ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ‘বাংলাদেশে একদলীয় শাসন ও বিচার ব্যবস্থা ধ্বংসকরণ’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত।
লন্ডন থেকে নিজস্ব প্রতিনিধিঃ
গত ৭ মার্চ, বুধবার, ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ‘বাংলাদেশে একদলীয় শাসন ব্যবস্থার উত্থান ও বিচার ব্যবস্থা ধ্বংসকরণ’ শীর্ষক এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এদিন বিকেল ৫টায়, বাংলাদেশ সময় রাত ১০টায় সেমিনারটি ব্রিটিশ পার্লামেন্টের ‘মার্গারেট থেচার’ সেমিনার হলে অনুষ্ঠিত হয়। ব্রিটেনের শ্যাডো হেল্থ মিনিস্টার জুলি কুপার এমপি- এর আমন্ত্রণে মূলতঃ বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু র ওপর এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। ‘ব্রিটিশ বাংলাদেশি কমিউনিটি এলায়েন্স’ (বিবিসিএ)- এর আয়োজনে উক্ত সেমিনারে লেবার দলীয় এমপি জুলি কুপার, ব্রিটিশ পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ ‘হাউস অফ লর্ডস’ এর বাংলাদেশ বিষয়ক সংসদীয় কমিটির কোষাধ্যক্ষ লর্ড নাজির আহমেদসহ কনজারভেটিভ ও লেবার দলীয় বেশ কয়েকজন এমপি ছাড়াও যুক্তরাজ্য প্রবাসী বাংলাদেশি শিক্ষাবিদ, রাজনীতিবিদ, আইনজীবী, সাংবাদিক ও বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। ‘ব্রিটিশ বাংলাদেশী কমিউনিটি এলায়েন্স’ এর চেয়ারম্যান আফজাল সৈয়দ আলীর সভাপতিত্বে টানা দুইঘণ্টা ব্যাপী এ সেমিনারে শ্যাডো হেল্থ মিনিস্টার জুলি কুপার এমপি বলেন, “আজ বাংলাদেশ সম্পর্কে তিনটি বিষয় আমার কাছে স্পষ্ট হয়েছেঃ ১) বর্তমানে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের লেশমাত্র অবশিষ্ট নেই, ২) সাধারণ মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল বিচার বিভাগ স্বাধীন নয়, এবং ৩) বাংলাদেশে স্বাধীন ভাবে মত প্রকাশের কোন সুযোগ নেই”। সংসদে যখন বাংলাদেশ সম্পর্কে আলোচনা হবে, তখন আমি অবশ্যই এ বিষয়গুলো তুলে ধরব বলেও তিনি তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেন।
ব্রিটিশ পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ ‘হাউস অফ লর্ডস’ এর প্রথম মুসলিম সদস্য এবং বাংলাদেশ বিষয়ক লর্ডস কমিটির কোষাধ্যক্ষ লর্ড নাজির আহমেদ বলেন, “আমার কমিটির পরবর্তী সভায় আমি অবশ্যই বাংলাদেশে বিচার বিভাগের উপর সরকারি হস্তক্ষেপের সর্বশেষ দৃষ্টান্তগুলো নিয়ে আলোচনা করব। তবে আপনারা যারা যুক্তরাজ্যে বসবাসরত বাংলাদেশি আছেন, তাদেরও অনেক দায়িত্ব আছে। আপনারা এখানে ক্রমাগত তীব্র প্রতিবাদ গড়ে তুলতে পারেন, যেটা ঢাকাসহ বাংলাদেশের কোন এলাকা থেকে বর্তমানে সম্ভব নয়।”
সেমিনারে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের কনজারভেটিভ ও লেবার দলীয় অন্যান্য সংসদ সদস্যরাও তাদের বক্তব্যে যুক্তরাজ্য প্রবাসী বাংলাদেশিদের উদ্বেগের সাথে একাত্বতা প্রকাশ করেন এবং সংসদীয় আলোচনায় তা তুলে ধরার প্রতিশ্রুতি দেন।
এর আগে সেমিনারে আয়োজক সংগঠনের সভাপতি প্রথমে সংক্ষেপে বাংলাদেশে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম ও বিচার বিভাগের উপর সরকারী হস্তক্ষেপের বিভিন্ন নজির তুলে ধরেন। এরপর যুক্তরাজ্য প্রবাসী বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধিরা তাদের আলোচনায় বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন।
ডেমোক্রেটিক পলিসি ফোরাম, বাংলাদেশ-এর চেয়ারম্যান ও ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের রিসার্স ফেলো ডঃ মোঃ রুহুল আমিন খন্দকার বলেন, “সদ্য সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার অপসারণ প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অতি সম্প্রতি যে উপায়ে কারাবন্দী করা হল, তা বিচার বিভাগের উপর সরকারি নগ্ন হস্তক্ষেপের সুস্পষ্ট প্রমাণ।” এছাড়া তিনি তাঁর উপর বিচার বিভাগীয় অবিচারের দৃষ্টান্তও তুলে ধরেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ডঃ খলিফা মালিক বলেন, বর্তমান সরকার পশ্চিমা বিশ্বকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে ভারত ও রাশিয়ান বলয়ের দিকে ব্যাপকভাবে ঝুকে পড়েছে। কিন্তু এতেও তাদের শেষ রক্ষা হবে না।
সেমিনারে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন যুক্তরাজ্যের রোহ্যাম্পটন ইউনিভার্সিটির প্রভাষক ডঃ আলিয়ার হোসেন, ব্যারিস্টার গিয়াস উদ্দীন রিমন, ব্যারিস্টার তারিক বিন আজিজ, সাবেক ছাত্রদল নেতা নসরুল্লাহ খান জুনায়েদ, ব্যারিস্টার মেহনাজ মান্নান, শের-এ-বাংলা এ,কে, ফজলুল হকের দৌহিত্র মামনুন মোর্শেদসহ আয়োজক সংস্থা বিবিসিএ নেতৃবৃন্দ।