বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক বিশ্বে মডেল: শেখ হাসিনা

October 3, 2018 3:11 am0 commentsViews: 8

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে যে সম্পর্ক বজায় আছে তা বিশ্বে একটি রোল মডেল। ভারত থেকে অতিরিক্ত আরও ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমাদের উন্নয়নে সহযোগিতা করবে। এতে দুই দেশই লাভবান হলো। তিনি বলেন, আমাদের উন্নয়নের জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সমর্থন ও সহযোগিতা মাইলফলক হয়ে থাকবে। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানিবিষয়ক প্রকল্প, রেলওয়ের ‘কুলাউড়া-শাহবাজপুর সেকশন পুনর্বাসন’ ও ‘আখাউড়া-আগরতলা ডুয়েল গেজ রেল সংযোগ নির্মাণ (বাংলাদেশ অংশ)’ প্রকল্পের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সোমবার বিকেলে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এসব প্রকল্প উদ্বোধন করা হয়। এ সময় ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব এবং ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। আর গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু যুক্ত হন।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর আমরা ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পেয়েছিলাম। বর্তমানে আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদন ২০ হাজার মেগাওয়াট। মমতা ব্যানার্জী আমাদের আরও ১০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দিতে চেয়েছেন। আশা করি, ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদিজি তাতে কোনো আপত্তি করবেন না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে প্রতিটি সেক্টরে দ্রুত উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা ২০৪১ সাল পর্যন্ত উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করে এগিয়ে যাচ্ছি। সে হিসেবে প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন হবে। এ বিদ্যুৎ পেলে বাংলাদেশের অনেক সাফল্যগাথার সঙ্গে ভারতের অবদান থাকবে। ভারতের কাছ থেকে নতুন নতুন সহযোগিতার ফলে নতুন নতুন বাতায়ন খুলে যাবে। একইসঙ্গে বাংলাদেশ ও ভারতের বন্ধুত্ব আরও অটল থাকবে। এই সহযোগিতার কারণে ভারতের প্রধানমন্ত্রী, পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীসহ সব সংসদ সদস্যকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
ভারত-বাংলাদেশের বন্ধুত্ব চিরস্থায়ী হোক সেটাই চান প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘যার ফলে দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করে দুই দেশের জনগণের উন্নতি সাধান করতে পারে। আমাদের যৌথ প্রচেষ্ঠায় এ ধরনের অনেক সাফল্য আমরা উদযাপন করতে পারব।’
‘ইতিমধ্যে আমাদের স্থলসীমানার সমস্যার সমাধান হয়েছে। ভারতবাসীকে ধন্যবাদ জানাই। ভারতের সংসদের সকল সদস্য এক হয়ে এ স্থলসীমনা চুক্তি বাস্তবায়নে সহযোগিতা করেছেন। ভারত বোধহয় বাংলাদেশের বিষয়ে সবসময় ঐক্যবদ্ধ হয় দলমত নির্বিশেষে, এটাই প্রমাণ হয়েছে।’
ভারত এবং বাংলাদেশের সম্পর্ক সেই ১৯৭১ সাল থেকে। মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের ভূমিকা অবিস্মরণীয়। মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয়, প্রশিক্ষণ, অস্ত্র ও গোলাবারুদ দেয়ার পাশাপাশি ভারতীয় সেনাবাহিনীও সরাসরি এ দেশে যুদ্ধ করে পাকিস্তানি বাহিনীকে হারাতে ভূমিকা রাখে। তবে দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত বিরোধসহ বেশ কিছু বিরোধ ছিল আর বর্তমান সরকারের আমলে অমীমাংসিত সমস্যার সমাধানে বেশ অগ্রগতি রয়েছে। যদিও অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন ইস্যুতে এখনও সেভাবে অগ্রগতি হয়নি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারত যে সহযোগিতা করেছে, তা আমরা সবসময় কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করি, যা আমাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রেই চিরদিনই মাইলফলক হিসাবে বজায় থাকবে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্যবসা-বাণিজ্য, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, যোগাযোগ, অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও জনগণের সঙ্গে যোগাযোগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে অগ্রগতি সাধিত হয়েছে।’ ‘ব্লু ইকোনোমি, সামুদ্রিক সহযোগিতা, পারমাণবিক শক্তি, সাইবার নিরাপত্তা, মাহকাশ গবেষণাসহ নতুন নতুন ক্ষেত্রগুলোতে আজ আমরা কাজ শুরু করেছি।’
‘বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে আমাদের দ্বিপাক্ষীয় সহযোগিতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। আমরা বর্তমানে ভারত থেকে ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করছি। আরও তিন হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করার উদ্যোগ আমরা নিয়েছি।’
অনুষ্ঠানে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় বাংলাদেশকে আরও এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দেয়ার কথা জানিয়ে এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমতির বাধ্যবাধকতার বিষয়টি তুলে ধরেন।প্রধানমন্ত্রী মমতাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘আশা করি ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদিজি এ ব্যাপারে নিশ্চয় সম্মতি দেবেন।’ ‘আমাদের উচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার জন্য আরও বিদ্যুৎ প্রয়োজন। আঞ্চলিক সহযোগিতার কাঠামোর অধীনে ২০৪১ সালের মধ্যে প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে থেকে নয় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা করছি। আশা করি এ লক্ষ্য অর্জনে ভারত আমাদের পাশে থাকবে।’
অনুষ্ঠানে রেলের যে দুটি প্রকল্প উদ্বোধন হয়, সেটি ভারতীয় ঋণের অর্থেই নির্মিত হবে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রেলওয়ে খাতেও আমাদের দুইদেশের সহযোগিতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে মালামাল পরিবহনের জন্য ১৯৬৫ পূর্ব রেল যোগাযোগ পুনরায় চালু করার জন্য কাজ করছি।’
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘আজ থেকে আমরা আরও কাছে এলাম, আমাদের সম্পর্ক আরও গভীর হলো। ধন্যবাদ।’

Leave a Reply

You must be logged in to post a comment.

Editor in Chief: Dr. Omar Faruque

Editor: Dr. Morjina Akhter

All contact: 400E Mosholu Parkway South Apt # A23,The Bronx, New York 10458, USA

Mob. 001.347.459.8516
E-mail: dhakapost91@gmail.com