বিচিত্র কৌশলে বিশ্বব্যাপী ইসরাইলের গুপ্তহত্যা কার্যক্রম।
বিচিত্র নানা কৌশল প্রয়োগ করে বিশ্বব্যাপী গত ৭০ বছর ধরে গুপ্তহত্যা মিশন চালিয়ে আসছে ইসরাইল। দেখা গেছে এ পর্যন্ত বিশ্বর বিভিন্ন প্রান্তে ২,৭০০টি হত্যা মিশন চালিয়েছে দেশটি। টুথপেস্টে বিষ মিশিয়ে, ফোন বিস্ফোরণ, সশস্ত্র ড্রোন ও গাড়ির অতিরিক্ত চাকায় পেতে রাখা দূর নিয়ন্ত্রিত বোমা ফাটিয়ে এসব হত্যা মিশন পরিচালিত হয়। প্রমাণ ছাড়াই হত্যা করতে এসব অস্ত্র বেশ কার্যকরী।
শত্রুরাষ্ট্রের বিজ্ঞানী ও জনপ্রিয় মুসলিম ধর্মীয় নেতাদের হত্যার জন্য এগুলো নিয়মিত প্রয়োগ করে আসছে ইসরাইল। দেশটির জাতীয় দৈনিক ইয়েদিয়ত আহারোনটের গোয়েন্দাবিষয়ক প্রতিনিধি রনিন বার্গম্যান তার লেখা নতুন বইয়ে এমন দাবি করেছেন। বইটিতে ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ, শিন বেত ও সেনা কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার রয়েছে।
এক হাজার সাক্ষাৎকার ও কয়েক হাজার নথির উল্লেখ করে ৬ শতাধিক পৃষ্ঠার “রাইজ অ্যান্ড কিল ফাস্টঃ দ্য সিক্রেট হিস্টোরি অব ইসরাইল’স টার্গেটেড অ্যাসোসিয়েশনস” নামের বইটি সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে।
বইটিতে দাবী করা হয়, ইসরাইল যুদ্ধের পরিবর্তে গুপ্তহত্যা চালানোকেই অগ্রাধিকার দেয় বেশী। ইরানে সামরিক অভিযান না চালিয়ে দেশটির প্রায় আধা ডজন পরমাণু বিজ্ঞানীকে হত্যা করেছে তেল আবিব। এছাড়া ফিলিস্তিনের সাবেক নেতা ইয়াসির আরাফাতকে হত্যা করা হয়েছিল রেডিয়েশনের মাধ্যমে বিষ প্রয়োগ করে। ২০০৪ সালের ১১ নভেম্বর ইয়াসির আরাফাতের হত্যাকাণ্ডের পর নতুন একটি প্যাটার্ন ও সমর্থন সৃষ্টি হয়। তবে আরাফাতের সঙ্গে ঠিক কী ঘটেছিল, সে ব্যাপারে তথ্য থাকলেও তা প্রকাশ করা থেকে সরে দাঁড়াতে হয়েছে রনিনকে। এর কারণ হিসেবে তিনি ইসরাইলি সেনাবাহিনীর সেন্সরশিপকে দায়ী করেছেন।
রনিন বলেন, নাইন ইলেভেনের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ নিজ দেশের গোয়েন্দা সংস্থার জন্য অনেক ইসরাইলি কৌশল গ্রহণ করেছিলেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও কয়েক শতাধিক টার্গেট কিলিং মিশন চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। তিনি লিখেছেন- “নির্দেশ ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, যুদ্ধ কক্ষ, চালকবিহীন যুদ্ধবিমানের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ ও কৌশল- সবই এখন আমেরিকা ও মিত্ররা ব্যবহার করছে। এর বড় একটি অংশের উন্নয়ন ইসরাইলেই করা হয়েছে।”
ইয়াসির আরাফাতের হত্যার বিষয়ে রনিন তার বইয়ে লিখেছেন- ইসরাইলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী অ্যারিয়েল শ্যারন প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় আরাফাতকে হত্যার নির্দেশ দেন। ভূমধ্যসাগরে বিমান বিধ্বস্ত করার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। অন্ততঃ পাঁচবার তার নির্দেশে আরাফাতকে হত্যায় ইসরাইলি যুদ্ধবিমান প্রস্তুতি নেয়। রনিন বার্গম্যান আরও লিখেছেন- বিমানবাহিনীর কমান্ডারদের ইচ্ছাকৃত হস্তক্ষেপের কারণে শ্যারনের এ পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়নি।
শৃঙ্খলাবিরোধী জেনেও বিমানবাহিনীর সিনিয়র কর্মকর্তারা নির্দেশটি পালন করেন নি। ইসরাইলের সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমোস গিলবোয়া রনিনকে জানান, তিনি ইসরাইলি সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাফায়েল এইটানকে এ অভিযান সম্পর্কে সতর্ক করে বলেছিলেন, যাত্রীবাহী বিমানকে ভূপাতিত করার ঘটনায় আমরা জড়িত- এ কথা জানাজানি হলে আন্তর্জাতিকভাবে ইসরাইলই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
বইটি প্রকাশিত হওয়ার পর ইসরাইলী নৃশংসতা নিয়ে বিশ্বব্যাপী নতুন করে আলোচনা শুরু হয়।
সূত্রঃ এনডিটিভি ও দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট অবলম্বনে।