বিপদ আসন্ন।। রক্ষাকবচের অন্বেষণে ভারত সফর।

February 21, 2018 6:53 pm0 commentsViews: 23

বৃহৎ প্রতিবেশি দেশের ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) এক চেটিয়া সমর্থন এবার পাবে কি না তা নিয়ে আওয়ামী লীগ সংশয়ে পড়েছে বলে দাবি করেছে বিএনপি। এ দলের নেতাদের ভাষ্যমতে, এ কারণেই আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের বিশাল একটি বহর ভারত সফর করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। তাদের মতে , এর আগের ক্ষমতাসীন দল কংগ্রেসের একক সমর্থনে বিনা ভোটে জোর করে ক্ষমতায় এসে এতদিন ধরে টিকে আছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু বিজেপির সঙ্গে বোঝাপড়ার ঘাটতি রয়েছে। এ জন্য তাদের সংশয় দিনদিন বাড়ছে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করা বিএনপির নেতারা বলছেন, ‘মিথ্যা ও বানোয়াট’ মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বন্দী করার পর থেকে বিজেপ ‘র সমর্থন পাওয়া নিয়ে আওয়ামী লীগের শঙ্কা ও সংশয় ঘনীভূত হচ্ছে। ফলে নিজেদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে এবং দুশ্চিন্তা থেকে রেহাই পেতে ভারত সফরে যেতে মরিয়া হয়ে উঠেছিল ক্ষমতাসীনরা। একই সঙ্গে নেতারা অভিযোগ করছেন, বিএনপিকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে আওয়ামী লীগ ভারতকে যা প্রয়োজন তাই দিতে প্রস্তুত রয়েছে। সেটা দেশের চরম স্বার্থবিরোধী বিরোধী হলেও। ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির আমন্ত্রণে আগামী ১০ থেকে ১৪ মার্চ ভারত সফর করবে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল। ২০ সদস্যের এ দলের নেতৃত্ব দেবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

বিএনপি নেতারা বলেন, আওয়ামী লীগ ভাল করেই জানে, বর্তমান ভারতীয় সরকার একদলীয় নির্বাচনে কাউকে জিতিয়ে দেওয়া কিংবা কারও দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করতে নারাজ। এবার ভারত আওয়ামী লীগের জন্য তেমন একটা কার্যকর ভূমিকা রাখবে না বলে বিএনপির বিশ্বাস। বরঞ্চ বিএনপি ইতোমধ্যে ভারতের আস্থা অর্জন করতে সক্ষমতায় পৌঁছানোর পথে এগিয়ে রয়েছে বলে দাবি করেন নেতারা।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন দায়িত্বশীল নেতা প্রিয়.কমকে বলেন, ‘ভারতের কাছ থেকে ২০১৪ সালের মত নগ্ন সমর্থন পাবে না আওয়ামী লীগ। আর সে উপলব্ধি থেকেই দেশীয় রাজনীতিতে জনবিছিন্ন দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বশীল নেতারা প্রায়ই প্রতিবেশী দেশ ভারতে তাদের মোড়লদের কাছে ছুটে যাচ্ছেন। সেই সফর কখনো গোপনীয়, কখনো বা প্রকাশিত হচ্ছে। মূলত টার্গেট যেনতেন ভাবে ভারতের একক সমর্থন ধরে রাখা। এ জন্যই আওয়ামী লীগ ভারতের সমর্থন নিজেদের অনুকূলে নিতে আপ্রাণ চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।’

ওই নেতা দাবি করেন, ‘ক্ষমতার শেষ সময়ে বৈরী রাজনৈতিক আবহাওয়া টের পেয়ে দেশীয় তোপের মুখ থেকে বাঁচতে ফের একদলীয় নির্বাচনের দিকে এগোচ্ছে আওয়ামী লীগ। একদিকে তারা বিএনপিকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা বলছে। অথচ ভেতরের কথা হচ্ছে, বস্তুত আওয়ামী লীগ চায় না বিএনপি নির্বাচনে আসুক। বাস্তবতা হচ্ছে, আওয়ামী লীগ জোর করেই ক্ষমতায় থেকে যেতে চায়। ফলে বিএনপির শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক আন্দোলন দমনে মামলাকে হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে। শীর্ষ নেতাদের রাজনীতির মাঠ ছাড়া করতে দেওয়া হচ্ছে বিতর্কিত মামলা। করা হচ্ছে গ্রেফতার ও নির্যাতন।’

ভারত সফরের অংশ হিসেবে এরই মধ্যে ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশনে ২০ নেতার একটি তালিকা পাঠিয়েছে আওয়ামী লীগ। ওবায়দুল কাদের ও মাহবুব-উল-আলম হানিফ ছাড়াও প্রতিনিধি দলে আরও থাকছেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, মিছবাহউদ্দিন সিরাজ, একেএম এনামুল হক শামীম, মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম প্রমুখ।

পাঁচ দিনের এ সফরে দেশের সর্বশেষ রাজনৈতিক অবস্থা ও গতিপ্রকৃতি, আগামী নির্বাচন এবং দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারাদণ্ড ছাড়াও দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়ন গুরুত্ব পাবে বলেও আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে।

ভারতে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলের সফর প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান প্রিয়.কমকে বলেন, ‘একটি দেশের রাজনৈতিক দল অপর আরেকটি দেশের রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানাতেই পারেন। আমন্ত্রণ পেয়ে যাওয়াটা স্বাভাবিক, বরং না যাওয়াটাই হবে অস্বাভাবিক।’

এক প্রশ্নের জবাবে নজরুল বলেন, ‘দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় কারাগারে প্রেরণ করে সরকার যে নড়বড়ে অবস্থায়ে উপনীত হয়েছে, সেটাকে ধামাচাপা দিয়ে জনদৃষ্টি ভিন্ন দিকে ইউটার্ন দিতে পটু আওয়ামী লীগের ভারত সফরের বিকল্প নেই। তারা দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে স্বস্তিতে নেই। কখন কোন পরিস্থিতি তৈরি হয়, তা-ও বলা যাচ্ছে না। আজ হোক, কাল হোক আওয়ামী লীগের হাত থেকে ক্ষমতা চলে যাবেই। তারা এর একটি সুরাহা চান।’

‘বিএনপি এই মুহূর্তে আওয়ামী লীগের ভারত সফরকে তাদের রক্ষাকবজ হিসেবেই দেখছে। তবে পাশা পাল্টে গেছে অনেক আগ থেকেই,’ যোগ করেন নজরুল ইসলাম খান।

বিএনপির কূটনীতিক কোরের একজন দায়িত্বশীল নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রিয়.কমকে বলেন, ‘ভারতের বিজেপির সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক পুরানা ও ঘনিষ্ঠ। বিশেষ করে বিজেপি নেতা দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সম্পর্ক বেশ আগের। তাই ঢাকঢোল পিটিয়ে আওয়ামী লীগ ভারত সফরে গেলেও এটাই সত্য আওয়ামী লীগের ওপর থেকে সেই একগুয়ে সমর্থন প্রত্যাহার করেছে ভারত। আর এটাই বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য হবে একটা বড় ঘটনা।’

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, ভারতের ক্ষমতাসীন দলটির সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে যোগযোগ রক্ষা করছে দলটি। নতুন করে সম্পর্ক গড়ার তৎপরতাও অব্যাহত রেখেছেন দলটির দায়িত্বশীল নেতারা। তাই এই মুহূর্তে কর্মসূচি থাকবে মূলত ওয়ার্ম আপ। ভেতরে ভেতরে বৃহত্তর কর্মসূচি মাথায় রেখেই এগোচ্ছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা, যে কর্মসূচি আওয়ামী লীগের জন্য বুমেরাং হয়ে দেখা দিতে পারে। ফলে সরকারের উসকানিতে দলের নেতাকর্মীদের সাথে সরকারের সংঘাত হতে পারে এমন কর্মসূচি দেওয়া থেকেও বিরত থাকছে বিএনপি।

/প্রিয়

Leave a Reply

You must be logged in to post a comment.

Editor in Chief: Dr. Omar Faruque

Editor: Dr. Morjina Akhter

All contact: 400E Mosholu Parkway South Apt # A23,The Bronx, New York 10458, USA

Mob. 001.347.459.8516
E-mail: dhakapost91@gmail.com