বাস অযোগ্য শহরের তালিকায় ঢাকা দ্বিতীয়।
বিশ্বে বসবাসের অযোগ্য শহরগুলোর তালিকায় ঢাকা দ্বিতীয় স্থান পেয়েছে। লন্ডনভিত্তিক ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের বার্ষিক জরিপে এই তথ্য উঠে এসেছে। র্যাঙ্কিংয়ে সবচেয়ে অযোগ্য শহর হিসেবে স্থান পেয়েছে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক। র্যাঙ্কিং নির্ধারণের ক্ষেত্রে কোনো শহরের রাজনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতা, অপরাধপ্রবণতা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ বিবেচনা করা হয়। সে অনুযায়ী বিশ্বের সবচেয়ে বসবাসের উপযোগী শহর হলো অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনা।
পূর্বে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন বাসযোগ্য শহরের তালিকায় শীর্ষে ছিল।
এবার প্রথমবারের মতো ইউরোপের কোনো শহর বাসযোগ্য শহরের তালিকায় শীর্ষস্থান দখল করলো।
ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট বিশ্বের ১৪০টি শহরের ওপর জরিপ চালিয়েছে। জরিপ অনুযায়ী বিশ্বের বাসযোগ্য শহরগুলোর মধ্যে প্রথম দশটি হলো যথাক্রমে- অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা, অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন, জাপানের ওসাকা, কানাডার ক্যালগেরি, অস্ট্রেলিয়ার সিডনি
কানাডার ভ্যাঙ্কুভার, জাপানের টোকিও, কানাডার টরেন্টো, ডেনমার্কের কোপেনহেগেন ও অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেড।
বিপরীতে বিশ্বের সবচেয়ে বসবাসের অযোগ্য শহরগুলোর তালিকায় দামেস্ক ও ঢাকার পর রয়েছে নাইজেরিয়ার লাগোস, পাকিস্তানের করাচি, পাপুয়া নিউগিনির পোর্ট মরিসবি। ইকোনমিস্ট জানিয়েছে, বসবাসের অযোগ্য শহরগুলোর মধ্যে র্যাংকিং করার ক্ষেত্রে অপরাধ, নাগরিক অস্থিরতা, সন্ত্রাস বা যুদ্ধ প্রধান ভূমিকা পালন করেছে।
ঢাকার নাম নিচের দিক থেকে দু?ই নম্বরে উঠে আসার কারণে এরইমধ্যে নানা আলোচনা-সমালোচনা তৈরি হয়েছে। তবে বিষয়টিতে অবাক নন স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন। তিনি বলেন, আইনের শাসন যেখানে অনুপস্থিত সেখানে ঢাকার অবস্থান এমনটাই হবে। সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে মোবাশ্বের হোসেন বলেন, তারা কীভাবে শহরের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনলো। কারণ তারা কাউকে ছাড় দেয়নি।
ইকনোমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইইইউ) ‘গ্লোবাল লিভবেলিটি ইনডেক্সে’ ঢাকার পিছিয়ে পড়ার পেছনে নীতিমালা ও অনুশাসনের ঘাটতিকে অন্যতম কারণ বলছেন বিশিষ্ট স্থপতি ইকবাল হাবিব। তিনি বলেন, গণপরিবহন ও গণপরিসরের ক্ষেত্রে আমাদের নীতিমালা, অনুশাসন এই দুটোকে আমরা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে না পারায় আমরা পিছিয়েছি। আমরা আইন কানুন, অনুশাসন মানতে পারি না, মানাতে পারি না। আমাদের প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দুর্বলতা আছে। ফলে গণপরিসর এবং গণপরিবহননির্ভর একটা অবকাঠামো আমরা তৈরি করতে পারছি না।
ইইইউ-এর ওই রিপোর্টটির কিছুও তুলে ধরেন এই নগরবিদ। তার মতে, মূল্যায়নের পুরো ভিত্তিতে জনঘনত্ব ও জনমিতি না থাকাটা রিপোর্টটিকে সাংঘাতিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। রিপোর্টটি আরও সর্বাঙ্গীন এবং সার্বিকতা নির্ভর হওয়া উচিত ছিল। তিনি বলেন, ইকনোমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের মূল্যায়ন নির্ণয়কগুলো সাংঘাতিক একপেশে। একটা শহরের মূল প্রাণ মানুষ, তার জনমিতি জনঘনত্ব, জনমানুষের পারস্পরিক, সাংস্কৃতিক বিন্যাস। এসব বিষয় রিপোর্টে নেই। এত ঘনত্বের পরেও এই শহরের আমাদের তুলনামূলক অবস্থা বিবেচনা করলে সবকিছু ওলটপালট হয়ে যাবে।
সুইজারল্যান্ডে মানুষ হচ্ছে ১০০ জন, তার যে গুণগত অবস্থা আপনি পাবেন ঢাকার এক হাজার জন মানুষের ক্ষেত্রে সেই গুণগত মান আপনি প্রত্যাশা করতে পারেন না। বরং পারফরমেন্স বিবেচনায় ঢাকায় ১০০ মানুষ হলে অনেক ভালো পারফরমেন্স করা যেত। সেই ফ্যাক্টরটা এই রিভিউ ও এনালাইসিসে অনুপস্থিত। ইকবাল হাবিব আরও বলেন, ঢাকার মানুষের ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষমতা অসম্ভব। একটা শহরের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে তার নাগরিকদের ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষমতা। গত বছর যে হিসেবে এই জরিপ হয়েছে সেই বছর পৃথিবীকে নাড়া দেয়া হলি আর্টিসানের পরের বছর যেভাবে ঢাকার ব্যবসা বাণিজ্যসহ সবকিছু ঘুরে দাঁড়িয়েছে- তা সত্যি প্রশংসনীয়। সেই তুলনায় ওইখানেও আমাদের প্রতি অবিচার করা হয়েছে।
করাচি, পেশোয়ারের চেয়ে ঢাকা কখনই এই ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে ঢাকা পিছিয়ে নেই দাবি করে তিনি বলেন, ঢাকায় প্রতি বর্গকিলোমিটারে মানুষ প্রায় ৪৫ হাজার। তার যে জীবিকার সুবিধা এবং যোগান সেটা এই শহর সফলভাবে দিয়ে যাচ্ছে। আর সামাজিক নিরাপত্তা ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে অন্য শহরের ক্ষেত্রে পিছিয়ে রাখার সুযোগ নেই। সূত্রঃ মানবজমিন।