বাংলাদেশে নিখোঁজদের কেন আর সন্ধান মেলে না?
৯ নভেম্বর ২০১৭।
[২০১৬ সালে বাংলাদেশে ৯০ জন গুম, ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই নয় মাসে নিখোঁজ হয়েছেন ৫০ জন।]
বাংলাদেশের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গবেষক ড. মোবাশ্বার হাসান নিখোঁজ হওয়ার দুই দিন পরেও তাঁর কোন হদিশ পাওয়া যায়নি এখনো।
মি. হাসানের এই নিখোঁজের ঘটনা এমন এক সময়ে ঘটছে যখন বাংলাদেশে নিখোঁজ ও গুম হয়ে যাওয়া নিয়ে গভীর উদ্বেগ রয়েছে।
একটি মানবাধিকার সংগঠন বলছে এই বছরে প্রথম নয় মাসে ৫০ জন নিখোঁজ হয়েছেন বলে তাদের পরিবার পক্ষ থেকে পুলিশের কাছে রিপোর্ট করা হয়েছে।
কিন্তু বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কেন এসব নিখোঁজ ব্যক্তিদের খোঁজ বের করতে পারে না?
২০১১ সালের নভেম্বর মাসে এক সকালে সন্তানকে স্কুলে ছেড়ে আসার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন কে এম শামীম আখতার।
বাসা থেকে বের হয়ে কিছু দূরে যেতেই কয়েকজন তাকে নিয়ে একটি গাড়িতে তুলে নিয়ে যান। আজ ছয় বছরের বেশি সময় পার হয়ে গেছে, কিন্তু মি. আখতার আর বাড়ী ফেরেন নি।
মি. আখতারের স্ত্রী ঝরনা খানম বলছিলেন ঘটনার পর পরেই তিনি থানায় যান জিডি করতে। কিন্তু মিসেস খানম যে স্বামী নিখোঁজের যে বর্ণনা দিয়েছিলেন সেভাবে পুলিশ জিডি করতে চায়নি।
পরে পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী তাকে জিডি করতে হয়। কিন্তু ঘটনার সাড়ে ছয় বছর পার হয়ে যাওয়ার পরেও তিনি তার স্বামীর কোন খোঁজ পাননি।
ঝরনা খানম আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সবখানে অভিযোগ নিয়ে গেছেন। যদিও তার দাবি মি. আখতারের একটা রাজনৈতিক পরিচয় ছিল সে কারণে হয়তো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মি. আখতারকে তুলে নিয়ে গেছে।
বাংলাদেশে নিখোঁজ, অপহরণ,গুম এসবের ঘটনা নতুন না। দেশে এবং আন্তর্জাতিক ভাবে বার বার উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে বিষয়টি নিয়ে।
বাংলাদেশে একজন নাগরিক নিখোঁজ বা অপহরণের শিকার হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিখোঁজ ব্যক্তির খোঁজ করতে কতটা সক্ষম?
বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক আইজি মো. নুরুল হুদা বলছেন ‘মিসিং পারসন স্কোয়াড’ নামে একটা উইং থাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে। সেটার মাধ্যমে শত ভাগ না হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিখোঁজ ব্যক্তিকে খুঁজে পাওয়া সম্ভব।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে ২০১৬ সালে বাংলাদেশে ৯০ জন গুম হয়েছেন।
আর দেশের মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র বলছে ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই নয় মাসে নিখোঁজ হয়েছেন ৫০ জন।
মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন বলছিলেন তাদের পর্যবেক্ষণে তারা দেখেছেন নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবার জিডি করতে গেলেও যথেষ্ট সহযোগিতা পান না।
নিখোঁজদের পরিবারের অনেকের অভিযোগ রয়েছে সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে তাদের স্বজনদের নিয়ে যাওয়া হয়।
কিন্তু পরে দীর্ঘ সময়, এমন কী বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও তাদের আর খোঁজ পাওয়া যায় না।
সাবেক আইজিপি মি.হুদা বলছিলেন, “অভিযোগ সত্যি প্রমাণিত হলে সেগুলো বের করা যায় তবে বিষয়টা সত্যিই উদ্বেগজনক।”
এদিকে বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলো বলছে গত আড়াই মাসে বাংলাদেশে রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক এবং শিক্ষার্থীসহ মোট নয়জন নিখোঁজ হয়েছেন।