নিউইয়র্ক থেকে ড ওমর ফারুক সম্পাদিত। স্থানীয় সময়ঃ ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮।। রাত ১১টা।
কওমী শিক্ষার্থী ও ওস্তাদগণকে কাওমী শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে বয়ান পেশ করতে যে কথা বলতে শুনতাম, এখন আর হয়ত তা নাও শুনতে পারি। সেগুলো মোটামুটি এ রকমঃ ”কওমি মাদ্রাসা হচ্ছে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়, সঠিক মানুষ গড়ার কারখানা, জান্নাতের বাগিচা, ইত্যাদি। অন্যদিকে, সরকারি বা নন্-কওমি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করে ডাক্তার হতে হলে লক্ষ লক্ষ টাকা ঘুষ দিতে হয়। খাদ্যদ্রব্যে বিষাক্ত মেডিসিন দিয়ে সুস্থ মানুষদের বড় বড় রোগে আক্রান্ত করা হয়। রানা প্লাজার মত হাজার হাজার বিল্ডিং-এর প্রকৌশলী হয়। ঐশী, তসলিমা ও লাকী তৈরি হয়। ইত্যাদি। আরও একটি কথা অত্যন্ত জোরেশোরে বলা হত, কওমি মাদ্রাসার সার্টিফিকেট স্বয়ং আল্লাহ মূল্যায়ন করেন। যার মূল্যের বিনিময় সারা দুনিয়া এবং এ গ্রহের মধ্যস্থিত সকল ধনভাণ্ডার তুচ্ছ ব্যাপার। তাই সরকারি বা পশ্চিমা শিক্ষার (?) চিন্তা না করে কওমি মাদ্রাসা শিক্ষার মূল্যায়ন করুন। সর্বোপরি বলা হত, আমরা সরকারি অনুদান নেই না। তা নিতে গেলে সরকারের অন্যায় আবদার মেনে নিতে হবে।
অবশেষে সেটি হল। অনেকই ত বলছে হেফাজতে ইসলামের তের দফা আড়াল করে এখন সনদ লাভের একটি দফা আসল। অনেকে বলছে, আগের কত সরকারই গেল, কেউ স্বীকৃতি দিল না। সনদও দেয় নি। হাসিনা দিয়েছে। আমি তাদের বলি,
সেগুলোর ত কোন জ্ঞান আল্লাহ তায়ালা দেয় নি। আল্লাহ তাদের চেতনা ও জ্ঞান হরণ করে নিয়েছেন। সেজন্য বলে। পড়াশোনা জানা মানুষের বলবে না। ১৩ দফার চাপা পড়ে যেতে সনদ ধরিয়ে দিয়ে হাসিনা যে অতি চতুর মানবী, তা আবারও প্রমাণ করলেন। কাওমী চরিত্রই ছিল, এটি আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন এবং অবিরত হারাম মুক্ত ইসলামি জ্ঞান প্রদান ও প্রসারে নিবেদিত শিক্ষা সেক্টর । অতীতে কাওমীকে সরকার অনুদান দিতে চাইলেও তখনকার ইসলামিক স্কলারগণ তা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানাতেন। এখন সরকারি সনদ নিতে হলে ত অবশ্যই সরকারের শিক্ষানীতি ও সিলেবাস পূর্ণ ভাবে মেনে চলতে হবে। তাহলে এটাকে কাওমী না বলে আলীয়া, আরও এগিয়ে ধীরে ধীরে সেকুলার বললেও বা সমস্যা কী!
কওমি’রা নিজেদের কী মনে করত, একটি নমুনা হিসেবে এই পেজের পোস্টগুলো দেখা যেতে পারে। ফেসবুক জুড়ে কওমীপন্থীদের এই ধরনের পেজ প্রচুর আছে। কওমিদের পরিচালিত অনেক পেজ এমন আছে, যেগুলোতে তাদের পন্থা অবলম্বনকারী নয়, এমন বিরোধী ইসলামের অনুসারীদের কাঁচা ভাষায় গালাগাল ও বিষোদগার করা হয়। সে সব পেজগুলো বা লিঙ্ক আপনি দেখলে হয়ত মনে হতেই পারে, এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের কি তাহলে এসব গালাগাল ও ফেতনা সৃষ্টির শিক্ষাই দেওয়া হয়। নাউজুবিল্লাহ।
কওমিপন্থী এক বিপ্লবী তার ‘বিদ্রোহী রিটার্নস’ নামে ফেসবুক পেজ খুলে তাতে লিখেছে এমন, “আলহামদুলিল্লাহ, আমি মুসলমান, কিন্তু ডিজিটাল মুসলমান নই। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অনুসারী হানাফি মাজহাবি। কথায় নয়,কাজেই মানুষের পরিচয়। জীবনের প্রতিটি পদে মানুষ প্রতিযোগী।জীবন মানেই যুদ্ধ। আর সেই যুদ্ধে আমরা সবাই যোদ্ধা। জীবনে জয়-পরাজয় থাকবেই, তাই বলে পথ চলা বন্ধ করা যাবে না। তাহলে কেউ লক্ষ্যস্থলে পৌঁছিতে পারবে না। জীবনে হাজারো বন্ধু আসবে, এর মধ্যে খাঁটি বা দ্বীনদার অল্প বন্ধুই যতেষ্ট।
এই আইডির নামকরণ আমি করি নি। ফেসবুকে প্রথম যখন আসি, তখন থেকেই বাতিল সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে লেখালেখি করতাম। বিশেষ করে ধর্ম ব্যবসায়ী রেজভি ফুলতলিদের বিরুদ্ধে। ওরা আমার অসংখ্য আইডি রিপোর্ট করে নষ্ট করে। এরপর এক বন্ধু এই আইডিটা আমাকে হাদিয়া দেন। তিনি নিজেই এর নামকরণ করেন। আমি সেই স্মৃতি নিয়ে এই আইডি আজো ব্যবহার করে যাচ্ছি। ফেসবুক ব্যবহার করি নিজেকে প্রচার করার জন্য নয়, বক্তা নয় বক্তব্যই মূখ্য। এই জন্য নাম পরিচয় দেয়ার প্রয়োজন মনে করি না। আর ফেসবুকে সঠিক নাম পরিচয় দেয়া ক্ষতির কারণ হয়ে যেতে পারে। কারন ইসলাম ও মুসলমানদের ধ্বংস করার জন্য বাতিলরা চতুর্মূখী আক্রমণ করছে। আমরা ইসলাম প্রচারের ক্ষেত্রে আধুনিকতার প্রশ্রয় দিতে রাজি নই। টিভি,ভিডিও ও ছবি প্রচারে ঘোর বিরোধী। কারণ ইসলাম টিভি ভিডিও’র মাধ্যমে প্রচার প্রসার হয় নাই। যদিও আমি তেমন ভালো লিখতে পারি না,তবুও মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বাতিল সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমার যুদ্ধ চলবে ইনশাআল্লাহ”
[কিছু বানান ও বাক্য গঠনে ভুল আছে, আমি তা সংশোধন করি নি। হুবহু রেখে দিতেই তা করি নি।]
এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, কওমীপন্থীরা আলিয়া মাদ্রাসাকেও সমর্থন করে না। তারা বরং আলিয়া মাদ্রাসার বিরুদ্ধেও একই ধরনের প্রপাগান্ডা ছড়ায়। এখানে একটি নমুনা আছে। অর্থাৎ তাদের দাবি অনুযায়ী একমাত্র কওমি মাদ্রাসাই সঠিক মানুষ (আদর্শবান মুসলমান) গড়ার কারখানা। শুধু তা-ই নয়, তাদের দাবি অনুযায়ী কওমিপন্থী ছাড়া বাকি সকলেই বাতিলপন্থী বা মুরতাদ।
কওমি মাদ্রাসায় কি পড়ানো হয়, তা নিয়ে বিবিসি’র আবুল কালাম আজাদের তথ্যানুসন্ধানমূলক লেখা গত ২০ এপ্রিল বিবিসি বাংলা সাইটে দেওয়া হয়েছে। আমি পাঠকদের বুঝার সুবিধার্থে হুবহু তুলে ধরলামঃ প্রকাশিত প্রতিবেদনের শিরোনামঃ “বাংলাদেশে কওমী মাদ্রাসায় কী পড়ানো হয়?:
প্রতিবেদনটি এমন ঃ
বাংলাদেশে প্রচলিত তিন ধরনের মাদ্রাসা শিক্ষার মধ্যে মসজিদ ভিত্তিক মাদ্রাসাগুলোই মূলত কওমী মাদ্রাসা হিসেবে পরিচিত।
২০১৫ সাল পর্যন্ত ব্যানবেইসের হিসেবে ১৩ হাজার ৮২৬টি কওমি মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৩ লক্ষ ৮৮ হাজার ৪৬০ জন। এসব শিক্ষার্থীরা যা পড়ছেন বা শিখছেন এক্ষেত্রে সরকারের নিয়ন্ত্রণ বা তদারকির কোনোরকম সুযোগ নেই।
উনিশ শতকে ভারতীয় উপমহাদেশে প্রতিষ্ঠিত দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসার মাধ্যমে কওমি শিক্ষাব্যবস্থার প্রচলন হয়। ভারতের দেওবন্দ মাদ্রাসার অনুসরণ করে বাংলাদেশেও কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা চালু রয়েছে।
কওমি শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা জানান এ শিক্ষা ব্যবস্থার মূল উদ্দেশ্যই হল, ইসলাম ধর্মীয় শিক্ষায় পারদর্শী হওয়া। তাদের সিলেবাসে দেখা যায় তাকমীল বা দাওরায়ে হাদিস স্তরে শিক্ষার্থীরা মূলত হাদিস সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে বিস্তারিত পড়ানো হয়।
আর প্রাথমিক থেকে বিভিন্ন স্তরে দেখা যায় কোরান হাদিস ছাড়াও, একাধিক ভাষা, গণিত, বিজ্ঞান, অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও তর্কশাস্ত্রের মতো বিভিন্ন বিষয় তাদের সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত আছে।
ঢাকার কওমী মাদ্রাসাগুলোর নিয়ন্ত্রক বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সহসভাপতি মুফতি মাহফুজুল হক বলেন – মৌলিকভাবে কোরান হাদিস বোঝার জন্য যেসব আনুসঙ্গিক বিষয়াবলী প্রয়োজন সেগুলো পড়ানো হয়। ফেকাহ পড়ানো হয়। এর সাথে তাদের চার পাঁচটা ভাষার উপরেও তাদেরকে শিক্ষা দেয়া হয়। বাংলা, ইংরেজি প্রাথমিক পর্যায়ে, আরবি উচ্চস্তর পর্যায়ে, পাশাপাশি উর্দুও তাদেরকে শেখানো হয়। অল্প ফারসিও তাদেরকে পড়ানো হয়।
মি. হকের দাবি দাওরায়ে হাদিস স্তরে শিক্ষার্থীরা ধর্মীয় বিষয়ে কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের চেয়ে বেশি জানেন এবং শেখেন।
“আমরা মনে করি যেকোন কলেজ ইউনিভার্সিটি যেখানে ইসলামি স্টাডিজ বা আরবী সাহিত্য বিভাগ আছে, তারা এই দুই সাবজেক্টে যা পড়ে তার চেয়ে অনেক বেশি আমাদের এখানে ছেলেরা পড়ে। জেনারেল শিক্ষা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত বাংলা, অঙ্ক, ইংরেজি, সমাজ, ভূগোল, ইতিহাস বর্তমানে আমাদের এ মাদ্রাসাগুলোতে পড়ানো হয়। তাছাড়া উপরের দিকে অর্থনীতি এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানও আমরা পড়াচ্ছি।”
কওমী মাদ্রাসার নীতি নির্ধারকরা সব সময় কঠোর অবস্থান নিয়েছেন।
বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সিনিয়র সহসভাপতি ও সনদ বাস্তবায়ন কমিটির কো চেয়ারম্যান আল্লামা আশরাফ আলী বলেন, তারা সরকার থেকে কোন রকম অনুদান এবং অর্থসহায়তা গ্রহণ করেন না এবং তদারকির নামে সরকারের কোন রকম নিয়ন্ত্রণও চান না। কওমি শিক্ষার আধুনিকায়ন বা সংস্কারের প্রশ্নে তিনি বলেন, সরকারের কেউ নয়, আলেমরাই এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।
“এখানে ইঞ্জিনিয়ার বানানো হয় না, বৈজ্ঞানিক বানানো হয় না, ডাক্তার হয় না, দার্শনিক হয় না। ইসলামি শিক্ষার মধ্যে গভীর জ্ঞানী হয়। এটা একটা বিভাগ, যেখানে ইসলমি শিক্ষায় গভীর জ্ঞানী করে তোলা হয়।
সরকারি স্বীকৃতির মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামি শিক্ষা বা আরবী বিভাগের মাস্টার্স এবং কওমি মাদ্রাসার দাওরায় হাদিস সদনের মান সমান হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মো. ইউসুফ জানান সিলেবাসে খুব একটা পার্থক্য নেই। তিনি মনে করেন মান পাওয়ার পর নিজেদের স্বার্থেই কওমী শিক্ষায় কিছু সংস্কার করা প্রয়োজন।
“দাওরায়ে হাদিসে তারা সিহাহ সিত্তাহ হাদিসের ছয়টি কিতাবগুলো তারা পড়ায়। যুগ যুগ ধরে এটা চলে আসছে। আলিয়া মাদ্রাসাতেও এরকম কামিল যখন এমএ’র মান ছিল না, তখন সিহাহ সিত্তাহ’র কিতাব পড়ানো হত। যখন এটাকে এমএ’র মান দেয়া হয়, তখন এই কামিলকে কামিল হাদিস, কামিল আদব, কামিল ফিকহ, কামিল তাফসির এ ধরনের বিভাজন করা হইছে। কওমি মাদ্রাসার দাওরা সিলেবাসকে এভাবে বিভাজন করে আপডেট করতে পারে, এতে কোন অসুবিধা নাই।”
“ওনারা নিজেরাই বিভাজন করে আপডেট করতে পারে, এখানে সরকারের ইনভলবের কোন দরকার নাই। বিশেষজ্ঞ কমিটি তাদের মধ্যে নিয়ে তারা করুক অসুবিধা কি? আমি মনে করি পরিবর্তন দরকার তা নাহলে এই মানের কোন ফায়দা হবে না।”
তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুনতাসির মামুন মনে করেন যুগোপযোগী সিলেবাস না হলে মাস্টার্স সমমান পেলেও কওমী মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে না।
“বিশেষ কাজের সহায়তায় হয়ত চাকরির সুযোগ থাকবে, কিন্তু অন্যান্য ক্ষেত্রে তারা সুবিধা করতে পারবে না। তাদেরকে কোন না কোন ভাবে আধুনিকায়ন করতে হবে এবং মূল ধারার কাছাকাছি আসতে হবে। কওমীরা বলছে তারা কোন কিছুর সঙ্গে থাকবে না। আমরা এটার বিরোধিতা করছি। আমরা মনে করি কোন না কোন ভাবে তাদের এই ডিগ্রি লাভের জন্য কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট হতে হবে । সরকারি একটা মনিটরিং থাকতে হবে। তাহলে এটার গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পাবে।”
এদিকে কাওমিপন্থীদের ‘আল কাউসা ‘ নামে একটি সাময়িকীতে গত ফেব্রুয়ারি ২০১০, সফর ১৪৩১ সংখ্যায় এক সম্পাদকীয়তে সরকারি অনুদান প্রত্যাখ্যান করায় কওমি মাদ্রাসা বোর্ডের দায়িত্বশীলদের ধন্য জানিয়ে এক সম্পাদকীয় লেখা হয়। সে সম্পাদকীয়টি নিম্ন রুপ।
কওমী মাদরাসা বোর্ড-বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়্যার দায়িত্বশীলগণ পাঁচ কোটি টাকার একটি সরকারী অনুদান প্রত্যাখ্যান করে যে দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছেন সেজন্য আমরা তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই। তাদের এই পদক্ষেপ কওমী মাদরাসার নীতি ও আদর্শকেই প্রতিফলিত করেছে। ইলম ও হামিলীনে ইলমের পক্ষে অবমাননাকর এবং দ্বীনী প্রতিষ্ঠানের বৃহত্তর স্বার্থের পরিপন্থী কোন দান-অনুদান গ্রহণ না করাই কওমী মাদরাসার নীতি। কওমী মাদরাসার ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্পর্কে যাদের ধারণা আছে এবং যারা কওমী মাদরাসার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক রাখেন তারা এ বিষয়ে উত্তরূপে অবগত। যে কোন জাতীয় প্রতিষ্ঠান জাতির সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমেই পরিচালিত হয়। এদেশের সরকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও জনগণের অর্থেই চলে স্কুল-কলেজ ও ইউনিভার্সিটিগুলোর জন্য যে সরকারী বাজেট হয় তা বাস্তবায়িত হয় জনগণের অর্থে। সরকার এর ব্যবস্থাপক মাত্র। এজন্য সরকারি ব্যবস্থাপনায় যখন জাতির আশা-আকাঙ্খার পূর্ণ প্রতিফলন ঘটে না, তখন জাতি কিছু দায়িত্ব নিজ হাতে তুলে নেয়। আমাদের দ্বীনী-প্রতিষ্ঠানগুলো যে সকল প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করে কোন রকম সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়াই যুগ যুগ ধরে টিকে রয়েছে-এর রহস্য এটাই। আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের মাধ্যমে এই দ্বীনী প্রতিষ্ঠানগুলোকে রক্ষা করছেন।
ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শক্তির অশুভ অনুপ্রবেশের পর এ অঞ্চলের দ্বীনী প্রতিষ্ঠানগুলোকে বন্ধ করে দেওয়ার বহু চক্রান্ত হয়েছে। সরকারি আনুকূল্য ও পৃষ্ঠপোষকতা তুলে নেওয়া হয়েছে। মিথ্যা প্রপাগাণ্ডার মাধ্যমে সমাজে এর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা হয়েছে, এমনকি হুমকি-ধমকি জুলুম-অত্যাচারের মাধ্যমে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের দমন করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু আল্লাহ তাআলা এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে রক্ষা করেছেন, সাম্রাজ্যবাদী শক্তিকে এ অঞ্চল ত্যাগ করতে হয়েছে, কিন্তু দ্বীনী প্রতিষ্ঠানগুলো আজও টিকে আছে। ইংরেজ সাম্রাজ্যবাদী শক্তি যখন রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা পরিহার করেছে তখন এইসব মাদরাসার পৃষ্ঠপোষকতার ভার জাতি নিজ হাতে তুলে নিয়েছে। আমাদের ক্ষমতাসীনদের উপলব্ধি করা উচিত যে, এই সব দ্বীনী প্রতিষ্ঠানের শিকড় তৃণমূল পর্যায়ে বিস্তৃত না থাকলে চলমান প্রপাগাণ্ডা ও অসহযোগিতার মুখে এগুলো টিকে থাকত না।
দ্বীনী মাদরাসাগুলোর বিরুদ্ধে যেসব প্রচার-প্রচারণা বিশ্বব্যাপী চলছে তার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও স্বরূপ সম্পর্কে এখন আর তেমন অস্পষ্টতা নেই। কিছু স্বার্থবাদী মহল ছাড়া সাধারণ জনগণের সামনে এইসব প্রচার-প্রচারণার উদ্দেশ্য মোটামুটি পরিষ্কার। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয় যে, এদেশে ক্ষমতার মসনদে যারাই আরোহন করেন খুব দ্রুত তারা জনগণের আশা-আকাঙ্খা, আবেগ ও অনুভূতি সম্পর্কে উদাসীন হয়ে যান। কিছুদিন আগে সরকারের এক মন্ত্রী বলেছিলেন, কওমী মাদরাসাগুলো জঙ্গিবাদের প্রজণন কেন্দ্র। কিন্তু যখন প্রতিবাদ করা হল তখন তিনি তার বক্তব্যের ‘ব্যাখ্যা’ দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। আলোচিত বিষয়েও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। অনুদানের জন্য লোকমারফত যে বার্তা পাঠানো হয় তাতে মাদরাসার ছাত্রদের সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, ‘দারিদ্রের কারণে বিভিন্ন সন্ত্রাসমূক বা চরমপন্থী কাজে তাদের ব্যবহার করা হয়। ফলে তারা সহজেই বিপথগামী হয়।’ (দৈনিক নয়াদিগন্ত, ২৬ জানুয়ারি, ১ম পৃষ্ঠা)
আমাদের প্রস্তাব হচ্ছে, এ টাকা যদি সন্ত্রাস দমনের জন্যই ব্যয় করতে হয় তাহলে এর সবচেয়ে উপযুক্ত খাত হচ্ছে ঐ সকল সোনার ছেলে যারা প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে প্রতিপক্ষের উপর হামলা করে। প্রতিদিন পত্রিকার পাতা খুললেই যেভাবে চরদখলের মতো হল দখল, পুলিশের নাকের ডগায় অস্ত্রের ঝনঝনানি এবং বেপরোয়া চাঁদাবাজি ও টেণ্ডারবাজির যে রমরমা অবস্থা চোখে পড়ে তাতে মনে হয় না যে, এরা এ সরকারকে অন্য কোনো কাজের সুযোগ দিবে। অতএব আগে ঘরের খবর নিন এবং অতিশীঘ্র এই সোনার ছেলেদের সব ধরনের ‘দারিদ্র’ মোচন করুন। আমরা কওমী মাদরাসা বোর্ডের দায়িত্বশীলদের সিদ্ধান্তকে অভিনন্দন জানাই এবং আশা করি, ভবিষ্যতেও তারা কওমী মাদরাসার নীতি ও আদর্শের সঠিক প্রতিনিধিত্ব করবেন।” https://www.alkawsar.com/bn/article/114/