বাবার সঙ্গে মেয়েদের সম্পর্কই ঠিক করে দেয় স্বামীর সঙ্গে সম্পর্কটাঃ গবেষণা।
‘আমার বাবা হলে কখনই এমনটা করত না’, অথবা ‘তুমি একদম বাবার মত’, এই কথাগুলো প্রায়ই স্বামী বা সঙ্গীকে বলে থাকে মেয়েরা। কেন কথায় কথায় বাবার প্রসঙ্গ টেনে আনে মেয়েরা? মনোবিজ্ঞানীরা সে বিষয়ে কী জানাচ্ছেন সে আলোচনাটা করতেই এ লেখা। গবেষকরা বলছে, বিবাহিত জীবন কেমন হবে, স্বামী বা সঙ্গীর সঙ্গে সম্পর্ক কেমন হবে, তার অনেকটাই নির্ভর করে বাবার সঙ্গে মেয়ের সম্পর্কের উপর। এ বিষয়ে আমি নিজেও বেশ ক’জন মেয়ের ওপর স্টাডি করেছি। তারমধ্যে আমি যেহেতু একজন নারী। সে ক’জন নারীর মধ্যে আমি নিজেও একজন।
ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট জেনিফার ক্রমবর্গ জানাচ্ছেন, বাবা মেয়েদের জীবনের প্রথম বিপরীত লিঙ্গের মানুষ। তাই বাবার সঙ্গে সম্পর্ক কেমন, তা অনেকটাই নির্ধারণ করে দেয়, ভবিষ্যতে কোন ধরনের সঙ্গীর দিকে নারীটি ঝুঁকবে। বাবার সঙ্গে সম্পর্ক গভীর হলে মেয়েরা যেমন নিজেদের অজান্তেই এমন পুরুষের দিকে ঝোঁকে, যাদের সঙ্গে বাবার চারিত্রিক মিল রয়েছে। কখনও কখনও শরীরিক গঠনের মিলও তাদের আকৃষ্ট করে ফেলতে পারে। একই ভাবে নর ও নারীর অর্থাৎ দম্পতির রোম্যান্টিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাবা-মেয়ের ‘রিলেশনশিপ প্যাটার্ন’-এর প্রচ্ছন্ন ছায়াও দেখা যায় ।
২০০২ সালে ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সাইকোপ্যাথোলজিতে প্রকাশিত ’ইমপ্যাক্ট অব ফাদারস অন রিস্কি সেক্সুয়াল বিহেভিয়ার ইন ডটারসঃ আ জেনেটিক্যালি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টালি কন্ট্রোলড সিবলিং স্টাডি’ এমন ভাবেই বলছে। উক্ত স্টাডি বলছে, যে সব মেয়েদের সঙ্গে বাবাদের সম্পর্কের দূরত্ব থাকে, তাদের মধ্যে অল্প বয়সে ঝুঁকিপূর্ণ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা দেখা যায়। সেটি অনেক সময় বাবা বা অভিভাবকদের পক্ষ থেকেও হয়ে থাকতে পারে। সুরক্ষিত নয় এমন যৌন সম্পর্ক, মদ্যপানের নেশা এদের সহজেই আকৃষ্ট করে ফেলতে পারে। ঠিক একইভাবে ২০০৩ সালে ’চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট’- এ প্রকাশিত ‘ডাজ ফাদার অ্যাবসেন্স প্লেস ডটারস অ্যাট স্পেশ্যাল রিস্ক ফর আর্লি সেক্সুয়াল অ্যাক্টিভিটি অ্যান্ড টিনএজ প্রেগন্যান্সি’ অনুযায়ী, যে মেয়েরা বাবার অনুপস্থিতিতে বড় হয়, তাদের মধ্যে এ ধরনের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি।
গভীর ভালবাসার সম্পর্কঃ বাবার সঙ্গে সম্পর্ক সুন্দর হলে মেয়েরা সব পুরুষের মধ্যেই বাবাকে খোঁজে। স্বামী তাদের খেয়াল রাখবে, নিরাপত্তা দেবে এটাই তারা আশা করে। এদের মধ্যে বাবার সঙ্গে স্বামীকে তুলনা করার প্রবণতা দেখা যায়।
আছে কিন্তু নেইঃ এ সব ক্ষেত্রে বাবারা মেয়েদের জীবনে উপস্থিত থেকেও থাকে না। সম্পর্কের গভীরতা, উষ্ণতা থাকে না। এরা ভেবে নেয়, সব পুরুষই এক রকম। কারও কাছ থেকেই কিছু দাবি করে না এরা।
অত্যাচারী, রাগী, ভালবাসার অভাবঃ বাবা অত্যাচারী, রাগী বা বদমেজাজি হলে সেটি হয় বড় ভয়াবহ। সেসব মেয়েরা বাবার প্রতি এক ধরনের ঘৃণা নিয়ে বড় হয়। এমন কাউকে এরা জীবনসঙ্গী হিসেবে পেতে চায়, যাদের চরিত্র এদের বাবার থেকে আলাদা। কোন পুরুষকেই এরা সহজে বিশ্বাস করতে পারে না। আঘাত পাওয়ার ভয়ে নিজেদের ভালবাসা, দুর্বলতা, আবেগ প্রকাশ অনেক সময়ই করে না।
বাবা জীবনে অনুপস্থিতঃ যদি বাবা দূরে থাকেন বা আলাদা থাকেন, তা হলে মেয়েদের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হয়। ছোটবেলা এদের কাটে বাবার অপেক্ষায়। পুরুষ সঙ্গ পাওয়ার জন্য এ মেয়েরা মরিয়া হয়ে ওঠে। প্রত্যাখ্যান কিংবা একা হয়ে যাওয়ার ভয়ে বারবার সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে এসব মেয়েরা।
[বিদেশি জার্নাল ও পত্রিকা অবলম্বনে]