্নে বিভোর ভারতের রাজনীতিকদের মোহভঙ্গের চরম বহিঃপ্রকাশ ঘটলো এই নাগরিকত্ব বিল পাস করার মধ্য দিয়ে। আজ তারা হতাশ হয়ে বুঝতে পারছে অখন্ড ভারতের চিন্তা দুরে থাক বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানকে সামান্য প্রভাবিত করার ক্ষমতাও আজ ভারতের নাই।
আসামে এন আর সি করার পরে বিজেপি’র অবস্থা এখন না ঘরকা না ঘাটকা। সামনে অবস্থা এমন আসছে যখন ভারতের জন্য যুদ্ধ করার সৈনিক পাওয়া যাবে না।
এই নাগরিকত্ব বিল পাস করার মাধ্যমে বিজেপি বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানকে সংখ্যালঘু নির্যাতনকারী শত্রু দেশ ঘোষণা করে এখন হিন্দু ভারতকে রক্ষা করা শেষ চেষ্টা করছে। এতে বাংলাদেশের নগদ লাভ হলো ভবিষ্যত বাংলাদেশের রাজনৈতিক, কুটনৈতিক এবং সমর নীতির চলার পথের দিকনির্দেশনা ও নীতিমালা এর দ্বারা নির্ধারিত হলো। আর এই গন্তব্যস্থল হলো ভারতের শত্রু দেশের সাথে বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ ইস্পাতদৃঢ় ঐক্য।
জেনারেল আ ল ম ফজলুর রহমান
প্রাক্তন মহা পরিচালক বিডিআর।