বিশ্ব পুরুষ দিবসে আমার যত ভাবনা।
ড. ওমর ফারুক। নিউইয়র্ক থেকে। স্থানীয় সময়ঃ ১৯ নভেম্বর রাত আটটা।
কোন ছেলে কোন মেয়েকে মারধর করেছে, কিংবা আরও কোন সহিংসতা চালিয়েছে। ফেসবুক বা ব্লগে সে রকম পোস্ট দেখলে শুধু নারীরা নয়, পুরুষেরা প্রতিবাদের বন্যা বইয়ে দেয়। কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। আহা রে, কি রকম অত্যাচারই না করেছে। আমি নিজেও নারীর ওপর সহিংসতা নিয়ে কম লিখি না। কিন্তু কোন পুরুষকে কোন মেয়ে মানুষ মেরেছে, তা দেখে নারী তো বাহবা দেয়ই, পুরুষরাও দেয়। অথচ নারীর ওপর কেন পুরুষ অমন সহিংস আচরণ করেছে, সে নিয়ে নিরপেক্ষ অনুসন্ধানের চিন্তা কেউই করে না। বিপরীত পক্ষে, পুরুষের ওপর নারীর সহিংস আচরণ অহরহ ঘটছে, সে নিয়ে নারী তো নয়, খোদ স্বজাতি পুরুষরাই কোন কারণ অনুসন্ধান না করেই সে নারীকে বাহবা দিতে থাকে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, পুরুষের নারীর প্রতি এই একপেশে প্রবণতা বস্তুতপক্ষে অনেক ক্ষেত্রেই নারীর কোমল একটু উষ্ণ অনুভূতি পাওয়ার খায়েশই অধিক কাজ করে। একটু নারীর পক্ষ হয়ে যদি আহা রে, উহু রে, ভাব প্রকাশ করে, তখন নারী তাকে মনে করবে, এই পুরুষ তো আমাদের প্রতি কত কোমল! নারী তখন ভাবে, আমিও তার জন্য হয়ে যাই মোহনীয়।
বস্তুতপক্ষে, আজকের যুগে শুধু নারীর প্রতি সহিংসতার ধারণাটি বেশ একটি আদিম বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়েছে। এখন নারীর কর্তৃত্ব সবখানেই। রাষ্ট্রযন্ত্র যেমনি নারীর পক্ষে, নরনারী নির্বিশেষে সকল মানুষের প্রবৃত্তি নারীর পক্ষেই কাজ করে। এরিমধ্যে নারীদের ওপর সহিংসতা হচ্ছে না, তা আমি বলতে চােই না। তা সংঘটিত তো হচ্ছেই, বরং এখনও দেশে দেশে পুরুষ নির্যাতনের চেয়ে নারী নির্যাতনের হার অনেক গুণ বেশি।আমি যে কথা বলতে চাই, তাহল পুরুষ নির্যাতনের ঘটনার ব্যপ্তি ও অনুপাত আগের চেয়ে এখন অনেক বেশি। সাবেক মূখ্য সচিব ড. কামাল সিদ্দিকীর অধীনে ‘সোসিও ইকোনমিক প্রফাইল অব ঢাকা সিটি’ প্রকল্পে ও পরবর্তীতে আমার এমফিল থিসিস ‘আরবান ফ্যামিলি প্যাটার্ন ইন বাংলাদেশ’ প্রকল্পে কাজ করতে গিয়ে এ বিষয়টি আমি ভাল ভাবে উপলব্দি করি।
আমি পুরুষবাদ বা নারীবাদ এ রকম কোন ধ্যান ধারণাকে সামান্যও প্রশ্রয় দিতে নারাজ। পৃথিবীতে ’বাদ’ যদি থাকতে হয়, তাহলে সেটি হবে মানবতাবাদ।
লম্বা লেখা অনেকই পড়তে চায় না। আমি দীর্ঘায়িত করি না। শেষ কথা হলঃ নারীর ওপর সহিংসতা হোক বা পুরুষের ওপর নারীর সহিংসতা, দুটোকেই নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গিতে বিচার করতে হবে।