ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট শুভঙ্কর সাহা যেভাবে ধ্বংস করছেন বাংলাদেশ ব্যাংক
একটি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংককে অনেকটা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের মতো ‘পবিত্র’ হিসেবে গুরুত্ব দেয়া হয়। ব্যাংকিং ব্যবস্থা চলে বিশ্বাস আর আস্থার ওপর। সেই আস্থা আর বিশ্বাসের মুল খুঁটি হচ্ছে প্রতিটি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যখন কোনো দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ছয়নয় দেখা দেয় তখন পুরো অর্থব্যবস্থা ধ্বংস হওয়ার শংকায় থাকে।
বাংলাদেশের অর্থব্যবস্থাও ইতোমধ্যে ধ্বংসের পথে এগোচ্ছে। প্রতিটি ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা সরকারি লোকজন লুট করে বিদেশে পাঠাচ্ছে। এসব প্রতিদিনের খবরে আমরা দেখতে পাই। সোনালী ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, ফারমার্স ব্যাংক কোনটি বাকি রইলো আর!
সর্বশেষ অবলম্বন ছিলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সেটিও রিজার্ভ কেলেংকারিতে বিতর্কিত হতে শুরু করে। এখন সেটির অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে চুরিও হচ্ছে নিয়মিত। তাও আবার ভারতীয় এক ব্যাংকের কর্মকর্তা চুরি করে ক্যামেরায় ধরা পড়েছেন। অবশ্য ধরা পড়লেও বাংলাদেশ ব্যাংকে থাকা তার গুরুর মাধ্যমে দ্রুত ছাড়াও পেয়ে গেছেন।
ভারতীয় এই চোরের সেই গুরুই হচ্ছেন শুভঙ্কর সাহা। যিনি দীর্ঘদিন ধরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন। অভিযোগ আছে, ইসলামবিদ্বেষী এই কর্মকর্তা ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা RAW এর পেইড এজেন্ট। বছর কয়েক আগে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরির পরীক্ষা দেয়া একাধিক প্রার্থী। তারা জানিয়েছিলেন, ভাইভা বোর্ডে এই শুভঙ্কর সাহা এক হিজাবী পরীক্ষার্থীকে কটুক্তি করে কথা বলেছিলেন। এবং মাদ্রাসা থেকে দাখিল আলিম পাশ করা কয়েকজন প্রার্থীকে ভাইভা রুম থেকে বের করে দিয়েছিলেন।
শুভঙ্কর সাহার অধীনে এখন বাংলাদেশ ব্যাংকের গচ্ছিত রাখা সোনার হিসাবে গরমিল ধরা পড়েছে। প্রথম আলো আজ মঙ্গলবার এ নিয়ে অনুসন্ধানী রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। এছাড়া শুভঙ্করের অপকর্ম নিয়ে প্রতিবেদন করেছে দৈনিক সমকালও। নিচের সমকালের প্রতিবেদনটি তুলে ধরা হল–
//
ব্যাংক থেকে টাকা চুরির ঘটনা বাংলাদেশে নতুন নয়। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা চুরি হয়েছে, এমন ঘটনা নিকটতম সময়ে শোনা যায়নি। গত রোববার এমনই চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে বাংলাদেশ ব্যাংকে। ভল্ট থেকে ৫ লাখ টাকা চুরি করে নিরাপদে বেরিয়েও যায় ওই ব্যক্তি। হাতেনাতে ধরা না পড়লেও শেষ পর্যন্ত অবশ্য চোর পার পায়নি। সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে তাকে শনাক্ত করা হয়েছে।
ভল্ট থেকে টাকা নিয়ে বেরিয়ে যাওয়া ওই ব্যক্তি স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার কর্মকর্তা দীপক চন্দ্র দাশ। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনা ঘটাতে তিনি সময় নেন মাত্র ৪৬ সেকেন্ড। রোববার বিকেল ৫টা ৭ মিনিট ১৮ সেকেন্ড থেকে ৫টা ৮ মিনিট ৪ সেকেন্ডের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার টাকা নিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিসের ভল্টে আসা দীপক ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ৫ লাখ টাকার একটি বান্ডিল হাতিয়ে নেন। তিনি চুপিসারে তা বাইরে রেখে আবার ভেতরে ঢোকেন। টাকা চুরির বিষয়টি প্রথমে তিনি অস্বীকার করলেও ভিডিও ফুটেজ দেখানোর পর স্বীকার করেন এবং চুরি করে নেওয়া ৫ লাখ টাকা ফেরত দেন। তার ব্যাংক থেকে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে_ এমন লিখিত দেওয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাকে ছেড়ে দেয়। তবে এমন ঘটনা ধরার পরও পুলিশে সোপর্দ না করে ছেড়ে দেওয়ার ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহার মধ্যস্থতায় দীপক চন্দ্র দাশকে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে জানা গেছে। জানতে চাইলে শুভঙ্কর সাহা প্রথমে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে কি-না উল্টো এ প্রতিবেদকের কাছে জানতে চান। কিছুক্ষণের মধ্যে তিনি নিজেই আবার ফোন করে বলেন, ‘আমি খোঁজ নিয়ে জেনেছি সাময়িকভাবে একটি বান্ডিল পাওয়া যাচ্ছিল না, পরে পাওয়া গেছে। যে এটি সরিয়েছিল তাকে আটক করা হয়েছিল। পরে ব্যাংক তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেবে_ এমন লিখিত নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে সোমবার ব্যাংক থেকে জানানো হয়েছে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের সিসিটিভিতে ধারণ করা ভিডিও ফুটেজ সমকালের হাতে আছে। ভিডিও ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, সাদা শার্ট গায়ে এক
ব্যক্তি (ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের প্রতিনিধি) টাকা বুঝে নিচ্ছেন। তার পেছনে থাকা চেয়ারে বসে আছেন আরেকজন সাদা শার্ট গায়ে দেওয়া ব্যক্তি (স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার প্রতিনিধি)। বিকেল ৫টা ৭ মিনিট ১৮ সেকেন্ডে বসা ব্যক্তি উঠে দাঁড়িয়ে প্যান্টের পকেটে হাত ঢুকিয়ে টাকা বুঝে নেওয়া ব্যক্তির পেছনে গিয়ে দাঁড়ান। দু’এক পা এদিক-সেদিক হাঁটাহাঁটির পর ৫টা ৭ মিনিট ৩২ সেকেন্ডে সারি-সারি রাখা টাকার বান্ডিল থেকে একটি (পাঁচশ’ টাকার এক হাজার পিস নোট) নিয়ে আবার বসে পড়েন। কিছুক্ষণের মধ্যে একটি কালো ব্যাগে টাকা ঢুকিয়ে ঠিক ৫টা ৮ মিনিট ৪ সেকেন্ডে তিনি ভল্টের ভেতর থেকে বেরিয়ে যান।
গত বছর বিভিন্ন ব্যাংকের ভল্ট থেকে টাকা চুরির ঘটনা দেশজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। গত বছরের জানুয়ারিতে সুড়ঙ্গ কেটে সোনালী ব্যাংকের কিশোরগঞ্জের রথখোলা শাখা থেকে ১৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা টাকা চুরি হয়। একই বছরের মার্চে সোনালী ব্যাংকের বগুড়ার আদমদীঘি শাখা থেকে চুরি হয় ৩২ লাখ টাকা। গত বছরের সেপ্টেম্বরে জনতা ব্যাংকের পুরান ঢাকার ঠাটারী বাজার শাখা থেকে এক কোটি টাকা চুরির সময় হাতেনাতে ধরা পড়ে চোর।
চলতি বছরের এপ্রিলে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের আশুলিয়া শাখায় দিনদুপুরে ডাকাতির সময় আটজন নিহত হন। এর আগে বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের ভল্ট থেকে টাকা চুরির খবর শোনা গেলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্ট থেকে টাকা চুরির কথা শোনা যায়নি। সূত্রঃ বিডিটুডে